বাংলাদেশে সিনেমা হল কয়টা? চারশ থেকে সাড়ে চারশ এর মধ্যেই হবে। দর্শক কত এই প্রশ্নটা বোকার মত। তবে এটা বলা যায় যে জনসংখ্যার তোলনায় অনেক কম।
একটা সময় সিনেমা হলে গিয়ে অনেক মানুষ সিনেমা দেখত কিন্তু মাধ্যখানে অশ্লীলতায় মানুষ সিনেমা হল ছেড়েছেন। ঐ যে মানুষ সিনেমা হল বিমুখী হয়েছে তা পরবতীতে কিছু ভালো সিনেমা দিয়েও ফিরানো যায় নি। আমি এখনো বলতে পারিনা বাংলাদেশের সিনেমা হল গুলো অশ্লীলতা মুক্ত। খোদ ঢাকাতেই অনেক সিনেমা হল আছে যেগুলো বাংলাদেশের পাশাপাশি বাইরের দেশের অশ্লীল সিনেমা চালাচ্ছে।
চলচিত্র শীল্প বাচাতে মাঝে মাঝেই দেখি বিভিন্ন আন্দোলন হচ্চে। আচ্ছা এক ঢিলে দুই পাখি মারলে কেমন হয়? ধরুন এই চারশ-সাড়ে চারশ সিনোম হল মালিক ঘোষণা করল তারা অশ্লীল সিনেমা পদর্শন করবে না, তাহলে একদিকে যেমন এই সব সিনেমার পরিচালক,প্রযোজক এই সব নির্মাণ বন্দ করতে বাধ্য হবে তেমনি ইন্ডাস্টি অশ্লীলতা মুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু হল মালিকগুলো এটাই করবে না।
কিছু যুক্তিক কমেন্টস নতুন করে লিখতে প্রেরণা যোগায়, আগের লেখায় সেই প্রেরণাটা পেয়েই হয়ত এত তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় লেখাটা দিতে পারছি। শুরুতেই সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
গত অংশে দেখেছেন ভারতীয় মিডিয়ার কথা। তাদের পজেটিভ দিকগুলো তুলে ধরেছিলাম। আজকে দুই দেশের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করছি। এবং কেন মানুষ ভারতীয় মিডিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হচ্চে তাও দেওয়ার চেষ্টা করব।
ভারতীয় রাষ্ট্রিয় টিভি চ্যানেল দুরদর্শন। বাংলাদেশের বিটিভি। সরকারি টিভি চ্যানেল কাজ হচ্ছে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা তুলে ধরা, খবর পরিবেশন করা, পাশাপাশি মানুষকে বিনোদন দেওয়া। এই দিক দিয়ে ভারতীয় চ্যানেল ঠিক থাকলেও বাংলাদেশের চ্যানেল সরকার দলীয় চ্যানেলে রুপান্তরিত হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই।
ভারতের নির্দিষ্ট কিছু চ্যানেল আছে যেগুলো শুধু সংবাদ পরিবেশন করে কিন্তু আমাদের দেশে একমাত্র এটিএন নিউজ বাদে অন্য কোন সতন্ত্র নিউজ চ্যানেল নেই কিন্তু সব চ্যানেল এমন ভাবে নিউজ প্রচার করে যেন সবগুলোই নিউজ চ্যানেল। আর এটিএন নিউজের কথা আলাদা ভাবে বলতে গেলে বিশদ বলা যায় কিন্তু বলতে ইচ্ছা করছে না।
অনুষ্ঠানের মান নিয়ে আমার কোন প্রশ্ন নেই কিন্তু প্রচার নিয়ে হাজার প্রশ্ন আছে। লক্ষ্য করুন, ভারতীয় যে চ্যানেলগুলো বিনোদন দেওয়ার জন্য সেই চ্যানেলগুলো শুধুমাত্র বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টোটা।
আমি আজ পযন্ত কোনদিন কাউকে বলতে শুনিনি যে ভারতীয় চ্যানেলে টক-শো নামক যন্ত্রনা দিয়েছে, তাই বলে কি ভারতে টক-শো হয় না? হয় তার জন্য নিদিষ্ট চ্যানেল আছে যেগুলো এই ধরণের অনুষ্ঠার প্রচার করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে যে চ্যানেল বিনোদন দিচ্ছে সেই চ্যানেলই দিচ্ছে টক-শো। এটা আবার মাত্রাতিরিক্ত। ধরুন রাত দশটায় একটা চ্যানেলে টক-শো হচ্ছে, তো অন্য চ্যানেলগুলোতেও তাই।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠ কখন গরম হয়ে যায় আবার কখন ঠান্ডা হয়ে যায় তা নিয়ে দেশের মানুষ কনফিউজ। মানুষ বাস করে আতংকের মাঝে তাই তাদের কাছেও খবরটা খুব জুরুরি বিষয়। আর এই জুরুরি বিষয় নিয়ে যেহেতু নিদিষ্ট চ্যানেল নাই (এটিএন এর সংবাদ পরিবেশন নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে) তাই সব চ্যানেল ঐ চায় দর্শক তাদের চ্যানেল দেখুক। অনুষ্ঠানের মাঝ খানে বিশ মিনিটির বেকিং নিজউ। শুধু নিউজটা হলেও সমষ্যা ছিল না, সেই সাথে কিছু বিশেষজ্ঞ এর মতামত মানুষের বিরক্তির উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তারউপরে আছে প্রতি ঘন্টার সংবাদ। এক ঘন্টায় দেশের এমন কোন খবর সৃষ্টি হয়নি যা দিতেই হবে জনগনকে কিন্তু চ্যানেলগুলো গুরিয়ে ফিরে সেই একি খবর বারবার প্রচার করে যাবে। সব চ্যানেলেই একই খবর কিন্তু উপস্থাপন করা হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। মানুষ ত বিরক্তি হবেই।
বাংলাদেশের এখনো অধিকাংশ পতি ভক্ত স্ত্রীরা মনে করে, সংসার সামলানো, ছেলেমেয়ে মানুষ করা, স্বামীর যত্ন করা, আর শশুড়-শাশুড়ির সেবা করাই তাদের কাজ। এর বাইরের আর কিছু না জানলেও তাদের চলবে। একটা উদাহারণ দেই, আমার পরিবারে তিনজন মেয়ে ভোটার আছে আর একজন নতুন হয়েছে। প্রতিবার নির্বাচনে যখন তাদের জিজ্ঞাস করি ভোট কাকে দিবে তখন তাদের উত্তর শুনে আমি বিস্মিত না হয়ে পারি না, উনি (স্বামী) যেখানে দিতে বলবেন সেখানেই দিবে।
তো এই ধরণের নারীরা খবর শুনে কি করবে?
শুধু কি তাই, বর্তমান তরুণ, তরুণীরা ব্যস্ত ফ্যাশন, রুপচর্চা, স্মাটনেস বাড়ানো নিয়ে। এর অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ভারতীয়দের অনুকরণ। ইন্টারনেট এর পাশাপাশি তাদের এই চাহিদা পূরণ করছে টিভি।
আলোচকের অভাব নেই, নেই কোন ইস্যুর অভাব। সুতরাং বিষয় যেহেতু আছে সেহেতু অনুষ্ঠান বানাতে সমস্যা কি?
আমি সচরাচর টিভি দেখি না, একধরণের ক্ষোভ থেকেই টিভি দেখা ছেড়ে দিয়েছি। আমার ইচ্ছা নেই রিমোট নিয়ে মারামারি করার আর দশটা অনুষ্ঠান এক সাথে দেখার। তারচেয়ে টিভি থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় মনে হয়েছে। যে সময়টুকু আমি টিভি দেখে পার করব সেই সময়টুকু যদি আমি বই পড়ে পার করি তাহলে কিছু উটকো বিরক্তির সৃষ্টি হবে না।
বিজ্ঞাপন বিরতীর কথা বলছি। এইটা নিয়ে মানুষের অভিযোগের কোন শেষ নেই। এই ঈদের সময় ফেইজবুকের পাতা খুলেই এই বিজ্ঞাপনে বিরক্তির হাজার পোষ্টা পাওয়া গেল। টিভি অনুষ্ঠান বানাবে আর তাতে বিজ্ঞাপন প্রচার হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন দর্শকদের বিরক্তির কারণ হবেই।
অভিযোগ দেখলাম, অনুষ্ঠান যত সময় তার থেকে বেশি সময় বিজ্ঞাপন। ভারতীয় চ্যানেল এর কি খবর এই বিজ্ঞাপন নিয়ে? উত্তর আছে, তারাও বিজ্ঞাপন প্রচার করে কিন্তু আমাদের দেশের মত নয়। বিজ্ঞাপন এর নিদিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেয়, তারচেয়ে বড় কথা কথায় কথায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না ঐ সব চ্যানেলে। ( মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমি টিভি দেখি না বা ভারতীয় চ্যানেল এর বিরুধী তাহলে এই তথ্য পাইলাম কোথায়? উত্তর হচ্ছে আমি এই লেখাটা লিখার আগে সব বিষয়ে খোজ খবর নিয়েই লিখছি, আর সেই জন্য কয়েকদিন আমাকেও টিভির সামানে বসতে হয়েছে।)
কিন্তু বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো দুই মিনিট অনুষ্ঠান প্রচার করলে তিনমিনিট দেয় বিজ্ঞাপন। তবে ইদানিং কিছু চ্যানেল সময় বেধে বিজ্ঞাপন পরিবেশ করে।
বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত বিজ্ঞাপন নিয়ে অভিযোগ আমার সব সময়ই ছিল এখনো আছে। যাক সে কথা।
মিডিয়ার কথা যেহেতু বলছি সেহেতু মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নিয়েও কিছু কথা বলতে হয়। অভিনয় নিয়ে একটা কথা আছে, শুধু রুপ থাকলেই হয় না অভিনয় জানতে হয় । ইদানিং আমাদের মিডিয়াগুলো অভিনয় নয় বরং রুপের দিকে ঝুঁকছে বেশি।
মিডিয়া ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে বাংলাদেশে একটু বেশি মাতামাতি হয়। আর এই সব মিডিয়া ব্যক্তিদের কু-কর্ম নিয়ে কথা বলতে গেলে নিজেরই হাত আটকে যায়। এরা মিডিয়ায় যতটা না পরিচিত অভিনয় এর জন্য তার চেয়ে বেশি পরিচিত বিভিন্ন কু-কর্ম করে। নতুন নতুন প্রতিভা বের হয় আর দুইদিন পরেই হারিয়ে যায়। দুঃখ হয় মাঝে মাঝে সেই সব সোনালী দিনগুলোর কথা মনে করে, যখন এই দেশের মিডিয়া কাপিয়ে জনপ্রিয় হওয়া তারকাদের কথা। (নাম উল্লেখ করলাম না)
তো মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই ভারতীয় চ্যানেলগুলো প্রতি আকৃষ্ট হতে বাধ্য হচ্ছে। এতটুকু বলার পর অবশ্যই বুঝতে পারছেন এর থেকে উত্তরণের পথ কি।
এবার আসি মিডিয়ার অন্য আরেকটা অংশ নিয়ে। যেহেতু মিডিয়া নিয়ে কথা বলছি তাই এই অংশটা বাদ দিতে ইচ্ছা করছে না।
প্রকাশনা মাধ্যম মানে পত্রিকা। বাংলাদেশের অনেকগুলো জাতীয় দৈনিক আছে কিন্তু তাদের খবর দেখে মনে হয় এরা খবর পরিবেশন করতে নয় বরং গল্পগোজব করতেই পত্রিকা প্রকাশ করে। এই দিক দিয়ে অনলাইন পত্রিকাগুলোর অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। খবর এর অভাবে এরা আজাইরা খবর প্রকাশেই বেশি ব্যাস্ত।
তারপরে আছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ আর পক্ষপাতিত্বহীন সংবাদ প্রকাশ নিয়ে সন্দেহ। কারণ দেশের অধিকাংশ পত্রিকাগুলোই রাজনৈতীক ছত্রছায়ায় চলে। যার কারণে মুখে কুলুপ এটে সংবাদ পরিবেশন করতে বাধ্য হয়।
আবার বিজ্ঞাপন এর জন্য কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে যায়, তাই সেই প্রতিষ্ঠানের শত কু-কর্ম থাকলেও কথা বলার সাহস দেখায় খুব কম। ইদানিং কিছুটা উন্নতি হচ্ছে।
আশার কথা শুনাই শেষে।
রাস্তার পাশ দিয়ে যখন অনেকগুলো ছাত্রছাত্রী হেটে যায় তখন আমার মন বলে না, সত্যিই দেশটা শিক্ষিত হচ্ছে। আমি একটা নতুন প্রভাতের স্বপ্ন দেখতে থাকি। সত্যিই দেশটা একদিন অনেক উন্নতি করবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
এই বিষয়ে প্রথম লেখাটা আছে এখানে। Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭