somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বখশিস

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল যেদিকে তাকাই যা কিছু করি সবাই বলে, বখশিস দেন! বেশ কিছু বছর আগে বিশ^বিদ্যালয়ের হলে ছিলাম। সেখানে গেটের কাছে বসতেন এক জুতো মেরামতকারী। তার ছিলো তিন ছেলে। মাঝে মধ্যে ছেলেরাও বসত। তাদের বয়স আট থেকে বারোর মধ্যে। একবার ঈদের আগে আগে মেজ ছেলেটা আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ভালো বখশিস বাগিয়ে নিলো। ঈদের পরে আমার বন্ধুটির জুতোয় জোড়াতালি ধরনের সমস্যা দেখা দিলো। বন্ধুটি বখশিস পাওয়া ছেলেটিকে জুতো সারায়ের কাজ দিলো। জুতো নেয়ার সময় বন্ধুটি বলল, কয়েক টাকা কম রাখ! কয়েক দিন আগেই তো তোকে বেশ কিছু টাকা দিলাম। ছেলেটি উত্তর দিলো, ওতো আপনি বখশিস দিছিলেন। জুতো সারাই করতে তো গাম লাগছে, গাম কি মাগনা?

কয়েক দিন আগে আমার বাসার বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখি আমি আগে যে বাসায় থাকতাম সেখানকার দারোয়ান। আমাকে সালাম দিয়ে সে ভিতরে ঢুকে পড়ল। ’অনুমতি’ নামের কোনো শব্দ যে বাস্তবে প্রয়োগ করা যায় সেটা হয়ত ও জানে না। ঢুকেই বলল, বখশিস দেন। আপনার চিঠি নিয়াসছি। আমার হাতে একটা ব্যাংক থেকে আসা চিঠি গুজে দিলো সে। সেটা খুলে আমি দেখি যে এক টুকরো অকেজো কাগজ তাতে! ও ব্যাংকে আমার কয়েকশ’র বেশি টাকা নেই। আমি বললাম, এতো কোনো কাজের জিনিস না। সে যুক্তি দেখিয়ে বলল, হতেও পারত কাজের জিনিস! আমি তো আর তা জনি না। কষ্ট কইরা আসছি, রিক্সা ভাড়া লাগছে। সে পঞ্চাশ টাকা পকেটে ভরে বিদায় হলো।

দূর পাল্লার গাড়িতে উঠলে মালামাল ওঠা-নামা করতে গেলে গাড়ির সুপারভাইজার আর হেল্পার দুজনেই ফুসে ওঠে, বখশিস! বিশ বা পঞ্চাশ টাকা পকেট থেকে বের করে দিলে সুপারভাইজার এমনভাবে তাকায় যেন আমি তাকে অপমান করছি। অফিসের কাজে বা অন্য কারনে কোনো হোটেলে রাত্রিবাস করতে হলে চলে আসার দিন হোটেলের ঝাড়–দার আঁৎকে ওঠে, বখশিস! তাকে বখশিস না দেওয়াটা যেন ঘোর নষ্টামি!

গেল মাসে আমরা কয়েকজন মিলে মিনি বাস ভাড়া করে যাচ্ছিলাম বেড়াতে। গাড়ি ফেরিতে ওঠার সময় ফেরির টিকিট দেখলো বটে কিন্তু নামার সময় বলল, বখশিস! বখশিস না দিয়ে গাড়ি ফেরি থেকে নামতে পারল না। বখশিস যে কোথা থেকে উদয় হয়েছে এ দেশে তা কে জানে? সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে নবজাতকের জন্ম হবে তাতেও আপনার বখশিস লাগবে। ডাক্তারের সিরিয়ালের জন্য গেছেন দেখবেন কেউ কেউ গোপনে কেউ আবার প্রকাশ্যে ডাক্তারের সহকারীর হাতে গুজে দিচ্ছেন আশ্চর্য বখশিস!

অফিস আদালতে এখানে সেখানে কাজে বা ঘোরফেরা যে কারনেই গেছি যে-ই কোনো ধরনের উপকার করেছ সেই বলেছে, বখশিস! আজকাল তাই কেউ কোনো উপকার করতে আসলে আমি ঘোর সংশয়ে থাকি। হয়ত এখনই বলে বসবে, বখশিস! অনেক দিন আগে একটা সঞ্চয়পত্র কেনার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। সেটা ভাঙাতে সেদিন গেলাম পোস্ট অফিসে। আমাকে টাকা দেয়ার সময় তিনশ টাকা কম দিয়ে বলল, আমরা সবার কাছ থিকা তিনশ টাকা কইরা বখশিস কাইটা রাখতাছি।

আবার একটু মধ্য বা উচ্চ পদস্থ কারো সাথে যদি কোনো কাজ থাকে, যেমন পেনশনের টাকা তোলা বা কোনো তহবিল পাওয়া তাহলে তো ফাইল প্রসেসিং আর মিষ্টি খাওয়ার টাকা দিতে দিতে জান কোরবান হয়ে যায়। এমনকি কোরবানির সময়ও সে ঘটনা ঘটে। গত বছর দশেক ধরে দেখছি কোরবানীর পশুর প্রসেসিং করতে যাদের আনা হয় তারা কাজ শেষে পারিশ্রমিক তো নেয়ই উপরন্তু বলে, বখশিস!

কি যে হলো বখশিসের? বখশিস ছাড়া আজকাল কিছু ঘটে না। বর্তমান বাংলাদেশে সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দও মনে হয়, বখশিস। শব্দটা যেমন বহুল উচ্চারিত তেমনি জনপ্রিয়। শব্দটা প্রতিদিন অসংখ্য লোকের মুখে উচ্চারিত হয় এক অভিন্ন প্রাপ্তির আশায়। অফিসে নদীতে গাড়িতে দোকানে হাসপাতালে হোটেলে এমনকি পথের মধ্যিখানেও শব্দটার সাথে আপনার মোলাকাত হওয়ার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে। ’বখশিস’ উচ্চারণ না করে আজকাল কেউ নড়ে না। খায় না। গায় না। কাজ করে না। তাকে ছাড়া আজ যেন সবাই স্থবির। সবই যেন প্রাণহীন। এই বখশিস ছাড়া আজকাল মানুষের মুখ কালো মন ব্যথিত। মেশিন বা কল-কব্জার ঘুর্ণন বন্ধ। কেবল সময়ই বয়ে যাচ্ছে বখশিস না পেয়েও তা না হলে মাঝে মধ্যে হচ্ছে নদীর ¯্রােতও যেন আটকে থাকছে বখশিস ছাড়া!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×