শায়েস্তা খাঁর সস্তার আমলের টাকায় ৮ মন চালের হিসাব।
প্রথমেই ৮ মন চাল উৎপাদনকে দুই ভাগে ভাগ করা যাক
১। ৮ মন চাল উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ধান উৎপাদন।
২। সেই ধান থেকে ৮ মন চাল উৎপাদন।
১। ৮ মন চাল উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ধান উৎপাদনের খতিয়ানঃ
১ মন চাল উৎপাদন করতে গড়ে ১ মন ২৮ কেজি ধান দরকার পড়ে। সেক্ষেত্রে আট মন চাল বানাতে ৫৪৪ কেজি ধান বা ১৩.৬ মন(৪০ কেজিতে এক মন ধরে) ধান লাগে।
সে আমলে উচ্চ ফলনশীল ইরি বিরি জাতের ধান ছিল না। অতি উর্বর একবিঘা জমি থেকে তিনমন থেকে সর্বোচ্চ চার মন ধান পাওয়া যেত।
গড়ে সাড়ে তিন মন ধরলে প্রায় চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করা লাগত।
চার বিঘা জমি ২ বার চাষ করতে দুই বলদ এক নাঙ্গল এক কৃষকের ৮ দিন সময় লাগত।
ধানের বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করতে হত।
বীজতলা তৈরী করতে হত।
চার বিঘা জমিতে ধানের চারা লাগাতে হত/বুনতে হত।
নিড়ানী, আগাছ পরিষ্কার, বালাই দমন সহ চার মাস নিবিড় পরিচর্যা শেষে ধান কাটতে হত।
কাটা ধান মাথায় করে বা গরুর গাড়ীতে বোঝাই করে বাড়ি আনতে হত।
গরু দিয়ে ধান মাড়াই করতে হত।
ঝাড়াই বাছাই করে চিটা থেকে ধান আলাদা করতে হত।
ধান রোদে শুকাতে হত।
ধান ৫৪৪ কেজি বা ১৩.৬ মন গোলায় তুলতে হত।
২। ৮ মন চাল উৎপাদনের খতিয়ান
এর পর বড় বড় পাতিলে ১৩.৬ মন ধান সিদ্ধ করতে হত।
সিদ্ধ ধান রোদে শুকাতে হত।
তারপর কোমর বাঁকা করে ঢেঁকিতে লাথি মেরে মেরে করে চাল বের করতে হত। তিনজন মহিলা সারাটা দিন ঢেঁকিতে লাথি দিয়ে দুই মন ধান থেকে চাল বের করতে পারত। ১৪ মন ধান ঢেঁকি ছাটা করতে ২১ টা শ্রমিক লাগত।
এরপর গরুর গাড়িতে বোঝাই করে হাটে/গঞ্জে নিয়ে বিক্রি করলে ১ টাকা পাওয়া যেত।
উপরোক্ত বর্ননার সকল শ্রমিকের পারিশ্রমিক ও কৃষকের লাভ সহ দাম ১ টাকা।
যে এক টাকার পেছনে এত শ্রম সে এক টাকা কোন অবস্থায়ই আজকের দিনের একটাকার মত সস্তা না। এ ক্ষেত্রে না চাল সস্তা না টাকা সস্তা । টাকার মুল্য সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না, টাকার মুল্য বিবেচনা করতে হবে তার অর্ন্তনিহিত শক্তি তথা ইনটেনসিক ভ্যালু দিয়ে।
সে সময় কাগজের টাকা ছিল না ছিল সোনা বা রুপার টাকা।
এ ১ টাকা কি তবে ২.৭৯ ভরির সোনার মোহর ছিল? সম্ভবত? ঐ সময়ে সোনার মোহরে ২.৭৯ ভরি সোনা থাকত বলে জানা যায়।
যদি তাই হয়ে থাকে তবে শায়েস্তা খাঁর আমল মোটেও সস্তার আমল ছিল না।ঐ এক টাকা যদি ২.৭৯ ভরির সোনার টাকা হয়ে থাকে তবে ৮ মন চালের দাম বর্তমান বাজার মুল্যে সোনার ভরি ৪৭০০০/- টাকা ধরে ১,৩১,১৩০/-টাকা। বর্তমান বাজার মুল্যে ঐ চালের দাম হচ্ছে ৪০৯. ৭৮ টাকা কেজি।
মোটেও সস্তা না।
তাই আমার মনে হয় শায়েস্তা খাঁর আমলের সস্তার গল্পটা গুড়ে অনেক বালি আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫