somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যাডাম তো একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন !

১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতি বছর ১৫ আগস্ট এলেই দেশে অদ্ভুত একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়। একদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে হত্যার শোকের আবহ, অন্যদিকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী নেত্রীর জন্মদিনের উল্লাস।

কে না জানে ১৯৭৫ সালের এই দিনে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে কি বীভত্স ঘটনা ঘটেছিল! কে না জানে কি নির্মম পৈশাচিকতার শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার। কে না জানে অন্ধকার রাতে কাপুরুষোচিত আক্রমণ চালিয়ে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়া হয়েছিল ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে। কে না জানে গুলির আঘাতে মানুষের সাথে বাড়ির দেয়ালগুলোও ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল।

যাঁর হাত ধরে আজ আমরা স্বাধীন দেশে শ্বাস নিতে পারছি, কে না জানে ৩২ নম্বর বাড়ির প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে নিথর পড়ে ছিলেন চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত বঙ্গবন্ধু। প্রধান বেডরুমে বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় বড় দুই ভাবীর মাঝে পড়েছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের লাশ। ঠিক সেই রুমের সামনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু পত্নী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। এ যেন সন্তানকে আগলে রাখার জন্য মায়ের আত্মদান! অথচ মায়ের লাশের উপর দিয়েই নির্বিকারে হেঁটে হায়েনারা কেড়ে নিয়েছিল ছোট্ট রাসেলকে। সেদিনেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল শেখ কামাল, সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, শেখ নাসেরসহ আরো অনেককেই।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের নির্মম হত্যাযজ্ঞের এই ট্রাজিক ঘটনায় কেউ কেউ হয়ত এখন আর দুঃখিত হয় না। এন্টি-আওয়ামীলীগ কিংবা শুধুই এন্টি-হাসিনা হবার কারণে এই দিনটিকে কেউ কেউ হয়ত সমর্থনও করে থাকেন! কিন্তু সেই সমর্থন যে এত নগ্নভাবে হতে পারে তা দেশবাসী প্রথম পরিলক্ষিত করে ১৯৯৬ সালের পর।

কথিত আছে যে, তত্কালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যে সময় থেকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস পালনের ঘোষণা দেয়, ঠিক সেসময় থেকে হঠা‍ৎ করেই দেশবাসী জানতে পারে যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের খালেদা জিয়ার জন্মদিনও নাকি ১৫ আগস্ট!!

মানুষের জন্মদিন ১৫ আগস্ট হতেই পারে। জন্মদিন পালনের কালচার যেহেতু মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশটিতে খুবই প্রকট কাজেই একজন ব্যক্তি ইচ্ছে করলেই তার জন্মদিন পালন করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে তখনি যখন রাজনীতির অঙ্গনে ১৯৮১ সাল থেকে দাপিয়ে বেড়ানো, জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমাদের অতি প্রিয় ম্যাডাম জিয়া অতি ঘটা করে হঠাৎ করেই তার জন্মদিনকে স্হানান্তরিত করে ১৫ আগস্ট পালন করা শুরু করেন। যদিও তাঁর জন্মদিন নিয়ে অনেক কথাই দলিল দস্তাবেজসহ চালু আছে, সেসব কথা না হয় আলোচনার বাইরেই রাখলাম। ধরেই নিলাম যে তাঁর জন্মদিন ১৫ আগস্ট।

দলের চাটুকারেরা ম্যাডামের বয়সের সাথে মিলিয়ে বাহারি রঙের কেক কেটে, হাত তালি দিয়ে যখন হৈ হুল্লোড় করে জন্মদিন পালন করে, সেই দিনটি সমগ্র জাতির জন্য ঘোষিত একটি শোক দিবস!! শোক দিবসের সাথে সাথে আসলে ম্যাডামের জন্মদিন পালন জাতির জন্য ‘শক’ দিবসেও পরিণত হচ্ছিল।

আজ যখন পত্রিকার প্রথম পাতায় দেখি যে, ম্যাডাম তাঁর কথিত জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করবেন না, রাত ১২টার পর তাঁর গুলশান কার্যালয়ে ৬৯ পাউন্ডের ঢাউস আকারের ক্রিম দেয়া কেকটি ম্যাডাম কাটবেন না, সত্যি আনন্দিত হয়েছি।

যদিও খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব কারণ হিসেবে বলেছেন যে, জামায়াতের হরতালের কারণে এবার কেক কাটাকাটির আনুষ্ঠানিকতা হবে না। তারপরও আমরা আনন্দিত যে, এবার জন্মদিনে ম্যাডাম কেক কাটছেন না। মন থেকে কামনা করি প্রতিবছর ১৪ আগস্ট রাতে যেন জামায়াতের হরতাল থাকে, অন্তত জামায়াতের হরতালের অজুহাতে দেশবাসী জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিনের হৈ হুল্লোড় থেকে বেঁচে যাবে।

যে যাই বলুক জন্মদিন পালনে ম্যাডাম বিরত আছেন, জাতীয় শোক দিবসে দেখতে হচ্ছে না চাটুকারদের হাততালি, উল্লাস। কট্টর বিএনপি সমর্থকেরাও বোধহয় এবার নিদারুণ লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পেল।

যে কারণেই হোক জন্মদিন পালনে বিরত থাকার এই সিদ্ধান্তে ম্যাডামকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। আন্তরিকভাবেই চাই, জাতীয় শোক দিবসে ম্যাডামের কথিত ‘জন্মদিন পালন বিরতি’ চালু থাকুক আগামী দিনগুলোতে।

[লেখককে অনেক ধন্যবাদ। ভালো লাগলো। ]

সূত্রঃ বাংলানিউজ২৪.কম
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×