somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেকালের কথা ( ১ম পর্ব )

০৬ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি
আমার কবিতাখানি কৌতুহলভরে
আজি হতে শতবর্ষ পরে
মামারবাড়িতে ভর দুপুরে নির্জন পুকুরপাড়ে বসে থেকে রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাটা কেন জানি মনে পড়ছিল। এই কিছুক্ষণ আগে মামাতভাইটা স্কুল থেকে ফিরে এসে জামাকাপড় ছাড়ার সময় মামী তাকে জিজ্ঞেস করল যে তার পিঠে লাল দাগ কেন, স্কুলে কি শিক্ষকের কাছে বেতের বাড়ি খেয়েছে নাকি ? আর আমার ভাইটাও ধরা পড়া অপরাধীর মত মুখ করে সম্মতিসূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। দেখে খারাপ যেমন লাগল তেমনি অবাকও হলাম এই ভেবে যে, আমার ভাইটা স্কুলে বেতের বাড়ি খাওয়ার সময় মামী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও তিনি তার সন্তানের পিঠে দাগ দেখে ঠিকই বুঝে ফেলেছেন যে ঘটনা কি ঘটেছিল। সুতরাং এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ঘটনা ঘটার সময় সেখানে উপস্থিত না থাকলেও তার কথা জানা একেবারে অসম্ভব নয়। কারণ, ঘটনার চিহ্ন বর্তমান থাকতে পারে। পৃথিবীতে এরূপ অনেক ঘটনার চিহ্ন রয়েছে, যেগুলো আমরা কেউই ঘটতে দেখিনি কিন্তু সেই ঘটনাগুলোর চিহ্ন দেখে আমরা সেগুলোর সমন্ধে অনেক কথা জানতে পারি।
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বসুন্ধরা। সাগর, নদী, পাহাড়, বন, সবুজ ক্ষেত, বিশাল মরুভূমি, বিস্তীর্ণ বরফে ঢাকা জায়গা এবং আরও কত বৈচিত্র এই পৃথিবীতে তার বেশীরভাগই আজও আমাদের অজানা। পশু-পাখি, মাছ-সরীসৃপ, উভচর, সামুদ্রিক প্রাণী, কীটপতঙ্গ কত যে জীববৈচিত্র রয়েছে তা বলে শেষ করা যায় না। আমরা অনেকে মনে করি, ''পৃথিবীকে আমরা এখন যেরূপ দেখছি, পৃথিবী হয়ত সর্বদাই সেরূপ ছিল এবং আমরাই হলাম পৃথিবীর রাজা।'' কিন্তু পৃথিবীর বয়সের তুলনায় মানবজাতির বয়স অতি সামান্যই বলতে হবে। মানুষ নিতান্তই সেদিনকার জন্তু, দুইদিন আগে তার নামও কেউ জানত না। ছোটবেলায় বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছিলাম, ''বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর বয়স পাঁচশ কোটি বছর।'' তখনই আমার মনে প্রশ্ন এসেছিল যে বিজ্ঞানীরা এটা কিভাবে জানল ? তাদের চেহারা ( বইয়ে আঁকা বিজ্ঞানীদের ছবি ) দেখে তো মনে হয় না যে তাদের বয়স বয়স পাঁচশ কোটি বছর হয়েছে। আর যদি হয়েও থাকে তবে পৃথিবীর সৃষ্টির সময় তারা ছিল কোথায় ? প্রশ্নের মত প্রশ্ন একখান, নাকি ? তারা আসলে পৃথিবীর বয়স জেনেছে পাথরদের কাছ থেকে। কিভাবে ? পাথরেরা তাদেরকে বলেছে। পাথর কি কখনো কথা বলে ? হ্যা বলে, তবে সে কথা শোনার জন্য বিজ্ঞানী অথবা কবি অথবা পাগল হতে হয়। আচ্ছা বল তো, পরমাণু কাকে বলে ? পরমাণু হল মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকা, যা পদার্থটির ক্ষুদ্রতম একক। এটা তো আশা করি সবাই জানে, তার পাশাপাশি এও জানে যে পরমাণুর অভ্যন্তরে প্রোটন ও নিউট্রন সমৃদ্ধ নিউক্লিয়াস থাকে এবং নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রণসমূহ বিভিন্ন কক্ষপথে আবর্তনরত অবস্থায় থাকে। কোন নির্দিষ্ট মৌলিক পদার্থের যেসকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভর সংখ্যা ( প্রোটন ও নিউট্রণের মোট সংখ্যা ) ভিন্ন তাদেরকে ঐ মৌলিক পদার্থের আইসোটোপ বলে। আর যেসকল আইসোটোপের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন কণা ( আলফা কণা, বিটা কণা, গামা কণা ) বের হয়ে এসে নতুন নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট পরমাণু ( আইসোটোপ ) সৃষ্টি করে, তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে। প্রতিটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ক্রমাগত অন্য মৌলের আইসোটোপে বা পরমাণুতে পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন পাথরখন্ডে ও খনিতে এ সকল তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এবং তাদের ক্ষয়ের দ্বারা সৃষ্ট আইসোটোপসমূহের পরিমাণ নির্ণয় করে পাথরখন্ড ও খনিজের বয়স বিজ্ঞানীরা হিসেব করেছেন। পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রাচীন পাথরের বয়স পাওয়া যায় ৪৬০ কোটি বছর। সুতরাং, পৃৃথিবী অন্তঃত তার চেয়ে বেশী পুরোনো।
একেবারে আদি অবস্থায় প্রিক্যাম্বিয়ান যুগের শুরুর দিকে পৃথিবী অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল। পৃথিবীতে প্রাণের কোন উপস্থিতিই ছিল না এবং প্রাণের উৎপত্তি ঘটার মত কোন পরিবেশও ছিল না। পৃথিবীপৃষ্ঠ প্রায় দুইশ কিলোমিটার পুরু ফুটন্ত লাভার সাগরে পূর্ণ ছিল। ক্রমে পৃথিবীর বহিঃআবরণ ধীরে ধীরে শীতল হয়ে গলিত লাভা থেকে শক্ত আবরণে পরিণত হয়। এসময় এন্টা্কটিকার কাছে অস্ট্রেলিয়ার ভূভাগ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় রাইবোনিউক্লিক এসিডের উন্মেষও ঘটে এসময়। সম্ভবতঃ ধুমকেতুর মাধ্যমে জৈবঅণুসমূহ পৃথিবীতে আসে। প্রিক্যাম্বিয়ান মহাযুগের শেষের দিকে পৃথিবীর জৈব অণুসমৃদ্ধ আদিম সমুদ্রে প্রথম নিউক্লিয়াস ও কোষপ্রাচীরবিহীন এককোষী জীবের উদ্ভব ঘটে। এটা জানা অসম্ভব ( এখন পর্যন্ত ) যে ঠিক কখন এবং কিভাবে অর্থাৎ ঠিক কি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিল, কিন্তু যেইমাত্র জীবের সৃষ্টি হল সাথে সাথে শুরু হল জীবনের এক বিশ্রামহীন পথচলা যা আজও বিরাজমান। পরবর্তীতে জীবকোষগুলো যখন পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে একসাথে মিলেমিশে প্রাণধারণ করতে শুরু করল তখন প্রকৃতিতে আবির্ভাব ঘটল এক নতুন ধরণের জীবের, বহুকোষী জীবের। আর এরই সাথে জীববিবর্তনের ইতিহাসে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল তা আজও অব্যাহত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৮
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×