somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেকালের কথা ( ৩য় পর্ব )

০৯ ই জুন, ২০২০ সকাল ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবী একসময় সমুদ্র দ্বারা পূর্ণ ছিল। সেই আদিম সমুদ্রে কোন অজানা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিল। সেই exact process না জানলেও আমরা জানি এক্ষেত্রে কি কি নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল। জৈব অনু, খনিজ, পাথর, জল, বজ্রপাত। এ ঘটনার শতকোটি বছর পর বিবর্তনের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিল। এদের মধ্যে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া ছিল সায়ানো ব্যাকটেরিয়া, এরা 400 মিলিয়ন বছর ধরে CO2 শোষণ করে অক্সিজেন ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করল। অক্সিজেন পৃথিবীর আকাশকে নীল বানিয়ে দিল। কিন্তু CO2 কমে যাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে গিয়ে বরফ যুগের সূচনা ঘটল। পৃথিবীর ইতিহাসে দুইবার বরফ যুগ ( Ice Age ) এসেছে, এটা ছিল প্রথম Ice age. সেই বরফ যুগে অত্যাধিক অক্সিজেন তৈরি করল ওজোন স্তর। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ও CO2 নিঃসরণ ধীরে ধীরে (কয়েক মিলিয়ন বছরে) পৃথিবীকে বরফ যুগ থেকে মুক্ত করল। বরফ সরে যাবার পর দেখা গেল সামুদ্রিক অনুজীবগুলো হাত, পা, দাঁতবিশিষ্ট প্রাণীতে বিবর্তিত হয়ে গেছে। একে বলা হয় Cambrian Explosion. ওজোন স্তরের protection এর জন্যই একদিন life জল থেকে ডাঙায় উঠতে পেরেছিল।
পৃথিবীর বুকের উপর দিয়ে নদীগুলো বয়ে চলার সময় অনেক জিনিস ধুয়ে নিয়ে যায়। এসব জিনিসের মধ্যে আছে গাছ, পাতা, শামুক, ঝিনুক, নানরকম মরা জীবজন্তুর শরীর। স্রোতের তোড় যেখানে অনেক কম সেখানে নদীর মধ্যকার এ জিনিসগুলো থিতিয়ে মাটিতে জমতে থাকে। এগুলোর মধ্যে অবশ্য বেশীরভাগই পঁচে যায়। যেগুলো পঁচে না, সেগুলো পাথর হয়ে যায়। কিভাবে হয়?


প্রত্যেক প্রাণীর দেহ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ দ্বারা গঠিত। এখন ভেবে দেখুন, নদীর তলায় থিতিয়ে জমে যাওয়া একটি মাছের শরীরের কথা। যার কোষের মধ্যকার প্রটোপ্লাজমকে সরিয়ে ঐ জায়গা দখল করে বসে নানরকম খনিজ জিনিস। ফলে কোষের গড়ন ঠিক থাকলেও কোষের ভিতরের মাল মশলা বদলে যায়। সকল কোষেই একই ঘটনা ঘটে। তখনও মাছটার চেহারা মাছের মতই থাকে; কিন্তু প্রটোপ্লাজম দিয়ে গড়া মাছ নয়, পাথরের মাছ।


সোজাকথায় ফসিল। আজও যদি একটা ফসিল থেকে খুব পাতলা এক টুকরো কেটে নিয়ে আপনি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন তাহলে এর মধ্যকার কোষগুলোকে স্পষ্ট দেখতে পাবেন। এই ফসিলের পাহাড়গুলোকে বলা হয় পাললিক পাহাড়। পাললিক পাহাড়গুলো দেখতে বেশ মজার। বইয়ে যেভাবে পাতাগুলো থাকে, পাললিক পাহাড়গুলোতে সেভাবেই পাথরের পাত সাজানো থাকে।


মোটামুটি এ কথা বলা যায় যে, নীচের মাটি অথবা পাথর আগেরকার এবং উপরের মাটি অথবা পাথর হল পরের। যদি এরকম দেখা যায়, কোন ধরণের পাথরের স্তর সর্বদাই অন্য ধরণের পাথরের স্তরের উপর থাকে; কখনোই নীচে থাকে না। তবে একথা মনে করা অসঙ্গত নয় যে, নীচেরকার পাথরের স্তর উপরকার পাথরের স্তরের চাইতে পুরাতন। এমনভাবে পাললিক পাহাড়ের বিভিন্ন স্তরের পাথরের এবং ওতে বিদ্যমান প্রাণী বা উদ্ভিদদেহের বয়স নির্ধারণ হয়ে থাকে।


এভাবে দেখা যায়, শামুক গুগলি জাতীয় জন্তুগুলো সকলের আগে জন্মেছিল। মাছ কুমির প্রভৃতি জন্তু এর পরে এসেছে পৃথিবীর বুকে। শেষে স্তন্যপায়ী জন্তু এবং তারও পরে একেবারে সকলের শেষে মানুষের জন্ম হয়েছে। পাললিক পাহাড় দেখতে পাওয়া কোন কঠিন ব্যাপার নয়। কিন্তু মনে রাখবেন, যেখানেই এ ধরণের পাহাড় সেখানেই বহুযুগ আগে হয় নদী ছিল নাহয় সমুদ্র ছিল। ভূমিকম্প টূমিকম্পের মত রসাতল তলাতল কান্ড হয়ে পৃথিবী পৃষ্ঠের চেহারাটাই বদলে গেছে। সমুদ্র সরে গেছে, নদী সরে গেছে আর জেগে উঠেছে সেইসকল পাললিক পাহাড়। লক্ষ লক্ষ বছর আগে ঐ পাললিক পাহাড়ের গঠন উপাদান অর্থাৎ পাথর হয়ত কোন সমুদ্র বা নদী বা হ্রদের তলায় ছিল। আজ তার কাছে দাঁড়িয়ে যেন সেই লক্ষ লক্ষ বছর আগেকার ছবি হটাৎ চোখের সামনে দেখতে পাওয়া যায়। কি আশ্চর্য ! তাই না ?


দেখুন, বড় বড় রাজারা তাদের মৃত্যুর পর নিজেদের চিহ্ন রেখে যাবার জন্য কতই না ব্যস্ত হয়। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেসকল চিহ্নের কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এই যে মিশরের পিরমিড 5-6 হাজার বছরের পুরোনো, সেটাও একসময় থাকবে না। কিন্তু এই লক্ষ লক্ষ বছর আগেকার পোকা মনুষ্যজাতির জন্মের কতযুগ আগে কোনখান দিয়ে চলাফেরা করেছিল, তার পায়ের ছাপ আজও পাথরে খোদা রয়েছে। পৃথিবীর পুরাতন ইতিহাস আলোচনা করলে আমাদের অহংকার একটু কমেে। দু'দিন আগে আমরা কোথায় ছিলাম আর দু'দিন পরেই বা কোথায় থাকব ? এরপর আবার কোনদিন হয়ত আমাদের চেয়েও বেশী বুদ্ধিমান কোন জন্তু পথিবীতে আসবে। যেমন আমরা মাটি খুঁড়ে পুরাতন প্রাণীর হাড়গোড় আবিস্কার করি ঠিক তেমন ওরাও মাটি খুঁড়ে আমাদের হাড়গোড় বের করে আমাদের সমন্ধে যা বলবে তা আমাদের পক্ষে সুখ্যাতির বিষয় নাও হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:২৪
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×