somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতং পুলিশ, বিতং আসামী

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতং পুলিশ, বিতং আসামী

মেট্রপলিটন পুলিশ সার্ভিস। নিউ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, লন্ডন।

বৃটেনে পুলিশ অফিসার মানে পি সি বা পুলিশ কনস্ট্যাবল। বাংলাদেশে কনস্ট্যাবল মানে ঠোলা। বাংলাদেশে ঠোলা শব্দটি আবিষ্কার হয়েছে এরশাদের আমলে। তখন বাংলা কনস্ট্যাবলরা বন্দুক হাতে টহল দিতো যেখানে কোন বুলেট ছিলোনা। বুলেট ছাড়া বন্দুক মানে ঠোলা বন্দুক, সেই থেকে পুলিশ মানেই ঠোলা। এখানকার পুলিশ কনস্ট্যাবলদের অবস্থা বাংলা ঠোলাদের চেয়েও খারাপ। এদের কোনো বন্দুকই নেই। বৃটিশ পুরোনো কালচার, পুলিশ বন্দুক ব্যাবহার করেনা। তবে এখানকার যে কোন পুলিশ কনস্ট্যাবল বিসিএস ক্যাডার (বৃটিশ সিভিল সার্ভিস) এবং নামে কনস্ট্যাবল হলে প্রচুর ক্ষমতার অধিকারী এবং এরা অফিসার্স।

লন্ডন মেট্রপলিটান পুলিশ অফিসার পিসি আলি ইমার্জেন্সী রেসপন্স ইউনিটের অফিসার। তাদের কাজ হল যখন কল আসে তখন ‘বাত্তি জ্বালাইয়া, নিঁ-নোঁ সাইরেন বাজাইয়া’ অতি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কুংফু পান্ডা স্টাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা। একেকটা ‘ইউনিট’ মানে একটি গাড়ি ও দুইটি অফিসার। আজকের ইউনিটে আছে অফিসার চেরাগ আলি ওরফে শের এবং অফিসার রিচার্ড নিক্সন ওরফে রিচ।

মর্নিং শিফটে ইমার্জেন্সী ডিউটি শুরু হবার আগের একটি বিশেষ কাজ হল দ্রুত কফি শপে দৌঁড়। আজকের কফি শপ টাওয়ার ব্রীজের পাশের প্রেট (Pret A Manger)। গেরাইম্মারা টাওয়ার ব্রীজকে লন্ডন ব্রীজ বলে, লন্ডন ব্রীজ এইটা না, আরেকটা। রিচ নিলো কফি আর কুকি, চেরাগ নিল মধু দিয়ে দুধ চা। চিনিতে সুগার আছে, সুগার সাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর তাই মধুর ব্যাবস্থা। তারপর সেই সকাল থেকে এথা যায়, ওথা যায় কোন ইমার্জেন্সী কল আসেনা। ইমার্জেন্সী রেসপন্স অফিসার্স, অথচ ফ্যা ফ্যা করে ঘুর বেড়াচ্ছে। কাজকর্ম না থাকা কি যে যন্ত্রনার! অবর্ণনীয়।



লন্ডনের হল কি? এত বেলা হয়ে গেল অথচ এখনও কেউ কাউকে ছুরি মারলোনা? ক্যানারী হোয়ার্ফ-এর চল্লিশ তলা থেকে কেউ লাফ দেবার চেষ্টা করলো না? কোন বাড়ীতে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে ঠুঁইশ্শাইতেছে না, কিংবা গ্যাংস্টার্সরা ছুরি-বন্দুক সহ একে অন্যের উপর চড়াও হচ্ছেনা? আজব!

লন্ডনে পুলিশ কার গুলোর বেশীরভাগ বি.এম.ডাব্লিউ আই-থ্রী (i3) মডেলের। ইদানিং বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোতে পরিবেশবান্ধব ইলেক্ট্রিক গাড়ীর ব্যাবহার হচ্ছে। আই-থ্রী রেসপন্সের জন্য দারুন। ইলেক্ট্রিক মটর, শব্দহীন। এক্সেলেটরে চাপ দিলে তিন সেকেন্ডে এক লাফে স্পীড উঠে যায় ৬০ মাইল (৯৬কি.মি.)। আর আছে হার্মান কার্ডন (Harman Kardon)-এর সুপার-ফাইন মিউজিক সিস্টেম। আইফোন থেকে ব্লু-টুথে মমতাজের গান প্লে করা যায়।



পর দিন।
সকাল থেকে মেজাজ খারাপ। লন্ডনের বিখ্যাত বৃষ্টি, কীটনাশক স্প্রের মত পানির গুঁড়ো পড়ছে। বিরক্তির এক শেষ। গতকালকের মত আজও প্রেটে গেলো। রিচ নিলো কফি আর কুকি, চেরাগ নিলো ক্রোসোঁ(Croissant, গুলগুলা বিশেষ), সাথে মধু দিয়ে দুধ চা। থেমস্ নদীর পাড়ে পুলিশ কারের ভেতর বসে বসে লন্ডনের কীটনাশক বৃষ্টি, নদীর ঘোলা পানি আর ভেজা টাওয়ার ব্রীজ দেখে। গাড়ী পার্ক করেছে টাওয়ার ব্রীজ সংলগ্ন মিলেনিয়াম পিয়ার (Pier) বা ঘাটের পাশে যেখান থেকে সামনে পূব দিকে আপাদমস্তক টাওয়ার ব্রীজ দেখা যায়। পুলিশ, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ছাড়া অন্য কোন গাড়ীর এখানে প্রবেশ নিষেধ।



সিটে হেলান দিয়ে চায়ে চুমুক দিতেই শরীর ঝরঝরে হয়ে উঠে। চেরাগ বলে,
“লাইফ ইজ গুড।”
“এন্ড রেইনী” বৃষ্টির দিকে চেয়ে সংক্ষিপ্ত জবাব দিল রিচ, তারপর আবার চুপচাপ।
গান বাজছে। চেরাগের ফোন থেকে ব্লুটুথ দিয়ে গাড়ির মিউজিক সিস্টেমে বাজছে প্রিয় মমতাজের রোমান্টিক গান।

কল্পনা করা যায়? লন্ডনের পুলিশ কারে বাজে মমতাজের গান?

“ তোরে লইয়া উদাসী হইয়া, হানিমুনে যামু
রে ভাতিজার মামু
কক্ স’ বাজার সমুদ্রের পাড়
ঘুরিয়া বেড়ামু
হাত ধইরা গোছল কইরা
মুক্ত হাওয়া খামু…”


চোখ বুঁজে মমতাজের রোমান্টিক গানের সাথে চেরাগ চলে যায় কক্সস্ বাজারে। হাতে হাত রেখে সাগর পাড়ে হাঁটছে চেরাগ আর মমতাজ। হৃষ্টপূষ্ট হাত, ধরে আরাম। সেখানেও লন্ডনের মত কীটনাশক বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির জলে মমতাজের ভেজা শাড়ী সারা গায়ে লেপ্টে গেছে। দেখে চোখের আরাম। মমতাজের গলা সুন্দর, মসৃন, প্রশস্ত এবং মাংসল। হাত ছোঁয়ালেই শরীরে আরামদায়ক ইলেক্ট্রিক শক্ পাওয়া যায়। উফফ্. . . ফিলিংস!

“সীমস্ লাইক ইউ আর হ্যাভিং অরগাজম?” চকিতে চোখ মেলে দেখে রিচের দুষ্টু নীল চোখজোড়া। বিব্রত হয় চেরাগ।
“আরে নাহ্, রোমান্টিক গান। মন, প্রান এবং দেহ দিয়ে শুনছি।” বৃষ্টি এখনো কমেনি, তবে মেঘের ফাঁকে সূর্য্য উঁকি দিচ্ছে।
“কি বলছে গানে?” রিচের এই প্রশ্নে চেরাগ পড়ে বিপদে। গান পজ করে কোন মতে ইঙ্গানুবাদ করে দেয় এভাবে,

“Oh my nephew’s uncle
I will take you for a honeymoon…
We shall be walking down the beach,
hand in hand, we shall have us bathed
and we shall eat free air …”


অনুবাদে শেক্সপীয়ারিয় ভাব আনার জন্য কয়েকবার 'শ্যাল' শব্দের প্রয়োগ করলো চেরাগ। হঠাৎ ভাবলো, মুক্ত হাওয়া খামু’র ইংরেজী ‘ইট ফ্রী এয়ার’? - অনুবাদের করুন অবস্থা দেখে পেট ফেটে হাসি পায় চেরাগের। ফ্রী এয়ার না ওপেন এয়ার? বাতাস কি খায় না পান করে? কল্পনায় বাধা পড়ে,

“ওয়াও!” রিচের উদ্ভাসিত হাসি আন্তরিক নাকি ফাজলামো বোঝা যাচ্ছেনা। “নেফিউ’র আংকেলের সাথে প্রেম করাকি বেংগলি কালচার?”
চেরাগ বলে, “যাকে মন চায় তার সাথে প্রেম করা বেংগলি কালচার।”
“বেংগলি প্যারেন্টস ছেলেমেয়েদের প্রেম করতে দেয় না শুনেছিলাম, ভেরী স্ট্রিক্ট।”
“হুমম, প্রেম করলে প্যারেন্টসরা ছেলেমেয়েদের প্যাঁদানি দেয় ওটাও বেংগলি কালচার।” ভাবলেষহীন জবাব শুনে রিচ বোকার মত চেরাগের দিকে চেয়ে থাকে। আবার গান ছেড়ে চোখ বোঁজে চেরাগ।

বি.এম.ডাব্লিউ আই-থ্রী ছোটখাট গাড়ী হলেও সাউন্ড সিস্টেম পশ্। হার্মান কার্ডনের মিউজিক সিস্টেম, বারোটা স্পীকারস্ যার মধ্যে পাঁচটা ট্যুইটার আর পাঁচটা মিডরেঞ্জ; সামনে, পাশে এবং পেছনে। আরো আছে দুটো শক্তিশালী উফার এবং চারটা আরো শক্তিশালী এম্পস্ যা থেকে এত্তো নিখুঁত মিউজিক এনজয় করা যায় সেটা লিখে বোঝানো যাবেনা। ডলবি সারাউন্ড সিস্টেমে প্রিয়তমা মমতাজ শুধু চেরাগের জন্য গাইছে। চেরাগ হয় তপ্ত, উত্তপ্ত আর শিহরিত।

চেরাগ আর মমতাজ
মমতাজ আর চেরাগ…
“ বরিশালের কুউহুয়া কাটা, হাঁটিয় বেড়ামু
কুউয়াকাটা জোয়ার ভাটায়
প্রেম খেলা খেলামু…
তোরে লইয়া উদাসি হইয়া, হানিমুনে যামু
রে ভাতিজার মামু"


মমতাজের এই ভয়াবহ প্রেমের গান শুনে আবেগ আর উত্তেজনায় হট হয়ে চেরাগের যখন ঘর্মাক্ত হবার উপক্রম ঠিক তখনই বেরসিকের মত রেডিওতে সার্কুলেশন শোনা গেল. . . .
“- - সেলফ হার্ম / সুইসাইড ইনসিডেন্ট। ইমিডিয়েট রেসপন্স নীডেড।- -”

গান পজ করা হল।

একজন ভদ্রলোক ন্যাটওয়েষ্ট (National Westminster) ব্যাংকে গেছে লোন করতে। লোন এ্যাপ্রুভ হয় নি দেখে দুঃখে বিমূঢ়। যাবার আগে বলেছে, “এখন আত্মহত্যা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই।” ড্যাশবোর্ডের স্ক্রীনে পুরো বৃত্তান্ত রিসিভ হয়েছে। মুহুর্তে সাইরেন বাজিয়ে মার্কড পুলিশ কার লোকটির বাড়ীর দিকে উড়াল দিলো।

সুইসাইডের কথা শুনে ব্যাংক ম্যানেজার ডাবল-বিমূঢ়, যদি সুইসাইড নোটে লেখা থাকে “ম্যানাজার আমায় লোন দেয় নি, বিদায় পৃথিবী।” তাহলে কি হবে? পাগলটা এটা বোঝেনা যে লোন ডিসিশান মানুষে দেয় না, কম্পিউটার দেয়। রিস্ক নেয়া যাবেনা, তাই ম্যানেজার দিলো 999 কল। সেই 999 কল রিকল হয়ে এলো চেরাগের পুলিশ কারের স্ক্রীনে।

সাবজেক্টের নাম: টমাস নোওলস্ (Thomas Knowells),
জন্ম তারিখ: খিস্ খিস্ খিস্,
ঠিকানা: খিস্ খিস্ খিস্। (খিস্ খিস্ খিস্ মানে প্রাইভেট ইনফরমেশন জনসাধারণকে জানানো নিষেধ।)
“মি. নোওলস্ এর ওয়েলফেয়ার চেক ইমিডিয়েটলি প্রয়োজন। হাই রিস্ক। - -”

চা, কফি আর মমতাজের সাথে সমুদ্রে গোসল সব শিকেয় উঠলো।

বৃষ্টিভেজা লন্ডনের ট্রাফিক জ্যাম গলে রীতিমত উড়তে উড়তে শ্যাডওয়েল আর ওয়াপিং এর মাঝামাঝি এলাকায় উঁচু এক টাওয়ার ব্লকের সামনে গাড়ী থামলো। সেখান থেকে কয়েক কদম হেঁটে যেতে যেতে অপেক্ষাকৃত ঘণ কীটনাশক বৃষ্টিতে ভিজে কাক হয়ে যায় ওরা।

বাইশ তলা বিল্ডিংএর উনিশ তলায় থাকে টম। এসব উঁচু ব্লক সবসময় নোংরা থাকে কারন ধারণা করা হয়ে থাকে ব্লকড্ ফ্ল্যাট বিল্ডিংগুলোতে গরীবেরা থাকে, তাদের নাকি কোন সিভিক সেন্স নেই। লো লেভেল ক্রাইম যেমন ড্রাগস নেয়া, গাঁজা টানা, একটার সাথে একটায় কিলাকিলি, এমনকি চিপায় চাপায় মিলনে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি করে থাকে। এই বিল্ডিং সম্পর্কে জনসাধারণের ধারনা ভুল। এটা অনেক পুরোনো হলেও বেশ পরিষ্কার, ঝকঝকে তার উপর সুগন্ধি। ক্লীনার যাবার আগে স্প্রে করে গেছে। লিফ্টটা বেশী ছোট বিধায় ওজনে হাল্কা। কয়েক সেকেন্ডে উনিশ তলায় পৌঁছে যায় পুলিশ। লিফট থেকে বেরিয়ে ডানের ফ্ল্যাট টমাসের। ওক কাঠের দরজা, এত সুন্দর! বজ্রকঠিন কাঠ অথচ মসৃন উপরিভাগ। ধরে ধরে আদর করে চেরাগ।

“দরজার সাথে সেক্স না করে নক্ করো, আমরা সুইসাইড ভিকটিম দেখতে এসেছি।” রিচ বললো।
“ওহ্, ইয়েস ইয়েস। সুইসাইড ভিকটিম!”

নক্ নক্ নক্!

দরজা খোলার পর ফ্ল্যাটের মালিক ভদ্রলোক বললো টমাস এখানে থাকেনা। টমাস তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে তিন মাস আগে সাউথ লন্ডনে মুভ করেছে। “আমি আর আমার আদার-হাফ থাকি শুধু ফ্ল্যাটে।” বলে পাশের ভদ্রলোকের কাঁধে হাত রাখলো। দুই ভদ্রলোকের মধ্যে কে জামাই কে বৌ বোঝা যাচ্ছেনা। ভেতরে ভেতরে খুশীতে ফেটে যায় চেরাগ। সুইসাইডাল সাবজেক্ট টম এই বাসা ছেড়ে দিয়েছে। সাউথ লন্ডনের ঠিকানা নিয়ে বিদায় নেয় চেরাগ আর রিচ। এখন ওটা সাউথ লন্ডন পুলিশের মাথাব্যাথা। ইনভেস্টিগেশন না থাকা যে কি আনন্দের।

বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে দেখে কীটনাশক স্প্রে বৃষ্টি থামেনি। কি মনে করে আকাশের দিকে তাকায় চেরাগ, মুখে একদলা বৃষ্টির পানি ঢুকলো। গ্যারাইম্মার মত হা করে আকাশপানে তাকানোর জন্য নিজেকে তিরষ্কার করে।

গাড়ীতে বসে দেখে স্ক্রীনে আরেরকটা ইনসিডেন্টের খবর।
“এক বিল্ডিংয়ের নীচে বসে দুজন আদম ড্রাগ নিচ্ছে, বাসিন্দারা ভীত।” ইনসিডেন্ট লোকেশন: পোর্শিয়া ওয়ে, ই থ্রী। মাইল এন্ড (Mile End) লেইজার সেন্টারের উল্টোদিকে। E3 হচ্ছে পোষ্ট কোডের প্রথম অংশ।

আবার উড়ে গিয়ে গাড়ী থামানোর আগেই দেখে দুই আদম পালাচ্ছে, একজন বাংলা আরেকজন হোয়াইট, ডেস্ক্রিপশন পুরো মিলে গেছে। বৃষ্টি থেমেছে, চেরাগ দ্রুত নেমে কমান্ড ছোঁড়ে, স্টপ! দুজন থেমে গেলো। চেরাগ হোয়াইট ছেলেটাকে সার্চ করলো, রিচ বাংলা ভাই কে।

এখানে উল্লেখ্য, কোন ব্যাক্তিকে সার্চ করতে হলে নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করতে হয়, তা না হলে ওটা হবে ইললিগ্যাল সার্চ। পরে বলবে গা ছুঁয়েছে, কমন এ্যাসাল্ট, তখন পুলিশের চাকরী নিয়ে টানাটানি। লিগাল সার্চের পয়েন্ট গুলো হল:- অফিসার সবার আগে তার গায়ে সেঁটে থাকা ক্যামেরা অন করবে। ব্যাক্তিকে বলতে হয় তাকে ডিটেইন করা হয়েছে, তারপর কোন আইনে সার্চ করা হচ্ছে, গ্রাউন্ড (কোন গ্রাউন্ডে সার্চ করা হচ্ছে), অবজেক্ট (কি জিনিষ খোঁজা হচ্ছে), পুলিশের নিজের পরিচয় দিতে হয়, কোন পুলিশ ষ্টেশান থেকে আসা সেটা বলতে হয়, এই সার্চের বিস্তারিত তথ্যের কপি পাবার অধিকার তার আছে সেটা জানান দিতে হয়, তারপর একটা নির্দিষ্ট ছকে বডি সার্চ করা হয়। সবকিছুর অডিও-ভিজুয়াল রেকর্ড হতে থাকে। এই রেকর্ড সেইভ করলে সাত বছর পর্যন্ত সেইভ্‌ড থাকে। সিরিয়ার ব্যাপার স্ব্যাপার হলে আজীবন।

হোয়াইট ছেলেটা প্রথম থেকেই পুরোপুরি কম্প্লাইয়েন্ট, সহজে সার্চ করতে দিলো। সার্চ রেজাল্ট নেগেটিভ, চেরাগ জানতো কিছু পাবেনা কারন ড্রাগ অলরেডি নিয়ে নিয়েছে। শীতকাল বা বৃষ্টি বাদলের দিনে ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য ড্রাগিরা বিল্ডিংয়ের ভেতর ঢুকে আরাম করে ড্রাগ নেয়। ছেলেটার নেইম চেক করে দেখে নাহ্, সে ওয়ান্টেড না, সুতরাং সে মুক্ত। চলে যেতে পারে। কিন্তু সে গেলোনা, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে।

এদিকে রিচ (রিচার্ড নিক্সন) বাংলা ভদ্রলোকের ডিটেইল নিয়ে দেখলো সেও নো ট্রেস, সুতরাং সে চলে যেতে পারে…
কিন্তু রিচ কিছু বলার আগে চেরাগ বাংলা ভাইকে কমান্ড ছোঁড়ে,
“ইউ। স্টপ!”
তারপর দ্রুত কয়েক কদম এগিয়ে তার সামনে এমভাবে দাঁড়ায় যেন সে পালাতে না পারে।
“ইউ কুড বি এ্যারেষ্টেড ফর গিভিং ফলস্ ডিটেইলস টু পুলিশ।”
চেরাগ জানায় কিভাবে লোকটা রিচকে বোকা বানিয়েছে।

লন্ডন মেট্রপলিটন পুলিশ সার্ভিসে বহুদিন হল চেরাগ কাজ করছে। এতবড় বাটপারির অভিজ্ঞতা আজ প্রথম। ভদ্রলোক তার নাম বলেছে ‘রুকসানা পারভীন’। রিচ বেচারা জানেনা এটা পুরুষের নাম নয়। সে তার ট্যাবলেটে নাম আর জন্ম তারিখ বসিয়ে দেখে “নো ট্রস” অর্থাৎ সে ফেরারী আসামী নয়, তাই তাকে চলে যেতে বলার আগে চেরাগ তাকে থামায়।

দেশী ভাইটি এতবড় বদমায়েশী করবে স্বপ্নেও ভাবেনি চেরাগ। মেজাজ টং হয়ে গেলো, কিন্তু কোনওভাবে সেটা প্রকাশ করা যাবেনা। বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে শান্তভাবে বলে,
“লিসেন, ইউ গট টু বি অনেষ্ট উইথ আস। হোয়াট ইজ ইওর নেইম?”
“রুকসানা পারভীন” বাংলা ভাই'র জবাব।
“হোয়াট আর ইউ? মেইল অর ফিমেইল?” চেরাগের সারকাস্টিক প্রশ্ন।
“হোয়াট আর ইউ সেয়িং অফিসাহ্?” এমন ভাবে প্রশ্ন করলো যেন চেরাগ একটা বেআক্কেল।
শীতল কন্ঠে চেরাগ বলে, “হোয়াট ইজ ইওর টাইটেল এন্ড ফুল নেইম?”
“মাই টাইটেল ইজ ‘মিষ্টার’, মাই ফুল নেইম ইজ রুকসানা পারভীন।” চোখে চোখ রেখে এমনভাবে ‘মিষ্টার’ বললো যেন বাপের দিব্যি দিচ্ছে।
“ইজ দ্যাট ইওর নেইম?”
“দ্যাটস্ মাই ফ্যামিলী নেইম।”
“দেন হোয়াট ইজ ‘ইওর’ নেইম?”
“দ্যাট ‘ইজ’ মাই নেইম অফিসাহ্‌।”
“দ্যাটস এ ফিমেইল নেইম।” শীতল কন্ঠে বলে চেরাগ।
“বাংগালি নি বাইসাব?” ফিক করে হেসে সিলেটির আঞ্চলিক উচ্চারণে বললো সে। চেরাগের আবার মেজাজ গরম হচ্ছে, পুলিশকে কি ভাবে এরা? কিন্তু কোন প্রকার রাগ প্রকাশ করা যাবেনা। ধৈর্য, ধৈর্য। রেডিওতে কন্ট্রোলকে জানায় ফিংগারপ্রিন্ড রীডার পাঠাতে যার কোড নেইম ইনক্‌। অন্য একটা ইউনি ইনক্‌ মেশিন নিয়ে আসবে কিছুক্ষনের মধ্যে।
“আমি বাংলাদেশী,” চেরাগ পরিষ্কার বাংলায় বলে, “একজন মহিলার নাম কেন ব্যাবহার করছেন?”
“দ্যাট ‘ইজ’ মাই নেইম” মিনমিনে গলায় জবাব দেয় ভদ্রলোক।

লোকটা হঠাৎ চুদুর বুদুর শুর করে দিয়েছে। এবার ইংরেজী বলছে ইষ্ট-লন্ডন এ্যাকসেন্টে। একবার বলে আমাকে যেতে দাও, আমি অসূস্থ্য। ডাক্তারখানায় যেতে হবে, এ্যাপয়েন্টমেন্টের টাইম হয়ে গেছে। আবার বলে আমি হার্টের রুগী। তারপর বলে আমার বাম হাত, বাম পা অবশ হয়ে আসছে। চেরাগ জানে ইনক্‌ মেশিন আসছে দেখে ভেতরে ভেতরে অস্থির। এক পর্যায়ে সত্যি কথা বললো,
“অফিসাহ্‌, আমার শরীর অনেক খারাপ। দুই তারিখে আমার কোর্টে ডাক পড়েছিলো। যেতে পারিনি। আমি এত অসুস্থ্য, এত অসুস্থ্য যে বিছানা থেকে নড়তে পারি নি। আমি যদি এই মুহুর্তে হাসপাতালে না যাই, মারা যাবো। আমার মনে হয় হার্ট এ্যাটাক হচ্ছে, বুকের ব্যাথা সহ্য হচ্ছেনা অফিসাহ্‌। আমি দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছিনা।” খুব গুছিয়ে চমৎকার ইংরেজীতে বললো জনাব রুকসানা পারভীন ভাই। কোর্ট হাজিরা মিস্ করেছে, সুতরাং কোর্ট থেকে ওয়রেন্ট ইস্যু হয়েছে। সে এখন ফেরারী আসামী। ওয়ান্টেড।
চেরাগও গোছানো ইংরেজীতে অফার করে,
“ব্যাক-স্ট্যাক হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দিই তাহলে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারবো।”
“নো নো, ইটস ওকে। ইটস ওকে।” এখন আর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই রুকসানা ভাইয়ের। এবার লোকাল বাংলায় বলে,
“অফিসাহ্, আমি হাঁছা খইরাম, মিছা মাতরাম না। আমার আরো নাম আছে, এইযেন দরুক্কা মিয়া, এইযেন দরুক্কা আলি। ডাখ্‌নামও আছে, এইযেন দরুক্কা আংখূর….” মিষ্টি ফল আঙ্গুরকে আংখূর বলে তিতা বানায়া দিলো। চেরাগ থামিয়ে দেয়,
“জানি, প্রচুর ফলের নাম বলবেন। পুরো নাম বলেন, জেনুইন নাম।”
“কলা মিয়া” ফলের নামে নাম। চেরাগ দীর্ঘশ্বাস গোপন করে।
কলা সাহেব একে একে সব বলতে লাগলো গড় গড় করে। রিচকে বৌয়ের নাম, জন্মতারিখ দিয়েছে। Kola Miah, তারপর জন্ম তারিখ দিতে বিস্তারিত চলে এলো চেরাগের ট্যাবলেটে। নাহ্‌ এবার আর মিথ্যা বলেনি।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট রীডার আসার আগেই জানা গেলো কলা মিয়া ওরফে রুকসানা পরভীন ভাইজান ওরফে কলা ভাইজান ওয়ান্টেড। ইনার লন্ডন ক্রাউন কোর্ট থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে।

“আপনিতো দেখি ভিআইপি আসামী। ক্রাউন কোর্টের ওয়ান্টেড, বিরাট ব্যাপার।” কলা মিয়াকে এ্যারেষ্ট করে কাষ্টডিতে বুক করে চেরাগ, কাল সকালে কোর্টে পাঠানো হবে।

বৃটেনের কোন নাগরিক আইডি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য নয়। একইভাবে পুলিশও ফিঙ্গারপ্রিন্ট রীডার বয়ে বেড়াতে বাধ্য নয়। সবার তথ্য ন্যাশণাল কম্পিউটার ডাটাবেসে আছে। কি দরকার আজাইররা প্লাস্টিকের পিছে টাকা নষ্ট করার? কেউ উল্টাপাল্ট নাম দিচ্ছে সন্দেহ হলে রীডার আনিয়ে চেক করালে সব বের হয়ে যায়। পূর্ণ ক্ষমতা থাকা সত্বেও ব্যাক্তিগতভাবে চেরাগ কারো ইমিগ্রেশন চেক করার পক্ষপাতি না। মনের গভীরে গোপন অহংকার কাজ করে,
“ইমিগ্রেশনের কাম ইমিগ্রশনঅলারা করবে, আমি করুম ক্যারে?”

মনে মনে কলা মিয়ার উপর মহা বিরক্ত চেরাগ। লোকটি মেয়ে মানুষের নাম দিয়ে ইংলিশ অফিসারকে বোকা বানিয়ে এ্যারেষ্ট থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিলো। পাশে বাংলাদেশী অফিসার দাঁড়ানো সেটা দেখবেনা? এইটা বুঝলোনা আমি বাংলা বুঝে ফেলবো? হালারপূত হালা?

“ছিঃ ছিঃ এ আমি কি ভাবলাম?” চেরাগ মনে মনে নিজেকে ভৎসনা করে রুকসানা ভাইয়াকে ‘হালারপূত হালা’ বলার জন্য। একজন সিভিল সার্ভেন্ট রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিকের প্রতি অশোভন আচরণ করতে পারেনা, মনে মনেও না। ফেরারী আসামী হয়েছেতো কি হয়েছে?

আবার ওরা লন্ডনের রাজপথে। চুপচাপ, গান বন্ধ। রিচ নীরবতা ভাঙলো,

“একজন ওয়ান্টেড অফেন্ডার আমাকে সাকসেসফুলি বোকা বানাতে পারতো। থ্যাংক ইউ।” রিচের কন্ঠে কৃতজ্ঞতা, তারপর আবার বললো, “প্লে ইওর মিউজিক মেইট্!”
“কোনটা?”
“ওই যে, তোমার ফেভারিট আর্টিস্টের রোমান্টিক গান, Oh my nephew’s uncle, I will take you to sea beach for a honeymoon…!”
“ওহ্ ইয়েস ইয়েস। মমতাজ, মাই সুইটহার্ট।” চেরাগ আইফোন থেকে আবার প্লে করে।

মার্কড পুলিশ কার এগিয়ে যায়। আবার কল আসবে, ওরা রেসপন্স করবে। ছুটে যাবে. . .
“লন্ডন নগরী রাখিবো সিকিউর।” লন্ডনের বিখ্যাত বৃষ্টি, কীটনাশক স্প্রের মত পানির গুঁড়ো আবার ঝরতে শুরু করেছে।

গান শুরু হয়, চেরাগের মনে প্রেম ফিরে আসে। চলে যায় কক্সবাজারে, ওখানেও বৃষ্টি হচ্ছে।

চেরাগ আর মমতাজ
মমতাজ আর চেরাগ…

মমতাজের বিশাল শরীর পেঁচিয়ে কুলোতে পারছেনা অপর্যাপ্ত ভেজা শাড়ি। এখানে ওখানে উম্মুক্ত। আর চেরাগ হয় তপ্ত, উত্তপ্ত, এবং শিহরিত. . .
“ সিলেটের জাফলংয়ে যাইয়া, কমলা খাওয়ামু
বাবা শা জালালের মাজার
বাবা শা জালালের মাজার, সেলাম কইরা আ মু
তোরে লইয়া উদাসী হইয়া
হানিমুনে যামু
রে ভাতিজার মামু… ”

গানটা শুনতে হলে এখানে দেখুন: https://youtu.be/ceXBqBqKKPQ

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইনকিলাবের বীজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪


সদ্য শিশু জন্ম নিয়ে সদ্য খুলেছে আঁখি,
মা বলে, কথা দাও বাছা—হাদি হবে নাকি?
শিশুর মুখে কান্নার রোল, হাদি হবার দায়,
বাবা বলে, এই তো হাদি—বুকে আয়, বুকে আয়।

ঘরে ঘরে আজ হাদির... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৭


গত মে মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফটোকার্ডে দেখানো হয়েছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখন পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। গত ১১... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দ কুতুবের পোষ্ট: ভারতের করণীয় কি কি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৩



বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য ভারতের করণীয় কি কি?

০) শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো।
১) বর্ডার থেকে কাঁটাতারের ফেন্চ তুলে নেয়া।
২) রাতে যারা বর্ডার ক্রস করে, তাদেরকে গুলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×