somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন ডেস্কে বসে থাকতে হয়। বোরিং লাইফ স্টাইল। আমার বিয়ের সময় আমার ওজন ছিল ৩৫ কেজি। এক সময় ওজন বাড়ানোর জন্য ডাক্তার এক কাপ দুধে দুই চামচ সয়াবিন তেল খেতে সাজেষ্ট করেছিল। খেয়েছিলাম বিয়ের আগে কিন্তু স্বাস্থ্য হয়নি তখন। বড় ছেলে হওয়ার পর থেকেই ওজন বেড়ে গেল। আমার দুই ছেলে আলহামদুলিল্লাহ। দুইটাই সিজারে জন্ম। সেই যে ভুঁড়ি বড় হল আর কমেনি।

১। এটা সকালের খাবার



গত বছর হতে আমার পায়ের তালু ব্যথা। এত ব্যথা ফ্লোরে হাঁটতে পারি না নরম স্যান্ডেল ছাড়া। তাছাড়া হাঁটুতে ব্যথা , কিছুক্ষণ বসার পর আর হাঁটতে পারি না। খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। এই সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম, হাঁটুতে ক্ষয় শুরু বললো। ওজন কমানোর কথা বলে নাই। ঔষধ দিল। কিন্তু তবুও বসে কিছুক্ষণ আর হাঁটতে পারি না। আবার দাঁড়িয়ে রান্না করতে গেলে মাজায় ব্যথা। আমি কিন্তু তখনো রোজ এক ঘন্টা হাঁটি। খাওয়া দাওয়ায়ও কিছু পরিবর্তন আনি। কিন্তু আশানুরূপ ফল তখন পাইনি। গত জানুয়ারীর বিশ তারিখে একটা ওজন মেশিন গিফট পেয়েছিলাম। বাসায় ওজন মেপে দেখি ৫৯ একটুও কমেনি। মনের মাঝে জিদ বেড়ে গেল। যেভাবেই হোক ওজন কমাতে হবে। নিজেই ডায়াট করতে শুরু করলাম। আগে দুইটা রুটি খেতাম। তারপর রাতে আর সকালে একটা রুটি খেতে শুরু করলাম। হাঁটার সাথে এক্সারসাইজও করলাম। দুপুরে অল্প ভাত খেতাম। তবে আমি দুইবেলা চিনি দিয়ে রং চা খেয়েছি একটা টোস্ট এর সাথে। আবার অফিসেও খানাদানার আয়োজন বেশ জোড়েসোড়েই ছিল। ফেব্রুয়ারী শেষ দিকে ওজন মেপে দেখি ৫৬ তে আসলে। খুব খুশি হয়েছিলাম তখন।

২। মিড মর্নিং ফল



এর মাঝে এই গ্রুপের সাথে সংযুক্ত হলাম। আগেও এক আপু বলেছিল চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে। নিই নি বিভিন্ন কারণে। আমি বিজি মানুষ পারবো কীনা ভাবতে ভাবতে রোজা এসে গেল। এখানে দেখলাম ত্রিশ দিনের চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছে, বিসমিল্লাহ্ বলে রাজী হয়ে গেলাম। গ্রুপের নাজিরা আপুর তত্ত্বাবধানে শুরু হলো ডায়াট জার্নি। এই জার্নিটা শুধু নিজের জন্য। নিজেকে ভালোবেসে। আমি যৌথ পরিবারের সদস্য। চারিদিকে কত চোখ উৎসুক দৃষ্টিতে বাপরে। তারপরও সবার নজর উপেক্ষা করে ডায়াট জার্নি চালু রেখেছি। এখন আমার পায়ের তলায় ব্যথা নেই। হাঁটুতে ব্যথা নেই। কয়েক ঘন্টা বসার পরও উঠে দাঁড়াতে পারছি, স্বাভাবিক হাঁটতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ। আগে রিক্সায় টেনে তুলতো অন্যরা, এখন উঠতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ।

৩। দুপুরের খাবার



ছবি তুলতে গিয়ে কত কথা ইয়া মাবুদ। তাসীনের বাপে আড়চোখে তাকায়। দেবর উল্টা পাল্টা কথা কয়। তাসীন তামীমও বিরক্ত, মা কী হইছে এত ছবি তুলো ক্যান। আমি আর তাদের আসল কথা বলি না। যে যাই বলুক আমি শুনবো না। আমি অন্যায় কোনো কাজ করছি না তো।

৪। এক কাপ চা



বয়সের সাথে ওজনও বাড়ে এটা স্বাভাবিক। ওজন বাড়ার সাথে সাথে নানাবিধ রোগ ধরা দেয় শরীরে। রোগের কারণে শান্তির মা পালায় সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর অই পাড়ে। ওজন কিছুদিন পর ৫৪ । দুই কেজীর মত কমেছে আলহামদুলিল্লাহ। আরও চার কেজি কমাব সিদ্ধান্ত নিই। আল্লাহ যদি সহায় হন।

৫। রাতের খাবার



এই ডায়াট জার্নিটা একটা আনন্দ উৎসবের মত মনে হয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেয়েছি। ভাজাপোড়ায় হাত দিই নি। রমজানের প্রথম দিন একটা পিঁয়াজো আর একটা বেগুনি খেয়েছি আর ছোলা। আর হাত দিইনি। একটা রুটি রাতে সাথে সবজি অথবা ডিম অথবা মাছ ছিল। সেহরিতে এক কাপ ভাত মেজারমেন্ট কাপে। ব্যস। অনেক সুস্থ বোধ করছি। গত দুইমাস যাবত আমি গ্যাসের ঔষধ খাইনি। বর্তমানে কোনো ঔষধই খাচ্ছি না। আলহামদুলিল্লাহ। (এটা ডায়াট জার্নির শুরুর কথা)

১। ১৭ তারিখের সকালের খাবার



গত জুলাই মাসে আমাদের ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে অনেকগুলো টেস্ট করিয়েছিলাম। সেই টেস্টে আমার কোলেস্টরেল বেশী আসছে, ফ্যাটি লিভার গ্রেড -২, হিমোগ্লোবিন ৯, আর থাইরয়েড বা ডায়াবেটিস ছিল না। এখন কী অবস্থা জানি না। আশা করি কমেছে হয়তো।

২। মিড মর্ণিং ফল



এই ডায়াট আনন্দ উৎসবের সঙ্গী হতে পেরে খুব ভালো লেগেছিল। গ্রুপের নাজিরা আপুর ডায়াট চার্ট অনুযায়ী চলেছি আশাকরি বাকিদিনও নিয়ম মেনে চলবো ইংশাআল্লাহ। প্রতিদিন ছবি পোস্ট দেয়ার পর অপেক্ষায় থাকতাম আপু না জানি কী বলে হয়তো বেশী খেয়ে ফেলছি নাকি! একটা ভয়ও কাজ করতো। যখন বলতো আপু খাবার সুন্দর হয়েছে মনে শান্তি লাগতো।

৩। এক কাপ চা



চাকুরী করে ডায়াট অনুযায়ী চলা মেয়েদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আসলে মেয়েদের আপন বলতে তারা নিজেরাই। অসুস্থ হলে দুই একদিন সেবা পাবে তারপর সবাই অবহেলা করবে। আর এখনকার ছেলেমেয়েরা মা বাবাকে সেবা করবে এ চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিতেই হয়। স্বার্থপর দুনিয়াতে মেয়েদের আপন মেয়েরাই আর তার মা বাবা। তাই মেয়েদের নিজেদেরকে আগে ভালোবাসতে হবে। সবার সেবা করতে পারলে নিজের সেবাটাও নিজের হাতেই তুলে নিতে হবে। নিজেকে ভালোবাসা একটা কঠিন কাজ মেয়েদের জন্য। অনেক স্যাকরিফাইস করতে হয়। অনেক কথা শুনতে হয়। বাঁকা চোখে দেখে মানুষ। আগে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না। কিছু কিনতে পারতাম না। যখন দেখি আমার চাহিদা অনুযায়ী কিছুই পাচ্ছি না তখন মনে জেদ ধরলো। আর কিছুই এখন হাজবেন্ডের কাছে চাই না। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেই কিনি। পরনির্ভরশীল হয়ে থাকবো না আর। দিলে দিলো না দিলে নাই। এত সব চিন্তার মাঝে আর যাই না। নিজেকে ভালো রাখাই এখন আমার প্রথম কাজ। সরি লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেল।

৪। দুপুরের খাবার



ডায়াটের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ নিই আবারও তখন ওজন ৫০.০৫
মোটামুটি ওজন কমেছে আলহামদুলিল্লাহ। প্রায় দশদিন ছিল ফাস্টিং পর্ব। ফাস্টিং থেকেও ওজন কমেছে স্লো গতিতে।

আমার আদর্শ ওজন হলো ৪৫, ৪৫ এ আসতে আরও ৫ কেজি কমাতে হবে। তারপর তৃতীয় চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম।

চোখের সামনে কত মজার মজার খাবার সবাই খায়। আমি তাকিয়ে দেখি । মনকে মানাতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি এর চেয়ে বড় নিয়ামত আর পৃথিবীতে নাই। আল্লাহর কাছে শোকর গুজার করছি।

৫। বিকেলের রং চা



২৫ দিন ডায়াটের পঅর ওজন ৪৯.৮০ কেজি। আলহামদুলিল্লাহ ধাপে ধাপে অল্প অল্প কমছে। চ্যালেঞ্জ না নিলে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারতাম না। তাই প্রথম চ্যালেঞ্জ শেষে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। আমার আরো তিন চার কেজি কমানো প্রয়োজন। তাই তৃতীয় চ্যালেঞ্জেও নাম লিখিয়েছি। ডায়াট মেইনটেইন করা অনেক কঠিন ব্যাপার। । গ্রুপের নাদিরা আপু, শামিমা আপু আর আপনারা যারা মডারেটর ও সদস্য আছেন সবাই মিলে উৎসাহ দেয়াতে ডায়াট করতে পারছি এবং ওজন কমাতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ।



ঘুমও ঠিক করতে পারতেছি। এখন ১১, সাড়ে এগারোর মধ্যে ঘুমোতে যাই। আমি সন্ধ্যার নামাজ, কোরআন পড়ে, এক্সারসাইজ করি চল্লিশ মিনিট, তার পর ইশার নামাজ পড়ে রাতের খাবার খাই। রাতের খাবার সাড়ে আটটার মধ্যে সাড়ি। ভোরে ফযরের নামাজ পড়েই এক ঘন্টা হেঁটে আসি। সুস্থ থাকার জন্য এই শ্রমটা দিতে হয়। আগে প্রতিদিন গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেতে হত সাথে একটা এন্টাসিড তো নেয়াই লাগতো। পায়ের গোড়ালী হাঁটু, পায়ের তলায় ব্যথার জন্য পা ফেলতে পারতাম না। রান্নাঘরে বটিতে বসে কাজ করতে পারতাম না। কমোড ছাড়া বসতে পারতাম না। গ্রামে গেলে কষ্ট হতো লো কমোডে বসতে। আপাতত এসব সমস্যার সমাধান হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

৬। রাতের খাবার

ডায়াটের চ্যালেঞ্জ শেষে ওজন ছিল ৪৬। মেইনটেইনে এসে আরও কমেছে ৪৪ আর ৪৫ এর মাঝে ওজন বেঁধে রাখছি এখন পর্যন্ত। প্রসেস ফুড বাদ দিছি, মাঝে মাঝে চিট ডে পালন করি। এক বেলা খাওয়া বেশি হলে পরেরবার কম খাই, এভাবেই চলছে মেইনটেইন পর্ব আলহামদুলিল্লাহ। গত রোজায় ডায়াট শুরু শেষ করেছিলাম কোরবানীর ঈদের আগে প্রায় তিন মাসে ১৩ কেজি কমাইছিলাম। একদিন রোজায় ডায়াট খাবারের ছবি পোস্ট করব নে। অনেকেই উপকৃত হতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×