
১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি লাভ করেন। লুথার এক ভাষনে বলেছিলেন- 'আই হ্যাভ আ ড্রিম'। কথাটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। লুথারের স্বপ্ন পূরন হয়নি। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তাকে গুলি করে হত্যা করে। অবশ্য আসামী একমাসের মধ্যে ধরা পড়ে। তার ৯৯ বছরের জেল হয়। কারাগারেই আসামীরে মৃত্যু হয়। একবার লুথার কিং তার স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে আসেন। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন- জহরলাল। মহাত্মা গান্ধীর সাথে লুথারের দেখা হয়নি। ততদিনে গুলি করে গ্রেট মহাত্মা গান্ধীকে স্বর্গবাসী করা হয়েছে। ১৯৬৫ সালে আমেরিকা ভিয়েৎনাম যুদ্ধ শুরু হয়। শান্তি প্রিয় লুথার কিং এই যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন। লুথারকে যখন হত্যা করা হয়, তখন নেলসন মেন্ডেলা কারাগারে ছিলেন। মেন্ডেলা এবং লুথারের স্বপ্ন ছিলো- কালো আর সাদা মানুষের বৈষম্য দূর করা।
লুথার কিং মোট ৩০ বার জেলে যান।
জেলে অবসর সময়ে তিনি বই লিখতেন। তিনি মোট পাচ টা বই লিখেছেন। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় বইয়ের নাম- 'হোয়াই উই কান্ট ওয়েট'। লুথার কিং এর মাকেও গুলি করে হত্যা করা হইয়েছিলো। আসামী ধরা পড়ে। আসামীর সাজা হয় ফাঁসি। কিন্তু লুথার কিং এর পরিবার থেকে বলা হয়, আসামীকে ছেড়ে দেন। ক্ষমা করে দেন। আদালত আসামীকে ছেড়ে দেয়নি, ক্ষমাও করেনি। তবে ফাঁসি না দিয়ে আমৃত্যু কারাবাস দেয়। আমাদের হাদির খুনী যদি ধরা পড়ে তাহলে তার অবশ্যই ফাঁসির হুকুম হবে। তারপর আসামী আপিল করবেন। হয়তো ফাঁসি হবে না। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। কারাগারে অনেক কষ্ট নিশ্চয়ই। তারপরও মানুষ অন্যায় করে এবং কারাগারে যায়। অনেক অন্যায় করেও মানুষ হাসে, হাসায় এবং বেঁচে থাকে। এদিকে এক জুলাই যোদ্ধা মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেয়েটা ঘুমিয়ে ছিলো। বাসায় পুলিশ গিয়ে মেয়েটাকে গ্রেফতার করে। মেয়েটা নাকি এক ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে অনেক টাকা নিয়েছে। এই মেয়েটা রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে বলেছিলো- লীগ মারবো। রাস্তায় বেড়িয়েছি, লীগ মারার জন্য। কই? লীগ কই?
২। মেয়েটার নাম জ্যোতি রায়।
সহজ সরল সুন্দর একটা মেয়ে। আমাদের সাথে পড়তো। পড়াশোনায় ভীষন রকমের ভালো। জ্যোতিকে দেখলে মনে হতো তার জীবনে লেখাপড়া ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। কোনোদিন ক্লাস ফাঁকি দেয়নি। কলেজের এক অনুষ্ঠানে জ্যোতি শাড়ি পরে আসে। জ্যোতিকে শাড়ি পরা দেখে মিজান মুগ্ধ হয়ে যায়! মিজানও আমাদের সাথে পড়তো। সেদিন মিজান কোনো রকম ভনিতা না করে সরাসরি বলে ফেলল- জ্যোতি আমায় বিয়ে করবে? জ্যোতি বললো, না আগে প্রেম করবো। ছোটবেলা থেকেই আমার প্রেম করার খুব শখ। প্রেম করে বিয়ে করবো। তারপর শুরু হয় ওদের প্রেম পর্ব। প্রেমে অনেক মজা আছে, আনন্দ আছে। মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, প্রেমের সময়। প্রেমে কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। দায়-দায়িত্ব না থাকলে উপভোগ করা যায় নিশ্চিন্ত মনে।
এরপর জ্যোতি আর মিজানের প্রেম কাহিনী সবার জানা হয়ে যায়।
অস্থির প্রেম তাদের। প্রেম মানেই তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, ফুচকা খাওয়া, পার্কে-লেকে বসে গল্প করা, রিকশায় করে ঘুরে বেড়ানো, রাত জেগে মোবাইলে কথা বলা, বিশেষ বিশেষ দিনে ঘুরতে যাওয়া। টানা তিন বছর জ্যোতি মিজান প্রেম করলো। তাদের প্রেম কি বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে? কারন জ্যোতি হিন্দু। মিজান মুসলমান। প্রেম করার সময় কি তাদের মাথায় এই বিষয়টা আসে নাই? হিন্দু মুসলিম বিয়ে হয় না। হয় মিজানকে হিন্দু হতে হবে, নয়তো জ্যোতিকে মুসলমান হতে হবে। যুগ যুগ ধরে হিন্দু মুসলিমের লড়াই চলছে। এই আধুনিক যুগে এসেও হিন্দু মুসলিম লড়াই হচ্ছে। ধার্মিকেরা সুযোগ পেলেই হিন্দুদের মুর্তি ভেঙ্গে ফেলে। পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ধর্মের কারণে। কয়েকদিন আগে আমাদের দেশে একজনকে পিটিয়ে এবং পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়। ধার্মিকেরা বদ্ধ উন্মাদ।
জ্যোতি এবং মিজানের বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ে দুইভাবে হয়। মুসলিম নিয়মে এবং হিন্দু নিয়মে। গতকাল জ্যোতি আর মিজান আমাদের বাসায় এসেছিলো। প্রায় ছয় বছর পর দেখা। জ্যোতি আর মিজানের দুই মেয়ে, এক ছেলে। অনেকদিন পর ওদের দেখে ভালো লাগলো। আজকাল তো ঘরসংসার দীর্ঘদিন টিকে না। এরা হিন্দু মুসলিম হয়েও একসাথে আছে। ভালো আছে। টিকে আছে। সুন্দর সংসার। দেখেও শান্তি। জ্যোতি-মিজান দুজনেই চাকরি করে। জ্যোতি আর মিজানের মতো, হিন্দু মুসলিম যদি মিলে থাকলে বহু লোকের জীবন বেঁচে যেতো। প্রথম প্রথম জ্যোতি আর মিজানের বাবা মা মেনে নেয়নি। যখন তারা দেখলেন, জ্যোতি মিজান ভালো আছে। তখন দুই পরিবার মেনে নেয় তাদের। ইদে জ্যোতির বাবা মা আসে। বলে, সেমাই দিন। কোর্মা দিন, পোলাউ দেন। পূজোয় মিজানের বাবা মা যায়। গিয়ে বলে, বেয়াইন সাহেব নাড়ু মন্ডা মিঠাই খেতে এলুম গো।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



