ইডেনের ভেতরে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ (অনুমতি প্রাপ্ত কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া )। মডেমে সমস্যা। কিউবি থেকে টেকনিশিয়ান পাঠিয়েছে। ওদের মহিলা টেকনিশিয়ান নাই কাজেই উনি পুরুষ। যেহেতু কোন এঙ্গেলেই উনাকে দেখতে আমার বাপের বয়সী মনে হয় না সেহেতু গেস্ট রুমে উনাকে বসানো যাবেনা।
গেটের অপজিটে বাস স্ট্যান্ড। বসার জায়গাও আছে। গেলাম ওখানে। পাঁচ দশ মিনিটের কাজ। সে ল্যাপটপে মডেম কানেক্ট করবে দেখবে কোথায় সমস্যা হচ্ছে তারপর সেই অনুযায়ী সলিউশন করে দেবে। আমার না বসলেও চলবে। গিয়ে দেখি সিট সব ফিলাপ। এক পুলিশ আঙ্কেল বসে আছেন। তার পাশে বিশাল একটা ব্যাগ। সেটাকে তিনি শুইয়ে রেখেছেন। একটু খালি জায়গাও আছে। আমি ভদ্রভাবে বললাম, ''আঙ্কেল কাইন্ডলি একটু সরে বসবেন?'' উনি আমার দিকে এমন ভাবে তাকালেন যেন এর চেয়ে বিরক্তিকর কথা জীবনে শোনেন নি। এবং বললেন, ''না লোক আছে।'' দাঁড়িয়ে কাজ করা সম্ভব না। তাই আমি আবার বললাম, ''ব্যাগটা যদি একটু সোজা করে রাখেন তাহলেই একজন বসা যাবে। জরুরী একটু কাজ ছিল। লোক আসলে নাহয় উঠে যাবো।'' উনি আমাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলেন। ঝামেলার ভয়ে আমি আর ঘাঁটালাম না। আমি অতি নিরীহ ছাত্রী। কে জানে আবার কোন দিক দিয়ে ফাসিয়ে দেয়। এরপর কে একজন উঠলো এবং সেখানে বসে টেকনিশিয়ান কাজ শুরু করল। কিছুক্ষন পর পুলিশ আঙ্কেলের ফোন আসলো, উনি চলে গেলেন।
আমাদের হলের ডাইনিঙের বাবুর্চিরা দেখাতে চেষ্টা করে তারা কতটা খারাপ ভাবে রান্না করতে পারে। সে কারনে তারা বেগুনের পোকা ফেলে রান্না করাতো দূরের কথা মাঝে মাঝে সামান্য আলু ভর্তায়ও লবন দেয় না। এই নিয়ে মেয়েরা চ্যাঁচামেচি করলে তারা বিমলানন্দ উপভোগ করে। যেন এটাই তাদের ক্রেডিট। ওই পুলিশ আঙ্কেলকেও আমার সেরকম মনে হল। যেন সামান্যতম সৌজন্যবোধ দেখিয়ে জনগনের কাছে তাদের ক্রেডিট লস করতে রাজি নন।
পুলিশ পেটানোর ইতিহাস ইডেনের আছে। এই ইতিহাসের পটভূমি একদিনে তৈরি হয় নি। ইডেনের মেয়েরা পুলিশকে ডাকে ঠসা (বয়রা), টিকটিকি। অনেক ভেবে আমি এর পেছনের যে যুক্তিটা দাড় করিয়েছি সেটা হল, প্রয়োজনের সময় পুলিশ কানে শোনে না। শুনলেও উলটা পাল্টা শোনে। বিপদে পড়লে টিকটিকির লেজ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার গুণের কথা সবাই জানে। তাই এই ব্যাখ্যাটা না দিলাম।
ইডেন বাদ দিলাম। ইডেনের মেয়েরা ভালো না। কিন্তু দেশের আনাচে কানাচে প্রত্যেকটা মানুষ পুলিশের গুণের কথা জানে। পুলিশ শেয়ালকে মুরগি বানিয়ে দিতে পারে, মৃত মানুষের স্বীকারোক্তি নিতে পারে। রহিমুদ্দির মামলা ছলিমুদ্দির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কথা নতুন করে আর কি বলব।
পুলিশসহ সব সেক্টরেই কিছু কাজ নাকি বাধ্য হয়ে করতে হয়। কেন বাধ্য, কারা বাধ্য করছে এই সব জানতে চেয়ে জাতিকে বিব্রত করতে চাচ্ছি না। তবে আমার প্রশ্ন, এই বাধ্যতার লিমিট কতটুকু? সাধারন সৌজন্যতাবোধও কি এই লিমিটের বাইরে নয়?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৭