সায়েন্স সিটিতে ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে গেল জীবনের সঙ্গে। জীবন আমার ছোটবেলাকার বন্ধু। একসাথে স্কুলে পড়েছি। অবশ্য এইচ এসটা একসাথে হয়নি। কারণ একবছর ফেল করেছিল ও। ‘তারপর কি করলি জীবন?’ আমি প্রশ্ন করলাম। আমরা যে ঘরে ঢুকেছিলাম, সেটার নাম ইল্যুশন। সেখানে নিজেদের বিভিন্ন ধরনের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে ও বলল, ‘আর কি? ঢুকে পড়লাম, বাবার কারবার। হোটেল কাম বার। দিলখুশ।’ দিলখুশের নাম শুনেছি। সম্প্রতি অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য স্থানীয়রা ওটাকে পুড়িয়ে দিয়েছিল। অবশ্য এখন ওটা আবার আগের মতই রমরমিয়েই চলছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম তার সামনের আয়না দুটোর একটা উত্তল, অপরটা অবতল। ফলে, আমার প্রতিবিম্বটা সোজাভাবে পড়লেও জীবনেরটা উল্টে গেছে।
‘তারপর তোর খবর বল?’ সোৎসাহে বলে ওঠে জীবন। ‘বেশি দূর নয় ভাই। একটা সামান্য বেতনের কেরানি। ছোট একটা অফিসের চাকরি।’ মৃদু হেসে আমি বললাম। এবার যে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম, সেখানে আমার প্রতিবিম্বটা দুভাগ হয়ে গেছে। একভাগ উল্টোন আর একভাগ সোজা। ও বলল, ‘বাঃ, বেশ তো। তা তুই শেয়ার মার্কেট বা মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা খাটাস তো?’ ‘না রে ভাই। ক’পয়সা আয় করি বল তো? তাছাড়া ওসব আমার মাথায় ঢোকে না।’ আমার কথা শুনে ও একটা বাঁকা হাসি হাসল।
আয়নাতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখা শেষ। এরপর আমরা গেলাম তার ঠিক পাশেই। দেখলাম, লেখা রয়েছে অনন্ত কুয়ো। জীবন দেখলাম কুয়োর মধ্যে তাকিয়ে গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখছে। কুয়োর সামনে আয়নাটাকে এমনভাবে বসানো হয়েছে যে তার তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জীবন আমাকে জায়গাটা ছেড়ে দিল। তারপর বলল, ‘হালিশহরে আমাদের আরেকটা বার কাম হোটেল খুলছে বুঝলি, ভেতরে সুইমিং পুল। ক’কোটি টাকা ইনভেস্ট করতে হয়েছে বল তো? হাঃ হাঃ। টাকা উড়ে বেড়ায় রে, তাকে ধরতে শিখতে হয়। তুই শালা দেখছি সারাজীবন গরীবই থেকে যাবি।’ অনন্ত কুয়োর কালো গহ্বরের মধ্যে দৃষ্টিকে তলিয়ে দিয়ে আমি দেখবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু বেশিক্ষণ পারলাম না। মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। জীবনকে আমি বললাম, ‘আমি আসছি বুঝলি ভাই। এত ইমেজ দেখতে দেখতে মাথা ঘুরছে।’ কথাটা বলেই দ্রুত বেরিয়ে এলাম আমি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২২ রাত ৯:৪৯