somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের বাতেলাবাজি (পর্ব-১)

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্রামের খুব সাধারণ ছেলেদের একটা শাহ আলম মিয়া। হাসি তামাশা আর খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকে সারা দিন। ব্রেনটা খুবই ভাল কিন্তু পড়ালেখায় মন একেবারেই বসে না। এবার সে ক্লাস টেনে উঠল। সামনেই তার মেট্রিক পরিক্ষা। বাসায় আসলেই তাকে অনেক বুঝানো হয় কিন্তু কে শুনে কার কথা।
ইদানিং তার মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাত জাগা, খেলতে কম যাওয়া। সব মিলিয়ে কেমন যেন; অন্যরকম। যেটা তার সাথে যায়না। নজর এড়ালোনা বন্ধুদের। বন্ধুদের কৌতুহল বাড়তে লাগল। সবাই শাহ আলমকে নজরে রাখা শুরু করল। এক দিন যায় দুই দিন যায় ...
এমনই করে মাস যাওয়ার পর বন্ধুরা আবিষ্কার করল ক্লাস এইটে পড়োয়া জয়নবকে। আহ কি দেখতে। এই বয়সেই তার থেকে চোখ ফিরানো যায় না। যেমন চেহারা তেমনি তার শরীরের গঠন। উঠতি বয়সের চোখ এখানে না আটকে পারেই না।
সবাই দেখল শাহ আলম এই জয়বের সাথে প্রায়ই লুকিয়ে দেখা করে। মাঝে মাঝেই ফিস ফিস করে কি যেন কথা বলে। বুঝতে আর কারো বাকী নেই তাদের প্রেম লীলা। একদিন সব বন্ধুরা শাহ আলমকে ভালকে ধরলে- আজ সব বলতে হবে আমাদের। শাহ আলম উপায় না দেখে সব স্বিকার করল। শাহ আলম বলে আজ প্রায় তিন মাস হল তাদের সম্পর্ক হল।
সালটা ২০০০। শাহ আলমের মেট্রিক পরীক্ষার বছর। আর এইদিকে জয়নব ক্লাস নাইনে উঠল। দিনকে দিন আরো সুন্দরী হয়ে উঠছে। শাহ আলম আর জয়নবের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠছে। সুন্দর পবিত্র সম্পর্কটা অসুন্দর আর অপবিত্র হওয়ার পথে চলেছে। মাঝে মাঝেই তারা রাতে দেখা সাক্ষাত করে। সুযোগ পেলেই একজন আরেক জনকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। আদর করে। একদিন শাহ আলম জয়নবকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে। বলে- জয়নব আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। তুমি হীন আমি মৃত। প্রমিজ কর আমাকে ছেড়ে কোন দিন চলে যাবে না। জয়নব তখন উত্তর দেয়- তোমাকে না পেলে আমার বেঁচে থাকা হবে না। তুমি যদি আমাকে ছেড়ে যাও তাহলে আমি আত্মহত্যা করে ফেলব। অন্য কাউকে বিয়ে করা ত অসবম্ভব।
সামনের মাস থেকে শাহ আলমের পরীক্ষা। কিন্তু জয়নবকে একবার না দেখলে পড়তে বলেও কোন লাভ নাই। মন পড়ে থাকে পরান পাখির দিকেই। একটু পর পর যে কোন প্রকারেই হোক জয়নবকে দেখে আসে শাহ আলম। এই ভাবে কি আর পড়া হয়। মনের মাঝে আস্তে আস্তে ভয় ঢুকতে থাকে শাহ আলমের। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।

পরীক্ষার আর এক সপ্তাহ বাকী। খুব টেনশনের মাঝে দিয়ে শাহ আলমের দিন যাচ্ছে। একে ত পরীক্ষা আর অন্য দিকে জয়নব। পরীক্ষায় পাশ করতে হবে আবার অন্য দিকে জয়নবকে না দেখে ও থাকতে পারছে না। এরই মাঝে আসে এক ভয়ংকর খবর। জয়নবের জন্য আসে একটা বিয়ের প্রস্তাব। ছেলের সরকারী চাকুরী করে। অনেক বিত্তশালী। দেখতে শুনতেও ভাল। জয়নবকে দেখতে আসবে আগামী তিন তারিখ। যে দিন শাহ আলমের প্রথম পরিক্ষা।

সেই দিন রাতেই শাহ আলম জয়নবের সাথে দেখা করতে যায়। রাতে অন্ধকারে সে গিয়ে জয়নবের রুমে ঢুকে যায়। জয়নব অনেক ভয় পেয়ে যায়। বলে- এইটা তুমি করলা। কেউ জানলে এখন কি হবে!!! (রেগে) এত সাহস তুমি কই পাও!! শাহ আলম জয়নবকে টান দিয়ে খাটে বসায়। তার পর বলে আমি যা শুনছি তা কি সত্যি?? জয়নব মাথা নিচু করে। আস্তে করে বলে-হুম। শাহ আলম উঠে দাঁড়ায়, জয়নবকে এক টানে নিজের বুকে নিয়ে আসে। কাদতে কাদতে বলে- তুমি কি রাজি হয়ে গেছে??? জয়নবও কাদতে শুরু করে।
শাহ আলম চলে আসে। নাওয়া খাওয়া সব বন্ধ। এইখানে সেইখানে বসে থাকে। অস্থির থাকে প্রতিটা মুহুর্ত। পড়াশুনাও করে না। পরীক্ষার আর দুই দিন। কি হবে!!
শাহ আলমের এইসব টের পেতে থাকে ওর বাবা। আজ মঙ্গলবার। সন্ধ্যায় বাজার থেকে ফিরছে শাহ আলমের বাবা। পথে দেখা হয় জয়নবের বাবার সাথে। একজন অন্যজনকে সালাম দিয়ে কথা শুরু হয়-
জয়নবের বাবাঃ ভাই ভাল আছেননি?
শাহ আলমের বাবাঃ এইত আল্লাহ্ ভালই রাখছে।
জয়নবের বাবাঃ ভাই আসলে আমি আপনাকে একটা কথা কইতে চাইছিলাম।
শাহ আলমের বাবাঃ হ্যা কও।
জয়নবের বাবাঃ আসলে কাল বাদে পরশু মেয়েটারে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে। সব ঠিক থাকলে বিয়েটাও হয়ে যাব। কিন্তু আপনার এই ছেলে যা শুরু করেছে তাতে ত ভাই আমি বিপদে পড়ে যাব। আআমি ত ভাই মেয়ের বাপ, মান ইজ্জতের ডরে চুপ করে আছি। কাল রাতে আপনার ছেলে আমার বাড়ি আইছিল। অন্য কেউ নি জানে সেই ডরে আপনার ছেলেরে আমি আটকাইনি। কাল বাদে পরশু মেয়েডারে দেখতে আইব। (এই কথা বলেই জয়নবের বাবা কেদে ফেলে।)
শাহ আলমের বাবাঃ (চুপ থেকে জয়নবের বাবার সাথে হাটতে থাকে। ) জয়নবের বাপ তুমি কিছু চিন্তা কইর না। আমি দেখতাছি।
শাহ আলমের বাবা খুব দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে হাটতে থাকে।
রাত বাজে ১০টা। শাহ আলম বাড়িতে নেই। শাহ আলমের বাপ বসে আছে ওর জন্য। আজ একটা হেস্ত ন্যাস্ত করেই ছাড়বে। রাত এগারটা। শাহ আলম ঘরের দরজায় আসতেই শাহ আলমের বাপ হাতে বেত দিয়ে শাহ আলমকে বেদম মারতে থাকে। শাহ আলম ভাল মন্দ কিছুই বলে না। এক যায়গাতে দাঁড়িয়ে থেকে মাইর খেতে থাকে। একটা সময় ওর বাপ থামে। বলে- মান সম্মান কি একটু আমার জন্য রাখবি না??? কোন দিন কেউ আমাকে রাস্তায় দাড়করায়ে কিছু বলতে পারেনি। আজ তোর জন্য আমাকে রাস্তার দাড়করায়ে অপমান করছে। আমার শেষ কথা শুন, ওই মেয়ের বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত তুই আর ঘর থেকে বের হতে পারবি না। তোর পরীক্ষাও দেওয়া লাগবে না।

শাহ আলব রাতে আর খয়নি। ঘরতে বের হয়ে পাশের বাড়ীর এক বয় ভাই বন্ধুর ঘরে চলে যায়। তার সাথে সব খুলে বলে। তার এই বড় ভাই রমিজ সে আবার একটু দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ। এই দিকে রমিজের সাথে জয়নবের বাবা একটা জমি নিয়ে ক্যাচাল আছে। দুষ্ট রমিজের মাথা ডুকে দুষ্ট বুদ্ধি। রমিজ শাহ আলমকে বুদ্ধি দেয় যে সে যেন এই বিয়ে ভাংগার ব্যবস্থা করে। শাহ আলম বলে- ভাই আমি কি করে এই বিয়ে ভাঙ্গব??? রমিজ বলে- বিয়ার তারিখ কবে?
শাহ আলম- পরশু দেখতে আইব। ওই দিনই বিয়ার তারিখ ধরব। আর আমি একদম সিওর যে বিয়ার তারিখ কইরা লাইব।
রমিজ- চিন্তা কইর না। বিয়ার তারিখ হইলেও বিয়া হইতে কমছে কম এক মাসের মত ত লাগবই। আগে ক তুই ত ওরে চাস বিয়া করতে, তাই না... এর একটাই পথ আছে, আর সেইটা হল গিয়া; যে ভাবেই হোক এখন থেকে প্রতি দিন জয়নবের সাথে গিয়া রাত কাটা। পেটে বাচ্চা দিয়া দে। তখন আর কারোর কিছু করার থাকব না। তোর সাথে বিয়া দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
কথাটা শাহ আলমের কাছে একটু খারাপ লাগে। পরক্ষনেই মনে হয় যাই কিছু হোক জয়নব ত আমার হয়ে যাবে। আমি ত জয়নবকে পেয়ে যাচ্ছি। শাহ আলমের মনে এই বুদ্ধিটা পাকা-পোক্ত ভাবে গেথে যায়।

আজ বুধবার। শাহ আলম লুকিয়ে জয়নবের সাথে দেখা করে সব বুঝিয়ে বলে। কিন্তু জয়নব প্রথমে রাজি হতে চায় না। পরে শাহ আলম বলে- যদি তুমি আমাকে ভালবাস, আর সারাজীবন আমার হতে চাও তাহলে ......
জয়নব কিছুই চিন্তা করতে পারে না। মনে শাহ আলমকে হারানোর ভয়, এই দিকে কাল ছেলে পক্ষের আগমন। এত ছাই পাশ ভাবতে ভাবতে জয়নব শাহ আলমকে ছুঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। দুইজনেই চলে যায় জয়নবের ঘরে। শুরু হয় তাদের বিয়ে বিহীন একে অন্যকে পাবার অন্য রকম যুদ্ধ সংসার।

আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ১২টা। জয়নবকে দেখতে ছেলে পক্ষরা চলে এসেছে। ছেলে বিসিআইসি তে চাকূরী করে। সরকারী চাকুরী। সবাই দুপুরের খাওয়া দাওয়া করছে। জয়নব বিষণ্ণ মনে ভাবছে কি করা যায়। কেমনে এই বিপদ থেকে উদ্দার পাওয়া যায়।
পাশের ঘরে খাটে ছেলে আর ছেলে পরিবার বসে আছে। সবাই অপেক্ষায় আছে মেয়ের জন্য। এইদিকে জয়নবের মা জয়নবকে আনতে গেলে জয়নব আসতে চায় না। তখন জয়নবের মা বলে- তুই কি আমাদের মরা মুখ দেখতে চাস??? দেখতে না চাইলে চল ছেলে সামনে। তোর ডুইটা হাত জোর করে বলি চল।

পাত্র এবং তার পরিবারের সামনে জয়নব অনেকটায় বৌ সেজে বসে আছে। মাথায় অনেক বড় একটা ঘোমটা টানা। ছেলের মা ঘোমটাটা তুলে জয়নবের থুতনিতে আলতু করে ধরে সবাইকে দেখাল। জয়নব খুব লজ্জা নিয়ে চোখ দুটি বুজে রেখেছে। ছেলে আড় চোখে বেশ কয়েকবার দেখেছে। ঠোটের কোনায় একটা খুব সুন্দর একটা বউ পাবার তৃপ্তির লাজুক হাসি।
ছেলের বাবাঃ জি এবার মেয়েকে ভিতর ঘরে পাঠায় দেন। আলহামদুলিল্লাহ, মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। (জয়নবের মা জয়নবকে ধরে এখান থেকে নিয়ে যায়।)
জয়নবের বাবা, চাচারা এখানেই বসে আছে।
ছেলের বাবাঃ ভাই আপনাদের সম্মতি থাকলে আর আমার ছেলেরে আপনাদের পছন্দ হলে আমরা কথা সামনে আগাতে পারি। কি বলেন আপনারা?
মেয়ের চাচাঃ জি আমাদেরও ছেলেকে পছন্দ হয়েছে। তাহলে ত বিয়ের ব্যাপারে কথা আগাতে আর কোন সমস্যা নাই।
মেয়ের বাবাঃ ভাই মেয়েটা আমার খুব আল্লাদের। আর একটাই মেয়ে। তাই আমার কয়েকটা দিন সময় দিতে হবে। আমার কইলজার টুকরা মেয়েটারে ত এমনি বিদায় করতে পারি না।
ছেলের বাবাঃ আমার ছেলে সরকারী চাকুরী করে। ওরও ত সময় দরকার, চাকুরী থেকে ছুটিছাটার ব্যাপার আছে। সহকর্মীদের দাওয়াতের একটা বিষয় আছে। আমার মনে সামনের মাসে ১৪ তারিখ একটা ভাল দিন আছে। আপনাদের আপত্তি না থাকলে ওইদিনটারে বিয়ের জন্য ধার্য করা যায়। আপনারা কি বলেন?
মেয়ের চাচাঃ জি আপনি ভাল বলেছেন। আমিও আমাদের মসজিদের ঈমামের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনিও বলেছে সামনের মাসের ১৪ তারিখের কথা। দিনটা ভাল। আবার হাতে দুই পক্ষই সময় পাব। বড় ভাই তুমি কি ক??
মেয়ের বাবাঃ দিন তারিখ ভাল, আর যেহেতু হাতে সময় পাচ্ছি তাহলে আমার আর কোন আপত্তি না। সবাই যেটা ভাল মনে করে তাই ঠিক। আর দেনা পাওনা নিয়ে যেহেতু ছেলে পক্ষের কোন্ন আপত্তি নেই তাহলে ত আর কিছু বাকী রইল না। আলহামদুল্লিলাহ। কথা তাহলে এইটাই থাকল। বিয়ে আগামী মাসের ১৪ তারিখ।
ছেলে পক্ষের মেহমানরা চলে গেল। জয়নবের বাবা তার মারে ডেকে এনে খুব করা করে শাসিয়ে দিয়ে বলেন- তোমার মেয়েরে সাবধান করে দিও। আমার সম্মান নিয়ে ঝামেলা করলে আমি কিন্তু ভূলে যাব ও আমার মেয়ে। আর মেয়ের জন্য তোমার ভালও উঠে যাবে। কথাটা মনে রেখ।

রাত দেরটা বাজে। জয়নবের দরজায় হালকা শব্দ। জয়নব সজাগ। আস্তে করে উঠে এসে দরজা খুলে দিল।শাহ আলম ঘরের ভিতর ঢুকে গেল। দরজা বন্ধ। জয়নব- বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আগামী ১৪ তারিখ বিয়া। এখন কি করবা তুমি??? শাহ আলম- আমরা আমাদের কাজ করে যাব। দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার পেটে বাচ্চা চলে আসলে ত কারোরই কিছু করা থাকবে না। জয়নব- আমার কেমন যেন ভয় লাগতেছে। আমার মনে হয় আমরা খুব বড় একটা ভূল করতেছি। যার মাসুল মরার আগ পর্যন্ত দিতে হবে।

বিয়ের আর তিন দিন বাকী। এমন একটা দিন নাই শাহ আলম জয়নবের সাথে রাত কাটায়নি। অনেক সাহস দেখিয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হল বলে মনে হচ্ছে না। যাতারীতি চলেই এল বিয়ের দিন। বর চলে এল। বর যাত্রী এল। অনেক জাকজমক অনুষ্ঠান করে বিয়ে হল জয়নবের। শাহ আলম শুধু দূর থেকেই দেখে গেল।

আজ রাত জয়নবের বাসর রাত। এই কথা মনে হলেই শাহ আলম অস্থির হয়ে উঠে। দুই চোখে ঘুম একেবারেই নেই। শেষ রাতের দিকে শাহ আলমের মনে হয় তার মরে যাওয়াই উত্তম। এই জীবন রেখে আআর কি হবে!! মাথায় ভূত চাপে ফাস লাগবে। চলন্ত পাখাটা বন্ধ করে তাতে একটা দরি বাঁধে। রাখে আল্লাহ মারে কে। এই সময় ঘুম থেকে নামাজের জন্য উঠে বাহিরে আসে শাহ আলমের মা। জানালা দিয়ে ছেলে এই কান্ড দেখে মা চেচিয়ে উঠলে শাহ আলমের বাবাও ঘুম থেকে উঠে বের হয়ে আসে। মা অনেক কান্না কাটি করে। এখন আর কাদলে কি হবে। যা হবার ত তা হয়েই গেছে।

পরের দিন দুপুরে শাহ আলমের চাচা ওর বাবাকে ডেকে পুকুরপাড়ে নিয়ে যায়। চাচা- বড় ভাই তুমি এক কাজ কর শাহ আলমকে বিদেশ পাঠায়ে দাও। ওরে এখন দেশে রাখলে বিপদ হতে পারে। দেশের বাহিরে গেলা কাম কাজ করব, মানুষের সাথে থেকে এই সব ভূলে যাবে। আমার কথাটা এওকবার চিন্তা কইরা দেখ।
শাহ আলমের বাবাঃ কথাটা খারাপ কস নাই। আমার মাথা আর কাজ করে না। তুই একটু দেখ। ব্ব্যবস্থা কর। যত তারাতারি পারস ব্যবস্থা করে দেশের বাহিরে পাঠা। আমি আর এই সব সহ্য করতে পারছি না।

দীর্ঘ তিন মাস পার হয়ে গেল জয়নবের বিয়ে হল। সে তার শশুর বাড়িতে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। বেশ ভাল এবং সুখেই আছে। কিন্তু এইদিকে শাহ আলমের অবস্থা খুবই খারাপ। খাওয়া দাওয়া ত বলতে গেলে একপ্রকার করেই না। শুকিয়ে গেছে অনেক। চেহারার অবস্থা একেবারেই খারাপ অবস্থা।

যাই হোক। শাহ আলমের পাসপোর্ট রেডি। ভিসার কাজও প্রায় হয়ে গেছে। এখন শুধু প্লেনের টিকেট করে চলে যাওয়ার অপেক্ষা শুধু। শাহ আলম বিদেশ যাওয়ার পক্ষে না। কিন্তু ওর চাচা একদিনে একটা কথা বলেছিল সেই কথা সে রাজি হয়েছে। চাচা বলেছিল- দেখ তুই যার জন্য এমন না খেয়ে শুকিয়ে মরছিস, নিজের জীবনটাকে ধবংস করে দিচ্ছিস আর সে কি করছে জানিস?? সে ওখানে বেশ ভাল আর হাসি খুশি আছে। তুকে বেমালুম ভুলে গেচ্ছে। একবার কি তুর কোন খবর নিয়েছে?? জামাইরে ন্নিয়ে সপ্তাহ সপ্তাহ শপিং করতে যায়। দেশ বিদেশ ঘুরে বেরাচ্ছে। নিজের জীবন নিজের মত ঘুছিয়ে ফেলেছে। আর তুই কিনা এই দিকে নিজের জীবন বরবাদ করে দিচ্ছিস। দুই এই সব থেকে দূরে গিয়ে নিজের মত জীবন সাজা। দেখবি একদিন সব ঠিক হয়ে গেছে।
ফ্লাইটের তারিখ হয়েছে। আগামি ২৫ তারিখ ফ্লাইট। আজ হল ১৮ তারিখ। আর মাত্র ৬ দিন আছে। কেমন যেন একটা অসস্থি লাগছে। এই রকম সাত পাচ ভাবতে ভাবতে ঘুমাতে গেল শাহ আলম।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। এখন ঘরিতে প্রায় ১০ টা বাজতেছে। ব্রাসটা নিয়ে দাত মাজতে মাজতে পুকুর পাড়ের উত্তর কোনায় গেছে শাহ আলম। এই পাড়ের পাশ দিয়ে গেছে আমাদের বাজারের রাস্তা। হঠাত মনে হল একটু দূরে কেউ একজন এই রাস্তা ধরে আসছে।শাহ আলম দাত মাঝতেই ব্যস্ত। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শাহ আলম দেখল জয়নব আর তার জামাই এক সাথে হেটে যাচ্ছে। তারা তাদের বাড়ির দিকেই যাচ্ছে। এক দুই বার যদিও জয়নব শাহ আলমের দিকে তাকিয়েছে তাতে তেমন কোন কিছু বুঝা গেল না। জয়নব তার জামাই এর সাথে হাসতে হাসতে যাচ্ছে। এই রাস্তার মাঝেও কেমন করে নোংড়া ভালবাসায় জামাই এর হাতটাকে নিজের সু-পুষ্ট স্তনে চেপে রেখেছে। পুরাটাই অশ্লীলতায় ভরা ভীষন সুন্দর। দেখে এক মুহুর্তের জন্যও মনে হয়নি যে জয়নব এই বিয়েতে অসুখি। বরং মনে হয়েছে সে অনেক সুখ আর শান্তিতে রয়েছে।
শাহ আলমের মাঠাটা খারাপ হয়ে গেল। কার জন্য আমি নিজের প্রতি এতটা অন্য করছি। নিজেকে তীল তীল করে ধবংশ করে দিচ্ছি!!!

রাতে শাহ আলমের ফ্লাইট। দুপুরেই বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে নিচ্ছে সবার থেকে। এয়ার পোর্টে একটু আগে যেতে হবে। শাহ আলমের মা খুব কান্না কাটি করতেছে। শাহ আলম- মা কান্না কাটি করতেছ কেন। তোমরাই ত চাইছিলা বিদেশ যাইতে। এখন কাদ কেন। আর ভয় পাইও না। কোন বিপদ হবে। আমি কোন সমস্যাও করব না। অনেক টাকা পয়সা কামাই করেই দেশে আসব। তুমি শুধু দোয়া কইর। (মার কান্না ত থামে না। কেদেই যাছে। )
শেষে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সাথে চাচা রঊয়ানা দেয় শাহ আলমকে এয়ারপোর্টে পৌছে দিবার জন্য।


(১৮/০৯/২০২১, দুপুর ৩ঃ০০, অনেক ভূল আছে, মাত্রই লিখলাম। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, সাথে ভূল দেখিয়ে দিবেন। কেউ যদি সম্পাদনা করে দেন খুবই খুশি হব।)[গল্পটা দুই পার্টে আসবে। এখানে এক পার্ট দিলাম। ]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×