somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আখনূখ জাবীউল্লাহ
এই ব্লগে এ প্রকাশিত সকল লেখা শুধুমাত্র সাধারন মানুষের মাঝে আইনের মৌলিক বিষয়ে ধারনা দেওয়া এবং বিভিন্ন অপরাধমুলক বিষয়ে সচেতন করা। এই ব্লগে প্রকাশিত সকল কনন্টেট আইন ও আইনের শাস্তিসমুহ এবং আইনগত ব্যবস্থাগ্রহনে একজন সাধারন মানুষকে সঠিক দিক নির্দেশনা নিয়ে স

জমির দলিল হারিয়ে গেলে কি করবেন?

২৭ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘরে আগুন লাগা, ঘরে চুরি-ডাকাতি হওয়া, বন্যা-ঘূর্ণিঝড় সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত বিভিন্ন অস্বাভাবিক কারণে আমাদের অনেক মূল্যবান কাগজপত্র হারিয়ে যেতে পারে, যার মধ্যে জমির দলিল সবচেয়ে অন্যতম। অন্য যেকোনো জরুরী কাগজপত্র হারালেও সেটার জন্য ব্যক্তি নিজে একা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও জমির দলিল হারানোর সাথে সাথেই একটা পরিবার তাদের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার সহ হয়রানীর শিকার হতে শুরু করে। যেহেতু স্থাবর সম্পত্তিতে দখল হচ্ছে বাহ্যিক ব্যাপার আর দলিল হচ্ছে অফিশিয়াল প্রমাণ, তাই দলিল হারিয়ে গেলে এবং সেটা না পাওয়া গেলে এর ফলশ্রুতিতে যেকোনো সময় জমির মালিকানা হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। ক্রিকেটে একটা প্রবাদ রয়েছে, ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস; আবার ফুটবলে বলা হয়, পেনাল্টি মিস তো ম্যাচ মিস; তদ্রূপ জমির দলিল মিস তো জমির মালিকানা মিস। আপনার জমিতে দলিল আছে কিন্তু দখল নাই, আপনি উচ্ছেদ বা দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করে দখল ফেরত পাবেন কিন্তু দখল আছে, দলিল নাই, সেই জমির দলিল আপনি আদৌ প্রস্তুত করতে পারবেন?

এতো লম্বা ভূমিকা দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য, জমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য জমির দলিল কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা অনস্বীকার্য। জমির দলিল হারিয়ে আপনি কতটা বেকায়দায় পড়তে পারেন, সেটা কেবল দলিল হারানো ব্যক্তিই বলতে পারেন। দলিল হারানো ব্যক্তি নিজের মালিকানা প্রমাণ করা থেকে শুরু করে, খতিয়ান প্রস্তুত, দখল নির্ধারণ থেকে শুরু করে জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও দলিলের অভাবে সবকিছু থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। তাই, যথাসম্ভব দলিলকে সম্ভাব্য নিরাপদ জায়গায় রাখা উচিত এবং এখনকার এই যুগে কখনো দলিলের মাত্র একটি কপি না রেখে যত বেশি সম্ভব ফটোকপি প্রস্তুত করে বিভিন্ন জায়গায় রাখা উচিত। আর এখন ডিজিটাল ফরম্যাটেও দলিল সংরক্ষণ করে রাখবেন, অর্থাৎ স্ক্যান করে ইমেইলে একটা কপি রেখে দিবেন যাতে ভবিষ্যতে হার্ড কপি হারিয়ে গেলেও সফট কপি থেকে আবার পুনরুদ্ধার করতে পারেন।

যাই হোক, যারা ইতিমধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের করণীয় কি তা নিয়ে আসা যাক। অনেকেই আছেন যারা দলিল হারিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায় আবার অনেকেই আছেন দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েও দিনের পর দিন হয়রানীর শিকার হয়ে থাকেন। তাদের জন্য বলছি, দলিল হারিয়ে গেলে আমি কাউকে কিছু না বলে নিজে নিজে দলিল পাওয়ার একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আরও কিছু জরুরী কাগজপত্র আছে যেগুলো হারিয়ে গেলে সেগুলো উত্তোলনের জন্য আপনাকে থানায় জিডি করতে হয় কিন্তু দলিল হারিয়ে গেলে এর জন্য থানায় কোন জিডি করতে হবে না। আবার, আপনার দলিল তোলার জন্য আপনাকেও আবেদন বা দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না, সম্পূর্ণ অচেনা অজানা কেউও চাইলে আপনার দলিল তুলতে পারবেন। এখন কথা হচ্ছে, বারবার তোলার কথা বলা হচ্ছে যে, এই দলিল তোলাটা কোথায় থেকে, কিভাবে?

দেখুন এখানে একেবারে গোঁড়া থেকে বললে বলতে হবে যে, দলিল প্রস্তুত যেখানেই হোক না কেন, দলিল রেজিস্ট্রি হয় আপনার উপজেলা শহরের সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। আপনি আপনার জমি বা ফ্ল্যাট আমার কাছে বিক্রির জন্য দলিল সম্পাদন আমার ঘরে, আপনার বাড়িতে বা কোন দলিল লেখকের অফিসেও করতে পারি। কিন্তু, ঐ দলিলটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ঐ জমিটি যে উপজেলায় অবস্থিত সেই উপজেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। আপনি এক উপজেলায় বসে অন্য উপজেলার জমির হস্তান্তর সম্পাদন করলেও রেজিস্ট্রেশন কিন্তু করা হবে জমি যে উপজেলার সেই উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার। অর্থাৎ, দলিলের জন্ম হয় উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। যার ফলে আজ থেকে ১০ থেকে ১৫ বছর আগের কোন দলিল যদি আপনি হারিয়ে ফেলেন তবে সেই দলিল আপনি উক্ত সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তল্লাশি দিলে পেয়ে যাবেন। কিভাবে তল্লাশি দিবেন সেই বিষয়ে পরে আসছি। দেখুন আমি বার বার সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কথা বলছি, যেখানে সাব রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে, সেখানে এর মাদার প্রতিষ্ঠানও রয়েছে, এটা বুঝতে হবে; অর্থাৎ, রেজিস্ট্রি অফিস। প্রত্যেক উপজেলায় যেমন সাব রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে, তেমনি সবগুলো সাব রেজিস্ট্রি অফিস থাকে একটি জেলা রেজিস্ট্রেশন অফিসের অধীনে। আর উক্ত অফিসকে জেলা রেজিস্ট্রেশন অফিস তথা জেলা রেকর্ড রুম বলা হয়ে থাকে। আপনি নিকট অতীতের দলিল তল্লাশি দিবেন দলিল যে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। কিন্তু, যদি দলিল সাব রেজিস্ট্রি অফিসে তল্লাশি দিয়েও না পেয়ে থাকেন অর্থাৎ আরও পুরনো দলিল, সেক্ষেত্রে আপনাকে যেতে হবে জেলা রেজিস্ট্রেশন অফিস তথা জেলা রেকর্ড রুমে যা সাধারণত জেলা প্রশাসকের অফিসের আশেপাশেই থাকে। আপনি সেখানে গিয়ে তল্লাশি দিলে অনেক পুরনো দলিলও পেয়ে যাবেন।

এবার আসুন দলিল তল্লাশি কিভাবে দিবেন। এটা আসলে আপনার কাজ না, এটা হচ্ছে রেকর্ড রুমের কর্মকর্তাদের কাজ। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে, দলিলের নাম্বার বা রেজিস্ট্রেশন তারিখ (দলিলের উপরে ডান পাশে দলিল নাম্বার থাকে আর মাঝামাঝি জায়গায় তারিখটা দেখতে পাবেন) যদি জানা থাকে, সেটা নির্ধারিত ফী সহ ওনাদেরকে প্রদান করা। বাকীটা ওনারা নিজ দায়িত্বে করে দিবেন। তবে, যদি আপনার দলিলের নাম্বার বা রেজিস্ট্রেশন তারিখ যদি জানা না থাকে তাহলে আপনাকে অন্তত দলিলের দাতা- গ্রহীতার নাম দিয়ে তল্লাশি দিলে হবে। আপনি যদি সেটাও প্রদান করতে না পারেন, তাহলে অনেক মুশকিল হবে দলিল খুঁজে পাওয়াটা। তারপরও জমিটি যে মৌজায় উপস্থিত সেই মৌজার নাম বা জমির দাগ নাম্বার দিয়ে তল্লাশি দিয়েও আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত দলিল পেতে পারেন।

এবার আসুন সংক্ষেপে তল্লাশির খরচটা জেনে নেই। সূচি বই তল্লাশি- প্রথম বছরের জন্য ২০ টাকা করে আর পরবর্তী প্রতি বছরের জন্য ১৫ টাকা করে ফী দিতে হবে। অর্থাৎ, আপনি যদি নির্দিষ্ট করে জানেন কোন বছর দলিল হয়েছে তাহলে আপনাকে ২০ টাকা ফী দিলেই হচ্ছে। আর যদি আপনি নির্দিষ্ট করে একটা সাল না জানেন, তাহলে একাধিক সালের দলিল আপনাকে তল্লাশি দিতে হবে, তখন প্রথম বছরের জন্য ২০ টাকা করে আর পরবর্তী প্রতি বছরের জন্য ১৫ টাকা করে ফী দিতে হবে। তাছাড়া বালাম বই তল্লাশির জন্যও প্রায় ১৫০ টাকার মত প্রদান করতে হবে। তবে, দলিল তল্লাশির জন্য আপনাকে আবেদন কিন্তু সাব রেজিস্ট্রি অফিসেই করতে হবে। আশা করি, জমির দলিল হারিয়ে পেরেশানি না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ধীরস্থির ভাবে উপরোক্ত নিয়ম অনুসরণ করে তল্লাশি দিয়ে আপনার কাঙ্ক্ষিত দলিল খুঁজে পাবেন। একই উপায়ে আপনি চাইলে যেকোনো ব্যক্তির যেকোনো দলিল তল্লাশি দিয়ে উত্তোলন করতে পারেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৪৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কতভাগ ব্লগার মহা-ডাকাত তারেককে সরকারে দেখতে চায়?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১২



জিয়া মিথ্যা হ্যাঁ/না ভোটে সামরিক এডমিনিষ্ট্রেটর থেকে আইয়ুবের নতো দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলো, ৫% ভোটকে মিথ্যুকেরা ৯৮% বলেছিলো ; আওয়ামী লীগ বাধা দিতে পারেনি। জিয়ার মৃত্যুর পর, বেগম জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৯

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক
দায়হীন সরকারের শাসনে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে?


দিপু চন্দ্র দাস মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন—
“আমি নবীকে নিয়ে কিছু বলিনি, আমাকে মারবেন না।”
রাষ্ট্র তখন কোথায় ছিল?

আগুনে পুড়তে পুড়তে ছোট্ট আয়েশা চিৎকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×