প্রচন্ড রোদ পড়ছে...
গত বছরের কথা। ক্লাস শেষ হতে হতে মাঝ দুপুর। সূর্যের তাপ ছড়ানো দেখে মনে হচ্ছিল যেন আকাশ থেকে আগুন ঝরে ঝরে পড়ছে। ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে বিনোদপুর পর্যন্ত হেটেই আসলাম। হাতে নীল সাদা রঙের ছাতা । বিনোদপুর পর্যন্ত আসার পর মনে হলো আর হেটে যাওয়া সম্ভব না। রিক্সা নিতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ । মামা যাবেন। যাবো। মধ্য বয়োসী রোগা ক্ষীণ স্বাস্থ্যের রিক্সা চালক। প্রচন্ড রোদ। রাজশাহীর গ্রীষ্মের রোদ সম্পর্কে বেশী বলাই বাহুল্য।
চড়ে বসলাম। রিক্সা চালক মামা টান দিলো। কিছু দূর যাওয়ার পরেই ঘটলো আসল ঘটনা। হঠাৎ দেখি রিক্সা চালক মামা প্রচণ্ড কাপাকাপি করছে। ভয় পেয়ে রিক্সা থামাতে বললাম। রিক্সা চালক রিক্সা থামানোর সাথে সাথে মাটিতে উল্টে পড়ে গেলো । আমি তখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আসে পাশে থেকে কয়েকজন ছুটে এসে রিক্সা চালকে কিছুক্ষণ বাতাস করার পর পানি খাইয়ে কিছুটা সুস্থ হলো। তারপরে সে কান্নাকাটি করে বলতে লাগলো দুইদিন যাবত ওষুধ খাইতে পারিনি তাই মাথা ঝিম ঝিম করছে , শরীরে বল পাচ্ছি না। বাড়ি দুর্গাপুর। কথা না বাড়িয়ে পকেটে শ'খানেক টাকা ছিলো এবং আশেপাশের লোকজন মিলে প্রায় তিনশো মত টাকা উনার হাতে দিয়ে বললাম ওষুধ কিনবেন। তারপর হেটেই বাড়ি....
... মাসখানেক পর ঐ রিক্সায় উঠেছিলাম এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। এবারও কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে হেটেই রওনা দিলাম।
... আরও প্রায় দুই মাস পর। ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তাই দ্রুত হাটছি। একটা রিক্সাও পাচ্ছিলাম না। মন্ডলের মোড়ে দেখি ঐ রিক্সা চালক মামা । মামা ক্যাম্পাস যাবেন। যাবো।রবীন্দ্র ভবন। রোদ এবং গরম দুটোই কম। রিক্সা সিনেট ভবনের সামনে পৌছানো মাত্রই রিক্সা চালক মামা কাপাকাপি করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। বুঝলাম ডালমে কুচ কালা হ্যায়। ওষুধ কিনতে পারিনি টাকা দেন।তার ভাড়া দশটাকা দেওয়ার পর সে বলে মামা আরও কিছু টাকা দেন। তারপর রিক্সাওলাকে একটা ধমক দিয়ে বলেছিলাম তোমাকে যেন এই এলাকায় আর না দেখি। থাপড়াইতে ইচ্ছা করছিলো।
বাকি পথ হেটেই রবীন্দ্র ভবনের দিকে রওনা দিলাম.....