‘টেলিভিশনে আমি হঠাৎ যে নির্মম দৃশ্য দেখেছি, কোনো সন্তানের পক্ষে সেটা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। বাবা ছিলেন হালকা-পাতলা গড়নের মানুষ। ঘাতকদের অস্ত্রের আঘাতে নিথর দেহ সটান হয়ে পড়ে আছে। চশমাটা ছিটকে দূরে পড়ে আছে, তার পাশেই ব্যাগটা। চারপাশে রক্তের বন্যা। কোনো শত্রুকেও যেন তার বাবার এরকম নির্মম মৃত্যু দেখতে না হয়।
রোববার সন্ধ্যায় পূর্বপশ্চিমবিডি ডটকম’কে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর বড় মেয়ে রেজওয়ানা হাসিন কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন।
রেজওয়ানা হাসিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবার নিজ বিভাগ ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। সম্প্রতি মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের দিন তিনি রাজশাহীর বাসায় ছিলেন না। ঢাকায় বিশেষ কাজে গিয়েছিলেন।টেলিভিশনে তিনি প্রথম তার বাবার হত্যার সংবাদ দেখতে পান।
রেজওয়ানা হাসিন বলেন, ‘আমি বাসায় ছিলাম না। যতদূর শুনেছি, ওইদিন সকাল সোয়া ৮টায় বাবার ক্লাস ছিল। তিনি রাস্তার মোড় থেকে বাসে উঠতেন। ক্যাম্পাসের বাস আসতো সাধারণত পৌনে আটটার দিকে। কিন্তু ওই মোড়ে যাওয়ার আগেই গলিতে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাবাকে ওরা (ঘাতক সন্ত্রাসীরা) বেশ ভালোভাবেই অনুসরণ করেছে। পাঁচ সেকেন্ডের রাস্তা-মোড়ের ওখানে উনাকে এভাবে কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে গেল। কেউ দেখতে পেল না! বাবাকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
রেজওয়ানা বলেন, ‘আমার জন্মদাতা বাবার এরকম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় শুধু দেখতে চাই না, রায় কার্যকরও দেখতে চাই। এর বিচার মাকে দেখাতে চাই, পরিবারের সদস্যদের দেখাতে চাই।’
তিনি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘ঘর থেকে বের হওয়া মানুষগুলো এভাবে জবাই হয়ে যাবে, সেটা আর কতদিন। কাল তো আপনাদেরও এমন হতে পারে।’
ভুল বোঝাবুঝি অথবা ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য নাস্তিকতা বা ব্লগে লেখালেখির বিষয়টি আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে রেজওয়ানা বলেন, ‘নাস্তিকতার যে কথাটা এসেছে তা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। বাবা নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। গ্রামের বাড়ির মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামাজও আদায় করতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আব্বুর কয়েকটা টুপি আছে। আমার দাদীকে তিনি বলতেন- আম্মা, দেখেন তো কোন টুপিতে আমাকে খুব ভালো লাগছে।’
আইএস’র দায় স্বীকারের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আব্বু নাস্তিক ছিলেন না। এটা ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানাধীন শালাবাগান এলাকার বটতলা মোড়ে মহাসড়কের কাছাকাছি গলিতে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন। ওইদিনই সন্ধ্যায় অনলাইনে এক বিবৃতিতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জানায়, ‘নাস্তিকতার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।