somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানস চোখের ভ্রমণ রঙ্গঃ পর্ব – ২

০৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানস চোখের ভ্রমণ রঙ্গঃ পর্ব – ১

ভ্রমণের সময় আমাদের বিভিন্ন ধরনের ঘটন ঘটে, কিছু আছে হাস্যরসাত্মক আবার কিছু আছে বিরক্তি কর আবার কিছু আছে দুঃখ জনক। ভ্রমণে এই রকম মজার মজার ঘটনা বিস্তর ঘটতে থাকে, তবে বেশীরভাগই আমরা ফিরতে না ফিরতে ভূলে যাই। স্মৃতির পাতা থেকে এই ঘটনাগুলি লেখা শুরু করলাম। আজকে এই বিষয়ের দ্বিতীয় পোষ্টঃ

ঘটনা – ৩

এবারের ঘটনাটি হচ্ছে আমার প্রথম হোটলে/গেষ্ট হাউজে রাত কাটানো নিয়ে। ১৯৯৫ সালের কথা, আমি তখন মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একদিন দুপুরে ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়ীতে রওনা দিলাম। যমুনা সেতু তখন নির্মাণাধীন, আরিচা বাদ দিয়ে সর্ট-কার্ট রুট হিসেবে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর ঘাট হয়ে লঞ্চে যমুনা পাড় হয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে যাব।

শেষ বিকেলে ভূয়াপুর ঘাটে এসে দেখলাম শেষ লঞ্চটা ৩০ মিনিট আগেই ছেড়ে গেছে। আমরা বেশ কিছু লোকজন আটকে গেলাম, সবাই মিলে চেষ্টা করলাম একটা নৌকা ভাড়া করে নদী পার হতে। শীতের শুরুর সময়, তখন নদীতে পানি কম আর অনেক চর ঘুড়ে ঘুড়ে যেতে হবে আর কয়েক দিন আগেই একটা বড়সর ডাকাতির ঘটনা ঘটাতে পুলিশ কিছুতেই আমাদের যেতে দিলনা। ভূয়াপুর ঘাটে থাকার মত তেমন কোন সুবিধা ছিল না শুধু ২/৩ টা চিত-কাইত বোর্ডিং ছিল।

কি আর করা ‘নাজমা বোর্ডিং’ এ গিয়ে আশ্র্য় নিলাম, সিট ভাড়া ১৫ টাকা এক রাত। ঢুকে দেখি ঘড়ের মধ্যে দুই সারিতে দশটা দশটা বিশটার মত চৌকি পাতা আর চৌকি গুলো একটা আরেকটার সাথে লাগানো, এক ধরণের ঢালাও বিছানা। চৌকি ছাড়া আসবাব বলতে একটা কাঠের বড় সিন্দুক। বোর্ডিং এর নিজস্ব কোন শৌচাগার নাই, পাশে মসজিদের গনশৌচাগার এ যেতে হবে। বোর্ডিংওয়ালার কাছে সিট ভাড়া দিলে সে আমাকে ৪ নম্বর চৌকি বরাদ্দ দিল।

পাশের এক টং ঘড়ের ভাতের হোটেলে নদীর টাটকা চিংড়ি মাছ দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নিলাম। একদিনের জন্য বাড়ীতে যাচ্ছি সাথে ব্যাগ-ট্যাগ তেমন কিছুই নাই। বোর্ডিংওয়ালা বর্ডারদের শোয়ার তাগিদ দেয় কারন চার জন করে একটা লেপ। প্যান্ট শার্ট আর মানিব্যাগ মাথার কাছে রেখে শর্টস পরে মাত্র শুতে যাব তখন সে বলতাছে ‘ভাই এগুলোতো এখানে রাখা যাবে না, চুরি হয়ে যেতে পারে’ তাই তার কাছে জমা দিয়ে রাখতে হবে তা না হলে তার কোন দায়িত্ব নাই। আমি পড়লাম মহা ফাঁপরে, সাথে আর জামা কাপড় নাই আর চুরি যদি হয়ে যায় তাহলে তো বিপদের চুরান্ত, শুধু শর্টস পরে খালি গায়ে লঞ্চে উঠতে হবে এই ভয়ে তারাতারি করে জিনিষ গুলো জমা দিয়ে দিলাম, সে কাঠের সিন্দুকে সব ঢুকিয়ে রেখে আর আমাকে একটা জমা দেয়ার রশিদও দিল, সার্ট – ১টা, প্যান্ট – ১টা, মানিব্যাগ – ১ টা, নগদ টাকা ১১৮ টাকা...... এই রকম। দেখলাম, বোর্ডিং চিত-কাইত হইলে কি হবে নিয়ম-কানুন কড়া।

যথারীতি শুয়ে পড়লাম, চার জন করে একটা লেপ, রোল করা লেপ এনে আমাদের উপর দিয়ে বিছিয়ে দিল। লেপের অবস্থা কি আর বিছানার অবস্থা কি ছিল তা নিশ্চয়ই ধারনা করতে পারছেন! জাস্ট একরাত তো কোন মতে পার করা তাই চোখ নাক বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। যাই হোক অবশেষে কোনমতে মটকা মেরে রাত পার করলাম। ভোরে বোর্ডিংওয়ালার ডাকে ঘুম ভাঙল। উনি সবাইকে জাগাচ্ছেন আর বলতাছেন ‘ভাই আপ্নেরা জামা কাপড় ঠিক করেন এখন লেপ তোলা হইবো' এই ঘোষনার সাথে সাথেই দেখলাম সবাই বেশ তারাতারি উঠে পড়লো।

এই হল আমার প্রথম হোটেল বলেন আর বোর্ডিং বলেন আর গেষ্ট হাউজ বলেন থাকার অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ, কি বলেন ? এর পরে তো জীবনে চলার পথে দেশে বিদেশে হরেক ধরনের অসংখ্য হোটেল আর গেষ্ট হাউজে থেকেছি আর থাকছি, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা আজও ভুলতে পারি নাই।

=============================================
ব্যবহৃত ছবিটি গুগল থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:৪৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×