somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট এবং কিছু স্মৃতি

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮। আমি সেদিন ছিলাম আমার চাচার বাসায়। সাথে আম্মুও ছিল। রাত ১১টা।হালকা মেজাজে আপু আর ভাইয়ার সাথে তাস খেলছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, সবাই কতো হেসে হেসে কথা বলছে, সাহস দিচ্ছে কালকে রেজাল্ট খারাপ হলে এরাই আমাকে বাঁশ দিবে !!!


রেজাল্টের আগে পরীক্ষার আগের কিছু ঘটনা বলে নেই।

ছাত্র হিসাবে আমি গাধা না হলেও খুব ভাল কখনই ছিলাম না। স্কুল লাইফে যেটুকু পড়াশোনা করেছিলাম, কলেজ এসে সেটাও ছেড়ে দিয়েছিলাম।খুব মনে পরে কলেজের শেষ দিনগুলোর কথা। খুব বেশি অমনোযোগী ছিলাম আমি। টেস্ট পরীক্ষার কিছুদিন বাকি থাকলেও টিভি রুমে ( আমি কলেজ হোস্টেলে থাকতাম) গিয়ে খেলা দেখা, মুভি দেখা কিংবা সন্ধ্যার আগে একটু ঘোরাঘুরি হরদম চলতো। রাত হলে ললনাদের(সখিনা,রহিমা,জরিনা,কুলসুম) সাথে মোবাইলে কথা বলা কিংবা আমার রুমমেট আলতাফের ওয়াজের সুরে পড়া রসময় গুপ্ত তখন প্রাত্যহিক রুটিন ছিল :D

ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজে যারা হোস্টেলে থাকতো তাদের জন্য বিষয় ভিত্তিক এক্সট্রা টিচারের ব্যবস্থা ছিল। প্রতিদিন সন্ধায় হোস্টেলে কয়েকজন করে স্যার আসতেন। যেই আসুক না কেন আমি আমি তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে (ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী, ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী, ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী) ঠিক এইভাবে একই লাইনই পড়তাম। পরে স্যার চলে গেলে পড়াশোনা আবার বন্ধ :D

আমার মনে আছে আমি বেশির ভাগ সময় রসায়ন ২য় পত্রের বইটা খুলে বসে থাকতাম। রসায়ন ২য় পত্রকে বলতাম গুরু তুমি বশে আসো, বশে আসো। গুরু আমার বশে আসাতো দুরের কথা, বেশীরভাগ সময় বাঁশ দিতো। আছোলা লম্বা বাঁশ :P উল্লেখ্য আমাদের কলেজে রসায়ন ডিপারমেন্টের স্যাররা একটু বেশি জ্বালাতন করতো।

প্রিটেস্ট পরীক্ষায় পদার্থ বিজ্ঞানে ফেইল করেছিলাম। তাই পদার্থ নিয়েও যে খুব সুখে ছিলাম তা না। পদার্থের চাপে আমার নিজেকে মাঝে মাঝে অপদার্থ লাগতো নিজেকে প্রায়ই সান্ত্বনা দিতাম failure is the pillar of success. কিন্তু কলেজ জীবনে এত বেশি পিলার গেড়েছি যে হাটার জায়গা ছিল না। :P :P

ম্যাথ এবং বায়োলজির অবস্থা মোটামুটি থাকলেও বাকি ডিপার্টমেন্ট গুলোর যন্ত্রণায় শেষ ভরসা বলে কিছু থাকলো না। যত পরীক্ষার দিন সামনে আসতে লাগলো আমার অবস্থা যেন বেশি খারাপ হতে লাগলো।আল্লাহ্‌র অশেষ কৃপায় ৩.৮০ পেলাম টেস্টে। আমি যে কি খুশি হয়েছিলাম সেদিন বলার অপেক্ষা রাখে না। কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কার করেও এতবেশি খুশি হয় নাই :P

যাইহোক এইচ এস সি পরিক্ষা শুরু হলো। ভাগ্যক্রমে আমার সিটটা মাঝের দিকে পরেছিল। (আমার নিজের যোগ্যতা+ আশে পাশের বন্ধুদের সাহায্য )= আমার পরিক্ষা বেশ ভালই হলো। প্রতিটা বিষয়ের পরিক্ষা শেষ হবার পরে নিজের কনফিডেন্স অনেক বেড়ে যাচ্ছিলো। এবার রেজাল্টের পালা !!!!


১০ সেপ্টেম্বর ২০০৮। সকাল ৯টার সময় ঘুম থেকে উঠলাম। ঘুম থেকে উঠার একটু পরেই কলেজ থেকে ফোন আসলো দুপুর ১২টার মধ্যে কলেজ ড্রেস পরে কলেজে উপস্থিত থাকতে হবে। আমাদের কলেজের ড্রেস ছিল কালো শার্ট, কালো প্যান্ট, কালো টাই এবং কালো জুতা। পুরাই RAB :P যাইহোক নতুন সমস্যা বাধল ড্রেস কই পাবো। কতো আগে কলেজ শেষ করেছি, তখনকি আর ড্রেসের হিসাব কেউ রাখে? খালার কাছে শুনলাম কলেজের শার্ট নাকি তার বাসায় (উত্তরা)। আর জুতা আর প্যান্ট আমার মেসে ধানমন্ডি ১৫ (কলেজের হোস্টেল ছেড়ে দেবার পরে আমি কিছুদিন মেসে ছিলাম)। আর আমি তখন আমার চাচার বাসা পুরান ঢাকায়। অস্থির অবস্থা। মেস থেকে কালো জুতা, কালো প্যান্ট পড়ে আমার খালার বাসা উত্তরায় আসলাম। কালো জুতা, কালো প্যান্ট পরে যখন কলেজের উদ্দেশে রওনা দেবো তখন অলরেডি ১টা বাজে। আম্মার সাথে বাসে উঠেসি ততক্ষণে । আমার ছোট ভাই আগে থেকেই কলেজে ছিল। ও আমাকে ফোন করে জানালো আমি A+ পেয়েছি :D

ঠিক বুঝলাম না ভুল শুনলাম নাকি। পরে বাংলা ডিপার্টমেন্টের রায়হান স্যার এর কাছ থেকে শিওর হয়ে নিলাম। বাসের মধ্যে রেসাল্ট পেলাম। এমন অনুভুতি আসলে মুন্নি সাহা ও বুঝবে না।



আজ বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে। কলেজ লাইফের সব বন্ধুকে ভীষণ মিস করি। কয়েকজনের কথা না বললেই না। অভি, শফিক, তাৌহিদ, আলতাফ, মামুন, রনি, এহসান, আমজেদ মামা, মুসনাদ, মিতুল, কে জহির, ভি তনু ,সাইফুল,পলাশ, তমাইল্লা, মাইনক্যা, হাতি ধ্রুব, কবির ভাই, শিশির, উচ্ছাস,রায়হান, জুবায়ের,রাসেল, সিঙ্গারা বণিক, তুষার, শিমুল, ফজলে রাব্বি, অপু, চেলিম, সৌরভ, জয়, শ্বশুর আব্বা (আলমগির), ঋতু, লুইচা সাজিদ, ইমরান, পিএম রাজিব (অনেকের নাম এখন মনে আসছেনা)

কিছু কিছু স্মৃতি খুব তারা করে ফেরে। তমাইল্লা, মাইনক্যা, ধ্রুব আমার হোস্টেল লাইফের একদম প্রথম দিকের রুমমেট ছিল। একসাথে চানাচুর মুড়ি , সারারাত তাস খেলা কিংবা হাতি ধ্রুবের আমাদের গায়ের উপরে লাফাইয়া পড়া :P অভির সাথে স্টোর রুমে সারারাত আড্ডা মেরে কাটিয়ে দেওয়া খুব বেশি মিস করি। ভি তনুর ফ্যান সহ রেডিওটা আমাদের হোস্টেলে ২-৩য় তলার বাসিন্দাদের মনে হয় একমাত্র বিনোদনের উৎস ছিল :P সব কথা বলে শেষ করা যাবে না। উঠি এখন :P

আহা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম !!!!!

HSC Result of Cambrian college. Science:853 A+ ,Business Studies=89 A+. Total= 942 . 7th Position in Dhaka Board.

২০১৩ সালের এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের জন্য আমার শুভ কামনা রইলো :)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৬:৪৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×