somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথা-বুদ্ধিমান পাদ্রী (দ্বিতীয় পর্ব)

২৪ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিউবির সমস্যার জন্য দ্বিতীয় পর্ব দিতে দেরি হল।যারা দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

প্রথম পর্ব


তারপর অনেক দিন কেটে গেল।পাদ্রীর বয়স যখন ৬৩,তখন একদিন তার দরজায়
নক হল,দরজা খোলার পরে তিনি দেখলেন,একজন কুৎসিত মানুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তিনি জিজ্ঞেস করলেন,”আপনি কে?”কুৎসিত মানুষটা তাকে বলল,”চলুন পাদ্রী।আপনার পৃথিবীতে থাকার সময় শেষ হয়েছে।আমি নরক থেকে
আপনাকে নিতে এসেছি।আমি শয়তান।”

পাদ্রী বললেন,”নিতে এসেছেন তো ভালো কথা।এভাবে হুট করে তো আর রওনা দেওয়া যায় না।আপনি এক কাজ করুন,আমি একটু ভিতর থেকে গোছগাছ করে আসি,আপনি ততক্ষনে এই টুলটাতে বসে বিশ্রাম নিন।

শয়তান ভাবল,”ঠিক আছে।যেতে যখন দেরি হবেই তখন একটু বিশ্রাম নিলে ক্ষতি কি?”শয়তান বিশ্রাম নিতে লাগলো।কিচুক্ষন পরে পাদ্রী ভিতর থেকে বের হয়ে এলে শয়তান বলল,”আপনি প্রস্তুত?চলুন রওনা দেওয়া যাক।“এই বলে সে উঠতে গেল।

এই বলে সে উঠতে গেল।কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখল যে সে কোনভাবেই টুল থেকে উঠতে পারছেনা।সে পাদ্রীকে খুব রাগান্বিত গলায় বলল,”আপনি কি করেছেন?”
পাদ্রী তাকে বললেন,”টুল টা মন্ত্রপূত।আমি না বলা পর্যন্ত ওটা থেকে আপনি উঠতে পারবেন না।”শয়তান তাকে জিজ্ঞেস করল,”আপনি কি চান?”পাদ্রী তাকে বললেন,”আগামি ৩০০ বছর আমার ধারেকাছেও আসবেননা।”শয়তান কিছুক্ষন ভেবে বলল,”ঠিক আছে।”

৩০০ বছর চলে গেল।পাদ্রীর মনে হল ৩০০ বছর যেন দেখতে দেখতে চলে গেল।এবং ৩০০ বছর পার হওয়ার পরের দিন শয়তান এসে উপস্থিত।এসেই বলল,”আপনার বাড়ির ভিতরে আমি আর ঢুকছি না।আমি বাড়ির উঠানে দাঁড়াব,আপনি তৈরি হয়ে আসুন।”

পাদ্রী বললেন,”উঠানে দাঁড়াবেন?”তাহলে এক কাজ করুন।আমার আপেল গাছটা থেকে আপেল পেড়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করুন।চলেই যখন যাচ্ছি,কে আর খাবে এসব?”

শয়তান ভাবল,”ব্যাপারটা মন্দ হয় না।আপেল খাওয়া তো যাবেই আর এবার তো ঘরে টুলে বসতে হচ্ছে না।”ভাবা মাত্র কাজ।তর তর করে আপেল গাছে উঠে আপেল খাওয়া শুরু করল।

কিছুক্ষন পরে পাদ্রী উঠানে এসে দাঁড়ালে শয়তান গাছ থেকে নামতে গেল।কিন্তু সে আপেল গাছের সাথে আটকিয়ে গিয়েছে।সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ গলায় পাদ্রীকে বলল,আপনি আবারও কি কোন কৌশল করেছেন?পাদ্রী স্মিত হেসে বললেন,”এই আপেল গাছ টা আসলে মন্ত্রপূত।আমি না বলা পর্যন্ত আপনি গাছ থেকে নামতে পারবেন না।”শয়তান বলল,”আপনি এবার কি চান?”পাদ্রী বললেন,”আপনি আবার ৩০০ বছর পরে আসবেন।”শয়তান কিছুক্ষন কি যেন ভেবে বলল,”ঠিক আছে।”

৩০০ বছর চলে গেল।পাদ্রীর মনে হল ৩০০ বছর যেন দেখতে দেখতে চলে গেল।এবং ঠিক ৩০০ বছর পার হওয়ার পরের দিন শয়তান এসে উপস্থিত।এসেই বলল,”আমি রাস্তায় দাঁড়াচ্ছি,আপনি তৈরি হয়ে আসুন।”

পাদ্রী প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে এলেন।রওনা দেবার ঠিক আগ মুহূর্তে পিছন ফিরে বাড়িটার দিকে তাকালেন।গত ৬০০ বছরেরও বেশি সময় তিনি এই বাড়িটাতে বাস করেছেন।বিদায়বেলায় এক বিষণ্ণ আবেগ তাকে গ্রাস করল।

শয়তান তাকে বলল,”চলুন রওনা দেয়া যাক।”

যাত্রা শুরু হল।কিন্তু যাত্রা শুরু হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই পাদ্রী কেমন যেন উসখুস শুরু করলেন।শয়তান বলল,”কি ব্যাপার?”পাদ্রী বললেন,”আচ্ছা,পথ কি অনেক দীর্ঘ?”শয়তান বলল,”হ্যাঁ।এ কথা জানতে চাওয়ার কারন?”পাদ্রী বললেন,”পথ যেহেতু অনেক দীর্ঘ,আমরা পথের মাঝে মাঝে বিশ্রাম এবং বিশ্রামের সাথে সাথে যদি তাস খেলি তাহলে কেমন হয়?”শয়তান বলল,”খুবই ভালো হয়।কিন্তু আমি বাজি ছাড়া তাস খেলি না এটা নিশ্চয়ই জানেন?”পাদ্রী বললেন,”জানি।কি নিয়ে বাজি ধরতে চান?“শয়তান উপহাসের সুরে বলল,”আমি যদি জিতি,তাহলে আপনার আত্মাটা পুরোপুরিভাবেই শুধুমাত্র আমার হয়ে যাবে।”পাদ্রী শান্তকণ্ঠে বললেন,”আর যদি আমি জিতি?”শয়তান বলল,”আপনি যা চাইবেন আমি তাই দেব।”পাদ্রী বললেন,”আমি যতোবার জিতব,প্রতিবারের জন্য ১২ টা আত্মা আপনি নরক থেকে এনে আমাকে দেবেন।”শয়তান ব্যঙ্গভরে বলল,”আপনার যা মর্জি।”

তাসের খেলায় শয়তানের চেয়ে দক্ষ আর কেউ নেই।তার আত্মবিশ্বাসের কারন ছিল এটাই।কিন্তু পাদ্রীর সাথে আছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ।প্রথমবারের খেলায় শয়তান কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখল সে হেরে বসে আছে।শর্ত মোতাবেক শয়তান,পাদ্রীকে ১২ আত্মা দিল।আবার খেলল,আবার হারল।আবারও ১২ টা আত্মা দিতে হল।যতবার খেলা হয় ততবার শয়তান হারে আর সেই সাথে তার জেদ চেপে যায়।মর্ত্যলোকের একজন মরণশীল মানুষ তাকে কিভাবে বারবার তাসের খেলাতে হারাচ্ছে,সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না।কিন্তু ততক্ষনে ১২ টা করে আত্মা দিতে দিতে নরক খালি হবার উপক্রম।একটা সময় আসলো যখন নরকে আর কোন আত্মা থাকলো না।তখন শয়তান গম্ভীরভাবে পাদ্রীকে বলল,”আপনার সাথে খেলায় হারলে আপনাকে দেওয়ার মতো আমার আর কিছুই নেই।আপনার জন্য নরক পুরো খালি করে ফেলেছি।”পাদ্রী জিজ্ঞেস করলেন,”আপনার সাথে আমার যাত্রার এখানেই সমাপ্তি।”শয়তান এর কোন জবাব দিল না।

পাদ্রী এবার শত শত আত্মা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন স্বর্গের দিকে।স্বর্গের গেটে পোঁছতেই পথ আটকাল স্বর্গের দ্বাররক্ষী সেইন্ত পিটার।পিটার পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করলেন,”আপনি কে?”পাদ্রী নিজের পরিচয় দেওয়ার পরে পিটার বললেন,”এতোজনকে নিয়ে তো আপনি ঢুকতে পারবেন না।ঢুকতে হলে আপনাকে একা ঢুকতে হবে।”পাদ্রী বললেন,”তাহলে আমি একাই ঢুকব,কিন্তু তার আগে আপনি ঈশ্বরকে একটা কথা জিজ্ঞেস করে আসুন।”পিটার বললেন,”কি?”পাদ্রী বললেন,”এক প্রচণ্ড শীতের রাতে ঈশ্বর তার ১১ জন সাথী নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছিলেন।আমার বাড়িতে সেদিন কোন খাবার ছিল না,কিন্তু তবুও আমি তাঁদেরকে আপ্যায়নের ত্রুটি করি নি।কিন্তু আজ আমি এতো জন কে সাথে নিয়ে এসেছি বলে আমাকে একা স্বর্গে ঢুকতে হবে।তাহলে কি আমি মনে করব আমি ঈশ্বরের চেয়েও বেশি মহান?আপনি শুধু এই কথাটা ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করে আসুন।”পিটার বললেন,”এখুনি যাচ্ছি।“
কিছুক্ষন পরে ফিরে এসে পিটার দরজা খুলে দিলেন এবং গম্ভীর গলায় বললেন,”ঈশ্বর সবাইকে ঢুকতে বলেছেন।”

এইভাবে পাদ্রী নিজের বুদ্ধির জোরে শুধু নিজেকে না,শত শত আত্মাকে স্বর্গে নিয়ে গেলেন।


অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথাঃ

১।আমার এক পিচ্চি মামাতো বোনের জন্য একটা রূপকথার বই কিনেছিলাম।গল্পটা সেখান থেকে পাওয়া।আমার অসম্ভব পছন্দের একটা গল্প।আমার যতো বন্ধু আছে,তাদের সবাইকে আমি গল্পটা
বলেছি।মূলত ব্লগার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার জন্যই গল্পটা লেখা।

২।আমার লেখার হাত খুব একটা ভাল না।তাই গল্পটা পড়ার সময় যদি কারো বিন্দুমাত্র বিরক্তি লাগে,দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×