somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেকার নগর পিতার নাচার নগরবাসী!

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাননীয় মেয়র জনাব আনিসুলহক, গণতান্ত্রিক কি অগণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত মেয়র, সে বিষয়ে আমার আমার মতো অধিকাংশের সাধারণ নগরবাসীই কোন মাথা ব্যাথা নেই। উনার মেয়র পূর্ববর্তী যে পরিচয়গুলো আমরা জানতাম, সেগুলো উনার ব্যাপারে আমাদের ভেতর ইতিবাচক ধারণা তৈরি করে ছিল। কিন্তু বলাই বাহুল্য পূর্বসূরিদের অনেকের মত উনি এবং উনার কর্পোরেশনের অফিস নগরবাসী কে হতাশ করছেন।
মেয়র হিসাবে উনার প্রধান কাজ নগরবাসীর মৌলিক চাহিদাগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা। সেগুলো পূরণ করা। সেই মৌলিক বিষয়গুলো ঠিক করার কাজ প্রায় পুরোটাই অসম্পূর্ণ রেখে উনি দুস্থ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। দুস্থ নগরবাসীর দিকে না তাকিয়ে উনি দুস্থ শিল্পীদের নিয়ে মেতে উঠলেন। কারণ ওটা কাজটিতে পাবলিসিটি বেশি। বাহবা বেশি। ব্যবসায়ী হিসাবে কোন কাজটাতে মুনাফা বেশি সেটা নিশ্চয়ই উনি খুউব ভালো করেই বুঝতে পারেন!
আমাদের মাননীয় মেয়রেরকাছে ঢাকা মানে কেবল গুলশান এভিনিউ। খুবই বড়জোর বনানী, বারিধারা। গুলশানে জঙ্গি হামলার পর উনি ঘটা করে নিরাপত্তার অজুহাতে মিটিং করলেন। এলিট এলাকার এলিট মানুষজনের জন্য এলিট রিকশাওয়ালাদের ব্যবস্থা করলেন। অত্যন্ত বিচিত্র আর অভিনব এই ব্যবস্থায় রিকশাওয়ালাদের ভেতরও ধনী গরীবের বৈষম্য সৃষ্টি হল। গুলশান এলাকার হ্লুদ হুডের রিকশাওয়ালাও আজকাল পোশাক দেখে প্যাসেঞ্জার তোলে! ধনী রিকশাওয়ালাদের দিকে এখন অন্য এলাকার রিকশাওয়ালা হিংসার চোখে তাকায়।
ভিআইপি নিরাপত্তা দিতে গিয়ে উনি সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিলেন। নগর পিতার গুড বুকে জায়গা হল শুধু সমাজের উঁচু তলার মানুষের। আল্লাহ্র দান দুই পা এর উপর ভরসা করে তাদের এখন গুলশানের রাস্তায় হাঁটতে হয়! হলুদ রিকশা যেন সোনার হরিণ! অবশ্য এই নেগেটিভ ব্যাপারটিকেও উনি উনার ক্যারিশমাটিক পারসোনালিটির গুণে পজেটিভ বানিয়ে দিতে পারেন। উনি বলতেই পারেন যে উনার জন্যই নগরবাসী আগের চেয়ে অনেকে স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে গেছে। আর তিনি এর কারিগর।

নগরে ফুটপাতে হাটার জায়গা নাই, উনি ফুটপাত উদ্ধার না করে সৌন্দর্য বর্ধন নিয়ে ব্যস্ত।

ওভারব্রিজগুলো টাউট বাটপার, ভিক্ষুক দিয়ে, ময়লা দিয়ে ভরা, উনি সেগুলোকে চলাচল উপযোগী না করে, তাতে ফুলের টব লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন যেন ওভারব্রিজ না, ওটা বৈকালিক ভ্রমনে যাওয়ার কোন পার্ক।

অধিকাংশ রাস্তায় যত্র তত্র গাড়ি রেখে ৭০ ফুট রাস্তা ২০ ফুট বানিয়ে ফেলেছে। যেন গাড়ি আর বাড়ির মালিকগুলো পৈতৃক সূত্রে কর্পোরেশন এর রাস্তার ইজারা নিয়ে রেখেছে। অথচ কারো কোন ভ্রূক্ষেপ নেই সেদিকে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল মেয়র উনি, তাই উনার আমলে সব কিছুই অন্যরকম হবে এটাই স্বাভাবিক। এই অন্যরকমের একটি হল হিজড়াদের উপদ্রব! রাস্তায় হাঁটতে পথে, ওভারব্রিজে, বাসে এদের অত্যাচারে নাকাল হচ্ছে সবাই! অথচ গত ৬ মাসেও এই সমস্যা এত প্রকট ছিল না। ৩-৫ জনের দল রাস্তায় চলার পথে বাসে, সব জায়গায় হানা দিচ্ছে। টাকা এদের দিতেই হবে!
উত্তরা থেকে বনানী আসতে একদিনে তিনটা স্পটে হিজড়াদের টাকা দিতে হয়। এটা কি মগের মুলুক নাকি! হাউজবিল্ডিং, এয়ারপোর্ট আর কাকলী! কাকলী বাস স্টপেজে ঠিক ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সামনে পুলিশের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে হিজড়া বাহিনী বাসে উঠে যাত্রীদের হেনস্তা করছে। পুলিশ অফিসার দেখেও দেখছেন না। কারণ উনারা তখন বাস আটকে দু’ টাকা কামায় এ ব্যস্ত! আর হিজড়াদের দেখেও যে উনারা দেখছেন না, সেই অন্ধত্তের জন্যও নিশ্চয়ই পকেট ভরছে… তা না হলে হিজড়ারা তো পুলিশ/ ট্রাফিক পুলিশের শালা লাগে না যে তাদের শুধু শুধু এক্সট্রা খাতির করবে!!


মাননীয় মেয়র হিজড়াদের উপদ্রব, সিগন্যালে ফকিরের উপদ্রব, ফুটপাতে হকারে উপদ্রবদূর করবেন কি করে বলুন, তাতে করে তো উনার মেয়র অফিস আর পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অনেকেরই জীবন যাপনের বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে। এসব বাদ দিয়ে হিসাবের টাকায় চলতে গেলে তো আরামের ভুরিটা শুকিয়ে আমশি হয়ে যাবে! ওনাদের এই কষ্ট নগর পিতা হয়ে উনি কি করে সহ্য করবেন?... নগর পিতা হিসাবে সবার সুখ দুঃখের কথা চিন্তা করা তো উনার আসল দায়িত্তের ভেতর পড়ে (শুধু নাগরিক ছাড়া) তাই না??
শুধু আমি বা আমার মতো আর দশজন নাগরিক নয়,সম্ভবত বর্তমান মেয়রদের কাছ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশাও অনেক বেশি ছিল। তাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকা অনেকের ভেতর উনি এনাদেরকেই মনোনয়ন দিয়েছিলেন। গোলপোস্ট থেকে গোলকিপার কে সরিয়ে দিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সব ব্যবস্থা উনি করে দিয়েছিলেন। শুধু বলটাকে ঠেলে দেয়া ছিল ওনাদের কাজ। উনি সেটা পারছেন না। পত্রিকার কাভারেজের চাইতেও বড় পাবলিসিটি যে মানুষের মুখে মুখে হতে পারে সেটা হয় উনি বিশ্বাস করেন না, অথবা সেটাকেও গোণায় ধরেন না।

কর্মসূত্রেও একবার উনার মত বড় মাপের একজন ব্যবসায়ীর সাথে কোন একটা অনুষ্ঠান উপলক্ষে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল আমার। কথা প্রসঙ্গে উনি সেদিন বলেছিলেন, আপনি খুব পাবলিসিটি প্রিয় একটা মানুষ। পাবলিসিটির আলোয় কি করে নিজেকে তুলে ধরতে হয়, তা আপনি খুব ভালো জানেন। পাবলিসিটির বিষয়টাকে আপনি রীতিমত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। ‘
আমি সেদিন তার কথা বিশ্বাস করি নি। কিন্তু আজ বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে।
উনাদের কাছে পৌছনোর সুযোগ আমাদের নেই। জনগণ কে নিয়ে উনারা কাজ করেন, অথচ জনগণের সাথে উনাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আপনাদের ঘিরে থাকে চাটুকাররা। আপনারা তেল নেয়া পছন্দ করেন, তাই উনারাও তেল দিয়ে স্বার্থ হাসিল করে নেন। আমাদের সমস্যা নিয়ে ভাববার সময় কোথায় আপনাদের? আমরা তো কেবল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটা শব্দ মাত্র। রাষ্ট্রনায়ক হতে, মন্ত্রী হতে, মেয়র হতে যাদের উপস্থিতি আবশ্যক, তবে তা কাগজে মাত্র!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৮
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×