somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরী

১৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এনাম আহমেদ


(প্রথম পর্ব)
নানা বাড়িতে গিয়েছি হাতে গোনা ক’বার মাত্র। এক বর্ষায় একবার মা’র সাথে গিয়েছিলাম ২ দিনের জন্য। তখন আমি ক্লাস ফোর এ পড়ি। নানা বাড়ি চলনবিল এলাকায়। সে সময় পাকা রাস্তা ওদিকে হয়নি। বর্ষাকাল ছাড়া মেঠোপথে ধুলো উড়ে সারাটা বছর। আর বর্ষাকালে মেঠোপথের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। নানা বাড়ির আঙ্গিনা থেকে কয়েক গজ দুরেই বন্যার থৈ থৈ পানি। এরকম সময় ঐসব এলাকায় সাপ বের হওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। গোখরা সাপের চেয়ে হলুদ রঙের ঢোঁড়া সাপটাই বেশি মারতে দেখেছি দু’দিনে। মারবে না কেন? ওরা জল ছেড়ে সংরক্ষিত খড়ের গাদায় আশ্রয় নেবে, ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে উল্টো ফোণা তুলবে। তখন তো ওদের কঞ্চির বারি খেয়েই মরতে হবে। আমার মা’র দাদী বার বার আমাকে বারণ করছিলেন বাইরে যাস না পানিতে পড়বি, সাঁতার জানিস না, পানিতে পড়লে কি হয়! সাপ কামড়িয়ে দেবে। আমি ভয়ে খুব বেশি দুরে যাওয়ার সাহস করিনি। তবে পরদিন দুপুরে বারান্দায় পাতানো বেঞ্চিতে বসে দক্ষিণ দিকে কড়ই গাছ আর ছোট্ট তালগাছের ফাঁক দিয়ে পানিতে ঢেউয়ের খেলা দেখছিলাম আর দেখছিলাম নৌকা চালিয়ে মাঝিদের এদিক সেদিক চলাচলের দৃশ্য। নানা বাড়ির খোলা উঠোন দিয়ে আমার বয়সী কিছু ছোকরা আর মেয়েগুলো নীলরঙের হাফপ্যান্ট পড়ে উদল গায়ে কাঁদা মেখে হাতে ছোট মাছ ভর্তি কৌটা নিয়ে যাচ্ছিল। ওদের দেখে বেশ হিংসে হচ্ছিল। কারণ আমি যদি সেদিন সাহস করে তাদের দলে ভিড়তাম তাহলে মা আমাকে আর আস্ত রাখতেন না। ভয়ে বেঞ্চিতে বসে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। এরকম সময় খেয়াল হলো আমার মাথার উপরের ছাদ থেকে গুরগুরুম, বাকবাকুম শব্দ আসছে। গতকাল রাতেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে এরকম শব্দ কানে বেশ ক’বার এসেছে। কবুতর ডাকছে এটা বুঝতে পেরেছিলাম। রাত থেকেই কবুতর দেখতে উপরের তালার রেলিংয়ে যাবো সেটা ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু মনে ছিলোনা। শব্দটা কানা আসার পর আর দেরি না করে বামপাশে রাখা মই দিয়ে উপরে উঠলাম। এক মুহুর্তে আনন্দে মনটা ভরে উঠলো। নেট দিয়ে মোড়ানো বিস্তৃত জায়গা দিয়ে কবুতরের ঘর গড়ে রেখেছেন নানা। আমি এখন ইচ্ছে করলেই কবুতর ধরতে পারবো, ওরা উড়ে যেতে পারবে না! অথচ বাড়ি থাকতে কতবার কবুতর ধরতে মন ছটফট করেছে তার ঠিক নেই। যেই ভাবা সেই কাজ। আমি এক পা দু পা এগুতেই ঘোড়া’র বাইরের কবুতরগুলো উড়ে উঠলো কিন্তু কোথাও পালাতে পারলো না। সাদা, সবুজ, খয়েরী, ঝুটিওয়ালা হরেক রকমের কবুতরের মাঝে আমি খয়েরি ঝুটিওয়ালা কবুতরটাকেই খপ করে ধরে ফেললাম। তারপর কি আনন্দ! আমাকে আর পায় কে! কবুতর ধরে ওর ঠোঁট চোখ বার বার করে পরোখ করছিলাম। খানেক বাদে কে যেন বলে উঠলো কবুতর ছেড়ে দে, কবুতর ছেড়ে দে। তোর নানা জানলে বকা দেবে। তখন আগাগোড়াই নানাকে খুব ভয় পেতাম। খুব যাওয়া আসা হয়না, তাই তার সাথে ভাবটাও ঠিকমত হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া নানার চোখমুখ সব সময় গোমরাটে থাকতো। সেদিন ঐ অল্পটুকু সময়ে কবুতরের প্রতি আমার বুকে এতটা ভালবাসা, এতটা প্রেম জমে গিয়েছিলো সেটা নানাকে বলি কিভাবে! ফেরার দিন খুব সাহস নিয়ে নানাকে বললাম ‘ নানা, আমাকে দুটো কবুতর দিন’। তিনি কোন কথা বললেন না। মা হাসলেন। তারপর আর আমি দ্বিতীয়বার কবুতরের কথা বলিনি।
এর কয়েক মাস বাদে এক বিকেলে টেনিস বল হাতে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলাম। দরজা খুলে বাইরে তাকাতেই ডান দিকে চোখে পড়লো একটা ধূসর রঙের পুরো শরীর আর মাথায় এক চিলতে সাদা দাগ টানানো একটা কবুতর শুকনো নালায় দাঁড়িয়ে আছে। নালাতে নামলে আমার কোমড় অবধি ঢেকে যাবে। ওটাকে দেখে আর সহ্য করতে পারলাম না। ওটা উড়ে যেন না যায় সেজন্য ধীরে ধীরে ওটার কাছে গেলাম। তারপর বাম হাতটা নালার উপড়ের শক্ত স্থান আঁকড়ে ধরে ডান হাত দিয়ে ওকে ধরতে চেষ্টা করলাম। কোন ভাবেই ওর কাছে হাতটা নিয়ে যেতে পারছিলাম না। আমার হাত আগানো দেখে ও ভয় পেয়ে সরে যাচ্ছিলো। অনেকক্ষণ চেষ্টারত অবস্থায় এক সময় বাম হাতটা পিচ্ছিল খেয়ে গেলো। আমি নালাটা’র মাঝে অর্ধেকটা পড়ে যাওয়ার মতো হলাম কিন্তু সেদিকে আমার ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। এক সময় ওটাকে ধরে ফেললাম। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:৫৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×