somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই আতেলের ট্রেনযাত্রা

১৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এনাম আহমেদ



দীর্ঘ ট্রেন জার্নির ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। প্রায়ই বন্ধু বা কাছের সহকর্মীদের বলতাম চলো ট্রেনে করে শেষ ষ্টেশন পর্যন্ত যাবো। তারপর ট্রেন থেকে নেমে এলাকাটা ঘুরে দেখবো। এরপর যে ট্রেনটা বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে তখন সেই ট্রেনে চড়ে আবার ফিরে আসবো। ইচ্ছেটা ইচ্ছেই থেকে যাচ্ছিল। কিন্তু একটি কম্পিউটার ট্রেনিং প্রোগ্রাম আমার ট্রেন ভ্রমণের সাধটা পূর্ণ করেছে চার বছর আগে।
চলুন চার বছর আগের ট্রেন ভ্রমণ করে আসিঃ সময়টা ছিলো ২০১৬ সালের ১৫ জুন। আরবি রমজান মাসের কয় তারিখ মনে নেই। ওদিন আমিসহ আরো ৪ জন Women ICT Freelancers and Entrepreneurs Development Program এ প্রশিক্ষক হিসেবে সিলেক্টেড হলাম। ৪ জনের টিম। আমি আর রহিম ভাই (ছদ্মনাম) গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ের উপর ট্রেনিং করাবো লালমনিরহাটে এবং ফিরোজ ও শাহাদত ওয়েব ডিজাইনিংয়ে ট্রেনিং করাবে হাতিবান্ধা উপজেলায়। সব ঠিকঠাক, সব ঠিকঠাক। ১৬ জুন ২০১৬ আমাদের উদ্বোধনী ক্লাস। বিকাল সাড়ে ৫ টায় আমরা বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে করতোয়া এক্সপ্রেস চড়লাম। চড়ার আগে অবশ্য বিড়ম্বনার মাঝেই পড়লাম। ট্রেন থামামাত্র যে যেভাবে পারে ছিট দখল করে নিল। ট্রেনে চড়ে দেখি সেখানে আমাদের জন্য কোন সিট খালি নেই। সবাই যে যার মতো দাঁড়িয়ে আছে। তারা এভাবে অভ্যস্ত। আমি অস্থির প্রকৃতির। এভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া সহ্য হচ্ছিল না। রহিম ভাইকে বললাম, ভাই বিরক্ত লাগছে। তিনি বললেন চলো অন্য বগি ট্রাই করি। তারপর শাহাদত আর ফিরোজকে বললাম তোমরা এখানেই থাকো। আমরা পেছনের বগিতে দেখে আসি যদি সিট পাই। কিন্তু পেছনের বগিতে যাওয়া মাত্র ট্রেন ছেড়ে দিল। ওখানে আরো বেশি গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। পরবর্তী স্টেশন আসার আগ মুহুর্ত (সোনাতলা) পর্যন্ত আমরা টিম থেকে বিচ্ছিন্ন। এরপর সোনালাতলা স্টেশনে ট্রেন থামলে আমরা টিমের সাথে যোগ দিলাম। টিমকে পেয়ে বসার ছিট পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
ট্রেন চলছে…. ৬টা ৪৫ মিনিট। একটু পর ইফতারের সময়। ট্রেন থামলো গাইবান্ধার বোনারপাড়ায়। এবার ট্রেনটা থেমে খুব বেশি সময় নিচ্ছে। আমরা ট্রেনের টিটিকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে কি ইফতার পর্যন্ত ট্রেন দাঁড়াবে? নাকি চলন্ত ট্রেনে ইফতার? টিটি বললন ইফতার এখানেই। এরপর স্টেশনের সাথেই লাগানো একটা টিউবওয়েল দেখে আমরা এক এক করে সবাই নেমে পড়লাম। সবাই ফ্রেশ হয়ে ট্রেনে উঠলো। আমিও উঠবো এমন সময় আমার কো-ট্রেইনার জনাব রহিম সায়েব ‘বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন’ লিখা দেখে বললো এনাম চলো ওইখানে গিয়ে ছবি তুলি। এটা তো বিখ্যাত জায়গা। ছবি না তুললে কি হয়…! হালকা দ্বিধা সত্বেও তার সাথে গেলাম। ওইখানে পৌছানোর কিছুক্ষণ পরই ট্রেনের হুইসেল!! ট্রেন স্টার্ট নিয়ে নিয়েছে! চোখে তাঁরা দেখতে শুরু করলাম। আমি দৌড় দিলাম ট্রেন ধরার জন্য। পেছনে তাকিয়ে দেখি রহিম ভাই ‘থ’ খেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। উনাকে তোয়াক্কা না করে ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই দৌড়াচ্ছি! ট্রেনের জানালা দিয়ে হাত বের করে দিয়ে আমার টিমের লোকজন ইশারা করছিল তাড়াতাড়ি… তাড়াতাড়ি। তখন দৌড়াতে দৌড়াতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে শাহাদতকে ফোন দিয়ে বললাম, শেকলটা টানলেই তো হয়। শেকল টানো! ও বললো, কোথায় শেকল! উহু! কি বিরক্তিকর ব্যাপার স্যাপার! আমি দৌড়াচ্ছি। রহিম ভাই আমার পেছনে। স্টেশনের লোকজন আমাদের তামাশা দেখে হাসছিল। লজ্জিতবোধ করলাম। রাগে গরগর করতে করতে রহিম ভাইকে বললাম, এবার কি করবেন?
পরের ট্রেন আসতে অনেক দেরি। বসে বসে অপেক্ষা করাটা আমার ধৈর্যে কখনও কুলায়নি। স্টেশন অফিস থেকে জানতে পারলাম বোনারপাড়ায় ট্রেন আসবে সাড়ে ৮টায় আর গাইবান্ধায় ৯টায়! তাই দেড়-দুই ঘন্টা বসে বসে অপেক্ষা করার চেয়ে গাইবান্ধা গিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করা আমার কাছে ভাল মনে হলো। তারপর বোনারপাড়া থেকে সিএনজিতে করে ৪৫ মিনিটে চলে গেলাম গাইবান্ধা। তারপর দীর্ঘ পায়চারীর পর ট্রেন এলো সাড়ে ৯টায়।
লোকাল ট্রেন। বগির সিলিং এ মাকড়শার জাল দিয়ে ভর্তি। বাল্বের সঙ্গে মাকড়শা ঝুলছে। ছিটের নিচে এবং বগির গায়ে থুথুর চিহ্ন। বসে থাকতে থাকতে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলাম। পেছনে চোখ আটকে গেলো একটি চেয়ারের কাছে। কেউ বমি করে রেখেছে। আহ! কি নোংরা পরিবেশ। বাজে অভিজ্ঞতা। জীবনে প্রথম! দীর্ঘ সময়ের ট্রেন জার্নি! ঐ বগিতে আমরা দু’জনসহ আরো ৬ জন যাত্রী ছিলো। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাতের অন্ধকার। ঝোপঝাড়! দূরে টিমটিমে আলো। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ফোটা গায়ে এসে বিধছিলো। দরজা ছেড়ে জানালা ঘেঁষা চেয়ারে গিয়ে বসলাম। তারপর লালমনিরহাট পৌছলাম রাত পৌনে ২টায়। তখন লালমনিরহাটে ঝমঝম্ বৃষ্টি হচ্ছিল…।

বিঃদ্রঃ লিখার সাথে ব্যবহৃত ছবিটি ঘটনার জন্য দায়ী।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×