somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুষারের দেশে আনন্দের এক একটা দিন.................২৪তম পর্ব।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষ বড়ই আজব এক সৃষ্টি উপরওয়ালার। কে যে কবে কি আচরন করবে, বোঝা দায়। সেদিন আমি অদ্ভুতভাবে সাহায্য পেলাম এমন একজন মানুষের কাছ থেকে যা কল্পনারতীত। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়েছি, রাত নটায়। এসময়গুলোতে বাস আসে বেশ কিছুক্ষন পরপর। ঠান্ডাটা একটু কম ছিল, -২০ মতো। তাই ভাবছিলাম হেটে যেয়ে বাস স্টপে দাড়াবো, এমন সময় দেখি আমার পেছন থেকে একটা গাড়ি ফ্লাস দিচ্ছে। লক্ষ্য করলাম আমার সহকর্মি বেনেডিক, গাড়িটার ড্রাইভিং সিটে, হাত দিয়ে ইসারা করছে। ওর সাথে পরিচয় ছমাসের মতো, কিন্তু ছেলেটার কাজকর্ম একেবারেই পারেনা বলে কেউই ওকে পচ্ছন্দ করেনা। এমনকি একদিন আমারও একটা স্ফিফ্ট ছিল, ছেলেটার সাথে। পুরো আট ঘন্টার স্ফিফ্টে আমাকে আমার কাজ শেষ করার সাথে সাথে ওর কাজেও হাত লাগাতে হয়েছিল বলে আমি খুবই বিরক্ত ছিলাম। সেকারনে আমিও বিরক্ত হয়ে, ম্যানেজারকে বলেছিলাম আমাকে যেন কোনদিন বেনেডিকের সাথে কাজ করার জন্য না বলে।

আমার বাসা, কাজের জায়গা থেকে মাত্র ত্রিশ ব্লগ দুরে। গাড়িতে কিংবা বাসে আসতে লাগে মাত্র দশ মিনিট। কিন্তু পাবলিক বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় নুন্যতম পনের মিনিট, সেকারনে সব মিলিয়ে আমার সময় লেগে যায় আধা ঘন্টারও বেশি। অথচ কারোর সামান্য দশ মিনিটের ড্রাইভ আমার অনেক বেশি উপকার করতে পারে , এই ঠান্ডার মাঝে।

অন্যদিকে, এই আটমাসের কাজে অনেকের সাথে গড়ে উঠেছে সখ্যতা।
কোনকোনদিন অনেক রাতে, খুব ঠান্ডায় তাদের সাথেই বের হয়েছি কাজ থেকে। আমি অপেক্ষায় থেকেছি বাসস্টপে, আর আমার সামনে দিয়ে ওরা চলে গেছে নিজের গাড়িতে । হ্যা, আমিও কোনদিন প্রত্যাশা করিনি, কোন ঘনিষ্ঠ সহকর্মির সাহায্যের। কিন্তু আজ যখন এই সহকর্মি আমাকে বাড়িয়ে দিল সাহায্যের হাত, তার গাড়িতে করে নামিয়ে দিল আমার বাসায়। অবাক না হয়ে পারছিলাম না।

আমার চাকুরী ছেড়ে দেয়া কিংবা শহর থেকে চলে আসার কথা আমি বেশ কিছুদিন যাবৎ বলছি চেনা-পরিচিত মহলে, কখোনবা কাজের প্রয়োজনে , কখোনবা কেবল ভদ্রতাবশত। ফলশ্রুতিতে অজর্ন করলাম অনেক অনেক অভিজ্ঞতার যা স্বাভাবিকভাবে আমি কোনদিন প্রত্যাশা করিনি। মানুষ এক অজানা আশ্চর্য হয়েই বুঝি থেকে যাবে আমাদের জীবনে।



গত কয়েকদিন যাবৎ কেবল গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টাতেই সময় কেটে গেল। তিন বছর আগে এসেছিলাম এই শহরটাতে, গুছিয়ে ছিলাম একটা সংসার। গড়ে ছিলাম নিজের একটা পৃথিবী। একটু একটু করে চিনে ছিলাম রাস্তা, দোকান, নিজের সব প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো, একা একা। আজ আবার গুটিয়ে নেবার পালা, সেটাও আবার একা একা।

ফিরে যাবো নিজের শহরে, নিজের পরিবারের কাছে, হয়তো নিজের কাছে। হয়তো সত্যিকার অর্থে, নিজের অস্তিত্বের কাছ থেকে অনেক দুরে সেই অবস্থান। তাই হয়তো এতো সংশয়, এতো ভয়। আবার কষ্টও, নিজের গড়ে তোলা পৃথিবীটাকে গুটিয়ে নেবার মতো সাহসও যেন নেই। তারপরও কোথা থেকে যেন শক্তি দিচ্ছেন বিধাতা।

একটা একটা করে কেনা জিনিসে, ছোট ছোট অনুভূতিতে, কত চিন্তা করে, হিসাব করে গড়ে তোলা আমার দুনিয়াটা আবার একটু একটু করে ছোট করে নিয়ে আসা যেন আরো বেশি কঠিন। মজার ব্যপার হলো সেই ছোট করে নিয়ে আসাটাও একটা একটা করেই হচ্ছে। ঠিক যেমন করে জড়ো করে ছিলাম, তেমনি করেই আবার নিঃশেষ করছি।

তবে পারছি। সবাই যেমন পারে, আমিও পারছি। ভালো লাগছে একটা জায়গায়। সবাই অন্যের সাহায্য নিয়ে পারে, আমি চেষ্টা করছি সাহায্য করে পারতে। আমি আমার অধিকাংশ জিনিস মানুষকে দিয়ে দিচ্ছি, পরলে কখোনো পৌছেও দিচ্ছি, অন্তত গাড়ি পর্যন্ত উঠিয়ে তো দিচ্ছিই। কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত কারোর কোন সাহায্য নেইনি আমার জিনিস সরাবার কাজে। পড়ার টেবিল, ড্রেসার, ছোট কাবার্ড সবই সিড়ি দিয়ে নামিয়েছি একা একা। বিশেষ করে খাট নামানোর পর মনে হয়েছে, আমি অনেক কিছু পারি, কিন্তু এতো দিন বুঝি আমার নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ধারনা ছিলনা।

মনে পরলো, আন্ডার গ্রেডের হল ছাড়বার সময়ের কথা। আমি আমার রুমমেট, ক্লাসমেটদের চলে যাবার সময় সাহায্য করেছি। করোরবা পুরো কাজই আমি করে দিয়েছি। কিন্তু নিজের হল ছাড়বার সময়, সবাই চলে যাওয়ায় আমি ছিলাম একা। তবে ইচ্ছে করলে জুনিয়ার কিংবা বন্ধুদের সাহায্য পেতে পারতাম, কিন্তু ইচ্ছে হয়নি। তাই বেশ কষ্ট হয়ে ছিল, তবে করেছিলাম। সেই করতে পারার মাঝে ছিল তৃপ্তি। আজও সেই তৃপ্তিরই বড় সংস্করন -"নিজের ক্ষমতার সাথে নতুন করে " পরিচয় হলো।

আরো একটা বিষয়ে এবার যেন পুনরায় দেখা হলো। এই শহরে পড়তে আশার আগে আমি একটা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চার হিসেবে কাজ করতাম। সেখান থেকে চলে আসবার সময় আমি লক্ষ করেছিলাম, শুরুতে আমাকে যেভাবে শুরু করতে হয়েছিলো,শেষটা ঠিক তার উল্টোভাবে হয়েছে। দায়িত্ব সব বুঝিয়ে দেবার পর দেখেছিলাম, আমার চাবির ছোপাটা ওজন শুন্য হয়ে পরেছে, সব কিছুর শেষে আমি আবার আমার শুরুর অবস্থানে দাড়িয়ে আছি।

বিষয়টা ঠিক যেন ছোট বেলার সেই ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ারে কোন মুভি rewind করার মতো। আমি এখন কেবল তিন বছর আগের করা কাজ গুলোর উল্টো ভাবে করা যাচ্ছি। এখন আমি সেই প্রথম মাসে কেনা সব ছোট ছোট জিনিসগুলো .....আয়নাটা, রাইসকুকার, প্রথম কেনা একটা প্লেট, গ্লাস আর অল্প কিছু জিনিস নিয়ে আছি। সেই শুরুর দিনগুলোতে
যেমন একটা কড়াইতে ডিম ভাজা- ভাত আর ইনস্টন নুডুল্‌সের সাথে কেবল চা খেয়ে কাটয়েছি দিন, ভাবা যায় বিগত কয়েকটাদিনও আমার সেকরমই কাটছে।

এই শহরে আসবার আগের রাতে কেবল সুটকেস দুটোর তালার চাবি ছিল আমার চাবির রিংয়ে, কিন্তু আসবার পরের দিন থেকে জুড়ে যেতে লাগলো নতুন নতুন চাবি, জড়িয়ে গেল অনেক অনেক জায়গা আমার সাথে। গতকাল জব ছেড়ে আসবার পর, দায়িত্ব কমলো। ইউনিভার্সিটি থেকে ক্লিয়ারেন্স নেবার পর আমার পৃথিবীটা ছোট হয়ে এলো। আজ সন্ধ্যায় বাড়িওয়ালাকে মেইন গেইটের, ঘরের চাবি ফিরিয়ে দিয়ে নো অবজেকশান পেপারে সই নেবার পর এখন আমার হাতে আবারও কেবল দুটো তালা দেয়া সুটকেস আর চাবি। আমি আবারও দাড়িয়ে আছি একা, বিপরীতমূখী এক যাত্রা শুরু করবার অপেক্ষায়।



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৩১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×