স্মৃতির ডায়েরি থেকে
ইদানীং সময়টা ভালো যাচ্ছে না। কথাটা বলতে নিজেরই এখন খারাপ লাগে। কারন সময়টা ভালো না যাওয়ার পিছনে আমিই একমাত্র দায়ী। এতে সময়ের নিজের কোন হাত নেই। তবে সে যাই হোক সময়টা খারাপ যাওয়ার মূল ব্যাপারটা হলো ৩০ তম বি,সি,এস, এ আমার ক্যাডার হতে না পারা। ব্যাপারটা আরো স্পষ্টভাবে বললে বলতে হয় ৩১ তম বি,সি,এস, এ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ন না হওয়ার দুঃখটা। বিষয়টা নাজুক হলেও ফলাফল দুঃখজনক। ৩০ তম এর লিখিত পরীক্ষার পর যখন মনে হলো ক্যাডার হতে পারব না সেই একই মনের ভাইভা দেওয়ার পর মনে হলো ক্যাডার হয়ে যাচ্ছি। আজব আমার মনের চিন্তা ভাবনা! নিজের কৃতকর্মের উপর নির্ভর না করে নিজেই একটা ভেবে নেয়। আর এই ভেবে নেওয়াটাই কাল হয়ে দাড়াল ৩১ তম বি,সি,এস, এর লিখিত পরীক্ষার উপর। ফলশ্রুতি ভয়ানক, পরীক্ষাটাই দিলাম না। তাই দুনিয়ার হাতে গোনা কয়েকটি ভোদাই এর মধ্যে আমাকে যে রাখা যেতে পারে এ বিষয়ে আমার নিজের কোন দ্বিমত নেই আর সময়ের দ্বিমতের প্রশ্ন ওঠার কোন সুযোগও নেই। প্রমথ চৌধুরীর সেই বিখ্যাত উক্তি ‘ ব্যাধিই সংক্রামক স্বাস্থ্য নয়’ অণুকরনে তাই বলতেই হয় ‘আমিই ধ্বংসাত্মক সময় নয়’। সময় কোনভাবেই আমাকে ধ্বংস করে নি, আমি নিজেই নিজেকে ধ্বংস করেছি এবং করেছি নিজের জানা কিন্তু না মানা এক আজীব খেয়ালে।
প্রায় দেড় বছর পরে কোন গল্প বা উপন্যাস নয়, নিজের সম্পর্কে লিখতে বসে সময়ের গুনকীর্তন আর নিজের অত্যধিক ভর্ৎসনা আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য নয়। এখানে অন্যকিছু আশা নিরাশার কথা আছে। আছে স্মৃতির পাতা থেকে নেওয়া বহুদিন আগেকার কিছু স্বপ্নের করুন আর্তনাদ।
৭ নভেম্বর, সোমবার। পবিত্র ঈদ-উল-আযাহা। আমার অবশ্য কোন তাড়া নেই। সকাল ১০ টায় ঘুম থেকে উঠে দেখি মোবাইলে সাতটা মিসড কল ও একটা মেসেজ। অবাক হওয়ার মত অবস্থা। আমার সকল বন্ধু বান্ধব ,আত্মীয় স্বজন সবাই জানে ১০ টার আগে আমার ঘুম ভাঙ্গে না সুতরাং কলও আসে না। দেখলাম কল এবং মেসেজ দুটোই অচেনা নম্বর থেকেই এসেছে। মেসেজটা চটজলদি পড়ে নিলাম।
‘ কেমন আছিস। বোধ হয় মন খারাপ। টেনশন করিস না। জীবনে এমন হয় মাঝে মাঝে। সবাই সব সময় চান্স পায় না। আর বলা যায় এরপরে যেখানে চান্স পাবি সেখানেই হয়ত তুই আরো বড় হতে পারবি। ঈশ্বর যা করে মঙ্গলের জন্যই করে’।
মেসেজটা শেষ করেই মন বলতে থাকে কথাগুলো যেন পরিচিত। মেমোরিতে একটা সার্চ দিয়ে দেখি হুবহু মিলে যায়। এমনই কিছু কথা আমি একজনকে বলেছিলাম এমনই এক নভেম্বর মাসে আজ থেকে সাত বছর আগে। পার্থক্য শুধু তুই আর তুমিতে। কারন আমি কখনো নারীকে তুই সম্বোধন করি না। কিন্তু আজব লাগছে অন্যভাবে। কে তুমি ললনা, ফিরে এলে এত দিন পরে তাও মোবাইলের মেসেজ হয়ে। তুমি কি জানো, আমি তোমাকে চিনে ফেলেছি! বীরের মনের সেই বিশাল ভয় তুমি!
সাতটা বছর অনেক সময়। বদল হয়েছে অনেক কিছুর। সেদিনের সেই হাড্ডিসার বীরবলের ইহা বড়ো এক ভুড়ি! এতো শরীরের বাহ্যিক অবস্থা। মনের অবস্থার পরিবর্তন তো ভয়ানক। কে জানে তার মনে এখন কে বিরাজ করে। কে তার সিংহাসনে মুকুট পরে রাজত্ব করে। সুতরাং তার সঠিক নামটা ব্যবহার করা বোধ হয় ঠিক হবে না। সময় করে একটা নাম ঠিক করে নিতে হবে নইলে লেখা বেশি এগোবে না।
মেসেজটা একটানা সাত বার পড়ে ফেললাম। অবাক লাগছে যতবার পড়ছি ততবারই। কথাগুলোর সাথে কোথাও কোন অমিল নেই। কেন সে সাত বছরেও কথাগুলো ভোলে নি? এমন কোন দিনে আমাকে ফিরিয়ে দেবে বলে কি! মনটা উদাস হয়ে যায়। আচ্ছা, তার বলা কোন কথা কি আমার এমনভাবে মনে আছে? বোধ হয় না। আপাতপক্ষে তো মনে পড়ে না। আমার স্মরনশক্তি ভালো বলে একটা সুনাম আছে মন ভালো বলে তো কোন সুনাম নেই!
সাতবার কল করেছিলো একবার কল করলে কেমন হয় ভাবতেই মোবাইলটা নিয়ে কল দিলাম। ওপাশ থেকে গান ভেসে আসে ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে তোমায় পাই নি আমি.........’ কে জানে তার হিয়ার মাঝে এখন কে লুকিয়ে থাকে।
‘ হেলো।
কেমন আছিস?
আছি ভালো। তুমি কেমন?
ভালো। তবে খুব ভালো না, মোটামুটি।
মোটামুটি কেন?
সব কারন কি ব্যাখ্যা করা যায়?
ও আচ্ছা।
তোর মন কি খুব খারাপ?
বোধ হয় না। প্রথমে একটু হয়েছিলো। এখন ঠিক হয়ে গেছে।
মেসেজটা ভালোভাবে পড়েছিস।
হ্যা,সাতবার। আচ্ছা,তুমি কি আমাকে তুই করে বলতে? ঠিক মনে করতে পারছি না তো।
আজ তাহলে রাখি। পরে আবার কথা হবে।
উত্তরটা পেলাম না কিন্তু।
পরে একদিন এ বিষয়ে কথা হবে। আজ একটু ব্যস্ত আছি। বাই।
হঠাৎই লাইনটা কেটে দিলো। আমি জানি সে আমাকে তুমি করে বলত। কিন্তু আজ কেন তুই করে বলছে আর কেনই বা সে প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইছে না। সেটা এতকালের নারী গবেষণা থেকে অনুমান করতে পারি সত্যতা দিতে পারি না। বোধ করি সে সত্যতা সেও ভেদ করতে পারে না। আজব রহস্য নারী। রহস্য তার দেহে রহস্য তার মনে।
(চলবে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




