somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রাম স্ট্রোকারের ড্রাকুলা ও পিশাচ ভ্লাদ দ্য ইমপেলারের কথা

০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লুসি ওয়েস্টেনরা, আর্থার, জোনাথন হারকার, মিনা হারকার আর এমনি সব চরিত্রের পাশাপাশি এক পাগলা প্রফেসর ভ্যান হেলসিং। রসুনের টুকরা আর বুনো গোলাপের ডাল। আর কিছু কফিন।
হঠাৎ করে লুসি ওয়েস্টেনরা সন্দেহজনকভাবে শুকিয়ে যেতে শুরু করেন। সিউয়ার্ড আমস্টারডামে তাঁর বৃদ্ধ শিক্ষক অধ্যাপক আব্রাহাম ভ্যান হেলসিংকে ডেকে আনা হয়। বিজ্ঞ ভ্যান হেলসিং দেখামাত্র লুসির এই অবস্থার কারণটি বুঝতে পারেন।

তিনি জানতেন, ভ্যাম্পায়ারের কথা বললে তাঁর প্রতি সিউয়ার্ডের যে আস্থা আছে তা নষ্ট হয়ে যাবে। ভ্যান হেলসিং বিভিন্ন রকম ভাবে ব্লাড ট্রান্সফিউসন করে তাকে সারাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সিউয়ার্ডকে একটি চিঠিতে লুসির উপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়ে ভ্যান হেলসিং এক রাত্রিতে আমস্টারডামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু এই চিঠি ভুল ঠিকানায় গিয়ে পড়ে। সেই রাতেই লুসি আর তাঁর মা-কে একটি নেকড়ে আক্রমণ করে। দুর্বল হৃদয়ের মিসেস ওয়েস্টেনরা ভয়েই মারা যান এবং লুসিও তার অনতিবিলম্বে মারা যান। নেকড়েটিকে লন্ডনের চিড়িয়াখানা থেকে ড্রাকুলাই ছেড়ে দিয়েছিলেন কিছু কাজ হাসিলের জন্য। এভাবেই কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে অনেক ডায়েরির কাহিনী বর্ণনার ঘনঘটায়। বলছি ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলার কথা।



ছেলেবেলায় দুষ্টুমিতে একটুখানি হলেও টান পড়েছিল। একটু হলেও গা ছমছম করে উঠেছিল ব্রামস্টোকারের এই রচনাটি পড়ার পর। রাতে ঘুমুতে গিয়ে বাতাসে জানালাটা একটু নড়ে উঠলেই মনে হতো ঐ বুঝি নেকড়ে মাথা নাড়া দিয়ে উঠলো। লিচু বাগানের নিচ দিয়ে হাটতে গিয়ে বাদুড় ডানা ঝাপটা গিলেও অজান্তে মাথায় হাত উঠতো। কিন্তু কোনোদিন সেই রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের দেখা পাইনি। দেখা পাইনি আর্থার, লুসি ওয়েস্টেনরা, জোনাথন হারকার, মিনা হারকার বা অমনি কোন পাগলা প্রফেসরের। তবে কফিন দেখেছি ঢের।
ইতিহাস পড়তে পড়তে এক সময় খুজে পেলাম সত্যিকারের ড্রাকুলা ভ্লাদ দ্য ইমপেলারকে। বস্তুত ব্রাম তাঁর স্টোকার ড্রাকুলা চরিত্রটিই খুঁজে পান ব্রিটিশ মিউজিয়ামে গবেষণা করতে গিয়ে।


রক্তচোষা
রোমানিয়ার প্রাচীন এক রাজ্যে কাউন্ট ভ্লাদ নামে এক নিষ্ঠুর শাসক ছিল। যার নিষ্ঠুরতা ছিল তুলনাতীত। মানুষকে শূলে চড়িয়ে আর পাথরে থ্যাতলা করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছিল তার কাছে অনেক আনন্দর বিষয়। রাজ্যের প্রায় ৫ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিলেন পিশাচ ভ্লাদ!
রোমানিয়ার রাজ্য ওয়ালাচিয়ারের শাসক ভ্লাদ পরিচিত ছিলেন 'ভ্লাদ দ্য ইমপেলার' নামে। এর অর্থ করলে দাঁড়ায় 'শূলবিদ্ধকারী/হত্যাকারী ভ্লাদ'। নিষ্ঠুর ভ্লাদ রাজ্য শাসন করতেন কঠোর হাতে। কথার অবাধ্য হলেই সঙ্গে সঙ্গে চড়িয়ে দিতেন শূলে। টুপি খুলে সম্মান না জানানোর জন্য দু'জন ভ্রমণকারীর শিরচ্ছেদ করা হয়েছিল সেই সময়।
শোনা যায় ভ্লাদ ছিলেন নেক্রোফিলিক। অর্থাৎ পিশাচ ভ্লাদ ছিলেন মৃতদেহে আসক্ত। তিনি প্রেমে প্রতারণাকারী এক নারীকে হত্যা করে দীর্ঘদিন তার সাথে বাস করেছিলেন। ব্রাম স্ট্রোকার ইতিহাসের এই ঘটনাকে উপজীব্য করেই তার কাহিনী ফেদে আপামর শিশুদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে থাকতে পারেন। প্রেমে প্রতারণাকারিনীদের অতি মাত্রায় বিদ্বেষী ভ্লাদ প্রতারক প্রেয়সীদের সরাসরি হত্যা না করে খুলে নিতেন গায়ের চামড়া। কিংবা উত্তপ্ত কড়াইয়ে তেল ঢেলে ঝলসে ফেলা হতো তাদের। অনেক সময় তাদের শিরা কেটে ভ্লাদ তার ভোজন করতো রক্ত দিয়ে! ভ্লাদের নিষ্ঠুরতার হাজারো কাহিনী সেখানকার মানুষের মুখে কিংবদন্তির মতো আজও ঘুরে বেড়ায়। যেগুলো বিশ্ব ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে পৈশাচিকতার অধ্যায় হিসেবে।


পিশাচ ভ্লাদ দ্য ইমপেলার
প্রবল সাহসী তুর্কি সেনারা বার বার ভ্লাদের বাহিনীকে পর্যূদস্ত করে আসছিল। কিন্তু বন্যার কারণে তুর্কিরা দুর্বল হয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে ভ্লাদের সৈন্যরা বন্দি করেছিল প্রায় ২০ হাজার তুর্কিকে। যাদের প্রত্যেককে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পরবর্তিকালে শক্তি সঞ্চয় করে ১৪৫৯ সালে তুর্কি সেনাবাহিনী ভ্লাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালায়। তুর্কি বাহিনীর হাতে মার খাওয়ার পর ভ্লাদের শক্তিমত্তা স্তিমিত হয়ে আসতে থাকে।


ব্রাম স্ট্রোকার
আমরা কমবেশি ট্রান্সসিলভেনিয়া অঞ্চলে বেথলেন গাবোরের আক্রমণের কথা জানি। বেথলেন গাবোরের আক্রমণের কিছুদিন পূর্বে ভ্লাদের জন্ম হয়েছিল এই ট্রান্সসালভানিয়ারই কাছাকাছি কোনো একটি স্থানে। কিশোর বয়স থেকেই পৈশাচিক স্বভাবের অধিকারী ভ্লাদকে অনেক সময় কাটাতে হয়েছে জেলখানার অন্ধ প্রকোষ্ঠে। হটাৎ মুক্ত হয়ে অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন ভ্লাদ। মাত্র ছয় বছরের শাসনকালের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিলেন তিনি।
তুর্কিদের বিরুদ্ধে বার বার অভিযান চালিয়ে অনেক চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হয়েছিল পিশাচ ভ্লাদ। তুর্কি বাহিনীর প্রবল আক্রমণে পশুর মতো মরতে হয়েছিল তাকে। ভ্লাদের মৃত্যুতে মানুষ হাফ ছেড়ে বাচলেও সে রেখে গেছে ইতিহাস। আর নিষ্ঠুর শাসক ভ্লাদের কথা সময়ের আবর্তনে হারিয়ে যেতে দেননি বিখ্যাত লেখক ব্রাম স্টোকার। অমর সৃষ্টি 'ড্রাকুলা' উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি অমর করেছেন এই নিষ্ঠুর শাসককে। আমরা পাঠকরা পেয়েছি অদ্ভুদ সব চরিত্রগুলোকে।

তথ্যসূত্র:

1. উইকিপিডিয়া
2. ব্রাম স্ট্রোকারের ওয়েবসাইট
3. Leonard Wolf (2004), The Essential Dracula, Chapter 13, Note 31. "Bloofer lady" is explained as baby-talk for "beautiful lady."
4. Schaffer, Talia. A Wilde Desire Took Me: the Homoerotic History of Dracula, in: ELH - Volume 61, Number 2 (1994), pp. 381–425.
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০৪
১৫টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×