somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারুন্য- যেন এক অভিশাপ

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজনৈতিক কোন ক্যাঁচালে I’m not ইন্তারেস্টেদ । প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে আমি কোনভাবেই কখনো জড়াইনি । সেই উঠতি বয়সে কৌতুহলবশতঃ কয়েকবার মিছিল মিটিং করেছি । তা দেখে বড় ভাই খুব ঠান্ডা গলায় হুমকি দিয়ে বলেছিল- ”আর যদি কখনো মিছিলে দেখি তবে পা ভেঙ্গে বাড়িতে ফেলে রাখবো।“ নাসার রকেট কক্ষপথের বদলে মাটিতে আছড়ে পরতে পারে, কাল সকালে মাল’সাহেব রিজাইন দিতে পারেন কিন্তু এই হুমকির অন্যথা হবেনা । কৌতুহল দমন না করে উপায় আছে !!

তারুণ্যে পা রাখবার পর প্রায় তিন বছর একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম । ‘সচেতন তারুন্যে’র স্লোগানে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখিয়েছি কত ছাত্র/তরুনকে । সে কারনে অজস্র তরুনের সাথে মিশতে হয়েছে ।তাদের কনভিন্স করতে গিয়ে তাদের জীবনের গল্পগুলো শুনেছি । ‘স্বুস্থ আড্ডা’ ‘দেশপ্রেম’ ‘দেশজ চেতনা ধারন’ করে দেশের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখিয়েছি । অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছি সমাজের পচণগুলো কি করে একটা প্রজন্মকে নিঃশ্বেস করে দিতে পারে ।

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি ।গল্পটা আমাদের চেনা । আপনি বা আমি কখনো না কখনো এ গল্পের কোন চরিত্র ধারন করেছি ।

সদ্য এসএসসিতে গোল্ডেন A+ পাওয়া এক মেধাবী ছেলেকে ঘিরে আমার এ গল্প । মফস্বল শহরের শিক্ষক/স্বল্প আয়ের বাবা-মার সন্তান, তাদের গর্বের ধন । ভালো রেজাল্টে গর্বিত বাবা-মার স্বপ্নের প্রসারতা বাড়ে । ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য জেলা/বিভাগীয় শহরে ভালো কলেজে ভর্তি করান । সস্তায় কোন মেসে রাখার ব্যবস্থাও হলো । নতুন পরিবেশ,নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, পুরোনো পিছুটান-ছেলে অহর্নিশ হা-পিত্যেশ করে । অভিমানে মুখ ফুলিয়ে রাতের আকাশের তারাগুলোর কাছে সবার নামে নালিশ করে । একাকিত্ব-অসহায়ত্ব চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে । এ সময় বন্ধু হয়ে পাশে দাড়ায় রুমমেট বড় ভাই । তাকে বোঝায়, ভরসা দেয় । একসময় ধীরে ধীরে ছেলেটি মানিয়ে নিতে শেখে । একাকিত্বের মেঘ হালকা হয়, কমে যায় নালিশগুলোও । আর সেই ‘বড়ভাই’ ? রাত যত বাড়ে তার রোমিওসত্বা তত মাথাচাড়া দেয় । ভ্যাম্পায়ার যেমন রক্তের স্বাদ নিতে বেরিয়ে পড়ে, তেমনি সে ফোনে নিত্যনতুন ‘জানু-ময়না-টিয়াদের’ খোঁজে রাত জেগে ক্লান্ত হয় । প্রতিরাতে এই অসুস্থ্য বিনোদন নিতে নিতে ছেলেটি ঘুমিয়ে পড়ে ।
একসময় ‘সঙ্গ দোষে’ হোক বা বয়সের দোষে তারও ‘ফোনে’র চাহিদা তৈরি হয় । এত সস্তা আবদার বাবা না মিটিয়ে পারেন না । ‘ময়না-টিয়া’ লাগবে ?! গৌরিসেন হয়ে ‘বড়ভাই’ এগিয়ে আসেন । অসুস্থ্য বিনোদনে মজে যেতে সময় লাগেনা। [এডভেন্চারের কেবল তো শুরু ....... :D ]

দিনে ছেলের সময় কাটেনা। বিকেলের ক্লান্তি কাটাতে ‘বড়ভাই’ তাকে তার বন্ধুদের আড্ডায় টেনে নেন । সেখানে ঠোঁটে ঠোঁটে ধোঁয়া ওড়ে আর মেয়েদের শরীরের জিওগ্রাফী নিয়ে অশ্লীল বিনোদন আদায়ের চেষ্টা । কুকুর যেভাবে হাড্ডি দেখতে পেলে জিভ দিয়ে লালা পরে-ঝুলে পরে, তেমনি এদের সামনে কোন মেয়ে পরলে তারা তাকে চোখ-মুখ দিয়ে চেটে খেতে থাকে। নোংরা ভাষায় সাপের মতো ছোবল হানে । ছেলের প্রথম প্রথম লজ্জা লাগে । কিন্তু নিয়মমাফিক সেও একসময় ধোঁয়া আর জিওগ্রাফী দুটোতেই অভ্যস্ত হতে শুরু করে । নারীর শরীরের মোহে+প্রেমের টানে প্রতিরাতে ‘টিয়া-ময়না’দের খোঁজ বাড়তে থাকে । দু’একটা ধরাও দেয় । লোকাল বাস সুপারসনিক বিমানের গতিতে চলতে গিয়ে পথচ্যুত হয়-নেমে আসে ট্রাজেডি । ছেলে হতাশায় মুষড়ে পড়ে । [ কাহিনীর টর্নিং পয়েন্ট ....]

আবারো ‘বড়ভাই’ বিপদের বন্ধু(!) হয়ে পাশে দাড়ান । এবার তিনিতাকে নেশা ধরিয়ে দেন (গান্জা/মদ/ডাইল) । ছেলের চারপাশে যেন হুট করে হাজারটা নিয়ন বাতি জলে ওঠে । ‘টিয়া-ময়না’ থেকে এই ঢের ভালো । এদিকে টাকার চাহিদা বাড়তে থাকে । প্রতিমাসে বাবার কাছে পাঠানো ব্যায়ের লিস্টে নিত্য নতুন অজুহাত যোগ হয় । বাবা সন্দেহ প্রকাশ করেন কিন্তু ছেলে ইদানিং চোখ গরম করে তাকায় । বাধ্য হয়ে তাকে গরু-ছাগলটাও বেচতে হয় । ছেলেটা তো মানুষ হোক । আর পড়াশোনা ??!!! ভুইলাই গেছিলাম । টেবিলে কয়েকটা বই-খাতা তার ছাত্রত্বের প্রমাণটুকু বহন করছে । এই ঢের-কি হবে পড়াশোনায় ??!!!!

কিন্তু এদের চাহিদার কাছে গৌরিসেনও ফেল মারে । টাকা চাই টাকা -আরো আরো । বাবার কাছে অজুহাত আর কত ?! এবার নিজে কিছু করবে বলে সন্ধ্যার পর গলির মোড়ে চাকু/ছুরি হাতে দাড়িয়ে পরে । ইনকাম মন্দ না । এই বেশ চলে যাচ্ছে । কলেজের ছাত্রনেতাদের চোখে পড়তেও সময় লাগেনা। ক্ষমতা এবং টাকা দুটোর নিশ্চয়তায় ছেলেটি সে পথে হাঁটা ধরে । পেছনে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে আসে বাবা-মার গর্ব, বুক ভরা স্বপ্ন । অন্ধকারের মোহে হারিয়ে যায় একটি উজ্জল আলোর কণা ।

হয়তো অনেকেই আমার সাথে দ্বিমত হবেন । আপনারা আজ আপনার চারপাশে ‘ছেলেটি-কে’ যখন দেখেন তখন ঘৃণায় মৃখ ফিরিয়ে নেন । এই ছেলেটি সমস্যার প্রকাশ/উদাহরন মাত্র । কিন্তু সমস্যাগুলো নিয়ে কেউ কিছু বলেনা । কেউ একটু গভীরে গিয়ে দেখেনা শুরুটা/শেকড়টা কোথায় । না সুশীল/কুশীল, না বাকবাকুম করা বুদ্ধিজীবীরা । সবাই ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ নিয়েই ব্যস্ত ।

খুব নীরবে একটা প্রজন্ম হারিয়ে ফেলছি আমরা । আজকের উঠতি বয়সী শহুরে তরুনদের বেশিরভাগই নেশাগ্রস্থ/মানসিক বিকারে আক্রান্ত । এমন কোন বাজে কাজ নেই যাতে তারা অভ্যস্ত নয় । এডাল্ট হবার আগেই সেক্স,ড্রিংকস,নেশার অভিজ্ঞতা তাদের হচ্ছে । এই তরুনদের নিয়ে আপনি কি আগামীর স্বপ্ন দেখেন ?!! সাধু সাধূ.. আপনি অনেক আশাবাদী মানুষ ।

ব্রোকেন ফ্যামিলির সংখ্যা বাড়ছে, একান্নবর্তি পরিবারগুলো ভেঙ্গে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি তৈরি হচ্ছে । ঢাকা শহরের ফ্লাটগুলোও যেন তাদের কথা মাথায় রেখেই করা । পায়রার খোপে কি আর মুরগীর পরিবার রাখা যায় ?

ঢাকা শহরের বস্তিগুলোতে যে বাচ্চাগুলো থাকে তারা নিশ্চয়ই জজ-ব্যারিষ্টার হবেনা । তারা অপরাধীই হবে । কারন তারা জন্মের পর থেকেই সে পরিবেশে মানিয়ে নিতে শিখে ফেলেছে ।
নষ্ট হয়ে যাবার সব উপকরণই এই সমাজে হাতের নাগালে । আপনার দশটা বন্ধূর ৭টাই যদি নষ্ট হয়-তারা আপনাকে একদিন না একদিন তাদের দলে টেনে নেবে। প্রতিযোগীতা রে ভাই । সারভাইভাল ফর দা ফিটেস্ট । হা হা হা ...... :D :)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×