somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতির ক্রান্তিকালে বিজ্ঞানীদের দায়িত্ব

১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

করোনা মোকাবেলায় সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী ও গবেষকবৃন্দ যেখানে ভাইরাসের স্ট্রাকচারাল বায়োলজি বোঝার ও এর বিরুদ্ধে কার্যকর একটি নভেল ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টায় রীতিমতো যুদ্ধে নেমে পড়েছে তখন আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা ব্যাস্ত হান্ডসানিটাইজার বানানোর প্রতিযোগিতায়, আর এলকোহলের ভাপ নেয়া তত্ত্বে !!! ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তো করোনার ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করে বসলো !!!! আসলে গবেষণার প্রতি চরম উদাসীনতা থাকতে থাকতে এবং গবেষক হয়েও দীর্ঘদিন গবেষণা কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকার ফল যে ভয়াবহ তা জাতি এখন দেখতে পাচ্ছে , একটি গবেষণা কিভাবে এগিয়ে নিতে হয় এবং তার ফলাফল কোন পর্যায়ে এবং কিভাবে উপস্থাপন করতে হয় ন্যূনতম সেই নলেজটুকুও আমাদের দেশের গবেষকদের নেই , এরাই আবার বিভিন্ন গবেষণা প্রথিষ্ঠানে নীতিনির্ধারক ও বিশ্বাবিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত !!! কিন্তু ভাবতেও অবাক লাগে এদের চিন্তাচেতনার বিস্তৃতি এখনো সেই হাইস্কুলের শিক্ষার্থী কতৃক তৈরিকৃত হান্ডসানিটাইজার ডেভেলপমেন্ট এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ !!!!

এতদসত্ত্বেও, আমাদের দেশেও নামকরা খুব ভালোমানের জীবপ্রযুক্তিবিদ আছে , একথা ভুলে চলবে না যে আমাদের দেশের গবেষকরাই কিন্তু পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং করেছিল , এবং পাট প্রক্রিয়াজাতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ছত্রাকের জিনোম সিকুয়েন্সিং কিন্তু আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরাই করেছিল , তাছাড়া এখনো বাংলাদেশে প্রচুর তরুণ মেধাবী বিজ্ঞানী রয়েছেন যারা একটু উৎসাহ এবং সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণায় সাফল্য নিয়ে বয়ে নিয়ে আসতে পারে

করোনা নিয়ে গবেষণায় আমাদের দেশে কয়েকটা রিসার্চ গ্রুপ তৈরী করতে হবে , এই রিসার্চ গ্রুপ এ বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছে এমন তরুণ বিজ্ঞানীদের সম্পৃক্ত করতে হবে , এদের নেতৃত্বে থাকবে আমাদের দেশের নামকরা জীবপ্রযুক্তিবিদেরা , যেমন , ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক , ড. শরীফ আক্তারুজ্জামান , ড. হাসিনা খান , ড. ফেরদৌসী কাদরী, ড .সমীর কে সাহা প্রমুখ এদের নেতৃত্ত্বে কিছু রিসার্চ গ্রূপ গঠন করতে হবে , যাদের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য থাকবে । যেমন , এক গ্রুপের উদ্দেশ্য থাকবে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা এবং তা ইউরোপ কিংবা আমেরিকার করোনা ভাইরাসের জিনোম এর সাথে মিলিয়ে দেখা , আরেকটা গ্রুপ ভাইরাস ডিটেকশন মেথড নিয়ে কাজ করতে পারে , এভাবে একেকটা গ্রুপ ভাইরাসের একেক সাইট নিয়ে রিসার্চ করবে এবং সেই সাথে প্রাপ্ত ফলাফল একে অপরের সাথে শেয়ার করবে । সাথে সাথে আরেকটা টিম থাকবে যারা বাজেট বন্টন করবে এবং বৈশ্বিক এই লক ডাউনের সময় প্রয়োজনীয় মিডিয়া , কেমিক্যালস ও রিএজেন্ট বাহির থেকে দ্রুততম সময় দেশে নিয়ে আসবে । দেশের গবেষকদের এই কোয়ালিশনের সাথে ইউরোপ, আমেরিকা , জাপান কিংবা চীনে যারা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ করে যাচ্ছে তাদের সাথে সংযোগ থাকতে হবে এবং আমাদের এখানে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের আদান প্রদান রাখতে হবে । তারা যদি বুঝতে পারে যে দেশে আমরা একটি সক্রিয় প্লাটফর্ম তৈরী করেছি করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণায় , তবে তারা তাদের কিছু কাজ আমাদের এখানেও ট্রান্সফার করতে পারে অর্থাৎ আমাদের অংশগ্রহণে কিছু কাজ করিয়ে নিতে পারে।

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভ্যাকসিন এবং ওষুধ ডেভেলপ করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি আম্ব্রেলার নিচে থেকে পৃথিবীর নামকরা কিছু রিসার্চ গ্রুপ এখন একসাথে কাজ করছে । এর সামনের সারিতে আছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাস্কা মেডিকেল সেন্টার এর দক্ষ ভাইরোলজিস্টবৃন্দের একটি সুসংগঠিত টিম , তারা ভাইরাসের খুঁটিনাটি তথ্য আদানপ্রদান করছেন চায়নার উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির বিজ্ঞানীদের সাথে । মূল গবেষণার কাজ চলছে , ইউরোপ এবং আমেরিকায় , এবং পরীক্ষামূলক কিছু প্রয়োগ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াতে , একটি সুন্দর নেটওয়ার্ক এ সমস্ত গবেষণা কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে
। কোনো দেশেই এককভাবে কাজ করে যাচ্ছে না , আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের এখন সুযোগ এসেছে নিজেদের উপযুক্ত প্রমান করে এই মহৎকর্মযজ্ঞে নিজেদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে নেয়া , আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের জন্য আমাদের দেশের ল্যাবরেটরি ও গবেষকরা যে উপযুক্ত তা তুলে ধরা । আমাদের দেশে সরকারের উচিত বিভিন্ন সেক্টরে যখন প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে সেই সাথে গবেষকদের কাজ করার জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা , কারণ পর্যাপ্ত বাজেটের নিয়মিত প্রবাহ ছাড়া বাধাহীনভাবে গবেষণাকে এগিয়ে নেয়া যায়না।

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা ব্যাপক পরিমানে আত্ত্বকেন্দ্রিক , তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে তারা একে অপরের সাথে বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে , যার ফলে গ্রুপ করে কিংবা একটি টিমের সাথে থেকে কাজ করার সংস্কৃতিও আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি , কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান গবেষণার মূলতত্বই হচ্ছে একটি টিমওয়ার্ক ও শক্তিশালী রিসার্চ গ্রুপ, আশা করি বর্তমান পরিস্থিতি অনুধাবন করে আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরাও কার্যকরী রিসার্চ টিম গঠনের দিকে মনোযোগ দিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×