সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে ইসরাইলের পরিচয় একটি দখলদারি রাষ্ট্র হিসেবে। ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা বিভিন্ন আঙ্গিকে একটি বিতর্কিত বিষয়। এবং বিশ্ব মিডিয়ায় ইসরাইল রাষ্ট্রটির নামও আসে বিভিন্ন সংঘাত কিংবা সহিংসতার উপলক্ষ হয়ে। এতদসত্ত্বেও ইসরাইল রাষ্ট্রটি পৃথিবীর অনেক উন্নত রাষ্ট্রের কাছে বিভিন্ন দিক দিয়ে ঈর্ষণীয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রভূত অর্জন রয়েছে বিশেষ করে শিক্ষা , গবেষণা , স্বাস্থ কিংবা পরিবেশ রক্ষায়। চলুন জেনে নেয়া যাক ইসরাইল রাষ্ট্রের কিছু ব্যাতিক্রমী দিক সম্পর্কে
১। ইসরাইল হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ যাদের ৫০ বছর আগেকার তুলনায় এখন বনভূমির পরিমান বেশি। বিশ্বের অন্যসব দেশে যেখানে বনভূমির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে সেখানে ইসরাইল তাদের বনজ সম্পদ বৃদ্ধি করে তুলছে যা কিনা পরিবেশ রক্ষায় তাদের দূরদর্শিতার ফসল।
২। ইসরাইলের জনগণের মধ্যে বিশবিদ্যালয় ডিগ্রিধারী লোকজনের সংখ্যা পৃথিবীর অন্য সব দেশ থেকে বেশি। এদেশের শতকরা ৮ ০ ভাগ জনসংখ্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি রয়েছে যা অন্য কোনো দেশের নেই। জনসংখ্যার আনুপাতিক হরে সর্বোচ্চ পিএইচডিধারী জনসংখ্যার দিক থেকেও দেশটি বিশ্বে প্রথম।
৩। বিশ্বের প্রথম ভয়েসমেইল টেকনোলজি সর্বপ্রথম ইসরাইলের তৈরী হয়।
৪। ইসরাইলের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ৮২ বছর যা এবং কয়েকটি উচ্চ আয়ুষ্কালের দেশের মধ্যে ইসরাইল একটি।
৫। ইসরাইলের লোকাল কফি এর সুনাম সারা পৃথিবী জুড়েই রয়েছে , নিত্য নতুন গবেষণার মাধ্যমে তারা তাদের কফির কোয়ালিটি ডেভেলপ করে যাচ্ছে। ইসরাইল হচ্ছে একমাত্র দেশ যেখানে ষ্টার বাকসকে তাদের ব্যাবসায় লোকসান গুনতে হয়েছে এবং ইসরাইলে তাদের কার্যক্রম খুবই সীমিত।
৬। সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশনার সংখ্যার দিক দিয়ে ইসরাইলের অবস্থান সবসময় প্রথম দিকেই থাকে ।
৭। ২০১১ সাল থেকে ইসরাইল সর্বপ্রথম তাদের বাসস্টপেজ গুলোতে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি চালু করে যেখান থেকে মানুষ বিনামূল্যে বই নিয়ে পড়তে পারে। ইসরাইলের দেখাদেখি অন্য অনেক দেশই তাদের বাসস্টপেজ গুলোতে এই ব্যবস্থা চালু করেছে।
৮। ইসরাইলের বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম ক্যান্সার এবং পরিপাক তন্ত্রের বিভিন্ন রোগ সনাক্তকরণের জন্য indigestable ভিডিও ক্যামেরা প্রযুক্তি আবিষ্কার করে যার দ্বারা ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
৯। বন্ধ্যাত্ব সমস্যা নিরসনে in vitro fertilization পদ্ধতির প্রয়োগ অন্যান্য দেশের চেয়ে ইসরাইলে অধিক। এবং এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ ফ্রি।
১০। ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব ১৯৯৮ সাল থেকেই বিশ্বের ১০ টি সিটির তালিকায় থাকছে।
১১। যুক্তরাষ্ট্রের পরে ইসরাইল হচ্ছে একমাত্র দেশ যাদের সবচেয়ে উন্নত হাইটেক সেন্টার রয়েছে।
১২। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে যদি নোবেল বিজয়ী দেশ হিসেবে গণনা করা হয় তাহলে ইসরাইলের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে উপরে। ইসরাইলের জনসংখ্যা অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় খুবই নগন্য। সেই হিসেবে তাদের ভালো সংখ্যায় নোবেল বিজয়ী রয়েছে।
১৩। ইসরাইল হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ যার কোনো নির্ধিষ্ট জনসংখ্যা নেই। পৃথিবীর সমস্ত ইহুদি জনগণ ইসরাইলের নাগরিক। যেমন বাংলাদেশে যদি কোনো ইহুদি ব্যাক্তি থেকে থাকে তাহলে সেও ইসরাইলের সংবিধান অনুসারে সেদেশের নাগরিক।
এসব বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে ইসরাইল শিক্ষা, দীক্ষা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে ঈর্ষণীয়ভাবে সফল এক দেশ। ইসরাইলের বিরুদ্ধে টিকতে হলে মুসলিম বিশ্বকে ইসরাইলের মতোই শিক্ষা , দীক্ষা ও প্রযুক্তিতে উন্নত হতে হবে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একেবারে শুরুর দিকে স্বীকৃতিদানকারী দেশ হচ্ছে ইসরাইল , কিন্তু তৎকালীন প্রবাসী বাংলাদেশী সরকার ইসরাইলের স্বীকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঠানো সামরিক সরঞ্জাম নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর ইসরাইল আবার চেষ্টা চালায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের ও আর্থিকভাবে সহযোগিতার। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:১৮