ছয় সাত বছর বয়স--- তখন থেকেই পুত্র আবিষ্কার করলেন তিনি একা--- আর সবার এত এত ভাই বোন আছে শুধু উনার কেন নেই--- একদিন বলে উঠলেন, ''বাবা তোমারা তো অনেক লাকি ছিলে, অনেক ভাই বোন, সবসময় খেলাধুলা করতে--- বলেই বেরসিকের মতই বলে উঠলেন,'' দাদু ওয়াজ অল স গ্রেট, হি প্রডিউসড লটস অফ চিলড্রেন '' ! মুচকি হেসে বুঝাতে চেষ্টা করলেন এই জায়াগায় আমি উনার দাদুর মত হতে পারিনি। নদীর এপার কয় ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ঐপারেতে সকল সুখ আমার বিশ্বাস । আমি উল্টোটাই ভাবি-- ওর মত একমাত্র সন্তান হলে হয়তো মনোযোগ বেশিই পেতাম--পুত্রকে একমাত্র হওয়ার সুবিধা বুঝাতে বুঝাতে দিন যায়। উনি নাছোড়বান্দা-- আমরা বাবা চাচারাই ভাগ্যবান ! হয়তোবা তাই ।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, আমাদের বাবা অনেক ব্যস্ত ছিলেন-- কালো চশমার ফাক গলে মাঝে মধ্যে তাকাতেন-- আমরা সবাই ভীষণ ভয় পেতাম-- এমনকি উনি ঘুমে থাকলে জুতো খুলে বাবার রুমের বারিন্দার অংশটুকু পার হতাম--ম্যক গাইভার দেখতে বসলে হটাৎ বাবা আসার শব্দে পড়িমরি দৌড় দিতে গিয়ে উলটে পড়তাম। পুত্র আমার এইসব গল্পকে আকাশ কুসুমই হয়তো ভাবেন--- চোখ বড় বড় করে তাকায়-- তার বিশ্বাস হয়না-- এত ভয় পাওয়ার কারন কি?? বলে বসে, দাদু কি তুমাদের ভালোবাসতো না?? বলি '' নারে খোকা, এত এত বেশি ভালোবাসতেন যে আমাদের কে লালন পালনের জন্যে অনেক কাজ করতেন যে নিজের ঘুমানোর সময়টা ও পেতেন না। পুত্র ঠোট উলটিয়ে বলে, কি জানি , হাগ ও করতনা এটা আবার কিরকম ভালোবাসা !
মাঝে মাঝে ভাবি ছেলে তার ''আমরা লাকি ছিলাম'' এই বিশ্বাস নিয়ে বেচে থাকুক-----------------------।
৮ বছর বয়সে মায়ের কাছে আবদার করলেন উনার একটা কিউট সিস্টার চাই-- মা বললেন, নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সিস্টারের জন্যে চাইতে--- পুত্রের অগাধ বিশ্বাস আল্লাহর প্রতি। উনি নামজ পড়ে দোয়া শুরু করলেন।
২ বছর পর উনার দোয়া কবুল হল--- সেকি আনন্দ চোখে মুখে--পুত্রের নিঃসঙ্গতার অবসান হল---দিন রাত উনার বোনকে নিয়ে ব্যস্ত--- মায়ের অর্ধেক কাজ উনি নিজেই করে ফেলেন। আল্লাহর প্রতি সবসময়ই কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ ইজ গ্রেট।
দিন যায়-- বোন হামাগুড়ি দিতে শুরু করে-- এটা ওটাতে ভাগ বসায়--- পুত্রের খেলনার একটা বক্স আছে-- সেটাতেও সে খেলবে-- পুত্র আমার লজ্জায় কিছুই বলেন না-- একমাত্র বোন তো-- খেলুক, নিয়ে যাক-- এরকম একটা ভাব। বোন হাঁটাহাঁটি পা পা শুরু করে---
পুত্র যাহাই হাতে নেন সন্ত্রাসীর মত উনার বোন হামলে পড়ে--- উনি যেখানেই যান বোন ও উনার পিছু পিছু-- সবকিছুতেই উনার ভাগ চাই। আমি মুচকি হাসি--- পুত্র নিরুত্তর।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান খাল খনন করেছিলেন--- কথিত, উনি খাল কেটে কুমির এনেছিলেন---পুত্রের ও একি দশা-----দোয়া করতে করতে বোন এনেছেন------ সেই বোন উনার বাবার আদর টাও উনাকে পেতে দিচ্ছেনা ।
আমি বৈরাগী--- মাঝে মাঝে গিয়ে হাজির হই । একদিন পুত্রকে জড়িয়ে ধরে গল্প করছি, উনার বোন এসে মাঝখানে জোর পূর্বক পুত্রকে সরিয়ে শুয়ে পড়লো--- আমি শুধু তারই বাবা--- পুত্রের না। করুন দশা আরও বেড়েছে--- বেচারা পুত্রকে যখন মা বকা দেন তখন মায়ের সাথে দাড়িয়ে উনার বোন ও উনাকে আঙ্গুল তোলে বপ বপ করতে থাকেন--------------------------।
বাবাকে নিয়ে পুত্র কন্যার টানাটানি--- কন্যার সারাক্ষন নতুন বুলি ফুটা মুখে তাকে নিয়ে আমারই শিখিয়ে দেয়া গান, আমাকে ভাবাতুর করে তোলে------
জীবন এভাবেই--- দৃশ্যের পরতে পরতে সুখ লুকিয়ে রাখে---অনেক পাওয়া না পাওয়ার হিসেব ভুলিয়ে দেয়--- অমরত্তের স্বাদ জাগায়--- অতীতের সাতকাহন ভুলিয়ে নিয়ে যেতে চায় আগামীর স্বপ্নলোকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৪