সামুতে এটাইই আমার ফার্স্ট লেখা।এর আগে শুধুইই পাঠক ছিলাম।কেমন লিখছি সেটার বিচার আপনারাইই করবেন। উতসাহ পেলে আশা করি আপনাদের জন্যে অনেক কিছু উপহার দিতে পারবো।
১. ধরুন আপনার সামনে দিয়ে একজন ছেলে চশমা লাগিয়ে হেঁটে গেল.......আপনি কি তার দিকে তাকিয়ে থাকবেন?? উতসুক দৃষ্টি নিয়ে??ছেলেটা কেন চশমা লাগালো তা নিয়ে ভাববেন??
মনে হয় না আপনি এ ব্যাপারে ভাবাভাবি করবেন!কারণ এটা সিম্পল।
২. একটা ছেলে কানে ইয়া ডাউশ সাইজের হিয়ারিং এইড নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।তার শ্রবণে সমস্যা বলে।এবার আপনি নিশ্চয় অতিমাত্রায় কিউরিয়াস হয়ে যাবেন।দরকার হলে গিয়ে জিজ্ঞেসও করতে পারেন,'ভাই কানে এইটা কি লাগাইসেন?কানে কম শুনেন??'(বাংগালী বলে কথা।এরা বড়ই উতসাহী কিউট জাতি)।আর যদি ছেলেটি হেঁটে না গিয়ে আপনার আশেপাশে থাকে,তাহলে আপনার উতসাহের মাত্রা বেড়ে যাবে।ইতি উতি করে,আড়চোখে নানা উপায়ে তার কানের লাগানো আজব মেশিনের দিকে আপনার দৃষ্টিপাত করবেনই।আপনার সাথে বন্ধুবর কেউ থাকলে তার সাথে হয়োতো কানাকানি লাগায়া দিবেন,এই দেখ দোস্ত হালায় কি লাগাইসে কানের ভিত্রে!কানে হুনে না মনে হয়।বয়রা একটা। =D =D =D
একটা মানুষ দৃষ্টিশক্তির সমস্যাজনিত কারণে চশমা লাগায়,লাগাবে লাগাচ্ছে ও।এটা স্বভাবিক।এখন তো আজকালকার সবাই স্টাইল করেইইই নিত্য নতুন ফ্রেমের চশমা ইউজায়।ব্যাপারটা এমন দাঁড়াইসে যে কে ডাক্তারের পরামর্শে চশমা লাগায় আর কে শখ করে ডিসেলারে পোজ দেওয়ার জন্যে চশমা লাগায় বুঝা মুশকিল।
ব্যাপারটা কিন্তু আগে এমন স্বাভাবিক ছিল না।বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে (১৯১০-১৯২০ সালের দিকে আর কি)ও উপরিউক্ত ২ নাম্বার চিত্রের মত চশমা লাগাইন্নাদের দিকেও সমাজ অন্য ভাবে তাকাইতো।যেন যে বড়ই আজব কিসিমের বস্তু পরিধান বসে আছে।চশমা লাগাইন্নাদের প্রতি একধরণের স্টিগমা প্রচলিত ছিল সমাজে।ওই যে বর্তমানে কানে হিয়ারিং এইড লাগাইন্নাদের প্রতি যেরকম আছে আরকি।তখনো চশমা লাগাইন্নাদের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকানো হইতো।ফিসফিসানি হতো।
এখন আর এসব হয় না।কারণ মানুষ এটাকে সহজ ভাবে গ্রহনভাবে গ্রহন করেছে।আর এই "সহজ ভাবে গ্রহন করাটা' ও আপনা আপনি চলে এসেছে এটা ভাবলে ভুল করবেন আপনি।
সেইই বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকেই মানুষের মধ্যে এই স্টিগমা দূর করার জন্যে নানা রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো।যার ফলাফল স্বরুপ আজকের দিনের পোলা মাইয়ারা হমাঞ্চে চশমা লাগিয়ে মুখখানা ডাক ফেস{হাঁসের মতো মুখ সুঁচালো করে)করে সেলফি তুলে।
কিন্তু হিয়ারিং এইড ব্যাবহ্যারকারীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বা স্টিগমা যাইই বলেন সেইই বিংশ শতাব্দির শুরুতে চশমা লাগাইন্নাদের মতইই রয়ে গেছে।একটু ও চেঞ্জ হয় নি।যারা কানে কম শোনার যন্ত্র হিয়ারিং এইড ব্যবহার করেন তাদের নিয়ে বর্তমান আধুনিক সমাজে ও রয়েছে একধনের নেতিবাচক ধারণা।অধিকাংশ মানুষ...... হিয়ারিং এইড ব্যাবহার করতে ভয় পান শুধু মাত্র সমাজের এই নেতিবাচক ধারণার কারণে।যারা পেশাজীবি তারা একটু বেশী ভোগেন।হিয়ারিং এইড সম্পর্কে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ব্যাপক রকমের প্রভাব ফেলে।তারা হীনস্মন্নতায় ভোগে,অপরিচিত মানুষেদের সাথে সাক্ষাতে ভয় পায়।নিজেকে গুটিয়ে নেয় সবার কাছ থেকে।তারা হতে পারে না স্বাভাবিক।অজানা ভয়ে কুঁকড়ে থাকে সর্বক্ষন।সত্যি বলতে আপনি জানেন না হিয়ারিং এইডস সম্পর্কিত নেতিবাচক ধারণার কারনে একজন শ্রবণ সমস্যায় ভোগা মানুষ কত্ত বিব্রত হয়।
তারা সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোতে যেতে চায় না।লজ্জায়
গেলেও এক কোনায় বসে ক্ল্যাশ অফ ক্লান খেলছে কিংবা ফেবুতে আড্ডা দিচ্ছে।
তাকে বন্ধু আড্ডায় সপ্রভিত দেখায় যায় না।লজ্জায়
রাস্তা দিয়ে গেলে দেখা যায় কানে হাত দিয়ে রাখছে।যাতে জিনিসটা আড়াল হয়।নইলে আবার লোকে কত কি বলে :3
অথচ এটা কোন অসুন্দর বিষয় নয়।দৃষ্টিশক্তির সমস্যা জনিত কারণে একজন মানুষের চশমা লাগানোর মতই স্বাভাবিক।একজন মানুষ যে কোন সময়েই শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন।তখন তাকে হিয়ারিং এইড ব্যবহার করতে হয়।বৃদ্ধদের কথা আলাদা।কিন্তু পেশাজীবি ও তরুণ ছেলেপেলেরা হিয়ারিং এইড লাগানোর পরে তাদের ঘরে বাইরে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।
আপনারা কেউ জানেন কিনা জানি না,ডেনমার্ক ভিত্তিক ওটিকন ফাউন্ডেশন ও আই ডি এ ইনস্টিউট গতবছর যৌথভাবে একটা অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিলো(ডেনমার্ক হিয়ারিং এইড তৈরিতে বিশ্বে একনাম্বার।)।সমাজে হিয়ারিং এইড সম্পর্কিত প্রচলিত স্টিগমা দূর করার জন্যে "আইডিয়াজ,স্পিক আপ একশন এন্ড এওয়ারনেস ফর হিয়ারিং লস" নামের প্রতিযোগিতা চালু করে।এ প্রতিযোগিতায় কিভাবে হিয়ারিং এইড সম্পর্কিত স্টিগমা দূর করা যায় তার জন্যে সৃষ্টিশীল আইডিয়া চাওয়া হয়।
এ প্রতিযোগিতায় সেরা তিনজনের মাধ্যমে একজন বাংলাদেশী ও আছে।তিনি হলেন খালিদ মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম।তিনি কি আইডিয়াদিয়েছিলেন জানেন?তার আইডিয়ার নাম হল "ডিফ স্ট্যাচুস"।আইডিয়া অনুযায়ী একদিনের জন্যে সারাবিশ্বের সব ভাস্কর্য গুলোকে নকল হিয়ারিং এইড পরিয়ে দেওয়া হবে (যেমন স্ট্যাচু অফ লিবার্টি কিংবা ক্রাইস্ট অব দ্যা রিডিমার এর কানে লাগানো থাকবে শৈল্পিক হিয়ারিং এইড)।ভাস্কর্য শিল্পিরা সেই হিয়ারিং এইডের শৈল্পিক নকশা করবেন।সেদিন যারাই ভাস্কর্য দেখবেন তারা স্বভাবিক ভাবেই কৌতুহলী হবেন।জানতে চাইবেন এটার সম্পর্কে।তখন তাদেরকে ধরে বেঁধে বুঝিয়ে দেওয়া হবে হিয়ারিং এইড সম্পর্কিত স্টিগমা বা সামাজিক ধ্যান-ধারনার কথা।এতে তারা সচেতন হবেন,অন্যদের সচেতন করবেন।
এমনই ছিল তার আইডিয়া!!!
সে যাক গে............
সমস্যা হলো বিশ্বব্যাপি হিয়ারিং এইড সম্পর্কিত স্টিগমা দূর করার জন্যে নানাভাবে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।কিন্তু আমাদের দেশে তা হচ্ছে না।কেবল মাত্র আমাদের উদাম মন-মানসিকতার জন্যেই হিয়ারিং এইড ব্যবহারকারীরা ঘরে বাইরে সবখানে এক নিদারুণ বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে।আমাদের বোঝা উচিত এমনটা করে আমরা তাকে বিচ্ছিন্ন কিংবা আলাদা করে দিচ্ছি।অন্য দশজনের কাছ থেকে তাকে পৃথক করে দিচ্ছি।সেটা আমাদের অজান্তেই হোক আজ জেনে শুনে হোক!!সে ও অন্যদশজনের মত সমাজে চলাফেরা করতে চায়।ঠিক যেভাবে চলাফেরা করে হাই পাওয়ারের চশমাপড়া ছেলেটি ।তাকে ঠিক সেভাবেইই দেখা হোক,যেমন ভাবে দেখা হয় চশমা লাগানো একজনকে
কারন এটা চশমা লাগানোর মতই একোটা স্বাভাবিক ব্যাপার স্যাপার
দুইন্নাত্তে এত্ত এত্ত কিছু থাকতে,এত্ত এত্ত ইস্যু থাকতে হিয়ারিং এইডের মত একটা টপিকস নিয়ে লেখার কারণ হল নিজে চেখে দেখা অভিজ্ঞতা।আমি বলবোনা যে সামু/ফেবুর হেভিওয়েট কী-বোর্ড যোদ্ধারা অন্তত জনসচেতনতা তৈরির জন্যে হলেও এই টপিকস নিয়ে লেখালেখি করুক ।শুধু এটা বলতে পারি যে আপনার লেখনিতেইই হয়তো অনেকেই সচেতন হবে।সচেতন করবে অন্যদেরকেও।লাইক কমেন্টের জন্যে তো অনেক কিছুইই লিখেন।এটা নিয়ে দু চার লাইন লিখে দিন না।দেখবেন একদিন আপনাদের লেখনির বদৌলতে দেখা যাবে হিয়ারিং এইড ব্যবহার করা কাউকে মাথা নিচু করে হাত দিয়ে কান আড়াল করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যাবে না।বন্ধু আড্ডায় কাউকে জড়োসড়ো থাকতে হবে না।আপনার বোনটা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে অপারতা প্রকাশ করবে না।আর গেলে ও অন্য সবার চেয়ে আলাদা হয়ে এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে দেখা যাবে না ।
শুধু মাত্র আপনারা যদি সচেতন হন এবং অন্যদের সচেতন করার জন্যে কী-বোর্ড ধরেন (কলম ধইরা লাভ আছে বলে মনে হয় না।ডিজিটাল জমানা =D )
লিখেন না দু লাইন
আমরাইই তো বাংলাদেশ তাইই না???
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩২