somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফাহমি-মিথিলা স্ক্যান্ডাল ও একটি বেহুদা আলাপন

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
মিথিলা-ফাহমি রিলেটেড স্ক্যান্ডাল নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে পুরো বাংলাদেশ উত্তাল।খালি কি সোশ্যালমিডিয়া? অনলাইনে বলেন অফলাইনে বলেন,সংবাদ পত্র বলেন সবখানে মিথিলা-ফাহমির টপিকে ছবি-ভিডিও-পোস্টে একাকার। তো ফেসবুকে যা দেখলাম, প্রতিটি ইস্যুর মতো এই ইস্যুতেও পাবলিক কয়েকভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মিথিলা-ফাহমির ব্যক্তি জীবন বিশেষ করে তাদের অতীতজীবন,তাদের লিক হওয়া প্রাইভেট ফটো নিয়ে কিছু মানুষ জাজমেন্ট করতেছে এইভাবে যে তাদের এইসব করা উচিত হয়েছে কি হয় নাই, এবং স্বাভাবিক ভাবেই কিছু মানুষ বিপরীতে দাঁড়িয়ে এন্টি-জাজমেন্টাল বয়ান নিয়ে হাজির হয়েছে।

খুবই টিপিক্যাল একটা ব্যাপার স্যাপার।আমার মতে ফেসবুকের বেশীরভাগ মন্তব্যই বোগাস।যখন কোন ইস্যুর জাগরন হয় তখন বেশীরভাগ লোকেই ধুম করে পোস্ট করে বসে না। সে প্রথমে তার নিউজফিডে ওই ইস্যু সম্পর্কিত টপিকে একটু পড়াশোনা করে। পড়াশোনা বলতে ওই টপিকে বিশিষ্ট ফেসবুক সেলিব্রেটি, এবং ইন্টেলেকচুয়াল পিপল যাদের সে মন দিয়ে প্রত্যহ ফলো করে তাদের পোস্ট পড়ে কমেন্ট পড়ে। যেহেতু এইসব ফেসবুক সেলিব্রেটিরা একটা নির্দিষ্ট বয়ান/মতামত (সেইটা তার ব্যক্তিগত হইতে পারে কিংবা পাবলিক ডিমান্ড বুঝেও হইতে পারে) খুব সুন্দর করে আকর্ষনীয় ভাবে উপস্থাপন করে(করতে পারে বলেই সে ফেসবুক সেলিব্রেটি) এবং তার ফলোয়ার বৃন্দ এতে গলে যায়,মনে করে এই ইস্যুতে এটাই সঠিক হইতে বাধ্য,দেন তার মাইন্ডসেট ঠিক করে এই ইস্যুতে সে কোন পক্ষে বয়ান দিবে।তারপর সে এইভাবে আরেকজনের ঠিক করে দেওয়া মাইন্ডসেটে বায়াসড হয়ে পোস্ট করে নয়তো তাদের পোস্ট শেয়ার করতে থাকে।
এবং এই পুরো প্রসেসটিতে একটা জিনিস অনুপস্থিতি থাকে তা হইলো থিংকিং। এইসব মানুষ গুলা নিজের ব্রেইনকে ইউজ করে খুব কম। করেই না বলতে গেলে।
সাধারনত মানুষ কীভাবে চিন্তা করে?তাকে বইপত্র-জার্নাল-আর্টিকেল ইত্যাদি পড়তে হয়,তাইলে তার চিন্তা করার এবিলিটি বাড়ে। এই ক্রাউড পার্টি মানে একটা ইস্যুতে পংগপালের মত সমানে দিনে বা ঘন্টায় ১৪/১৫টা করে স্ট্যাটাস দিতে থাকা মানুষ গুলা পড়েই কেবল ফেসবুক পোস্ট।কোন বিষয়ে স্পেসিফিক পড়াশোনার সময় কই এদের? কেবলমাত্র ইন্টেলেকচুয়াল কিছু লোক ছাড়া সর্বত্রই এই দৃশ্য বিদ্যমান।

২.
মিথিলা-ফাহমি ইস্যুতে একদল পিপলদের বয়ান হাজির হইছে।এরা নিজেদের এন্টি-জাজমেন্টাল মনেকরে। এরা ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সবার উপরে তুলে ধরছে। এদের কথাবার্তার সারকথা হইলো, মিথিলা-ফাহমির প্রাইভেট ফটো নিয়ে আমজনতার হাউকাউ করার কোন অধিকার নাই।কেন নাই?কারন এটা তাদের ব্যাপার(মিথিলা-ফাহমির)।যেহেতু মিথিলা ডির্ভোসড সুতরাং সে তার শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্যে যার সাথে খুশি তার সাথেই শুইতে পারে।প্রেম করতে পারে।সেক্স করতে পারে। এতে আমজনতার এত হাউকাউ তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মত! কারো কোন অধিকার নাই অন্যের ব্যক্তিজীবন নিয়ে টানাটানি করার,হস্তক্ষেপ করার কিংবা মোরাল পুলিশিং করার। এবং একই সাথে যারা এইভাবে অন্যের ব্যক্তিগত প্রাইভেট লাইফ নিয়ে টানাটানি করে এবং এইসব ছবি স্প্রেড করতেছে তারা সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড, পার্ভাট, জাজমেন্টাল, পটেনশিয়াল রেপিস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই ঘরানার স্ট্যাটাসে কিছু কুউল কিছু ইংরেজি শব্দের উপস্থিত আছে যা স্ট্যাটাস বা বয়ানকে কিছুটা এস্থেটিক মাত্রা দেয়।
সেইম ঘরানার অনেকে কিছু হাদীস কোট করে মিথিলা এবং ফাহমির ব্যক্তি-স্বাধীনতা উদ্ধারকল্পে রীতিমতো ফতোয়া দিয়ে বসেছেন।

আমার মনে হইতেছে যে তাদের প্রাইভেট লাইফ এবং লিক হওয়া ইমেজ নিয়ে ক্রিটিসিজম করতেছে তাদের সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড, পার্ভাট, জাজমেন্টাল, পটেনশিয়াল রেপিস্ট ট্যাগ দিয়ে ক্রিটিসিজম করা একটু বাড়াবাড়ি রকমের!
কারন যারা এই ইস্যুতে তাদের ব্যক্তিগত জীবনকে ক্রিটিসাইজ করছে তাদের সাইকোলজিটা আগে বুঝতে হবে।তাইলে বুঝতে পারবেন মিথিলা ও ফাহমির এইসব ফটোতে কেন তাদের আপত্তি।কেন তাদের কাজ কারবারে আমপাবলিক হাউকাউ করতেছে,মজা লইতেছে।

৩.
সাধারনত মিডিয়াতে বিয়ে শাদী যা হয় তার খুব কমই টিকে। টিকেই না বলা চলে। আমপাবলিক তাদের ছবি ওয়ালপেপারে রাখে, ক্রাশ খায়।তারপর মিডিয়াপাড়ার অমোঘ বিধানে তাদের বিবাহিত জীবনে দুদিন পরপরই ডির্ভোস নেমে আসে।
তো যা হয়, যদি কারো বিয়ে টিকলে বা ডির্ভোস হবার নাম-লক্ষন দেখা না গেলে মিডিয়া তাদের হাইলাইট করে। যেমন তাহসান মিথিলা। মিডিয়াতে এক দম্পতি আইডল।সুখের সংসার তাদের। বছরের পর বছর যায়।তাদের এনিভারসারি এলেই মিডিয়া হামলে পড়ে, কাপল ছবি ছাপা হয় পত্রিকায়।ইন্টারভিউ নেওয়া হয় যুগলের।টকশোতে ডাকা হয়। জানতে চাওয়া হয় তাদের মধ্যকার কেমেস্ট্রির রহস্য কি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এইভাবে মিডিয়া তাদের ব্যক্তগত জীবনে হাত ঢুকিয়ে দেয়।তাদের লাইফ নিয়ে ফিচার করে এবং আম জনতার কাছে তাদের আইডল হিসেবে তুলে ধরে। একজন আদর্শ দম্পতি কেমন হওয়া উচিত তাদের দিয়ে উদাহারন দেওয়া হয়। মানুষের মন মগজে গেঁথে যায় কাপল হইলে তাহসান মিথিলার মতই হওয়াই উচিত!প্রেমিক-প্রেমিকারা ও নিজেদের রাজ্যে তাহসান মিথিলা হইবার স্বপ্ন দেখে।এইভাবে মিডিয়া একটা রিয়ালিটি আমজনতার সামনে তৈরি করে দেয়। তাদের বানানো রিয়ালিটি।ফেক রিয়ালিটি।

শুধুই যে তাহসান মিথিলা? জাহিদ-মৌ আছে।ফরদী-সুবর্না মুস্তাফা আছে। আরো অনেকেই আছে। বাংলাদেশী মিডিয়া ইন্ড্রাষ্টি আমার ফলো করা হয় না বলে যাদের আমি জানি না। এদের আইডল ভাবা হতো একসময়।
এদের মধ্যে জাহিদ-মৌ ই টিকে আছে কেবল।

এখন যখন তাহসান মিথিলা মিউচুয়ালি ডির্ভোসড নেয় তাতে আমজনতা অবাক। তাদের মাথায় বাজ পড়ে।স্বপ্ন ভংগ হয়। যাদের আইডল ভেবে আসছিলো তাদের ডির্ভোস মেনে নিতে পারে না।কেউ তাহসানকে দোষ দেয় কেউ মিথিলাকে। আমার স্মৃতিশক্তি প্রতারনা না করলে বলতে পারি যখন ডির্ভোসের ইনসিডেন্ট হয়েছিলো তখন তাহসানকেই দোষ দেওয়া হয়েছিলো সংসার ভাঙ্গার পেছনে।এবং মিথিলার পক্ষে প্রচুর জনমত ছিলো।
তখন ও ফেসবুক এই ইস্যুতে ভেসে গিয়েছিলো। তখন ও একটা পক্ষ এসে তাহসান মিথিলার ডির্ভোস হওয়া তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার,জনসাধারনের উচিত না এইসব ব্যক্তিগত ব্যাপারে অযথা নাক না গলানোর।তখন ও সেক্সুয়াল পার্ভাটেড,মোরাল পুলিশিং ইত্যাদি ভারী ভারী শব্দ দিয়ে ছেয়ে গিয়েছিলো বটে।

ফরিদি-মুস্তাফার ডির্ভোসের সময়ে ফেসবুকে ট্রেণ্ড জিনিসটা এত বিস্তার লাভ করে নি।তাও আলোচনা হইছে।মুস্তাফা যখন সৌদকে বিয়ে করতে গেছিলো তখন ও অনেক আলোচনা হইছে, সমালোচনা হইছে, রসালো গসিপ হইছে।পক্ষে বিপক্ষে কাঁদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে।

৪.
খালি কি মিডিয়া??মিডিয়ার বাইরে জগতে ও সেইম অবস্থা। পলিটিশিয়ান,বড় কোম্পানির সিইও কোন কিছুই গসিপের হাত থেকে বাদ যায় না।যত বড় কুতুবই হোক না কেন, কোন সেলিব্রেটির স্ক্যান্ডাল লিক হইলে মানুষ তা নিয়ে মজা করে,ছড়িয়ে দেয়, কথা বলে, পুরো সোশ্যালমিডিয়া ভেসে যায় তাদের গসিপে।

হলিউডের সেলিব্রেটিরা একবার বড় রকমে হ্যাকিং এর শিকার হয়েছিলো।জেনিফার লরেন্সের আই ক্লাউড হ্যাক করে তার ন্যুড ফটো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। পুরো সোসাল মিডিয়া ভাইরাল হয়েছিলো। এলিট সুশীল এন্টি জাজমেন্টাল দলের বাংগালীরা ও এতে যোগ দিয়েছিলো।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকশনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সেক্সুয়াল ভয়েস স্ক্যান্ডাল রিলিজ হয়েছিলো। সোস্যাল মিডিয়া তো বটেই মেইনস্ট্রিম বড় বড় টিভি চ্যানেল গুলো রীতিমতো লাইভ টেলিকাস্ট করেছিলো এই ভয়েস।
প্রেসিডেন্ট হবার পর স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামের এক পর্নস্টারের সাথে বালু বালু খেলার অনেক পুরনো কাহিনি নিয়ে পুরো বিশ্ব হাসাহাসি করেছিলো।

জামালপুরের ডিসির উদাহারন তো চোখের সামনেই আছে।

৫.
উপরের এত উদাহারনে একটা জিনিস কমন। যারা ভিকটিম ছিলেন তারা সবাইই প্রভাবশালী/আইডল/সেলিব্রেটি/মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন।এবং প্রত্যেকটা ইস্যু ছিল তাদের প্রাইভেট লাইফ নিয়ে। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে।এবং কোনটাতেই তারা আমজনতার নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচতে পারেন নাই।
আপনার কি মনে হয়?এইসব যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার কইলেই আমজনতা তা শুনে না কেন?কানে নেয় না কেন?বিশ্বের যেখানেই যান না কেন সব জায়গায় একই রকম চিত্র দেখা যায় কেন? অন্যের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাটাঘাটি না করার হাদীস শুনিয়েও কাউকে ভাল করা যায় না কেন??

এত কেন নিয়ে কখনো ভাবছিলেন?মনে হয় না। এত ভাবাভাবির সময় থাকলে তো হইছিলোই।

ইউভাল নোয়াহ হারারিকে হয়তো চিনে থাকবেন। বর্তমানের প্রমিজিং ফিলোসফারদের একজন।তার একটা বই আছে হোমো স্যাপিয়েন্সঃদ্যা হিস্টোরি অব ম্যানকাইন্ড। ফেসবুককে সময় দেওয়ার পর এক্সট্রা সময় থাকলে পড়তে পারেন।
ওইখানেই মানুষের এই পরচর্চার বা গসিপ মনস্তাত্তিকতার একটা হালকা ব্যাখা দেওয়া আছে।

অনেক বছর আগে,হান্টার গ্যাদারার যুগে মানুষ যখন বনে জংগলে শিকারী জীবন লিড করতো,তখনো ভাষা আবিষ্কার হয়নি। দুই একটা শব্দ আর আকারে ইংগিত দিয়েই ভাব বিনিময় হয়ে যাইতো। কিন্তু এইভাবে আর কতদিন? ভাববিনিময় করে তো আর সব বুঝানো যায় না।
এইখানেই ভাষার কেরামতি আসে। যা কিনা সব প্রাণীর চেয়ে আমাদের আলাদা করছে।
তা ভাষা কীভাবে আসলো?
ভাষা উথানের পেছনে হারারি কয়েকটা যুক্তি দিয়েছেন,তার মধ্যে সবচেয়ে জোরালো থিওরি হলো এরকম যে, তখন মানুষ একসাথে দল বেঁধে বসবাস করতো।এবং শিকার ছাড়া করার মত কিছু ছিল না। (তখন ফেসবুক ইন্টারনেট ছিল না এইটা একটা কারন বটে।) তাই তাদের মধ্যে, পাশের মানুষটা কার সাথে শুইছে কার সাথে কে ইটিস পিটিস করছে,তার পাশের মানুষটা আড়ালে কি করছে এইসবই নিয়ে জানার আগ্রহ ছিল প্রচুর। এইসব খবরাখবর জানাইতে হলে তাকে অবশ্যই তৃতীয় একজনের সাথে কথা বলতে হবে।সোজা বাংলায় পরচর্চা করতে হবে। পরচর্চা থেকেই সে জানতে পারবে তার পাশের মানুষ কি করছে? কোন লোকটা ভালো কোন লোকটা খারাপ। কে এক নম্বর আর কে দুই নম্বর।

শুনতে আপনার কাছে অবাক লাগতে পারে এই পরচর্চাই আদিম ভাষার বুনিয়াদ গড়ে তুলেছে। ভাষার ভিত্তিই পরচর্চা। সুতরাং ধরে নিতে পারেন যে পরচর্চা জিনিসটা মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ও না শিরায় শিরায় ও না একেবারে ডিএনএ তে মিশে আছে। লাখ লাখ বছরের ধরে মানুষের ডিএনএ তে যে অভ্যাস রয়ে গেছে সেই অভ্যাস আপনি চাইলেই “ব্যক্তিগত ব্যাপার,অন্যের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হাত দেওয়া উচিত না, কে কি করবে তার ব্যাপার” এইসব নীতিবাক্য দিয়ে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দূর করতে পারবেন না।
আফটার অল আপনার ডিএনএ তেও ওই জিনিসটা আছে। আপনি ও অন্যের অনেক জিনিস নিয়ে গসিপ করেন,ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ পাড়েন, এনাদার টাইমে এনাদার সিচুয়েশনে। তখন অবশ্য আপনার মাথায় এই ব্যাপারটা আসে না।

কথায় কথায় যারা এই ইস্যুতে জাতি হিসেবে বাংগালীকে ব্লেইম করতেছেন তারা থামতে পারেন।দেখতেই তো পাচ্ছেন সেলিব্রেটিদের স্ক্যান্ডালে কোন জাত পাত দেখা হয় না। সবখানেই মানুষ ট্রল করে,মজা লয়,হাসাহাসি করে,জাজমেন্ট তো করেই এইসবে মিডিয়া নামক বস্তুটি আরো আগুন দেয়। পশ্চিমে হাজারো ট্যাবলয়েড আছে ম্যাগাজিন আছে। এগুলা বেঁচে আছেই সেলিব্রেটির গসিপ নিয়ে।পাপারাজ্জিদের কাজই তো সারাদিন সেলিব্রেটিরা কোথায় যাচ্ছে কি করছে সবি ক্যাপচার করা।তো দেখা যাচ্ছে সবখানেই পরচর্চার আদিম খেলা চলে

৬.
পিকি ব্লাইন্ডার্স সিরিজে থমাস শেলবির একটা উক্তি আছে অনেক পপুলার,

“Everyone’s a whore, Grace. We just sell different parts of ourselves.”



এই কথাটা মিডিয়া সেক্টরে খাপে খাপ মিলে যায়।
মিডিয়া সেক্টরে একটা বিষয় হইলো আপনার যদি ফেইম না থাকে তাইলে আপনাকে কেউ দাম দিবে না,কাজ দিবে না। সুতরাং আপনাকে ফেমাস হতে হবে। আপনি অনেক পপুলার এক্টর/এক্ট্রেস? তার মানে আপনার বিশাল ভক্ত সমাজ আছে।মিডিয়া আপনাকে প্রচুর এটেনশন দেয়।আপনি কি খান,কোন কালারের হাগেন,কোন পোশাক পড়েন কোন কালারে লিপস্টিক লাগান সবই মিডিয়ায় আসে।এবং সবাইইই দেখে। এখানে কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই ব্যবসা চলতেছে।আপনি ও এতে এগ্রি করে চলছেন।আপনার নিজের স্কিল এক্টিং/মডেলিং এর পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত জীবনটাকেও বেচে খাচ্ছেন।

এসব কারনে আপনার হিউজ ফলোয়ার হয়েছে।এরা সবাই আপনার অভিনয় দেখে ফলোয়ার হইসে এমন না। কেউ আপনার চেহারা দেখে,কেউ আপনার ভয়েস দেখে,কেউ আপনার ফিগার দেখে কেউ আপনার একচুয়াল অভিনয় দেখে কিংবা কেউ আপনার ইনস্টাগ্রামের হাফ ন্যাকেড ইমেজ (পরীমনী দ্রষ্টব্য) কিংবা জাস্ট সেক্সুয়াল আপিল যুক্ত ইমেজ দেখেই আপনার ফলোয়ার।
আপনি কারো না কারো কাছে আইডল। কারো কাছে সৌন্দর্যের মান বিচারে আইডল।সে হয়তো স্বপ্ন দেখে আপনার মত সুন্দর বয়ফ্রেন্ড বা প্রেমিকা পাওয়ার। আবার কেউ জাস্ট আপনার ছবি দেখে যৌন চাহিদা মিটায়। কেউ আছে আপনার অভিনয়ের ফ্যান নাথিং মোর।

এখন আজ বাদে কাল যদি আপনার কয়েক মিনিটের ভিডিও মার্কেটে চলে আসে তাহলে কি হবে?যাদের কাছে আপনি আইডল তাদের কেউ কেউ হয়তো আপনাকে ডিফেন্ড করবে।কিন্তু সবাই করবে না। বেশীরভাগ আপনাকে হোর বানিয়ে দিবে।এর সাথে যোগ দিবে আপনার হেটার্সবৃন্দ।
মিডিয়া এভাবেই চলে।এইখানে আপনার ব্যক্তিগত জীবন বইলা কিছু নাই। কি খাচ্ছেন,কোন টাইপের টয়লেট ইউজ করেন ঘরের জানালায় কোন পর্দা ইউজ করেন সবি মিডিয়ায় আসছে।এইগুলা আপনার পার্সোনাল লাইফের অংশ ও বটে।কিন্তু আপ্নি এগুলাই জানতে দিচ্ছেন এবং এইগুলাই মানুষে জানতেছে।

মিথিলা ইস্যুতে ঠিক এটাই হয়েছে। তাহসান মিথিলা কে পুরো বাংলাদেশের কাছে আদর্শ দম্পতির নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করেছে।আইডল বানানো হয়েছে। ডির্ভোস হবার পর সারা মিডিয়ায় মাতামাতি হয়েছে। মানুষজন মাতামাতি করেছে। এখন ছবি লিক হবার পরো হয়েছে।সামনে আরো হইলে আরো হবে।

জাস্ট মিথিলা ইস্যুতে আপনি যদি বাংগালী জাতিকে সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড, পার্ভাট, জাজমেন্টাল, পটেনশিয়াল রেপিস্ট ট্যাগ দিয়ে দেন তাইলে আপনারা যারা কথায় কথায় সভ্যতার মানদন্ডে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির উদাহারণ টানেন তারা কি হবে? এইভাবে দেখলে দুনিয়ার সবাইই সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড, পার্ভাট, জাজমেন্টাল, পটেনশিয়াল রেপিস্ট।খালি আপনারা গুটিকয়েক সুশিল সমাজ বাদে।

৭.
মোরাল পুলিশিং বলে একটা বাক্য আজকাল ক্রিটিসিজম মুলক পোস্টে দেখা যায়।এই আর্টিকেলেও কয়েকবার এসেছে।
আপনি খেয়াল করে দেখবেন, মিথিলা ডির্ভোসড।অনেক আগেই হয়েগেছে। সুতরাং সে সিংগেল এবং সে চাইলে যে কারো সাথে প্রেম করতে পারে,তার সাথে শুইতে পারে ঘুরতে পারে।তার অবশ্যই অধিকার শতভাগ আছে।
যে কারো দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখলে এইখানে অন্যায় কিছুই নাই। হ্যা আপনি বলতে পারেন তারা বিয়ে না করে হালাল উপায় অবলম্বন না করে শুইছে। মানে ধর্মীয় দিক দিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন।কিন্তু ব্যাপারটা হইলো ধর্মীয় ব্যাপারে আপনি তারে উপদেশ দেবার কেউ না। সে হয়তো ধর্মের ব্যাপারে কেয়ার করে না। কাজেই সে কোন উপায়ে এসব করবে সেটা একান্তই তার ব্যাপার। সে যদি অগা মগা টাইপের কেউ হতো তাহলে মেবি কেউ কেয়ার করতো না।
কিন্তু ওই যে উপরে বললাম তারা মিডিয়ার পার্সোনা।এবং অনেক মানুষের আইডল। এবং বাংলাদেশের মানুষ সামাজিক ভাবে যে সব জিনিস এলাউ করে না তারা সেসব জিনিসই করেছে। এবং করলে সমস্যা ছিল না।সমস্যা হচ্ছে ওগুলা লিক হইছে।
এখন লিক হবার পর আমজনতা এক লাইনে দাঁড়িয়ে গালিগালাজ এবং ক্রিটিসিজম শুরু করছে।এই কাজ পাড়ার রহিমা করলে কিছুই হইতো না।কিন্তু মিথিলা আর রহিমা ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতার দিক দিয়ে এক না।রহিমার পরিচিত নাই।কিন্তু মিথিলার লাখো ফলোয়ার আছে। সুতরাং মিথিলার মত ফেমাস মানুষ কিছু করলে তার ইমফ্যাক্ট অবশ্যই সমাজে পড়ে।
তাই এদেশের মানুষ যে সামাজিক ভ্যালু মেনে চলে, মিথিলার কাজ তার সাথে কনফ্লিক্ট করে। আজকে যদি মিথিলা-ফাহমির এই স্ক্যান্ডালে কেউ কিচ্ছু না বলে আক্ষরিক অর্থেই বাকস্বাধীনতা ও ইত্যাদি ইত্যাদির দোহাই দিয়ে একে বরণ করে নেয় তাইলে কাল তাদের ছেলে মেয়েরা এবং অন্যরা বুঝে যাবে যে এইগুলা তাহলে আমরা ও করতে পারি।
যেহেতু এদেশের মানূষের সামাজিকতার মোরাল ভ্যালু এইসব এখনো এলাউ করতে শিখেনি,তাই তারা এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।এখানে তারা বলতে চাচ্ছে যে এইরকম করা চলবে না। এটা অন্যদের জন্যে ও বার্তা বটে। এরকম করলে পাবলিক ছিড়ে খুড়ে খেয়ে ফেলবে।
এইটা হইলো সামাজিক চাপ।এই যে মোরালি পুলিশিং নামে যে টার্মটা ইউজ করা হয় এইটা হইলো সামাজিক চাপের একটা অংশ।

৮.
বাংলা ফেমিনিস্ট গোত্রের দেখলাম এই ইস্যুতে মিথিলার প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন।একই সংগে তাদের কথাবার্তার সারবত্তা হইলো যে একলা মিথিলাকে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ছিড়ে খুড়ে খেয়ে দিচ্ছে।ভার্চুয়াল রেপ করছে এবং ফাহমিকে কিছু বলছে না। পুরুষ এভাবেই তার জ্ঞাতি ভাইকে রক্ষা করে।
ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম এবং মনে হইলো, আসলেই তো! ফাহমিরে নিয়া তো কেউ কিছু বলছে না।আইমিন যেভাবে মিথিলাকে গালাগালি করছে। বরং অনেক পোস্ট দেখলাম ফাহমিকে মামালোক,ফাহমি জিতেছে ইত্যাদি বলে সম্ভোধন করা হইছে। :3 ডিজগাস্টিং!
আমি গুগলে গেলাম দেখি ফাহমিকে নিয়ে কিছু পাওয়া যায় কিনা। দেখলাম এই কবির সিং ভাইকে নিয়ে সার্চ দিলে কেবল কয়েকটা ছবি আসে।এর মধ্যে তার বিয়ের ছবি অন্যতম। কোথায় তেমন কোন তথ্য নাই।যা আছে তা কয়েকদিন এর মধ্যে পাবলিশ করা। এর আগে গুগলে তার নাম সার্চ দিলে লবডংকা পাওয়া যাইতো। অন্যদিকে মিথিলাকে নিয়ে সার্চ দিলে হাজার হাজার লিংক পাওয়া যায়।আগেও যাইতো এখন আরো বেশী যায় এই আর কি :3

শুনলাম ফাহমি নাকি ম্যারিড।গুগল অমনটাই বলেছে। এবং তার ডির্ভোস হবার কোন খবরাখবর নাই। সে যদি ডির্ভোস না হয়ে থাকে তাইলে এই ইন্সিডেন্তে একচুয়াল মাদাফাকা তো সেইই। বউ রেখে পরকীয়া করতে গেছে। ওরে আগে শুলে চড়ানোর উচিত ছিলো,তারপরে মিথিলারে। আইমিন ফেসবুকীয় শুলে। :3 এমনিতেও পরকীয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।পশ্চিমের বলেন আর এখানকার বলেন কোনজায়গার সামাজিকতার মরাল ভ্যালু ও একে সাপোর্ট করে না।

আমার যা মনে হয়েছে ফাহমিকে অতটা এটেনশন না দেওয়ার কারন হইলো ওর পরিচিত নাই।বেশীরভাগ মানুষ ওরে চিনে না।যতটা চিনে মিথিলারে। তো পাবলিক এটেনশনের নিরিখে ক্রিটিসিজম বেশী মিথিলার কপালে জুটেছে!

এই হইলো হাবিজাবি!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৯
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×