somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাদীসে গাদীরের তাৎপর্য

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে "মাওল" এবং "ওয়ালী" শব্দের অর্থ হল মুসলিম উম্মাহর উত্তরাধিকারী ও অভিভাবক। এবং অন্য অর্থের সাথে সংগতি রাখে না। এখন নিম্নের বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য করুন :
১) ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি যে রাসূল (সা.) হাদীসে গাদীর উপস্থাপন করতে ভয় পাচ্ছিলেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তিনি তা ঘোষণা করেননি।
তাহলে একথা বলা সম্ভব নয় যে হাদীসে গাদীরের উদ্দেশ্য হল রাসূল (সা.) এর সাথে আলী (আ.) এর বন্ধুত্বকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া ? যদি উদ্দেশ্য তাই হত, তাহলে তা প্রচার করাতে ভয়ের কোন কারণ ছিল না এবং তাতে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট হত না।
সুতরাং উদ্দেশ্য খেলাফত ও উত্তরাধিকারীর ব্যাপারই ছিল। আর এ ভিতি বিদ্যমান ছিল যে এই বিষয়টি প্রচার করলে কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী ঔদ্ধ্যত্য প্রকাশ করতে পারে।
২) রাসূল (সা.) “মান কুনতু মাওলা ফাহাযা আলী উন মাওলা” বলার পূর্বে জনগণের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিয়েছিলেন যে তিনি হলেন সকল মুমিনিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং উম্মতের কর্ণধার। অতঃপর ঐ স্থানকে আলীর (আ.) জন্যেও নির্ধারণ করলেন এবং বললেন : "আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা।"
৩) হাসসান ইবনে ছাবেত গাদীরের ঘটনাটিকে রাসূল (সা.) এর অনুমতিক্রমে কবিতার ভাষায় বর্ণনা করেন এবং রাসূল (সা.) তাতে অনুমোদন দেন। হাসসানের কবিতায় আলী (আ.) এর খেলাফত ও ইমামতের মর্যদাকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে কিন্তু ব্যাপক জনসমষ্টির কেউই প্রতিবাদ করেননি যে কেন "মাওলা" শব্দের ভুল অর্থ করছ। বরং সকলেই তার প্রশংসা করেছিলেন এবং স্বীকৃতিদান করেছিলেন।
কবিতাটির কিছু অংশ এ খানে তুলে ধরছি :
فقال له قم يا علي فانّني رضيتك من بعدي اماما وهاديا
فمن كنت مولاه فهذا وليّه فكونوا له اتباع صدق مواليا
অর্থাৎ :- রাসূল (সা.) আলীকে (আ.) বললেন : ওঠ হে আলী আমার পর তুমিই হলে উম্মতের নেতা ও ইমাম । সুতরাং আমি যার মাওলা এবং যার দ্বীনি ও ঐশী কর্ণধার এই আলীও তার মাওলা এবং অভিভাবক। অতএব তোমরা সকলেই আলীর (আ.) প্রকৃত অনুসারী হও।
৪) অনুষ্ঠান শেষে রাসূল (সা.) আলীকে (আ.) নিয়ে একটি তাবুর মধ্যে বসলেন এবং সকলকে এমনকি তাঁর স্ত্রীদেরকেও আলীকে (আ.) অভিনন্দন জানাতে বললেন এবং তাঁর হাতে বায়াত করতে বললেন। আর আমিরুল মুমিনিন হিসাবে আলীকে (আ.) সালাম জানাতে বললেন। এটা স্পষ্ট যে এ অনুষ্ঠান শুধুমাত্র তাঁর খেলাফত ও ইমামতের সাথেই সামঞ্জস্য পূর্ণ ।
৫) রাসূল (সা.) দু’বার বলেছিলেন : هنئوني অর্থাৎ আমাকে অভিনন্দন জানাও। কেননা আল্লাহ তা'য়ালা আমাকে শ্রেষ্ঠ নবী ও আমার আহলি বাইতকে উম্মতের জন্য ইমাম নির্বাচন করেছেন। এসকল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করার পর হাদীসে গাদীর সম্পর্কে আর কোন রূপ সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না।

রাসূল (সা.) এর উত্তরাধিকারী ও খেলাফত:
প্রতিটি মানব সমাজই সমাজের অগ্রগতির জন্য এক নেতা ও অভিভাবকের প্রয়োজনীয়তাকে অনুধাবন করে। আর একারণেই কোন রাষ্ট্রনায়ক মারা গেলে জনগণ আর এক রাষ্টনায়কের প্রয়োজনীয়তাকে অনুধাবন করে, যিনি শাসন ভার নিজ হাতে তুলে নিবেন। কেউই রাজি নন যে সমাজ শাসক ও অভিভাবকহীন থাকুক। কেননা জানেন যে সমাজের কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে এবং তা বিশৃংখলা কবলিত হবে।
ইসলামী সমাজ নিজে ও এক বৃহত মানব সমাজ হিসাবে এ বিষয়টিকে অনুভব করে এবং জানে যে রাসূল (সা.) এর তীরোধানের পর ইসলাম নেতা বা শাসক চায় যার মাধ্যমে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
কিন্তু যেহেতু এ প্রয়োজনীয়তার বিভিন্ন উদ্দেশ্য রেয়েছে। প্রতিটি গোষ্ঠিই রাষ্ট্রনায়কের বৈশিষ্ট সম্পর্কে নিজেস্ব মতামত রাখেন এবং সে উদ্দেশ্য মোতাবেক বিচার করেন। সে কারণেই কিছু সংখ্যক মুসলমানরা মনে করেন যে, রাষ্ট্র নায়কের দায়িত্ব কেবল মাত্র রাষ্ট্র গঠন করাই। মনে করেন যে রাসূল (সা.) এর খেলাফাত ও উত্তরাধিকারী নির্বাচনযোগ্য এবং মুসলমানরা নিজেরাই তাদের পছন্দনীয় ব্যক্তিকে রাসূল (সা.) এর উত্তরাধিকারী হিসাবে নির্বাচন করতে পারেন।
এর বিপরীতে শিয়া মাযহাবের অনুসারীরা তাত্ত্বিক, দার্শনিক যুক্তির ভিত্তিতে এবং কোরানের আয়াত ও অসংখ্য হাদীসের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে এ বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। তারা শাসন কর্তা এবং রাসূল (সা.)-এর উত্তরাধিকারীর উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তাকে মানুষের সার্বিক পরিপূর্ণতা হিসেবে মনে করেন এবং বলেন : যে রাষ্ট্রনায়ক এ গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তিনি হলেন স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক নির্বাচিত। তিনি নবীগণের (আ.) ন্যায় জনগণের পার্থিব ও আধ্যাক চাহিদাকে সম্পূর্ণরূপে চিহ্নিত করে আল্লাহর প্রকৃত হুকুম অনুসারে তার সমাধান করবেন। আর এর মাধ্যমেই মানুষের প্রকৃত পরিপূর্ণতার এবং সার্বজনিন কল্যাণের পথ সুগম করতে সক্ষম হবেন।
এখন শিয়াদের দৃষ্টিতে রাসূল (সা.) এর উত্তরাধিকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করা হবে যার মাধ্যমে এ ব্যাপারটি সুস্পষ্ট হবে যে কেন রাসূল (সা.) এর উত্তরাধিকারী থাকা প্রয়োজন ?
রাসূল (সা.) এর উত্তরাধিকারী থাকার প্রয়োজনীয়তা ও উদ্দেশ্য নবী-প্রেরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তারই অনুরূপ। অথবা এর মাধ্যমেই ঐ মুল উদ্দেশ্যের সফলতা অর্জিত হয়। সার্বিক হেদায়াতের স্থির ও অনিবার্য কারণ অনুযায়ী : সৃষ্টির প্রতিটি অস্তিত্বের জন্য অস্তিত্বের পথে তার পরিপূর্ণতার সকল মাধ্যম ও বিদ্যমান, যার মাধ্যমে তার শ্রেনী ও প্রকৃতি অনুযায়ী পূর্ণতা ও কল্যাণের দিকে দিক নির্দেশিত হয়।
মনুষ্য শ্রেণী ও এ বিশ্বজগতের একটি অস্তিত্ব এবং এই চিরন্তন নিয়মের অর্ন্তভূক্ত। অবশ্যই মানুষ সৃষ্টির নিয়মানুযায়ী যা মানুষের পার্থিব ও আত্মিক, শারীরিক ও মানসিক চাহিদ অনুযায়ী এবং কোন প্রকার ব্যক্তি স্বার্থ ও বিভ্রান্তির ঊধের্ব সুসজ্জিত হয়েছে তার দ্বারা হেদায়াত প্রাপ্ত হবে। আর এর মাধ্যমেই মানুষের ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ নির্ধারিত হয়।
একর্মসূচী অনুধাবন করা আকল বা বিবেকের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা মানুষের বিবেক বিচ্যুতি, ভ্রান্ত চিন্তা এবং আবেগ থেকে মুক্ত নয়। আর তা এক সার্বিক কর্ম এবং পরিপূর্ণ কর্মসূচী সরবরাহ করতে সক্ষম নয়। বরং অবশ্যই এক নবীর (আ.) প্রয়োজন যিনি ওহীর মাধ্যমে ঐ পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচী আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হবেন এবং সামান্যতম বিচ্যুতি ও ভ্রান্তি ছাড়াই মানুষকে তা শিক্ষা দিবেন। আর এর মাধ্যমেই প্রতিটি মানুষের জন্য কল্যাণের পথ সুগম হবে।
এটা স্পষ্ট যে এই দলিল যেমন জনগণের মধ্যে নবীর (আ.) প্রয়োজনীয়তাকে প্রমাণিত করে, তেমনি নবীর (আ.) প্রতিনিধি বা ইমাম হিসাবে এক ব্যক্তির অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তাকে ও প্রমাণ করে । যিনি নিখুত এ কর্মসূচীকে রক্ষা করবেন এবং কোন প্রকার হ্রাস বৃদ্ধি ছাড়াই তা জনগণকে শিক্ষা দিবেন। তাছাড়া নিজের সঠিক ও সুন্দর আচার-ব্যাবহারের মাধ্যমে জনগণকে প্রকৃত পরিপূর্ণতা ও কল্যাণের দিকে পরিচালিত করবেন। কেননা ইহা ব্যাতীত মানুষ তার প্রকৃত পরিপূর্ণতায় উন্নীত হতে পারে না। পারেনা তার আল্লাহ প্রদত্ত সুপ্ত প্রতিভাকে প্রস্ফুটিত করতে। পরিশেষে এই প্রতিভাসমুহ অব্যাবহৃত থেকে যায় এবং অহেতুক হয়ে পড়ে। কিন্তু আল্লাহতা’লা এমনটি কখনোই করবেন না। কেননা এটা সঠিক নয় যে তিনি উৎকর্ষ ও পরিপূর্ণ তার প্রতিভা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করবেন অথচ তা থেকে উপকৃত হওয়ার পন্থা বলে দিবেন না।
ইবনে সীনা তার শাফা নামক গ্রন্থে লিখেছেন : যে খোদা মানুষের ভ্রূ এবং পায়ের নিচের গর্ত যা আপাত দৃষ্টিতে ততটা প্রয়োজনীয় মনে হয় না সৃষ্টি করতে অবহেলা করেননি। এটা হতেই পারেনা যে তিনি সমাজকে নেতা এবং পথ প্রদর্শক ছাড়াই রেখে দিবেন। যা না হলে মানুষ প্রকৃত কল্যাণে উপনীত হতে পারে না।
একারণেই শিয়ারা বলেন : গায়েবী মদদ অব্যাহত রয়েছে এবং ঐশী জগৎ মর্তজগতের মধ্যে সার্বক্ষণিক সংযোগ বিদ্যমান রয়েছে।
এ যুক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সা.) এর উত্তরধিকারী অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হতে হবে। এবং সর্বপ্রকার গোনাহ ও ত্রুটি থেকে প্রবিত্র ও মাসুম হতে হবে। যে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত নয় সে প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হবে এবং সে ভুল-ত্রুটি খেকে মুক্ত নয়। ফলে সে মানুষের সঠিক কল্যাণকে চিহ্নিত করতে, প্রকৃত ও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত দ্বীন মানুষকে শিক্ষাদিতে অপারগ হয়ে পড়বে, যার মাধ্যমে জনগণ প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারে। এবং পরিপূর্ণতা অর্জণ করতে পারে।
মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরানে এ সম্পর্কে বলেছেন : মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে জীবনের সকল বিষয়ে আল্লাহর নির্বাচিত বান্দাগণের অনুসরণ করবে ।
يا ايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولي الامر منكم
অর্থাৎ : "হে যাহারা ঈমান আনিয়াছ ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর এই রাসূলের এবং তাহাদের যাহারা তোমাদের মধ্যে আদেশ দেওয়ার অধিকারী" (নিসা-৫৯)।
এটা স্পষ্ট যে, উলিল আমর যাদের আনুগত্যকে আল্লাহ তা'য়ালা তার রাসূলের অনুগত্যের ন্যায় অনিবার্য করেছেন; এবং সকল বিষয়ে তাদের আনুগত্য করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তাঁরা হলেন আল্লাহর সেই মনোনীত বান্দাগণ যাদের মধ্যে ভুল-ত্রুটি এবং ব্যক্তি স্বার্থের কোন স্থান নেই। তাঁরাই মানুষকে সত্যের দিকে পথ প্রদর্শণ করেন। তারা নয় যারা অবিরাম তাদের কথা - বার্তা এবং চাল-চলনে হাজারও ভুল করে। তাদের অনুসরণের মাধ্যমে মানুষ হেদায়াত প্রাপ্ত হয়না এবং প্রকৃত পূর্ণতা অর্জন করতে পারে না।

রাসূল (সা.) কী তার উত্তরাধিকারী মনোণীত করেছিলেন ?
যে রাসূল (সা.) ইসলামকে তাঁর প্রাণের চেয়ে ও প্রিয় মনে করতেন এবং সকলের চেয়ে ভাল করে জানতেন যে প্রকৃত ইসলামকে অবশ্যই মনুষ্যজগতে টিকে থাকতে হবে।
কাজেই এটা কল্পনা ও করা যায় না যে তিনি আল্লাহর মনোণীত নিজের প্রকৃত উত্তরাধিকারীকে পরিচয় না করিয়েই মৃত্যুবরণ করবেন। ইসলামের প্রিয় নবী (সা.) তাঁর রেসালতের শুরু থেকেই এবিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে তাঁর প্রকৃত উত্তরাধিকারীকে স্পষ্ট ভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
যে কেউ রাসূলের (সা.) বাণীসমূহের উপর চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে যে, রাসূল (সা.) এর দৃষ্টি আলী (আ.) ও তার পবিত্র বংশধরের প্রতি ছিল। আর এ বিষয়ে তিনি
অন্য কারও উপর দৃষ্টি দেননি ।
এখন এ বিষয়ে বর্ণিত রাসূল (সা.) এর কিছু বাণীর প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব :
(১) রাসূল (সা.) ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকেই তাঁর আত্মীয়-স্বজনকে মক্কায় একত্রিত করে (দাওয়াতে যুল আশিরাহ) বলেছিলেন : আলী হচ্ছে আমার ওয়াসী এবং উত্তরাধিকারী, অবশ্যই তার অনুসরণ করবে।
(২) শিয়া এবং সুন্নি পন্ডিতগণ উভয়েই বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) জনসম্মুখে কয়েক বার বলেছেন : আমি দুটি অতি মূল্যবান এবং ভারী বস্তু তোমাদের মধ্যে রেখে যাচ্ছি। যদি তোমরা এদের পরম্পরকে দৃঢ় ভাবে আকড়ে ধর তাহলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। প্রথমটি হল : আল্লাহর কিতাব কোরান, আর দ্বিতীয়টি হল : আমার ইতরাত ও আহলী বাইত।
কখনোই যেন তোমরা এ দুটি থেকে পিছনে পড়না অথবা অগ্রগামী হয়োনা, কেননা এর মাধ্যমে তোমরা বিপথগামী হয়ে পড়বে।
(৩) আহলে সুন্নতের বিশিষ্ট আলেম আহমাদ ইবনে হাম্বাল বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) আলীকে (আ.) বলেছেন : তুমি আমার পর আমার পক্ষ থেকে প্রত্যেক মুমিনের প্রতি বেলায়াতের অধিকারী ।
৪) পণ্ডিতগণ এবং হাদীস বিশারদগণ সকলেই বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সা.) তাঁর বিদায় হজ্জে গাদীরে খুম নামক স্থানে লক্ষাধিক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়ে বলে ছিলেন : আমার মৃত্যু নিকটে এবং অতি শীঘ্রই আমি তোমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছি । অতঃপর আলী (আ.) এর দুই হাত উচিয়ে ধরে বললেন : আমি যার মাওলা আলী ও তার মাওলা ।
৫) বহু সংখ্যক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূল (সা.) বলেছেন : আমার উত্তরাধিকারীরা কুরাইশদের মধ্য থেকে হবে এবং তাদের সংখ্যা ১২ জন। এমনকি কিছু কিছু হাদীসে ইমামগণের (আ.) বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নাম ও বর্ণিত হয়েছে।
উপরোল্লিখিত উদাহরণসমূহ যার কিছু কিছু রাসূল (সা.) তার মৃত্যুর সময় অথবা জীবনের শেষ বয়সে জনগণের কাছে বলেছেন। এ গুলো থেকে ম্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয় যে রাসূল (সা.) এর পর কোন মহান ব্যক্তিত্ত্ব মুসলমানদের কর্তৃত্বকে হাতে তুলে নিবেন।

পরিষদ এবং ইমামত ও খেলাফত :
কিছু লেখক বলেন : ইমামত ও খেলাফত, কমিশন এবং অধিকাংশের ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে কোরানের কয়েকটি আয়াত যেখানে বলা হচ্ছে “তোমাদের কার্য ক্ষেত্রে পরামর্শ কর” দলিল হিসাবে ব্যবহার করেছে। তারা এরূপ মনে করে যে নির্বাচন হল ইসলামের একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি কিন্তু বোঝেনা যে :
(১) ইমামত বিষয়টি হল নবুয়্যাতের পরিসমাপ্তির প্রধান ভিত্তি। নবুয়্যাত যেমন নির্বাচণের মাধ্যমে হয়না ইমামতও তেমনি একই মর্যাদার অধিকারী এবং তা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারে না।
(২) পরামর্শ সেখানে প্রয়োজন যেখানে স্বয়ং আল্লাহ এবং রাসূল (সা.) এর পক্ষ থেকে কোন কর্তব্য নির্ধারিত হয়নি। যেমনটি আমরা লক্ষ্য করেছি যে রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় নিজের উত্তরাধিকারীকে নির্ধারণ করেন। এর পর আর কোন পরামর্শ বা পরিষদের কোন ধারণাই অবশিষ্ট থাকে না।
(৩) যদি ধরেও নিয়ে থাকি যে এ ব্যাপারে পরামর্শ করা সঠিক ,তাহলে রাসূল (সা.) অবশ্যই তার বৈশিষ্ট বর্ণনা করতেন । এবং নির্বাচনকারী ও নির্বাচিত ব্যক্তির শর্তসমূহকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করতেন, যার মাধ্যমে জনগণ যে ব্যাপারটি ইসলামী সমাজের অস্তিত্ব এবং উন্নতির প্রধান ভিত্তি ও দ্বীনের অস্তিত্ব যার উপর নিহিত সে বিষয়ে সচেতন ও হুশিয়ার থাকতে পারত। কিন্তু আমারা দেখি যে এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি । বরং তার বিপরীত বলেছেন । যখন বনি আমের রাসূল (সা.) এর কাছে আসল তাদের একজন রাসূলকে (সা.) বলল :
যদি আমরা আপনার সাথে বয়াত করি, যার মাধ্যমে আল্লাহ আপনাকে আপনার শত্রুদের উপর বিজয়ী করবেন; সম্ভব কী আপনার পর খেলাফত আমাদের কাছে থাকবে? রাসূল (সা.) বললেন :
খেলাফতের বিষয়টি আল্লাহর হাতে, তিনি তা যেখানে ইচ্ছা সেখানে প্রদান করবেন।
الامر الى الله يضعه حيث يشاءُ .
শিয়ারা উপরোক্ত নিদর্শন সমুহের ভিত্তিতেই বিশ্বাস করে যে রাসূল (সা.) এর উত্তরাধিকারীরা, যাদেরকে তিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, তাদের সকলেই আল্লাহর মনোনীত। আরও প্রয়োজন মনে করেন যে সকল বিষয়ে যারা প্রকৃত ও সুরক্ষিত দ্বীনের অধিকারী তাঁদের অনুসরণ করা একান্ত জরুরী। সৌভাগ্যবশতঃ এই বিশ্বাসের ফলেই তারা মাসুম ইমাম গণের (আ.) সান্নিধ্যে জ্ঞান, হাকিকাত এবং ইসলামী হুকুম আহকামের বহু তথ্য একত্রিত করতে সক্ষম হন। যা জীবনের সর্বস্তরের সমস্যার জবাব দিতে পারে। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে শীয়া মাযহাব একটি সম্ভ্রান্ত মাঝহাব হিসাবে পরিগণিত ।

খেলাফতের ঐতিহাসিক পরিক্রমণের সংক্ষিপ্ত চিত্র:
রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম প্রাপ্ত হয়েছিলেন যে তাঁর পর আলী ইবনে আবু তালীবকে তার খলিফা এবং উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করবেন। আর এ মহান বাণীকে জনগণের নিকট পৌঁছে দিতে আদিষ্ট হন।
ইসলাম প্রচারের শুরুতেই, নিজের আত্মীয় স্বজনকে একত্রিত করেন এবং বলেন : আলী হচ্ছে আমার ওয়াসী ও উত্তরাধিকারী । সকলের কর্তব্য হল তাঁর অনুসরণ করা।
তাবুকের যুদ্ধে যাওয়ার প্রাক্কালে আলীকে (আ.) বলেন : তোমার আর আমার সম্পর্ক হারুন এবং মুসার (আ.) সম্পর্কের অনুরূপ। পার্থক্য হল আমার পরে আর কোন নবী আসবে না। এটা উত্তম নয় কী যে আমার পর তুমি আমার উত্তরাধিকারী থাকবে।
জীবনের শেষ বছরে বিদায় হজের পর পথিমধ্যে গাদীরে খুম নামক স্থানে লক্ষাধিক জনগণের সম্মুখে দাড়িয়ে বলেছিলেন : আমি যার মাওলা আলী ও তার মাওলা এবং অভিভাবক।
অনুরূপ তাঁর শেষ জীবনে জনগণ, সাহাবা এবং বন্ধুদেরকে বলেন : আমি তোমাদের মাঝে দুটি অতি উত্তম ও মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি : একটি আল্লাহর কিতাব, অর্থাৎ কোরান ও অপরটি আ
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৩:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×