তিন ঘন্টা বাসের নিচে চাপা পড়ে থাকা শিশুটির নি:শ্বাস থাকা অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছাতে দৌড়ানো শুরু করে দেন চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশে কর্মরত পুলিশ সদস্য শের আলী।
শের আলী কিছু দূর যেতে না যেতেই শিশুর নাকে তাঁর নাকটি লাগিয়ে দিয়ে অনুভব করছেন নি:শ্বাস আছে কি-না। নি:শ্বাস থাকা অবস্থায় ডাক্তারের কাছে পৌঁছাতে না পারলে তার মানবতার দায়িত্ববোধটা হয়ত যথাযথ পালন হবে না। এ ধারণায় তিনি কাঁদেন আর শিশু কোলে দৌঁড়ান। শিশুটি কে! জানেন না তিনি। কী তার পরিচয়? কে তার মা-বাবা। এসবের দরকার পড়েনি শের আলীর মানবতায়। শিশুটির জীবন বাঁচাতে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন তিনি। আর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌঁড়াতে থাকেন মানবপ্রেমী এই শের আলী।
জানেন কে সেই শের আলী? তিনি হলেন চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশে কর্মরত পুলিশ সদস্য। পুলিশের নাম শুনলেই হয়তোবা কারো গা জ্বলে উঠে! চোখের সামনে ভেসে আসে অযথা নির্যাতন কিংবা দূর্নীতির ভয়াবহ চিত্র! কিন্তু সেদিন সেই পুলিশ সদস্যের এ মহানুভতা দেখে নিরবে চোখের পানি ফেলেছিলো হাজারো মানুষ। শের আলির চেষ্টায় বেঁচে গিয়েছিলো শিশু হাবিবা।
এটা ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ঘটনা ! (লিংক https://goo.gl/kYvHDf )
আচ্ছা নারী পুলিশ তাওহীদা আক্তার এর গল্প মনে আছে? দুঃসাহসীক সেই ১৫ দিনের একাকী অভিজানের কথা? কখনো ভিক্ষুক, কখনো অসহায় নারী সেজে নগরের অলিগলি, বস্তি চষে বেড়ানোর গল্প মনে আছে? এক জন নারী কন্সটেবল কি করে সেই দুঃসাহসী অভিযানে অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধার করে তা হয়তোবা ভুলে গেছি! ভুলে গেলে পড়ে নিয়েন ( https://goo.gl/U8zfgF )
সব বাদ দেই, আজকের আরেকটি দুঃসাহসীক গল্প জানেন? আজ (০৭জুলাই ২০১৭) সকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দির গৌরীপুরে অর্ধশত যাত্রী নিয়ে একটি বাস ডোবায় পড়ে যায়। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়া তখন রাস্তায় ট্রাফিক সামলাতে ব্যস্ত।
অবস্থার ভয়াবহতা ভেবে নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করেই পুলিশের এই ভারী ভারী পোশাক নিয়েই পচা ও গন্ধযুক্ত ময়লা ডোবার পানিতে লাফিয়ে পড়েন পারভেজ।
একে একে গাড়ির জানালার গ্লাস গুলো ভেঙ্গে দেন যেন সহজে গাড়ির যাত্রীরা বেরিয়ে আসতে পারে। এরপর নিজেই চলে যান গাড়ির ভেতর। ডুব দিয়ে বের করে আনেন ৭ মাসের এক শিশুকে। গাড়ির ভেতর আটকে পড়া ৫ নারীসহ ১০/১২ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেন। কি দরকার ছিলো তার এই জীবন বাজি রেখে এই দুঃসাহসীকতার! হয়তোবা তার বিবেকের তাড়নায়! পুলিশ কন্সটেবল ছোট হতে পারে! কিন্তু তার মন তো বিশাল!
সমাজে যখন প্রতিটা স্তরে অমানবিকতায় ভরপুর, যখন সমাজের পাতায় পাতায় মানুষরূপি রাক্ষসরা সাধারণ মানুষের অসাধরণভাবে রক্ত চোষায় ব্যাস্ত, তখনই এই সব মহান মানবরা চোখে আঙুল দিয়ে বার বার দেখিয়ে দেয় এখনও সততা, নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতার মৃত্যু হয় নি! আমার আপনার আশে পাশে এরকম অসংখ্য লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো কিছুকেই ঢালাও ভাবে ঘৃণা করা উচিৎ নাহ !
আমরা জানিনা কারা সেসব লোক । উনাদের স্যালুট, উনাদের মতো মানুষেরাই একদিন পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে দেবে। আমি না হয় না পারলাম, কেউ করছে এটাই সুখ। পৃথিবীটা মানুষের হোক, মানুষ হোক মানুষের জন্য। '
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৩৪