০১.
শুধু জল নয়; জলের অধিক জীবন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে রোজ ওই লাল কাকাতুয়া;
কোনোদিন কাকাতুয়া দেখি নাই; এমনকি ছবিও না। তাহলে আমার স্বপ্নও কি লাল কাকাতুয়ার জীবন বিমুখ? কেবল ক্ষেতের পাশে বসে ধানশীর্ষ গোনা, রাতে গোল হয়ে গল্প শোনা- কীভাবে উইয়ের ঢিবি থেকে জন্ম হলো সাতরঙা ধনুকের, কীভাবে সূর্যের একান্ত গুহায় ঢুকে গিয়েছিলো মুঙ্গেরবাসী এক পলাতক নীলগাই। আমি নীলগাইও দেখি নি। তবু ভাবি সে গাভীর রঙ আকাশচূর্ণের মতো নীল; এমনকি সেই গাইয়ের দুধও সাদা নয়। নীল। বেদনায় ভরপুর।
হোক না ছাই; তথাপি ঘুমের আগে কাকাতুয়ার কথাই ভাবি আর প্রতিটি স্বপ্নকে বিলীন করে দেই নীলগাইয়ের গুহায় নীরবে বাড়তে থাকা উইঢিবির নিচে যেখান থেকেই জন্ম হয় প্রকৃত রামধনুর এবং অনাদি ঘুমের।
০২.
জীবন জানি না আমার মৃত বন্ধুর লাশে লেগে থাকা শেষ বাদামী গোলাপ কিনা। রন্ধ্রে রন্ধ্রে গন্ধ। কোরকে লুকিয়ে থাকা রূপ। ফুলের রেণুতে দ্যাখো আমার বন্ধুর জীবন, ক্ষুদ্র হতে হতে ঢুকে যাচ্ছে।
কে বলে এখানে সমাপ্তি একটা জীবনের? যত যাপনমন্ত্রের। সাদা-কালো। অথবা অনেক রঙ। যে গাছের তলা দিয়ে তার জীবনের রেণু আমরা কাঁধে তুলেছি, কে বলে, সেই গাছের প্রতিটি শেকড় তাকে ধরে রাখেনি? এই যে দু’হাত পত্রালি করে, চোখ বন্ধ করে, ফিরে যেতে পারছি ওই মায়াবী বন্ধুর কাছে। হাতে ফুল - বাদামী গোলাপ; নাকে গন্ধের দামামা।
যে থাকে কাছে, সে থাকে দূরে; যে থাকে দূরে, সে-ই কি আসলে প্রকৃত নিকটে থাকে? শেকড়ের ছাল থেকে, কাঠ মালতীর ভাঙা ডাল থেকে, পাতা ছেঁড়া শেষ হলে, পাতানাভীমূল থেকে নিজেকে ছড়িয়ে নেয়। যেন জানিয়ে দিতে চায়, যে সত্য লুকানো থাকে গাছের পাতায় তাকে ধরতে হলে তোমাকেও ঘুড়ি হতে হবে। কিশোরের হাতের লাটাই বিচ্যুত ঘুড়ি। আসন্ন সন্ধ্যার প্রেক্ষাপটজুড়ে যে পাখি-প্যাপিরাস ক্রমশ উড়তে উড়তে অন্ধকার করে দিয়েছিলো চারপাশ। সেই অন্ধকার স্মৃতি এখনো প্রত্যহ রাত্রি হয়ে নামে। সূর্যকে বিষণœ করে যায়।
আমি জানি চন্দ্রের পেছনে আমার অমৃত বন্ধু নিজেকে আড়াল করে নেই। সে তো কোনো মেঘনাদ নয়। মেঘের উপরে ভেসে থাকা শেখা হয় নি বলে উড়তে পারে নি কোনদিন। তবু কেন প্রতি পূর্ণিমায় গোলাপ গাছের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে ভালোলাগে, বিদ্ধ হতে ভালো আলোশস্ত্রবাণে আর চাঁদের কটাক্ষে?