কোরআন তিলওয়াত শুনলাম এতক্ষন। শোনার সময় মনযোগ দিয়ে শুনতে হয় বলেই এখন বন্ধ করে রাখলাম। আমার ভাল লাগে মিশারীর তিলওয়াত। ওনার তিলওয়াত শুনার সময় কোরআনের অর্থ সামনে নিয়ে শুনলে আরও ভাল লাগে। কোরআনের বক্তব্য বদলে যাওয়ার সাথে সাথে মিশারীর গলার ভেরিয়েশনটা ভিতরে কিছু নাড়িয়ে দিয়ে যায়। ইন্টারেস্টিং, খুব কম মানুষই উপলব্ধি করে, কোরআনটা আসলে অনেকগুলো বক্তব্যের সংকলন, এটা লিখিত বই না। তিলওয়াতে যদি বক্তব্যের অনুভূতিগুলো চলে আসে, তাহলে ভাল লাগে খুব। !@@!101068 ব্লগের লেখাটা মনে পড়ে গেল। একটা সময় ছিল যখন তিলওয়াত ভাল্লাগতো না একদম। কারণ, যাদের তিলওয়াত শুনেছি আজীবন, ভাড়াটে ক্বারী টাইপের মানুষগুলোর সমস্ত নেশা ছিল সুর ঠিক করায়। নিজেরা বোধা হয় এক বিন্দুও বুঝে নি কি বলছে। এটা অনেকটা আবৃত্তির মত। আবৃত্তিকার যদি ব্যকরণের নিয়ম মেনে আবৃত্তি করে, তাহলে সেটা আবৃত্তি হবে বটে। হয়তো শ্রুতিমধুরও হবে, কিন্তু সেটা ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না সত্যি। আবৃত্তি কাঁপিয়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য থাকতে হয় সুন্দর গলা আর উচ্চারণের সাথে থাকতে হয় পরম উপলব্ধি আর অনুভূতির জোয়ার। তিলওয়াতের ব্যপারটাও তাই... অবশ্য কবিতার প্রতি শ্রদ্ধা না থাকলে আবৃত্তি ভাল লাগে না! কোরআনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকলে তিলওয়াত ভাল লাগার কোন কারণই নেই!
বলছিলাম 'ইন্ডিভিজুয়ালিজম' নিয়ে। রমজানেই একটা ইন্টারেস্টিং আয়াত পেয়ে গেছি এই নিয়ে। ইন্ডিভিজুয়ালিজমের মূল কথা 'আমি'। আমিই সব। আমার কি করতে ইচ্ছা করলো, তাই সবচেয়ে বড়। এক গাদা জিনিস 'ব্যক্তিগত ' ইচ্ছা অনিচ্ছার সীমানার ভিতরে ফেলে দেয়া। প্রচুর মুসলিম কিন্তু ইন্ডিভিজুয়ালিজমের এই ফাঁদে পড়ে, কারণ সমাজটাই সেরকম। কোন সামষ্টিক দায়বদ্ধতা নেই। অথচ... আল্লাহর জিজ্ঞাসা... 'তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখেছো যে তার প্রবৃত্তিকে তার ইলাহ (প্রভু) বানিয়ে নিয়েছে?' (২৫:৪৫)
মজার ব্যপার, আমরা সবাই তোতাপাখির মত বলি ঠিক, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ', আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অথচ, প্রতি দিন কয়েক বারই হয়তো, নিজের প্রবৃত্তিকে 'ইলাহ' বানিয়ে বসছি। যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা এক রকম, তার অন্যথা করছি, কেবল নিজের 'ইচ্ছা' অন্যরকম তাই। এটা কিন্তু এক ধরণের 'শিরক' অর্থ্যাৎ অংশীদারিত্ব! ইলাহে অংশীদারিত্ব। আমাদের ধারণাটা এমন হয়ে গেছে, অজ্ঞানতা জন্য কেবল পাথরের মূর্তি সামনে নিয়ে পূজা করাকে শিরক ভাবি। অথচ আল্লাহ নিজেই বলেছেন, প্রবৃত্তি সব নির্দেশ মানাই হচ্ছে তাকে ইলাহ বানিয়ে নেয়া... এ শিরক!
এই ধরণের অংশীদারিত্বের অপরাধ থেকে পুরোপুরি যেন মুক্তি পেতে পারি তাও চেয়েছি রমজানে খুব করে।
ইসলামে কার কতটুকু অধিকার, কার কতটুকু প্রাপ্য, এই নিয়ে খুব পরিষ্কার সীমারেখা টেনে দেয়া। আল্লাহর অধিকার একচ্ছত্র আনুগত্য পাওয়া। বাবা মায়ের অধিকার সন্তানের বিরক্তিসূচক 'উহ' শব্দটাও করবে না। সন্তানের অধিকার বাবা মা দেখা শোনা করবে। আসলে পশ্চিমেও 'নাগরিক দায়িত্ব' খুব করে শিখানোর চেষ্টা থাকে। স্কুলে এসাইনমেন্ট সময় মত জমা দেয়া থেকে সব কিছুতেই বলা হতো, 'বি রেসপনসিবল!' এমনকি পিডিহেইচপিই তে ক্লাস নাইন থেকে শিখানো হয়, 'রিলেশনশিপে রেসপনসিবিলিটি'। আচ্ছা, এখানে কি কনফ্লিক্টিং একটা আইডিয়া কাজ করে না? এমনি ইচ্ছা হলেই খাও, দাও, ফুর্তি করো, মাতাল হও... কিন্তু তারপর আবার 'রেসপনসিবিলিটি'... রেসপনসিবিলিটি টু হু? হোয়াই?
আমি মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে ভাবি, বস্তুবাদী সমাজ আসলে চাচ্ছেটা কি... মানুষই বি অল আর এন্ড অল... কোন নরম্যাটিভ স্ট্যান্ডার্ড নেই... তারপরে আবার 'রেসপনসিবিলিটি' শিখানো? কিন্তু এই 'রেসপনসিবিলিটির' সীমারেখা কে নিধার্রন করে? সমাজ? সময়?
এটা কি সাবস্টেনশিয়াল? সবার জন্য উপযোগী ব্যবস্থা? নাকি বেশির ভাগের জন্যই অনুপযোগী?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৬ বিকাল ৫:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



