somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হরতালে ব্যাপক সংঘর্ষ ভাংচুর অগি্নসংযোগ

২১ শে এপ্রিল, ২০০৬ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কানসাটে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ও দ্রব্যমূল্যের ঊধর্্বগতির প্রতিবাদ এবং সংস্কার প্রসত্দাব বাসত্দবায়ন, জোট সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। আওয়ামী লীগ, 11 দল, জাসদ ও ন্যাপ (মো) এই হরতালের ডাক দেয়। হরতাল চলাকালে রাজধানী ঢাকায় পুলিশ বিরোধী দলের মিছিলে বেপরোয়া লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের সেল নিৰেপ করে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, জিরো পয়েন্ট, গুলশান, মহাখালী ওয়্যারলেস গেট ও রাসেল স্কয়ারে পুলিশের সাথে হরতাল সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের জবাবে পুলিশকে লৰ্য করে হরতালকারীরা ইট-পাটকেল বর্ষণ করে। গতকালের হরতাল কর্মসূচি চলাকালে মহিলাসহ শতাধিক আহত হয়। পিকেটারদের ইটের আঘাতে তিনজন পুলিশও জখম হয়। যুব মহিলা লীগের নেতা-কমর্ীসহ আটক করা হয়েছে 15 জনকে। এর মধ্যে শামিমা, নিলুফা ও লাভলী সুলতানাকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ কোর্টে পাঠিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও জিরো পয়েন্টে সংঘর্ষ
গতকাল সকাল সাড়ে 10টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রমনা ভবন ও সালিমাবাদ ভবনের মাঝখানের কাঁটাতারের ব্যারিকেড আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কমর্ীরা ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে। ঐ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে শুরম্ন হয় ইট-পাটকেল নিৰেপ। উভয় পৰের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পুলিশ ও আর্মড ব্যাটালিয়ন সদস্যরা তীব্র ইট-পাটকেলের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পুলিশ ও আর্মড ব্যাটালিয়ন সদস্যরা রমনা ভবন, সালিমাবাদ ভবন ও পীর ইয়ামেনী মার্কেটের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ শক্তি বৃদ্ধি করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়তে ছুঁড়তে নেতা-কমর্ীদের ধাওয়া করে। পুলিশ ব্যারিকেডের নিকট পর্যনত্দ গেলে ইট-পাটকেলের মুখে সামনে আর এগিয়ে যেতে পারেনি। 15 মিনিট সেখানে সংঘর্ষ স্থায়ী হয়। এতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ও রাবার বুলেটে 20 জন নেতা-কমর্ী আহত হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। পরিস্থিতি শানত্দ হলে আসাদুজ্জামান নূর এমপি ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম এমপির নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলটি পীর ইয়ামেনী মার্কেটের সামনে দিয়ে জিরো পয়েন্টে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের তর্কবিতর্ক হয়। নেতাদের তীব্র আপত্তির মুখে পুলিশ বাধা তুলে নেয়। পুনরায় মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দৰিণ গেট, মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের সামনে দিয়ে গুলিসত্দান বঙ্গবন্ধু স্কোয়ার, গোলাপশাহ মাজার হয়ে পুনরায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের পশ্চিমপাশে পুলিশ ব্যারিকেডের বাইরে এসে শেষ হয়। এই স্থানে সমাবেশে আসাদুজ্জামান নূর এমপি, মির্জা আজম এমপি, ডাঃ মোসত্দফাজালাল মহিউদ্দিন, যুবলীগ (দৰিণ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মজিবুর রহমান চৌধুরী, শোয়েব হোসেন ফারম্নক প্রমুখ নেতা বক্তব্য রাখেন। এরপর তোফায়েল আহমেদ ও ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সেখান থেকে মিছিল বের হয়। মিছিলটি জিরো পয়েন্টে গেলে পুলিশ দুইদিক দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। 6 জন নেতাকমর্ীকে পুলিশ বুট দিয়ে লাথি ও প্রহার করতে করতে প্রিজন ভ্যানে তুলে নেয়। পুলিশের লাঠির আঘাতে ভোরের কাগজের ফটো সাংবাদিক রাজার ক্যামেরা ভেঙ্গে যায়। পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিকদের বাদানুবাদ শুরম্ন হয়। ঐ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশের কোন কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। একজন অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার দাঙ্গা পুলিশদের এ্যাকশনের নির্দেশ দিয়ে এলাকা ত্যাগ করে চলে যান। যুবলীগ কমর্ী জাহিদুল ইসলাম হারিসকে পুলিশ লাঠিপেটা করতে করতে রাসত্দায় ফেলে বুট দিয়ে আঘাত করে। এরপর তার হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে টানাহঁ্যাচড়া করে অনেক দূর প্রিজন ভ্যানে তোলার জন্য নিয়ে যায়। এই দৃশ্য দেখে নেতারা মারমুখি হয়ে ওঠেন। আসাদুজ্জামান নূর এমপি ও মির্জা আজম এমপি প্রিজন ভ্যান আটক রাখেন। কমর্ীরা চারদিক দিয়ে প্রিজন ভ্যান ঘিরে ফেলেন। মহিলা লীগের দফতর সম্পাদক সুরাইয়া চৌধুরীকে পুলিশ কাপড় ধরে টানাহঁ্যাচড়া করে রাসত্দায় ফেলে নির্দয়ভাবে লাঠিপেটা করে। তিনি সেখানে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তোফায়েল আহমেদের তীব্র প্রতিবাদে হ্যান্ডকাপ পরা কমর্ী হারিস ও মহিলা নেত্রী সুরাইয়াকে এবং পরে প্রিজন ভ্যানে আটক নেতাকমর্ীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। জিরো পয়েন্ট এলাকায় 10 জন নেতাকমর্ী আহত হয়।
সকাল সাড়ে 6টায় মতিয়া চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, ওবায়দুল কাদের, বাহাউদ্দিন নাসিম, সেগুফতা ইয়াছমিন এমিলি ও মেহের আফরোজ চুমকির নেতৃত্বে তোপখানা রোড থেকে মিছিল বের হয়। মিছিলটিকে তিন দফা পুলিশ বাধা দেয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে মিছিল শেষ হয়।
লালবাগে ডাঃ মোসত্দফা জালাল মহিউদ্দিন ও আবুল হাসনাতের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মিছিল বের হয়। ডেমরায় হাবিবুর রহমান মোলস্না ও শ্যামপুরে কাজী মাঈনুদ্দিন মনির ও এডভোকেট সানজিদা খানমের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। কোতয়ালী ও সুত্রাপুর থানা এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকমর্ীরা মিছিল বের করে। পলস্নবীতে একটি বাসে ও রামপুরায় একটি মিনিবাসে (ঢাকা মেট্রো-জ-11-1793) অগি্নসংযোগ করা হয়।
রাসেল স্কয়ারে মিছিলের পর মিছিল
আক্রমণাত্মক মেজাজ নয়, বরং সমাবেশ-বিৰোভের মাধ্যমেই ধানমন্ডিতে রাজপথ দখল করে রাখে হরতাল সমর্থকরা। ধানমন্ডিার 27 নম্বর রোডে সকাল সাড়ে 10টায় যুব মহিলা লীগের একটি মিছিলকে প্রতিহত করতে গিয়ে পুলিশ 5 জনকে আটক করে। এ সময় পুরম্নষ পুলিশরা যুব মহিলা লীগের কমর্ীদের আটক করতে গিয়ে পাঁজাকোলো করে তাদেরকে গাড়িতে তুলে নেয়। পরে অবশ্য আটককৃতদের মধ্য থেকে দু'জনকে ছেড়েও দেয়া হয়।
সকাল পৌনে দশটায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম এমপি'র ধানমন্ডিস্থ বাসা থেকে শুরম্ন হয় মিছিল। মিছিলটি 27 নম্বর সড়ক হয়ে কলাবাগান ঘুরে রাসেল স্কয়ারে এসে অবস্থান নেয়। এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক এমপি'র নেতৃত্বাধীন একটি মিছিল উপস্থিত হয় সেখানে। আসে যুব মহিলা লীগের মিছিলও। রাসেল স্কয়ারে দীর্ঘ তিন ঘন্টার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ নাসিম এমপি। সভা পরিচালনা করেন মোরশেদ কামাল। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অবঃ) ফারম্নক খান এমপি, ডঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি, শাহজাহান খান এমপি, মাহবুবুর রহমান এমপি, তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি, রেজাউল করিম হিরা এমপি, একাব্বর হোসেন খান এমপি, মেজর (অবঃ) সুবিদ আলী ভুঁইয়া, এস এম কামাল হোসেন, ড. হাসান মাহমুদ, সুজিত রায় নন্দী, খালেদা খানম, রানা হামিদ, ফজিলাতুনিসা ইন্দিরা, এনামুল হক শামীম, অপু উকিল, অজয় কর খোকন, মঞ্জুর শাহীন, আখতার হোসেন, আব্দুল লতিফ তারিক, লিয়াকত সিকদার, ফারম্নক হোসেন, কাজী মোসত্দাক তমেল, মাহফুজুল হায়দার রোটন, মেহেদী হাসান, আসাদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান মিজান প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে মিছিল 27 নম্বরে এসে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ছাত্রলীগের মিছিল থেকে হঠাৎ পুলিশের ওপর একটি ইট নিৰেপ করা হলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মহাখালী-গুলশান রণৰেত্র
হরতাল সমর্থক আর পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সকাল থেকেই মহাখালী-গুলশান প্রধান সড়ক ছিল উত্তপ্ত। 14 দলের নেতা-কমর্ীদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠি চার্জ ও টিয়ার সেল নিৰেপের ঘটনায় পুরো এলাকা রণৰেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের অনত্দত তিন দফা হামলায় আহত হয়েছেন এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, বাংলাদেশ আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদের সভাপতি জগলুল কবিরসহ অনত্দত 50 জন। প্রতিবাদে হরতাল সমর্থকরা পুলিশের রিকুইজিশন করা একটি গাড়ি ভাংচুর করে।
সকাল সাড়ে 7টায় গুলশান থেকে রহমত আলীর নেতৃত্বের একটি মিছিল ব্র্যাক সেন্টার পেরম্ননোর পর পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের মাইনুদ্দিন খান বাদল, সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ, একেএম রহমতুলস্নাহ, ফজলুল হক আতিক, মাইনুল হোসেন খান নিখিল প্রমুখের নেতৃত্বাধীন মিছিল গুলশান এক নম্বর থেকে মহাখালীর দিকে এগুতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা পেরিয়ে মিছিলটি ওয়ারলেসের গেটে সরকারি তিতুমির কলেজের সামনে এলে পুলিশ পেছন থেকে বেপরোয়া আক্রমণ চালায়। মিছিলকারীদের লৰ্য করে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিৰেপ করে। এখানে আহত হয় অনত্দত 30 জন। তাছাড়া ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ 8 জনকে আটক করে নিয়ে যায়। ঘটনার তাৎৰণিক প্রতিবাদ জানিয়ে সভা করতে গেলে পুলিশ সেখানে কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি। উত্তেজিত হরতাল সমর্থকরা কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার হাবিবুর রহমান হবির নেতৃত্বাধীন একটি বিশাল মিছিল মহাখালী বন ভবনের সামনে এলে রণমূর্তি ধারণ করে পুলিশ। মিছিলের ওপর পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে তারা। এ হামলায় সাহারা খাতুনসহ কয়েকজন আহত হয়। এর মধ্যে জগলুল হাবিব গুরম্নতর আহত হয়। তাকে গুলশানের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবর রহমান ও সহ-প্রচার সম্পাদক আব্দুলস্নাহ হেল খসরম্নসহ বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
হরতালের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছিল কার্যতঃ অচল। কোন ক্লাস ও পরীৰা অনুষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, প্রশাসনিক ভবন, অফিসসমূহ খোলা থাকলেও শিৰক-শিৰাথর্ীদের উপস্থিতি ছিল কম। ছাত্রলীগ সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। পরে হরতালের সমর্থনে বিৰোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সমাবেশে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার রোটন বক্তব্য রাখেন।
মহানগর (দৰিণ) ছাত্রলীগ জিরো পয়েন্ট এলাকায় মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেৰা করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় হৃদয় নামের এক ছাত্রলীগ কমর্ী আহত হয়। ছাত্রলীগ নেতা গোলাম সারোয়ার কবীর মিছিলে নেতৃত্ব দেন। ছাত্রলীগ নেতা ইউসুফ দেওয়ান সজীবের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা-কমর্ীরা হরতালের সমর্থনে পিকেটিং, মিছিল ও সমাবেশ করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দুপুরে হরতালের সমর্থনে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে।
অন্যান্য স্থানে
চট্টগ্রাম ।। চট্টগ্রামে ঢিলেঢালা হরতাল কর্মসূচি পালিত হয়। নগরীর জামালখানসহ 3টি এলাকায় কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর ছাড়া শানত্দিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়। হরতাল চলাকালে নগরীর বিভিন্ন রম্নটে শহর এলাকার বাস টেম্পো, বেবী ট্যাক্সিসহ যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। তবে দূর পালস্নার কোন যানবাহন চলাচল করেনি। হরতাল চলাকালে মার্কেট ও বিপণী বিতানসমূহ এবং শিৰা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বন্দরের ভিতরের কাজ-কর্ম স্বাভাবিক চললেও কোন মালামাল বন্দরের বাইরে যায়নি। বিমান ও রেল চলাচল স্বাভাবিক ছিল। 14 দলের বাইরে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ নগরীতে হরতাল সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশ করে।
খুলনা ।। খুলনায় শানত্দিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। ভোরে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে পিকেটাররা একটি বাস ভাংচুর করে। 14 দল নগরীতে মিছিল বের করে। পরে আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন গণফোরাম নেতা হায়দার গাজী সালাউদ্দিন রম্ননু। বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোসত্দফা রশিদী সুজা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান, হাফিজুর রহমান ভুঁইয়া, আজিজুর রহমান, রফিকুল হক খোকন, গাজী আবদুল হাদী প্রমুখ।
রাজশাহী ।। নগরীতে শানত্দিপূর্ণভাবে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় ট্রাক ভাংচুরের চেষ্টার সময় তার ছবি তুলতে গেলে পিকেটাররা দৈনিক ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক নজরম্নল ইসলাম জুলুকে মারতে আসে। এসময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হরতালের সমর্থনে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগসহ 14 দল নেতৃবৃন্দ দফায় দফায় বিৰোভ মিছিল বের করে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সদস্য ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এ.এইচ.এম. খায়রম্নজ্জামান লিটন, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রিয় পলিটব্যুরো সদস্য ফজলে হোসেন বাদসা, জাসদ'র মহানগর সাধারণ সম্পাদক আব্দুলস্নাহ আল মাসুদ শিবলী, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোসত্দাক আহমেদ লাবু, মহানগর ওয়াকর্ার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী প্রমুখ।
বরিশাল ।। সকালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সোহেল চত্বরে জড়ো হলে 20/25টি মোটর সাইকেল নিয়ে বিএনপি ক্যাডাররা তাদের উপর হামলা চালায়। এতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের 8/10 নেতা-কর্মী আহত হয়। কৃষক লীগ নেতা এনায়েত হোসেনকে শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগ স্থান পরিবর্তন করে বাংলাবাজার থেকে বিৰোভ মিছিল বের করতে গেলে সেখানেও বিএনপি ক্যাডাররা তাদের ধাওয়া করে। পরে তারা মেডিক্যালের সামনে থেকে বিৰোভ মিছিল বের করে।
সিলেট ।। এই নগরীতে বিৰিপ্তভাবে কিছু কিছু রিকশা চলাচল করলেও দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গাড়ী চলাচল বন্ধ ছিল। দূরপালস্না সড়কপথে কোন যানবাহন চলাচল করেনি। তবে রেল চলাচল ছিল স্বাভাবিক। বিকালে কোর্ট পয়েন্টে 14 দলের জনসভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.ন.ম শফিকুল হক, সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীম, মহানগর সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আব্দুল খালিক মায়ন, এডভোকেট আব্দুল মালেক, শফিকুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সিকান্দর আলী, আবুল হোসেন, গণতন্ত্রী পার্টির আরিফ মিয়া, সাম্যবাদী দলের ধীরেন সিং প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জ ।। দীর্ঘদিন পর হরতালকালে দলীয় নেতা-কমর্ীদের দখলে ছিল রাজপথ। 2নং রেল গেইট এলাকায় মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। কালীর বাজারের নিকট মিছিলকারীরা একটি মিনিবাস ভাংচুর করে। নিতাইগঞ্জ এলাকার নিকট একটি ট্রাক ভাংচুর করা হয়। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নিকট একটি টেক্সি ক্যাব ভাংচুরকালে এর ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আহত হয়।
ময়মনসিংহ ।। গাঙ্গিনার পাড় ট্র্রাফিক মোড়ে ফিরোজ জাহাঙ্গীর সড়কে পুলিশ মিছিলে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশী হামলায় জেলা যুবলীগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম সরোয়ারসহ 14 দল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কমর্ীসহ কমপৰে 10 জন আহত হয়। এছাড়া পিকেটাররা শহরের কেওয়াটখালি, নতুনবাজার ও আকুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ কটি টেম্পু ও রিকশা ভাংচুর করে। এক টেম্পোচালক আহত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, ঠাকুরগাঁও, রাজবাড়ী, নরসিংদী, জয়পুরহাট, নেত্রকোনা, চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোমসত্দাপুর, ভোলাহাট, নাচোল, মাদারীপুর, জামালপুর, হবিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুরে শানত্দিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে যানবাহন চলাচল ছিল কম। শিৰা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ঝালকাঠি ও খাগড়াছড়িতে আংশিক হরতাল পালিত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও কানসাটে হরতাল হয়নি।
পুলিশের বক্তব্য
আওয়ামী লীগসহ 14 দল আহূত দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতীত আইন-শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। হরতাল সমর্থকরা দু'একটি জায়গায় পিকেটিং ও যানবাহন চলাচলে বাধার চেষ্টা চালালেও ভোর হতে প্রতিদিনের ন্যায় বিপুল পরিমাণ রিকশা-ভ্যান-মিনিবাস-বাস চলাচল করে। সকালে হরতাল সমর্থকরা পলস্নবীর হোটেল বৈকালীর সামনে একটি মিনিবাসে আগুন লাগিয়ে দিলে বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। অন্যদিকে পিকেটাররা মিরপুর 10নং গোলচত্বর হতে মিছিল বের করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ 5 জনকে আটক করে। সাড়ে 10টায় হরতাল সমর্থকরা রাসেল স্কোয়ার হতে মিছিল বের করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করাসহ 4/5 জনকে আটক করে। বেলা সাড়ে 11টায় পিকেটাররা নূর হোসেন চত্বর হতে মিছিল বের করে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ঘটনাস্থল হতে 4/5 জনকে আটক করে। হরতাল চলাকালে ঢাকা মহানগরীতে পুলিশ মহিলাসহ 11 জনকে আটক করে। এদিকে পিকেটাররা ইট-পাটকেল নিৰেপ করে সিএমপির কোতোয়ালী থানাধীন ফজল মার্কেটের সামনে অবস্থানরত 2টি সিএনজি টেক্সির গস্নাসের ৰতি সাধন করে।
এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকা বা অন্য কোন বিভাগীয় ও জেলা শহর হতে আইন-শৃঙ্খলাজনিত তেমন কোন ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। প্রতিটি স্থানে স্থানীয়ভাবে রিকশা, বেবী, টেম্পু, মিনিবাস, বাস চলাচল করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×