সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে (ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে) যুক্ত হয়েছে। খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন হবে। ব্রডব্যান্ড নীতিমালায় কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলে এর সুফল পাওয়া যাবে। দেশের তরম্নণ সমাজ এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটাতে পারবে। আউট সোর্সিং-এর জন্য বর্তমানে যে 20/25টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তার সংখ্যা রাতারাতি হাজারে উন্নীত হবে। এ খাতে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দেশী-বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করবে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ এবং আউট সোর্সিং পার্টনার খুঁজে বের করার আশায় দেশে প্রতিবছর বেসিস সফটওয়্যার মেলার আয়োজন করে। এবারে মেলায় এসেছিলেন যুক্তরাজ্যের আউট সোর্সিং গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মিঃ রিচার্ড সাইকেস। তিনি এ খাতের উদ্যোক্তাদের সাথে আলাপকালে বলেছেন, সাবমেরিন কেবল সংযোগের পর এ খাতে অতিদ্রম্নত তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে এবং ব্যয়ও কমে যাবে। বাংলাদেশ চাইলে আগামীদিনে তৈরি পোশাকের ন্যায় আউট সোর্সিং খাতেও দাঁড়িয়ে যেতে পারবে। মেলায় ডেনিস প্রতিনিধিরাও আউট সোর্সিং খাতে পার্টনার খোঁজার জন্য মেলায় এসেছিলেন।
বর্তমানে শহরের সাথে গ্রামের তরম্নণদের ডিজিটাল ডিভাইসের বৈষম্য বেড়ে গেছে। সাবমেরিন কেবল চালুর সাথে সাথে সরকার যদি এর সঠিক ব্যবহার এবং অব্যবহৃত শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য শহর থেকে শুরম্ন করে গ্রাম-গঞ্জের সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যনত্দ ইন্টারনেট সেবা বিনামূল্যে প্রদান করে তাহলে এর দীর্ঘ সুফল দেশবাসী পাবে। দেশের গ্রাম-গঞ্জের অনগ্রসর লাখ লাখ তরম্নণ-তরম্নণী ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশকে উন্নতির সিঁড়িতে দাঁড় করাতে পারবে। তবে এর আগে ঐ সকল প্রতিষ্ঠানে বিদু্যৎ অথবা সৌর বিদু্যৎ এবং কম্পিউটার পেঁৗছে দিতে হবে। এর জন্য সরকারকে নতুন করে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে না। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার জন্য বার্ষিক বরাদ্দ থেকেই তা করা সম্ভব। নচেৎ শহরের সাথে গ্রাম-গঞ্জের তরম্নণ-তরম্নণীদের শিৰার মানের ব্যবধান বেড়ে যাবে। মহানগরীর স্কুলের ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটার ব্যবহার করলেও গ্রাম-গঞ্জের অনেক শিৰিত ছেলে-মেয়ে এখনো কম্পিউটার চোখে দেখেনি, ব্যবহার তো দূরের কথা।
ইন্টারনেট সার্ভিস সংযোগকারীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সাবমেরিন কেবল চালু হলে আমাদের দেশের ধীরগতির এবং ব্যয়বহুল ভিস্যাট (স্যাটেলাইট) যোগাযোগের অবসান হবে এবং ইন্টারনেট জগতে বৈপস্নবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মেধাসম্পন্ন তরম্নণ-তরম্নণীদের বিশ্বমানে গড়ে তোলার সুযোগ এনে দেবে। কিন্তু সাবমেরিন কেবলের খবরদারির দায়িত্ব টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ডকে দেয়ায় এই প্রকল্প শুরম্নতেই দুনর্ীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। ভিওআইপি উন্মুক্তকরণের জন্য দুই দুইবার কেবিনেট সিদ্ধানত্দ নিলেও বোর্ড থেকে অদ্যাবধি কোন লাইসেন্স দেয়া হয়নি। অথচ অবৈধভাবে দেশে অসাধু চক্র অবলীলায় এই সার্ভিস দিয়ে দেশের শত শত কোটি টাকার রাজস্ব লুটপাট করছে। এ খাতের সাথে জড়িতরা বলেন, এ মুহূর্তে প্রায় 12/13শ' কল সেন্টারের প্রসত্দাব রয়েছে। কিন্তু লাইসেন্সের জন্য বৈধভাবে কল সেন্টার চালু করা যাচ্ছে না। ভিওআইপি উন্মুক্ত করা না হলে দেশের আইসিটি সেক্টরের উন্নয়ন আশা করা যায় না। আউট সোর্সিং খাতে দেশের শিৰিত তরম্নণ-তরম্নণীদের কাজে না লাগিয়ে দেশের জন্য অধিক বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের কথা চিনত্দাও করা যায় না।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আখতারম্নজ্জামান মঞ্জুর সাথে গত বুধবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভিওআইপি উন্মুক্ত করা হলে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় তার টেবিলে বসে দেশের সকল জেলার ডিসি, এসপিদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবেন। এজন্য তাদের ঢাকায় ডেকে আনতে হবে না। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে জনগণ ঘরে বসেই তার পৌরসভার ট্যাক্স, বিদু্যৎ বিল, ওয়াসার বিল, আয়করসহ নানা বিষয়ে জানতে পারবেন। গ্রাম-গঞ্জে এবং শহরে এ কাজের সাথে জড়িত যুবক-যুবতীদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে সরকারের একটি মহল যারা এর ব্যবহার জানে না, কিন্তু সিদ্ধানত্দ দেয়ার জায়গায় বসে আছেন, যারা কূটকৌশলে দুনর্ীতিকে লালন-পালন করতে চান, তারা তথ্য ও প্রযুক্তির অগ্রগতিকে পদে পদে বাধাগ্রসত্দ করছেন। তারাই দেশকে এবং দেশের তরম্নণ সমাজকে অন্ধকারে রাখতে চাইছেন। তাই আমরা সাবমেরিন কেবলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার, সংশিস্নষ্ট ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করার প্রসত্দাব দিয়েছি। যার ফলে এর সুষ্ঠু ব্যবহার ও দুনর্ীতি রোধ করা যাবে এবং ইন্টারনেট একটি শিল্প হিসেবে টিকে থাকতে পারবে। এই বোর্ড ব্রান্ডউইথের মূল্য নির্ধারণ ও বিতরণের নীতিমালা নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, এসব দাবিতে আমরা আগামীতে আন্দোলনে যাব। এ আন্দোলন সরকারের বিরম্নদ্ধে নয়, একটি নীতি নির্ধারণের দাবিতে এ আন্দোলন। এ আন্দোলনে দেশের রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ এবং শিৰিত তরম্নণ সমাজের সমর্থন চাইব। যাতে আমরা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর দুনর্ীতিমুক্ত প্রতিযোগিতাময় বাংলাদেশ রেখে যেতে পারি। তারা যাতে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সাথে আউটসোর্সিং ভিডিও কনফারেন্সিং, ডেটা হোস্টিং, টেলি মেডিসিন, টেলিফোন সার্ভিস, ডিসট্যান্স লার্নিংসহ বিভিন্ন খাতে নিজেদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে নিতে পারে।
উলেস্নখ্য, 1992 সালে বাংলাদেশের কাছ দিয়ে 'ফাইবার অপটিক লিংক এ্যারাউন্ড দ্যা গেস্নাব' সংৰেপে ফ্লাগ গেলেও আমাদের দেশের গোপন তথ্য পাচার হয়ে যাবে-আমলাদের এই মনগড়া অজুহাতে বিনামূল্যে পাওয়ার সুযোগ পেয়েও আমরা যুক্ত হইনি। জাপান থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন পর্যনত্দ প্রায় 15 হাজার মাইল দীর্ঘ এই টেলিযোগাযোগ লাইন থেকে আমরা বঞ্চিত হই। এরপর আসে সি-মি-উই-3 (তিন) নামের সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ। আমাদের দেশের সিদ্ধানত্দ গ্রহণকারীদের অদূরদর্শিতার কারণে তাতেও আমরা যুক্ত হতে পারিনি। এখন প্রায় 7শ' কোটি টাকা ব্যয়ে যুক্ত হওয়ার সম্ভব হয়েছে সি-মি-ইউ-4(চার)-এর সঙ্গে। দীর্ঘ 20 হাজার কিলোমিটার এই সাবমেরিন কেবলে ব্যয় হবে প্রায় 50 কোটি মার্কিন ডলার। সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট ওয়েস্ট এবং ইউরোপ-4-এর সংৰেপ হলো সি-মি-ইউ-4। এটি 16টি আনত্দর্জাতিক টেলিযোগাযোগ কোম্পানীর একটি কনসোর্টিয়াম। নতুন অপটিক্যাল ফাইবার সাবমেরিন কেবল সিস্টেম নির্মাণ এবং রৰণাবেৰণের জন্য 2004 সালের 27 মার্চ এর চুক্তি স্বাৰরিত হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লিংক তৈরির মাধ্যমে এর সাথে যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই 13টি দেশের 15টি ল্যান্ডিং স্টেশনে ল্যান্ডিং অধিকার পাবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




