somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিসিএস পরীক্ষা দিবেন-একটি গবেষণাধর্মী মন লালন করুন

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হয়ে আপনি আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। লক্ষ্য রাখুন, আপনি যে বিষয়ে ভর্তি হয়েছেন সে বিষয়ে আপনাকে সর্ব্বোচ্চ শিক্ষা নিতে হবে। আগে শত লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকলেও উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হয়ে আপনার পূর্বতন লক্ষ্য বাস্তবের নিরিখে বদলে যেতে পারে।

বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশগুলোতে মনোযোগ দিন। একজন শিক্ষক ক্লাশে যে বিষয়ের উপর পড়াচ্ছেন তার মূল পয়েন্টগুলো টুকে নিন। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা নোটখাতা সাথে রাখুন। ক্লাশ শেষে পড়ার টেবিলে উক্ত আলোচনাটুকুর ফাইনাল নোট করে ফেলুন। নোট করার সময় প্রয়োজনে কয়েকটি বইয়ের সাহায্য নিন। খুব ভালো হয় লাইব্রেরীতে একগাদা বই নিয়ে নোট করতে বসলে।

সিনিয়র ভাইদের নোটের পিছনে দৌড়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। আপনি নিজ হাতে যে নোট তৈরি করলেন এর চেয়ে উন্নতমানের নোট আপনি পাবেন না। মাঝে মাঝে নোটগুলোতে একটু চোখ বুলাবেন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো রঙিন করে দাগিয়ে রাখবেন। শিক্ষকরা যেভাবে পড়ান ঠিক সেভাবেই পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই। প্রতি সেমিস্টারের পড়া প্রতি সেমিস্টারে আপনি ভালোভাবে উৎরাতে পারবেন।

এই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে আপনি নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার লক্ষ্য থাকবে তথ্য ধারণ করা। আপনার চাকুরির বাজারটাও আপনি যাচাই করবেন। আপনি যে বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিবেন সে বিষয়ের বর্তমান চাকুরি ক্ষেত্র কোনগুলো। ধরুন আপনার বিষয় বাংলা বা দর্শন। বাংলা বা দর্শন বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে দেখবেন শিক্ষকতা ব্যতীত কোনো চাকুরি বাজারে নেই। অবশ্য আজকাল উল্লিখিত বিষয়ে পড়াশুনা শেষে ব্যাংকেও চাকুরি হতে পারে।

যেহেতু চাকরির বাজারের ভয়াবহ অবস্থা আগে থেকেই আপনার জানা, তাই নিজেকে চাকুরির বাজারে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকুন। আপনার সুবিধামতো জ্ঞানের চর্চা করতে থাকুন। ছাত্রাবস্থায় অনেকের জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে। কেউবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একেবারে পড়ুয়া হয়ে যায়। কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতার মজা লুটতে গিয়ে পড়াশুনার সাথে সংশ্রবই রাখে না। আরেকদল আছে যারা কৌশলে পড়াশুনাও চালিয়ে ভালো ফল করে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ভালো কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকে। আপনি যদি সর্বশেষ শ্রেণীতে থাকেন তাহলে ধরে নিন যে আপনার একটি অনুসন্ধিৎসু এবং গবেষণাধর্মী মন আছে।

এতে করে আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতা ভালো হয়েছে। আপনি পরীক্ষার খাতায় যা বিশ্লেষণ করছেন তা শুধু আপনার মুখস্তবিদ্যা নহে। এই চর্চাটা আপনার ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়টা এখন মনে হয় প্রতি বিষয়ের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। পাঠ্য বইয়ের বাইরেও আপনি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

বিসিএস লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার কিছু টিপসঃ প্রায় দেড় লক্ষ পরিক্ষার্থী থেকে মাত্র ১০/১২ হাজার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তাই লিখিত পরীক্ষায় মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। আপনি স্টুডেন্ট লাইফে যদি আপনার বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি দেশ, অর্থনীতি, সমাজ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন আপনি বিসিএস চাকুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে তথ্য প্রাপ্তি খুবই সহজলভ্য হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত বই সংগ্রহ করে নিতে পারেন। বাংলাদেশের সংবিধান একখণ্ড হাতের কাছে রাখবেন। বিভিন্ন তথ্য নিয়ে চার্ট প্রস্তুত অব্যাহত রাখবেন। এগুলো ওয়েবসাইটেই পাওয়া যায়। আপনি প্রিন্ট করে তথ্যগুলো সংগ্রহ করুন।

বর্তমান লিখিত পরীক্ষায় বাংলা ১ম পত্র-২য় পত্র, ইংরেজি ১ম পত্র-২য় পত্র, গণিত ও মনস্তাত্ত্বিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি-১ম পত্র ও ২য় পত্র, আন্তর্জাতিক ১ম ও ২য় পত্র---সর্বমোট ৯ বিষয়ে ৯০০ নাম্বারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যারা সাধারণ ক্যাডারের বাইরে প্রফেশনাল ক্যাডার ও চয়েস দিবেন তারা অতিরিক্ত ২ বিষয়ে ২০০ নাম্বারের পরীক্ষা দিবেন।

লিখিত পরীক্ষায় টিকলে মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ আসে। মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নাম্বার অনেক বেশি। এখানে দুর্নীতি করার সুযোগ আছে। ধরা যাক একজন পরিক্ষার্থী ৫৫০ পেয়েছে লিখিত পরীক্ষায়। আরেকজন পেয়েছে ৬৩০ নাম্বার। লিখিত পরীক্ষায় তাদের নাম্বারের পার্থক্য হচ্ছে ৮০। মৌখিক পরীক্ষায় সর্বনিম্ন প্রাপ্ত পরিক্ষার্থীকে যদি ১৭০ নাম্বার দেওয়া হয় আর সর্বোচ্চ প্রাপ্ত পরিক্ষার্থীকে যদি ৯০ দেওয়া হয় তাহলে সবচেয়ে কম পেয়ে লিখিত পাশ করা ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি পেয়ে পাশ করা ব্যক্তির চেয়ে বেশি পেয়ে যাবে।

এক্ষেত্রে দুর্নীতির কিছু সুযোগ থাকলেও ভড়কে যাবেন না। আপনি মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন। লিখিত পরীক্ষার আগে আপনি অনেক পড়াশুনা করেছেন। মৌখিক পরীক্ষার আগে সেগুলো একটু রিভাইজ দিন। ইতিহাস ভিত্তিক গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এগুলো পড়ুন। এমনও হতে পারে আপনার পড়া কোনো উপন্যাস থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতে পারেন। যেমন- সুনীল গাঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব-পশ্চিম, দূরবীন এ উপন্যাসগুলো ইতিহাসভিত্তিক। বাংলাদেশেও ইতিহাসভিত্তিক অনেক উপন্যাস-প্রবন্ধ আছে। এগুলো পড়তে থাকুন আর তথ্য সংগ্রহ করতে থাকুন। একটা উপন্যাস পড়লে কয়েকদিন এটার রেশ থাকে। গল্প উপন্যাস পাঠ্যাভ্যাস আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

মৌখিক পরীক্ষায় অনেকে বাদ গিয়ে বলে থাকে তাকে ইচ্ছে করে বাদ দেয়া হয়েছে। আসলে ইন্টারভিউ বোর্ডে পরীক্ষার্থীর উপস্থাপনার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। নিজেকে আত্মবিশ্বাসের সাথে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থাপন করতে হবে। অনেকে সব প্রশ্নের মুখস্ত উত্তর দিয়েও বাদ পড়ে যেতে পারে। কারণ বোর্ডে যাঁরা থাকেন তাঁরা প্রশ্ন করেই বুঝে যেতে পারেন কে মুখস্তবিদ্যা নির্ভর আর কে সৃজনশীল। তাই নিজের সৃজনশীলতার চর্চা করুন সবসময় আর ইন্টারভিউ বোর্ডের সম্মুখে তা উপস্থাপন করুন আস্থার সাথে।

বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে আপনি যোগ দিতে পারুন আর নাই বা পারুন শিক্ষা জীবনে আপনি আপনার লক্ষ্যটা ঠিক করে এগুতে থাকুন। নিশ্চয়ই আপনার জন্য আরও ভালো কোনো সুযোগ এসে যেতে পারে আপনার একটি গবেষণাধর্মী মন লালনের জন্য।

আগের লেখাগুলোর লিংক-
বিসিএস পরীক্ষা দিবেন- প্রস্তুতি নিন এখন থেকেই
বিসিএস পরীক্ষা দিবেন- আরও কিছু টিপস
বিসিএস পরীক্ষা দিবেন- অনুসন্ধিৎসু মন প্রয়োজন



সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:৫৬
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×