somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঃস্বপ্ন (গল্প)

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিরকুটে নুপূরের জন্য মেহেদি লিখছিল-
দিলাম ভাসিয়ে কাগজের ছোটো নৌকাখানি
তোমার বাড়ির দুয়ারে পৌছাবে একদিনই।
জীবন তরীর তলায় যখন মস্ত বড়ো ঢেউ
বন্ধু তোম‍ায় খুঁজে ফিরি, সঙ্গে আছো কেউ?
আমার আছে সাগর ভরা নীল
আকাশ জুড়ে উড়ন্ত গাংচিল।
আমার যখন দিন ফুরোবে, ডুববে কাগজ তরী
বন্ধু তোমার স্নেহ দিও, দিও প্রাণ ভরি।
এটা থেকেই গল্পটার শুরু। ঘরের গ্রিল জড়িয়ে মেহেদি কাঁদছিল। বাইরে শীতের হিমশীতল বাতাস বইছে। এমন শীতের রাতে এলেই গত ক বছর ধরে এই জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে মেহেদিকে কাঁদতে দেখি। একটা চিরকুট পড়ে আর নিশব্দে কাঁদে। বাইরে কুয়াশা।
গ্রিল ধরে বাইরে কুয়াশা দেখতে ভালো লাগে কার? কিন্তু ওর লাগে।বন্ধুরা বলে, যাবার সেতো গেছেই, এভাবে শীতের রাতে জানালায় তাকিয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়ে কি লাভ? কিন্তু বন্ধুদের কথা শুনে আরও হাওমাও করে কাঁদে মেহেদি। ও বলে কুয়াশা দেখলেই তার ভীষণ কান্না পায়। অদ্ভুত এক ছেলেমানুষ ও।
মেহেদির গল্পটা অদ্ভুত ।
সেদিন শীতের রাতে আকাশ জুড়ে মেঘ ছিলো। হালকা হাওয়ায় নড়ছিলো গাছের পাতাগুলো। হিম হিম বাতাসের মধ্যেও ঘন কুয়াশা চারপাশে। চাদর মোড়ানো সে হাঁটছিল টিএসএসির সামনের রাস্তায়। ভাবল এ শীতে একটা আইসক্রিম খেলে কেমন হয়! রোমান্টিক। হাতে কুলফি আইসক্রিম। পথ চলতে শুরু করল কুয়াশার মধ্যে। হঠাৎ নামলো একপশলা বৃষ্টি। মেহেদি ভাবল কতোদিন ভিজিনা বৃষ্টিতে। এ শীতের ঝড়ে, আইসক্রিম খেতে খেতে বৃষ্টিতে ভেজাটা দারুণ রোমান্টিক হবে। আনমনে হাঁটছিল। লাল নীল আলো পেরিয়ে যাচ্ছিল গন্তব্যহীন পথে। শীতল পরশে তার হাত মাথা মুখ ঠান্ডা। কিন্তু চলার গতিতে দেহ গরম। ভালো লাগছিল ভীষণ। হঠাৎ একটা ছাতা দোলাতে দোলাতে আসতে দেখা গেলো নুপূরকে। পুরো রাস্তা ফাঁকা। বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে আরও জোরে।
এই কুয়াশাভেজা নির্জনে একা বৃষ্টিতে একটা ছেলেকে ভিজতে দেখে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলো নুপূর। অবাক হয়ে দেখলো কেমন ভিজছে আনমনে। এরপর রিমঝিম রিমঝিম...। চোখে পড়ল চোখ। যেনো আকাশে বিদ্যুৎ খেলেলো।
কথা কয়ে উঠলো কেউ যেনো। মেহেদি ? কক্ষনো না! এমন ক্ষনে কথা বলবে সে? তবে কে বললো? বাতাস। উড়ে গেলো নুপূরের ছাতা। আরও ঝুম বৃষ্টি এলো। ঝাপসা আকাশ।
আলোর ঝলকানি মেঘে মেঘে। হৃদয় মাঝে। এরপর কতো বৃষ্টিস্নাত সময় কেটে গেলো।
দৃচোখ ভরে মেঘের বিদ্যুৎ দেখে মেহেদি। উড়াল মন সারসের মতো, আকাশ পেয়ে ডানা মেলেল চমকে দিয়ে নুপূর বললো-তুমি এমন কেনো? -কেমন আমি? -জানোনা বুঝি? -তাতো জানিনা। -আমি জানি, আমি তোমাকে জানি, আমার অন্তর দিয়ে জানি। -এটা কেমন কথা? -কেমন করে তুমি জানো?
-আমি তোমাকে একা বৃ্ষ্টিতে ভিজতে দেখেছি.আমি তোমাকে অনেক দিন থেকেই জানতে শুরু করেছি।
কথা বলতে বলতে দুজন একটা ছাউনির নিচে চলে এল। আবছা অন্ধকার। কেউ নেই আশপাশে। দুজন কাঁপছে শীতে। ভেজা পোশাকে। কেউ কারও মুখ ঠিক দেখতে পাচ্ছে না। হঠাত মেহেদি তার গলার কাছে একটা উষ্ণ হাত টের পেল। ভেজা কিন্তু উষ্ণ। মেহেদি কথা বলতে চাইল। বলতে চাইল নুপূর। কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বেরোল না। চোখ দুটো আবেশে বন্ধ হয়ে আসছে তাঁর। গলাটা ধরে আসছে। মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠছে।
মেহেদির থার্মোমিটারে রিডিং দেখাচ্ছে ১০৪। থরথর করে কাঁপছে। গলা ব্যথা, সর্দি, কাশি নানা উপসর্গ। গত রাত থেকে অনেক ভুল বকছে, উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখছে। করোনা পজিটভি হওয়ার পর থেকে ঘরের গ্রিল ধরে উদাস চেয়ে থাকছে।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×