somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুলেল বিরম্বনা!

০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফুলেল বিরম্বনা!

কাল রাতে অফিস থেকে আমার বাসায় যাবার পথে প্রচন্ড জটলায় সাইন্স ল্যাবোরেটরি থেকে ধানমন্ডি ৩,৪,৫,৬ নম্বর রোডে ঢুকতে মিরপুর রোডে আটকে পরেছি আরো শত শত যান-বাহনের সাথে আমিও। প্রচুর নারী-পুরুষ ফুল, ফুলের মালা হাতে যাচ্ছেন প্রধান মন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে। আমরা অসংখ পথচারী, যাত্রীবাহি যান বাহন নিয়ে আটকে আছি। ফুলের তোড়া, ফেস্টুন হাতে প্রায় সব মানুষগুলোই গাড়ীর পাশ কাটিয়ে যাবার সময় গাড়ীর উপড় একটা চাটি মেরে চলে যাচ্ছে-যেনো গাড়ীগুলো "ঢোল-তবলা"! সামান্য একটু সহযোগীতা করলেই গাড়ীগুলো অনায়াসে পার হয়ে যেতে পারে-কিন্তু মিছিলকারীদের অহমিকা-তারা "প্রধান মন্ত্রী"কে ফুল দিতে যাচ্ছে-কাজেই তাদের ক্ষমতা অপরিসীম! তারা কেনো সাধারন মানুষকে আগে যেতে দিবে!! প্রায় ত্রিশ মিনিট ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে যেইনা একবার হর্ণ বাঁজালাম অমনি ফুল এবং ফুলের মালা হাতে একদল টগবগে যুবক রক্ত চক্ষু করে আমার দিকে তেড়ে আসলো। হুংকার দিলো-"ফিইররা হরন বাজাইলে গাড়িগুরি ভাইঙ্গা এক্কেবারে পু.....'র মধ্যে হান্দাইয়া দিমু"! আমার কাচু-মাচু ভয়ার্ত চেহারা দেখে দলবদ্ধ যুবকদের সাথে থাকা অনেক বর্ণীল যুবতীরাও হেসে খুন!

একটা এম্বুলেন্স প্যাসেন্ট নিয়ে উলটো দিকের ল্যাব এইড হাসপাতালে যেতে পারছেনা। পুলিশের সাহায্য চাইলে অসহায় পুলিশ অন্য দিকে চলে যায়। তারপর কয়েকজন ধরাধরি করে স্টেচারে করে প্যাসেন্ট নিয়ে রাস্তা পার হয়ে যায়। আমি অন্য সবার মত নির্বাক, নিশ্চল বসে আছি বিড়ি-মুড়ি খাওয়া ভারাটে রাজনৈতিক কর্মিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে যাবার জন্য পথ ছেড়ে দিয়ে।

আমাদের দেশে ফুলেল সম্বরর্ধনার ব্যাপক প্রচলন করেছিলেন লেঃজেঃহোঃমোঃ এরশাদ। তিনি ফুল খুব ভালোবাসতেন। খু-উ-ব বেশী ভালোবাসতেন রজনীগন্ধা। নিজে যখোন যেখানে ফিতা কাটতে যেতেন সবাইকে তখোন ফুল দিয়ে সমবর্ধনা দিতে বাধ্য করতেন। সারিবদ্ধ কুমারী মেয়েরা তার যাত্রা পথে ফুলের পাপড়ী ছিটিয়ে দিত, রং-বেরংযের কুলা হাতে নিয়ে শুয়ে বসে "কুলা নৃত্য" করা হতো। নরম পাপড়ীগুলো সুন্দর হাতের উত্তাপ হারিয়ে যাবার আগেই পীচ ঢালা পথে লুটিয়ে পড়তো আর সেই পথে জঙ্গলী বূটের তলায় পিশে ফেলতো সেই সুবাসিত কোমল ফুল-স্বৈরাচারী এরশাদ। এরশাদের মুখে পরিপুর্ণতার, পরিতৃপ্তির হাসি-দুপাশে দন্ডায়মান জনারন্যের দিকে হাত উঁচু করে মাথা উঁচু করে চলে যেতেন তিনি-সেই দৃশ্য টেলিভিশনে প্রতি দিন আমরা দেখতে বাধ্য হতাম। আমি সেই দৃশ্য দেখে মনে করতাম ইংরেজ কবি ব্রাউনিং এর একটি কবিতার অবিশ্বরনীয় কয়েকটি লাইনের কথা-"there was roses, roses all the way".

সে দিন ছিল দেশ প্রেমিক বীরের যুদ্ধ জয় শেষে দেশে ফেরার দিন। তাঁকে সম্বর্ধনা দিতে সারা পথে বিছানো হয়েছিলো লাল গোলাপ। দু'পাশে জনারণ্য। সমস্ত শহর ভেঙ্গে পড়েছে তাঁকে এক নজর দেখার জন্য। সেই সঙ্গে নেমেছে মানুষের ভালোবাসার ঢল। যেনো চাইলেই এই মুহুর্তে এনে দেবে আকাশের চাঁদ। বীর ফিরে এলেন এক রাশ ফুল মাড়িয়ে ভালোবাসার পাপড়ীতে ভর করে।

প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যাবধান অনেক বেশী। তারই ফলশ্রুতিতে বছর ঘুড়তে না ঘুড়তেই ভিন্ন দৃশ্যপট! সেদিনও মানুষ উপছে পরেছিলো। কিন্তু শহরে নয়-বদ্ধভূমিতে। প্রবল বর্ষনের মধ্যে শকট বন্ধী বীর'কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বদ্ধভূমির দিকে। সেখানে জনতার ললুপ দৃস্টির মাঝে লুটিয়ে পড়বে বীরের মাথাটি। আজ আর ভালোবাসার কোলাহল নেই। নেই কোন ফুল, ফুলের পাপড়ীর সমারোহ।

রাজনীতির জগতে একটা শাশ্বত সত্য পরান পেয়েছে কবি ব্রাউনের কবিতার লাইনটি। একটা বৈপরীত্য ঘিরে জনপ্রিয়তার ক্ষণস্থায়িত্ব মূর্ত হয়েছে কবিতাটিতে। আমাদের কাতান-ফ্রান্স/ইটালীয়ান জর্জেট, খদ্দর-পাঞ্জাবী পড়া রাজনীতিবিদ এবং বুটপরা রাজনীতিবিদেরা কিছু কি শিখবেন-সেই কবিতাটি পড়ে?

আবার ফিরে যাই স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট, কবি কীট এরশাদের কাছে। ৯০ এর গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্চুত হবার পর দেখেছি-তার প্রতিকৃতির(চারু কলার ছাত্র-ছাত্রীদের বানানো মুর্তি) পশ্চাতদেশে রজনীগন্ধার স্টীকগুলো উলটা করে ঢুকিয়ে ছেলে বুড়ো সবাই আনন্দ মিছিল করছে.........

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:১৩
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×