somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিস ইজ বন্ড

০৬ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গরমের অত্যাচারে রাতে ভালো নিদ্রা হয়নি। তাই অফিসে এসে ‘ধ্যান করছি’ বা ‘আইডিয়া নামাচ্ছি’ এরকম ভাব দেখিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। হঠাৎ ট্রিংড-টুউট...শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। ভাঙা মন আর ভাঙা ঘুম সহজে জোড়া দেওয়া যায় না। তাই সে-চেষ্টা না করে মাঝারি সাইজের একটা হাই তুললাম। তারপর ব্যাপক বিরক্তি নিয়ে চিৎকার করতে থাকা টেলিফোনের রিসিভার তুলে কানে ঠেকালাম।
‘কে?’
‘ভাইয়া, আমি।’ অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে সিমির কণ্ঠ, ‘আপনার কাছে একজন ভদ্রলোক এসেছেন।’
‘ভদ্রলোক!’ ভীষণ অবাক হলাম, ‘আপনি শিওর, আমার কাছেই এসেছে?’
‘হ্যাঁ, আপনার কাছেই।’
‘ও।’ আমি মোটামুটি বিভ্রান্ত, ‘আচ্ছা, উনি যে ভদ্রলোক, আপনি শিওর?’
‘দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।’
আমি এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম, ‘আচ্ছা, কী নাম উনার?’
‘একটু হোল্ড করুন।’
আমি হোল্ড অবস্থায় থাকলেও মগজ তার ভাবনার কাজ চালিয়ে গেল। ভদ্রলোক? আমার কাছে কী চান? কেন এসেছেন?
‘হ্যালো,’ সিমির কণ্ঠ শুনে আমার হোল্ড অবস্থা চলমান হল, ‘নামটা হচ্ছে..., অ্যাঁ...শন কনারি লা রজার মুর ডা টিমোথি ডাল্টন জ্যা পিয়ার্স ব্রসনান উইথ ড্যানিয়েল ক্রেইগ...’
‘কী-ই-ই বলছেন? আপনি না বললেন একজন ভদ্রলোক। এখন এত জনের নাম বলছেন কেন?’
‘বিদেশি ভদ্রলোক তো নিজের নাম এ রকমই বললেন।’
এবার আমি রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম। আমার কাছে বিদেশি ভদ্রলোক? হঠাৎ মনে পড়ল, কিছুদিন আগে বন্ধু মেহেদীর চাপে পড়ে অনলাইনে ডিভি লটারি পূরণ করেছিলাম। লোকটি অ্যামেরিকা থেকে আসেনি তো? ডিভি বিজয়ী হয়েছি তাই শুভেচ্ছা-টুভেচ্ছা ইত্যাদি নিয়ে?
‘আচ্ছা, উনাকে একটু জিজ্ঞেস করুন তো কোন দেশ থেকে এসেছেন? অ্যামেরিকা থেকে নাকি?’
আমাকে আবার কিছুক্ষণ হোল্ড করিয়ে রাখার পর সিমি বললেন, ‘হ্যাঁ, উনি অ্যামেরিকা থেকেই এসেছেন।’
ব্যস! সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল স্ট্যাচু অব লিবার্টি, হোয়াইট হাউস, বারাক ওবামা...। ধুর! এইসব ফান ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে ‘দিনে এনে রাতে খাই’ অবস্থা আর কদ্দিন? এবার কালো টাকা, সাদা টাকার হিসেব চুকিয়ে ডলারে জীবন চালাব।
‘আচ্ছা সিমি, আপনার সামনে সিকিউরিটি গার্ড আছে না?’
‘জি আছে।’
‘ওকে বলুন, ভদ্রলোককে গার্ড অব অনার দিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসতে।’
‘আচ্ছা, বলছি।’

২.
‘হাউ আর ইউ?’ ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে দিলেন।
‘জি, ওয়েল।’ বলতে বলতে হ্যান্ডশেক করলাম। একই সঙ্গে বুঝে ফেললাম বাংলিশ-আক্রান্ত হয়ে গেছি! শুধরে নিয়ে বললাম, ‘ডু ইউ নো বেঙ্গলি?’
‘হ্যাঁ, ১১টি ভাষা জানা আছে আমার।’ বিশুদ্ধ বাংলায় বললেন ভদ্রলোক।
একটা চেয়ার এগিয়ে দিলাম, ‘বসুন।’
‘ধন্যবাদ। আমার ব্যাকপেইন মানে পিঠে ব্যথা। গদি আটা চেয়ারে বসা নিষেধ।’
‘‘ও আচ্ছা, পেইন তাহলে ‘ব্যাক’ মানে পেছন থেকে আপনাকে ডিস্টার্ব করে? সামনে আসার সাহস পায় না?’’
আমার এমন হালকা রসিকতার উত্তর না দিয়ে প্রায় ৬ ফুট লম্বা, সুপুরুষ ভদ্রলাক দাঁড়িয়ে থেকেই বললেন, ‘আমি এসেছি একটা বিষয়ে তদন্ত করতে।’
‘তদন্ত?’ মনে মনে সাবধান হলাম, ‘আপনি তাহলে আমার জন্য অ্যামেরিকা যাওয়ার টিকেট নিয়ে আসেননি?’
‘‘না, আমাকে ‘এম’ পাঠিয়েছেন।’’
‘এম? এটা আবার কী?’
‘এম আমার বস। উনার কাছে তথ্য আছে, আপনাদের এখানে আমার নাম ব্যবহার করে দুর্নীতি হচ্ছে।’
অভিযোগ শুনে আকাশ থেকে নয়, আমি সরাসরি মহাকাশ থেকে পড়লাম। তাছাড়া ‘এম’ অক্ষরটি কারও বস হতে পারে নাকি? নিশ্চিত হলাম, লোকটি অ্যামেরিকার কোনো পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে সোজা এখানে চলে এসেছে। বললাম, ‘বিষয়টা কী? ঝেড়ে কাশেন।’
লোকটি খুক করে কেশে বললেন, ‘আপনারা নাকি পাঠকদের বন্ড দিচ্ছেন। আমি এসেছি বিষয়টা তদন্ত করতে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত-রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ইতোমধ্যে এয়ারপোর্ট থেকে পল্টনে আসতে জ্যামে বসে থেকে ১২ ঘণ্টা শেষ।’
হাহ...! লোকটির এমন ফালতু কথা শুনে মেজাজটা একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে গেল! বছরের পর বছর যে দেশে তদন্তের ফাইল আটকে থাকার পর এক সময় গায়েব হয়ে যায়, সেই দেশে এসে তদন্ত করে দেড় দিনে (৪৮ - ১২ = ৩৬ ঘণ্টা) রিপোর্ট জমা দেবে? হাউ ফানি! জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, আপনার পরিচয় কী?’
‘মাই নেম ইজ বন্ড। জেমস বন্ড। কোড নম্বর ০০৭।’
‘ও, এই বিষয়? একটু ওয়েট করুন।’
ঘটনা কোথায় প্যাঁচ খেয়েছে বুঝতে পেরে আমি প্যান্টের পকেট থেকে চাবি বের করে হ্যান্ডব্যাগের চেইন খুললাম। ব্যাগ থেকে আরেকটি চাবি বের করলাম। সেই চাবি দিয়ে ডেস্কের উপরের ড্রয়ারটা খুললাম। ড্রয়ার থেকে আরেকটি চাবি বের করলাম। সেই চাবি দিয়ে খুললাম মাঝের ড্রয়ারটি। ড্রয়ার থেকে একটি খাম বের করলাম। খামের ভেতর থেকে বের করলাম একটি কাগজ। বাড়িয়ে দিলাম বন্ড (নাকি ভণ্ড!) পরিচয় দেওয়া লোকটির দিকে। কাগজটি হাতে নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখে আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন বন্ড।
ইচ্ছে করেই প্রায় মিনিটখানেক ঝিম মেরে থাকার পর বললাম, ‘এটাই সেই জিনিস, যেটির রহস্য ভেদ করতে মার্কিন মুল্লুক থেকে উড়ে এসেছেন আপনি।’
‘এটাই সেটা?’ চোখে-মুখে প্রবল বিস্ময়ভাব ফুটে উঠল বন্ডের, ‘এই জিনিসই আপনারা কুইজে বিজয়ী পাঠকদের পুরস্কার হিসেবে উপহার দেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘এটা কী জিনিস? নাম কী?’
মুচকি হেসে বললাম, ‘দিস ইজ বন্ড। প্রাইজবন্ড। মূল্যমান টাকা ১০০!’


লেখাটি সকালের খবরের ফান ম্যাগাজিন tooফান এর সপ্তম সংখ্যায় প্রকাশিত।
..................................................
সকলের অবগতির জন্য ফান ম্যাগাজিন tooফান এর সম্পাদক জনৈক খায়রুল বাবুই ! :P
অতএব tooফান বিষয়ক যাবতীয় মন্দলাগাসংক্রান্ত ধমক, হুমকি আরও যা যা ইচ্ছে এই ব্লগেই করা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ১:২৩
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×