রাজপুত্র বিয়ে করবেন।
পাত্রী মিলছে না। চারদিকে লোক চলে গেল। হন্তদন্ত করে পাত্রীর সন্ধান চলছে।
এবার একটা বিহিত না হলেই নয়।
পাত্রীর সন্ধানকারীরা একে একে ফিরে এলো।
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, পাত্রীর কোন সন্ধান পেয়েছ তোমরা? বলো।
একজন বলল, হুজুর, পাত্রী যেমন চেয়েছেন তেমন পাত্রীর সন্ধান পেয়েছি ঠিক কিন্তু পাত্রীর মনের সন্ধান পাইনি।
রাজা হুংকার ছেড়ে বললেন, রাজপুত্রের জন্য পাত্রী চেয়েছি, মনের সন্ধান পাওয়ার দরকার কী?
সবাই মাথা ঝাকিয়ে বলল, জ্বী হুজুর, জ্বী হুজুর। পাত্রী মিলেছেÑমনের খবর নেওয়ার দরকার কী?
বিয়ের আনন্দ আয়োজন চলছে। পুরো রাজ্য আনন্দে লাল হয়ে উঠেছে। রাজপুত্রের বিয়ে।
পাত্রীর নাম মঞ্জিলা। গরীব ঘরের মেয়ে। পাহাড়বেষ্টিত একটা গ্রামে অনেক কষ্ট করে সে বড় হচ্ছে। সে ওই পাহাড়ের একটা গরিব ঘরের ছেলেকে ভালোবাসে। এবং অনেক যত্ন করে সে তাকে মনে মনে লালন করে আসছে। তার সকল কথা, সকল কষ্ট, সকল আনন্দ, সকল স্বপ্ন প্রতিদিন তার সাথে ভাগাভাগি করে লয়। ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে আনন্দে ছুটোছুটি করে হাসি-তামাশায় মেতে ওঠে। ভালোবাসার মানুষটিকে সে নানাভাবে মনের ভেতরে রোপন করেছে। তা প্রতিটি মুহূর্তে অংকুরিত হয়ে শাখা-প্রশাখা মেলছে।
কিন্তু রাজপুত্রের পাত্রী হিসেবে তাকেই পছন্দ করেছে। পাহাড়কোলের গরিব ঘরের মঞ্জিলার নরম বুকখানি হুহু করে উঠল। সে হা-পিত্তেশ করে, চোখের জল ফেলে, চিৎকার-চেঁচামেচি করে প্রাণপণে তার অনিচ্ছা প্রকাশ করল। তবুও বেজে উঠল বিয়ের বাদ্য। তার চিৎকারের শব্দ বাঁশি, ভেঁপু আর ঢোল-কাঁড়ার উচ্চৈশব্দের নির্মম শিকার হয়ে আনন্দযজ্ঞে সামিল হলো।
মহানন্দে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল। রাজপুত্র খুশিতে টগবগ করছে। রাজপরিবারে আনন্দ আয়োজন সার্থক হয়েছে। বিয়ের আনন্দসুর রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়েছে।
ভোরের নতুন আলোয় নতুন করে আরেকটা দিনের সূচনা হয়েছে। সকালে সকলের ঘুম ভাঙলো।
নববধূর ঘুম ভাঙলো না।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১৩