somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বড়োদের ছোটোগল্প: আমলা সামলা

১১ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চোরাই পথে ইতালী প্রবেশ করার সময় মজনু ছয় সঙ্গীসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়লো। পুলিশ তাদেরকে পাকড়াও করে চেক পোষ্টে নিয়ে গেল। নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করে ওদেরকে একজন করে পাশের কক্ষে নিয়ে রাখছে। প্রথম দুইজন মালয়েশিয়ান, পরের জন পাকিস্তানি, পরের দুইজন ইন্ডিয়ান, আরেকজন ফিলিপিনো, শেষে পুলিশ জিজ্ঞাসা করতেই মজনুর জবাব, আই এ্যাম বাংলেদেশি এ কথা বলতেই আনন্দে ও উত্তেজনায় তিনচারজন পুলিশ সমস্বরে বলে ওঠলো, ইউরেকা! ইউরেকা! মজনু কিছু না বুঝেই ওদের সাথে হাসিতে যোগ দিল। ছয় সঙ্গীকে এক কক্ষে আর মজনুকে পরম যত্নে অন্য একটা পরিপাটি ছিমছাম এসি কক্ষে নিয়ে রেখে পুলিশ টেলিফোনে মহা উৎসবে ত্রস্ত-ব্যস্ত হয়ে উর্দ্ধতন বসের সাথে ঘন ঘন আলাপ করছে। সবার চোখে মুখে পরম তৃপ্তির হাসি। মজনু কিছুই বুঝতে পারছেনা। তবে, প্রচন্ড আনন্দদায়ক কিছু একটা ঘটছে, এটা সে বুঝতে পারছে। এসব আনন্দে তার দুশ্চিন্তা কোথায় উবে গেছে সে নিজেই বলতে পারবেনা।

একটা পুরনো গাড়িতে তুলে মজনুর ছয় সঙ্গীকে বেওয়ারিশ কুকুরের মত নিয়ে গেল। কাচের জানলা দিয়ে সে এসব দেখছে। ছয় সঙ্গীর এই দুরবস্থার মধ্যে নিজের এত আদর-আপ্যায়নে সে ঠোঁট কামড়ে মনে মনে বলছে, আমার আব্বু যে সাবেক আমলা এই খবরটা পুলিশ পেলো কী করে!
ঘন্টাখানেক পর গাড়ির বিশাল বহর চলে এলো। সাথে ওই দেশের পুলিশ প্রধান। এসেই তাকে দেখে খুব খুশি হয়ে চেক পোষ্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের পিঠ চাপড়ে ওয়েল ডান বলে উৎসাহ দিলেন। মজনুকে অতি আধুনিক একটা এসি গাড়িতে যত্ন করে নিয়ে বসালো। তার আগে পিছে বড় বড় কর্মকর্তার গোটা বিশেক গাড়ি পতাকা নেড়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে । ঘন্টা খানেক পর দি ন্যাশনাল জু-এর প্রধান ফটকের ভেতর দিয়ে স্যালুট নিতে নিতে বিশাল এক ভবনের সামনে গিয়ে গাড়ি থামতেই অফিসের বড় বড় কর্তা ব্যক্তিরা ব্যস্ত হয়ে স্যালুট দিয়ে এক ইশারায় সামনে এগিয়ে এসে মজনুকে যত্নের সাথে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি মনোরম এসি কক্ষে নিয়ে রাখলো। আবারো উপাদেয় নানান ফল আর দামী দামী খাবার। মজা করে খেলো মজনু।
রাত বারোটা। মজনুকে নিয়ে মোটা মোটা শিক অলা বিশাল কক্ষে রাখা হলো। গভীর রাতে একাকী ঘুমিয়ে পড়লো সে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে তার ডান পাশের ছাউনিতে বাঘ আর বাম পাশেরটায় সিংহ। পেছনেরটাতে হায়েনা। ওদের ছাউনির মত তারটিও। একটা বিশাল সাইনবোর্ড তার ছাউনির সামনে সেটে দেয়া হল।
পুলিশ রাতেই এই জবর খবরটা প্রেসে পাঠিয়ে দেয়ায় পরের দিন চিড়িয়াখানার সামনে অজস্র দর্শণার্থীর ভীড়। এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বেশি মল্যে টিকিট কিনে দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মজনুর খাচার সামনে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মজনু। শত শত দর্শক চরম আগ্রহে, পরম কৌতূহলে নানা ভাবে দেখছে তাকে। আগ্রহের যেন শেষ নেই। কেউ কেউ পেছনের দর্শকের বেশামাল ধাক্কা খেয়েও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বারবার দেখার চেষ্টা করছে। কেউবা পনঃ টিকিট কেটে আবারও এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই মহানন্দে ফোনে বন্ধু-বান্ধবদেরকে আনন্দে খবরবাট্টা দিচ্ছে। অনেকেই ফোনে বলছে, আরে ভাই তাড়াতাড়ি আয়, না দেখলে জীবনে বড় কিছু মিস করবি। পৃথিবীর সবচেয়ে আজব দেশের আজব প্রাণী! ভীড় আর ভীড়। ভীড় বেড়েই চলে। সারা শহরে হৈ চৈ পড়ে গেল। চিড়িয়াখানায় এক নতুন আজব প্রাণী আনা হয়েছে। এটা এখন টক অব দ্য সিটি।
এভাবে মাস খানেক কাটলো। অসম্ভব কৌতূহলী দর্শকদের আবেদন নিবেদনে একদিন মজনুর গায়ের গেঞ্জি ও প্যান্টটা খুলে দেওয়া হল। অনেক চেষ্টা করেও সে এগুলো রাখতে পারে নি। সে কর্মকর্তাদের সহায়তায় বাড়িতে চিঠি দিল।
পনের দিন পর তার সাবেক আমলা পিতা কামাল সাহেব উপস্থিত। জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কামাল সাহেবের সাথে আলাপ করে সব জেনে নিল। এবং মহানন্দে তাকে আপ্যায়ন করে খবরটা রাষ্টত্থ করে দিতেই বড় বড় কর্তা ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়ে তাকে ছেলে মজনুর খাঁচায় নিয়ে ঢুকালেন এবং মজনুকে বের করে দিয়ে বল্লেন, তুমি যেতে পার। বাইরে এসে মাথা ঘুরিয়ে সাইনবোর্ডের লেখা পড়েই সে হাউ-মাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিল। মোটা রডে ধরে সে আব্বুকে বলছে, তুমি একি করলে! কেন এলে? এখন কি হবে? এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ।
আব্বু বলছে, এভাবে কাঁদসিস কেন? কী হয়েছে তোর?
মজনু বলছে আব্বু তোমার ছাউনির সাইনবোর্ডে কি লেখা আছে আমি পড়ি ? -বলেই সে কাঁদ কাঁদ কন্ঠে পড়ছে ঃ এটি পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীনভাবে পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেশের প্রাণী। এই প্রাণীটির পায়ের নিচের চামড়া থেকে শুরু করে মাথার কেশাগ্র পর্যন্ত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। অতি বজ্জাত স্বভাবের জীব এটি। এদের স্বভাব বোঝা যায়না। কথায় পটু। কথা ও কাজের মধ্যে মিল পাবার কোন নজীর নেই। এরা দেশের চেয়ে দুর্নীতিকে বেশি পছন্দ করে। নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য যা ইচ্ছা তা করতে বদ্ধ পরিকর। সংখ্যায় কম হলেও প্রভাব প্রতিপত্তিতে এরা বিশিষ্ট। এরা মুসলিম বলে পরিচয় দেয় এবং তাদের মতই বাহ্যিক জীবনাচার এদের। এর ডানে বাঘ ও বামে সিংহ ও পেছনে পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী হায়েনা রয়েছে। এদের চেয়েও বহু গুণ ক্ষতিকারক ও ভয়ংকর প্রাণী এটি। ঢিল ছুড়বেন না , নির্দয় আচরণ করবেন না।-পড়া শেষ হতেই কামাল সাহেব বলে উঠলেন, আরে কস কি! বলেই লাফিয়ে নর্তন-কুর্দনে চিড়িয়াখানা মাতিয়ে তুললেন। জু প্রধান এলেন। কামাল সাহেব চীৎকার করে কর্মকর্তার গলা টিপে ধরতে যান। পুলিশ প্রধান ভদ্রভাবে জানালেন, তুমি পৃথিবীর অতি বিরল প্রজাতির প্রাণী। মোটা অংকের বেতনের বিনিময়ে তোমাকে এখানেই রাখা হবে।
আমি কি ছাড়া পাবনা!
পাবে।
কখন, কবে?
পৃথিবীর অন্য আরেকটা দেশ তোমাদের এই বিশ্ব রেকর্ড ভঙ্গ করার পর।
কিহ্?!
আমার করার কিছুই নাই। এটাই এ্যানিম্যাল কালেকশান কর্তৃপক্ষের ডিসিশান।
বাবা মজনু, তুই বাড়ি চলে যা। আমার বুঝি আর যাওয়া হবেনারে!

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৫
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×