এক টুকরো মেঘ ভাসতে ভাসতে চলে আসে এক বিরাণ ভূমির উপর। সে নিচে তাকিয়ে দেখে বিশাল মাঠে একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে। গাছটির আশপাশে আর কোন গাছ নেই। মেঘটি ভাবল, বোধ হয় ওই গাছটি আমার মতোই একা। আমি যাই না কেন তার কাছে?
মেঘটি চলে এলো রোগাপটকা গাছটির কাছে। একটি পাতাও নেই তার গায়ে।
মেঘটি বলল, গাছভাই, এ বিশাল মাঠে আর কাউকে দেখছি না যে! তুমি কি আমার মতোই একা?
আমি খুব একা। আমার সাথে কথা বলার কেউ নেই। তুমি কি আমার সাথে থেকে গল্প করবে মেঘভাই? বলল গাছটি।
মেঘটি বলল, ঠিক আছে, আমি তোমার কাছে থাকব। আমরা অনেক গল্প করব। আনন্দে কেটে যাবে সময়।
গাছটি খুশি হয়ে বলল, এখন থেকে আমরা দুজন বন্ধু হয়ে গেলাম। আমাকে ছেড়ে যাবে না, কথা দাও মেঘভাই।
কথা দিলাম বলে মেঘটি গাছে এসে বসল। ওমনি মেঘের ছোঁয়ায় গাছটি তরতাজা হয়ে উঠল। গাছে কচি কচি পাতা গজাতে শুরু করল। দেখতে দেখতে সবুজ পাতায় আর ফুলে-ফলে ভরে গেল গাছটি। কী সুন্দর গাছ!
একটা কাঠবিড়ালি কোত্থেকে এসে আনন্দে ছুটোছুটি করতে লাগল গাছে। পাখিরা এসে গাছের ডালে বসে কিচিরমিচির করছে, গান গাইছে। বনের পশুরা গাছের ছায়ায় বসে আরাম করছে।
গাছটি আগের মত মেঘের সাথে আর গল্প করে না। মেঘের খবরও নেয় না। খুব কষ্ট পেল মেঘ। সে গাছের এক কোনে চুপচাপ বসে থাকে সারাদিন।
তুমি তো আমার খবর নিচ্ছ না। এমনকি একটি কথাও বলছো না। অভিমানে কেঁদে ফেলল মেঘটি।
গাছটি তেজ দেখিয়ে বলল, দেখছ না কত ব্যস্ত আমি। কত পশু-পাখি আমার ফুল-ফল খেয়ে বেঁচে আছে। ওদের দেখে রাখতে হয় কারণ ওরা আমার প্রজা। কথা বলার সময় কোথায়। তুমি এমন কোনো বেকার গাছের সন্ধান করো যে তোমার সাথে গল্প করতে পারবে।
মন খারাপ করে চলে গেল মেঘ।
মেঘটি চলে যাওয়ার পর গাছটি শুকিয়ে যেতে লাগল। তার পাতাগুলো ঝরে পড়ে গেছে। ধীরে ধীরে তার কাছ থেকে সরে গেল পশুপাখি। ঠিক আগের মতো একা ও দুখী হয়ে গেল গাছটি।
এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে দুখী গাছ। যদি মেঘবন্ধুর দেখা পাওয়া যায়!
একদিন গাছটি দেখে সেই মেঘটি অন্য মেঘের সাথে হাসি-তামাশা করতে করতে উড়ে যাচ্ছে। গাছটি চিৎকার করে ‘মেঘবন্ধূ, ‘মেঘবন্ধু বলে ডাকল কিন্তু তার দিকে ফিরেও তাকালো না মেঘ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:১০