somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গানওয়ালা

১৮ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“সম্মানিত যাত্রীবৃন্দ, ধুমকেতু এক্সপ্রেসে আপনাদের স্বাগতম। যাত্রার জন্য রেলপথ পছন্দ করায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষথেকে আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু হবে। আশা করি আপনারা আপনাদের নির্ধারিত আসন খুজে পেয়েছেন। তাহলে চলুন, আমরা যাত্রা শুরু করি ভুপেন হাজারিকার সঙ্গে।” ট্রেনের স্পীকারে কথাগুলো একানাগারে বলে একটু দম নেয় মতিউর। তারপর সামনে থাকা পিএ সিস্টেমে ভুপেন হাজারিকার “আমি এক যাযাবর” গানটা ছেড়ে পেছনে ঠেস দিয়ে চোখ বুজে গান শুনতে থাকে।

মতিউরের কামরাটা একদম ট্রেনে মাঝখানে। ট্রেন পরিচালকের কামরাটাকে দুই ভাগ করে বানানো। একটা ফোল্ডিং টেবিল, আর একটা ফোল্ডিং চেয়ার। টেবিলের উপরে একটা পিএ সিস্টেম। এই হচ্ছে মতিউরের ঘর। আর জীবন বলতে গান। অনেক কষ্টে মেট্রিক পর্যন্ত পড়ালেখা করে, একদিন এক গানের দলের সাথে বাড়ী ছাড়ে। তারপর অনেক বছর, অনেক পথ ঘুরে একসময় রাজশাহীর পুরনো স্টেশনের প্লাটফর্মে ঠাই হয়। রুজি বলতে গান, আর তাতেই রুটি। এক রকম চলছিল, মাঝখানে বাদ সাধল স্টেশন মাস্টার। প্রতিদিন গান শুনতে শুনতে একদিন ডেকে পাঠায়। কথাবার্তায় খুব একটা পটু না হলেও স্টেজের ভাষাটা ভালোই রপ্ত হয়ে গিয়েছিল। আর গানের সমঝদারী তো ছিলোই। ব্যাস হয়ে গেলো চাকরীটা। ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী ট্রেনে ঘোষনা পাঠ এবং পিএ সিস্টেমের অপারেটর হিসেবে। তারপর থেকেই ওর ঘর-বাড়ী বলতে এই কামরাটা।

হঠাত ঝাকুনি খেয়ে থেমে যায় ট্রেনটা। চোখ খুলে কিছুক্ষন চুপ করে বোঝার চেষ্টা করে। মাথার উপরে ছোট্ট জানালা দিয়ে দেখে কোন স্টেশনে দাড়ালো। বাইরে তাকিয়ে বোঝে, ট্রেনটা চলন বিলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষাকালে চলনবিলের রুপ জোছনার আলোয় যেন ফেটে পড়ছে। দুই পাশের ক্ষেত এখন প্রায় পাচ-সাত ফুট পানির তলায়। বিসৃত জলের মাঝে জমি বলতে এই রেলপথ। দেখে কেমন একটু মোহে পড়ে যায়। হঠাৎ বাইরে হট্টগোল শুনে সম্বিত ফিরে পায়। মতিউর দরজা খুলে গার্ডকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। উত্তরে কিছু জানেনা বলে গার্ড নিজেই দরজা খুলে নেমে যায়। নেটবুকে তখন সতীনাথ মুখার্জীর “ জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পারো ” গানটা বাজছিল। সেটা বন্ধ করে কিছুক্ষন ভাবে। দরজাটা একটু ফাকা করে ভালো ভাবে বাইরেটা দেখে বুঝতে পারে ট্রেনে ডাকাত পড়েছে। সে তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে দিয়ে চুপ করে বসে পড়ে। হঠাৎ খেয়াল হতেই উঠে একহাতে পিএ সিস্টেম আর অন্য হাতে গানের ক্যাসেটের ব্যাগটা বুকে নিয়ে আবারো বসে পড়ে। আর দোয়া পড়তে থাকে। নিজের জন্য না, গানের ক্যাসেটগুলোর যেন ক্ষতি না হয়।

প্রায় চার ঘন্টা পরে আবার ট্রেনের ইঞ্জিন সচল হয়। এই চার ঘন্টায় ট্রেনের মধ্যে যেন তান্ডব বয়ে গিয়েছে। ব্যাগপত্র ছড়ানো ছিটানো। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। চারিদিকে কান্নার আওয়াজ। আধো-আলো আধো-অন্ধকারে ভেতরের পরিবেশ সন্ত্রস্ত। ধুকতে ধুকতে ট্রেনটা ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে এসে দাঁড়ায়। নিমিষেই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশেরা একে একে ট্রেনে লাফিয়ে ওঠে। এবং উঠেই ক্ষয় ক্ষতির পরিমান তল্লাশী করা শুর করে। সেই সাথে হতা হতের সংখ্যাও খতিয়ে দেখে। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পরে, পাচটি মৃতদেহকে এ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানোর কাজ প্রায় শেষ এমন সময় এসপির হাতে থাকা ওয়াকি টকিতে আরেকটি মৃতদেহের খবর আসে।

মতিউরের লাশটা যখন বের করে আনা হয় তখনো ওর হাতে গানের ক্যাসেটের ব্যাগটা ধরা ছিল। আর কনস্টেবলের হাতে থাকা পিএ সিস্টেমের গায়ে লেগে থাকা রক্ত দেখেই বোঝা যায় জিনিসটাকে সে জীবন দিয়েই রক্ষা করেছে। গানের নেশাতেই ঘর ছেড়েছিল সেই ছোট্টোবেলায়, আর এই গানের কারনেই আর কখনো ঘর বাধা হয়নি। এখন তো গান বুকে নিয়েই যাত্রা অনন্তের দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১:২১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×