জোর করে ভালোবাসা আদায় করা যায় না—ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা এ কথাই সাক্ষ্য দেয়। আর জোর করে চাপিয়ে দিলে ভালোবাসা নয়, জন্ম নেয় ঘৃণার বাম্পার ফলন। বঙ্গবন্ধুকে গত পনের বছর ধরে এমনভাবে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হলো যে, মানুষ ধীরে ধীরে তাঁর নাম উচ্চারণ করাই বন্ধ করে দিল। তিনি হয়ে গেলেন মানুষের নয়, একটি দলের স্লোগান।
৫ই আগস্ট—এই তারিখে বঙ্গবন্ধু যেন আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। যে মুজিবর ছিলেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আর রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু, তাকে ধীরে ধীরে সেই কেন্দ্র থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে বিগত ১৫ বছর ধরে। বাংলাদেশ যদি একটি পূর্ণ বৃত্ত হয়, তবে মুজিবর সেই বৃত্তের বিন্দু, যা ছাড়া বৃত্তের অস্তিত্বই অসম্ভব। অথচ সেই বিন্দুকে দলীয় মালিকানার নামে এমনভাবে বন্দি করা হলো, যেন তিনি জাতির নয়, কেবল দলের সম্পত্তি।
আমার শোক আমার নিজের—আমার রক্তের, আমার আত্মার। কে আমাকে বলে দেবে, আমি আমার পিতৃশোক কিভাবে পালন করবো? হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা—এগুলো কোনো দলীয় গাইডলাইনের নিয়মে চলে না। আওয়ামী লীগ জনতার মুজিবরকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল, আর সেই একচ্ছত্র দখলদারিত্বই বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করেছে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন সবার—মাঠের কৃষকের, নদীর মাঝির, শহরের শ্রমিকের, গ্রামবাংলার মায়ের। কিন্তু তাকে এমনভাবে ব্যবহার করা হলো, যেন তিনি কেবল মঞ্চের ব্যানারে, মিছিলের পোস্টারে, আর দলীয় বক্তৃতার মুখস্থ বুলি। যখন কোনো নেতা মানুষের হৃদয়ের চেয়ে রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে ওঠেন, তখন ইতিহাস কেঁদে ওঠে—এবং সেই কান্না, একদিন দলীয় প্রাচীর ভেঙে জনতার কাছে ফিরে যায়।
আজ বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছেন—দলীয় কব্জা থেকে, কৃত্রিম মহিমা থেকে, শ্লোগানের শিকল থেকে। আজ তিনি আবার মানুষের, ইতিহাসের, বাংলাদেশের।


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



