আমি খুব সাধারণ একজন শ্রোতা, সংগীতের ব্যাকরণ বুঝি না। তবে ভালো কথার ও সুরের গান শুনতে ভালবাসি । প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের গান শোনা আমার একরকম অবভ্যাসে পরিণত হয়েছে ।
একটা সময় গ্রামগঞ্জে, শহর-নগরে, অলিতে-গলিতে, হোটেলে-দোকানে-পাড়ায়-মহল্লায় প্রায়ই গান বাজতে শোনা যেত। আর পহেলা বৈশাখ কিংবা ঈদের মতো বড় উৎসবে তো আয়োজন করে গান বাজতো পাড়া-মহল্লায়। এসব উৎসবে প্রিয় শিল্পীর ক্যাসেট ও পরে সিডি কিনে বাজানোটা একটা নিয়মে পরিণত হয়েছিল। উৎসবের অন্যতম আনন্দও ছিল সাউন্ডবক্সে ফুল ভলিউমে গান বাজানো। আর এভাবেই একটি গান ছড়িয়ে পড়তো চারদিকে। কোন শিল্পীর কোন গান বেশি শ্রোতাপ্রিয় সেটা নির্ণয় করা যেত এসব গান বাজার মধ্য দিয়ে। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। যুগ বদলেছে। প্রযুক্তি ভর করেছে সব কিছুতে। ক্যাসেট মাধ্যমের যুগ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সিডি মাধ্যমও প্রায় বিলুপ্ত। বর্তমানে Spotify , YouTube এসবের মাধ্যমে অনেক গান উঠে আসে , গ্রাম গঞ্জের হারিয়ে যাওয়া গান, লালন বাউল ভাটিয়ালি ভাওয়াইয়া জারি সারি কত গান । যা বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি হিসেবে শ্রব্য
বর্তমানে বেশ আলোচিত সমালোচিত গান হলো কোক স্টুডিও বাংলার হাত ছাইড়া দাও সোনার দেওরা রে । সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘দেওরা’ গানটি লিখেছেন ফজলুল হক। তিনি পেশায় কৃষক ও মাঝি। ফজলু মাঝি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। গানটিতে সুরারোপও করেছেন তিনি। গানটি অনবদ্যভাবে পরিবেশন করেছেন ইসলাম উদ্দিন পালাকার। কিশোরগঞ্জের গ্রামে গ্রামে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। গ্রামবাংলার পালাগানের নাট্যরস ও স্বতন্ত্র ভঙ্গিমাকে যথাযথভাবেই তুলে ধরেছেন তিনি।]
এটি কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম আলোচিত সমালোচিত গান নয় । এর আগে নাহুবো গানটিও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে । তার আগে প্রার্থনা । তাছাড়া ‘নাসেক নাসেক’ ]গানটা নিয়েও কত কম কথা বলেন নি নেটিজেনরা । বিভিন্ন ধরনের , বিভিন্ন রকমের — মানুষ এই সমালোচনায় অংশ নেয় । যেটা নিয়ে প্রশ্ন — সেই হাত ছাইড়া দাও সোনার দেওরা রে সেটা নিয়ে মানুষের আপত্তি মূলত বা সমালোচনা মূলত দুই জায়গায় —
এক . ভাবি বা দেবরের মতো সম্পর্ক ( পবিত্র ) নিয়ে নেতিবাচক বা অনৈতিক কথা বার্তা।
আরেকটি আপত্তি হলো — গায়কের পোশাকে ।
প্রথম কারণটির উদ্ভব হয়েছে মূলত ভাষা বা অর্থগত বা ভাবগত জানার সীমাবদ্ধতার কারণে । আপনারা যেটা ভাবছেন সেটা সত্যি নয় এর ব্যাখ্যা একজন নেটিজেন দিয়েছেন— "হাত ছাইড়া দাও সোনার দেওরা রে" doesn't mean দেবর ভাবির হাত ধরে রাখছে। It means, বৈঠা ধরে রাখতে রাখতে দেবরের হাতে ব্যাথা হয়ে গেলে বৈঠাটা ছেড়ে দাও। "হাতে লাগে ব্যাথা রে" মাঝি গাইবে, "হাত ছাইড়া দাও সোনার দেওরা রে" এটা ভাবি গাইবে।জারি,সারি অথবা ভাটিয়ালি গানের অন্তমিল এভাবেই সাজানো হয়।
ভাবি-দেবরের সম্পর্ক অপবিত্র করছি আমরা সো কলড সভ্য সমাজের ডার্ক ফ্যান্টাসিওয়ালা বাসিন্দারা। ভাওয়াইয়া, জারি, সারি গান গেয়ে নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে ১৫/২০ দিন খেটে বাড়ি ফেরা মানুষ যারা তাদের মাথায় আমাদের মত এই লেভেলের অসভ্য চিন্তা হয়তো আসে না!
গ্রাম বাংলার নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় এখনো এই গান গাওয়া হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় দেওরা গান দ্বিতীয় পোশাক — পোশাক নিয়ে বাংলাদেশে আপত্তি কোথায় ছিলো না , এটা কেবল এই গানের পোষাক পরিধান নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে না , এর আগে অনেক পোশাক নিয়ে কথা হয়েছে । যারা অন্য দেশে পোশাকের স্বাধীনতার কথা বলেন তারা নিজেরা নিজেদের দেশে কথা বলেন ধর্মীয় পোশাক নিয়ে। ভিন্ন কোনো পোশাক কেউ পরিধান করলেই তাকে শুনতে হয় কটুক্তি । আমি পোষাক পরিধান নিয়ে কোনরকম আপত্তি দেখি না । গায়ক চাইলে তার মতো ইচ্ছে পোশাক পরিধান করতে পারে । একটি স্বাধীন দেশ তাকে সেই অধিকার দেয় । সে তো আর উ ল ঙ্গ হয়ে গান করতেছে না !!গ্রাম বাংলার ঘেটু গানের কথা জানেন কি ? আপনি চাইলে ঘেটুপুত্র কমলা কালজয়ী এই নাটকটি দেখতে পারেন। কিছুটা ধারণা পাবেন। এখানে ঘেটুপুত্র কমলার একটি গান — শুয়া পুড়িলো
ঘেটুপুত্র কমলার শুয়া পুড়িলো
সংগীত সব সময় বিনোদনের মাধ্যম নয়, তা তুলে ধরে একটি জাতিগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক পরিচয়, রাজনৈতিক অবস্থান ও সংঘাতের ইতিহাস। অনেক সময় এই সংগীত হয়ে ওঠে একটি জাতির অস্তিত্বের স্মারক। আমাদের নাগরিক ক্ষমতা এবং ক্ষমতাসীনের দাপটে সেই সংগীতও হয়ে যেতে পারে বেহাত, তাই নয় কি! সেসব ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সর্তক থাকা উচিত।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
~ ভাস্কর রায় ( সৌরভ রাজধন )


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



