একটা আউলা-ঝাউলা ছবি ব্লগ – প্রথম পর্ব
ধরে নিতে পারি, ক্রিকেট খেলাটার সাথে যারা পরিচিত তারা সবাই ''লর্ডস'' এর সাথেও পরিচিত। তাই খুব বেশী বিতংয়ে না যাই। লন্ডনে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামকে বলা হয় হোম অফ ক্রিকেট। এটার প্রতিষ্ঠাতা থমাস লর্ড এর নামেই এর নাম। সে যাই হোক, ২০১০ সালে বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের টেস্ট ম্যাচ দেখেছিলাম এই মাঠে। সেবার বাংলাদেশ ক্রিকেটের আশার ফুল আশরাফুলও খেলেছিল, যদিও বাংলাদেশ সুবিধা করতে পারে নাই। ফলো অনে পড়ে ৮ উইকেটে হেরে যায়। তখন খেলার ফলাফল এতোটা খারাপ আশা করি নাই যদিও, তবে হারবে সেটা অনুমিতই ছিল; মূল উদ্দেশ্য ছিল লর্ডসে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখা। শাহাদাত হোসেনের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট, আর তামিম ইকবালের দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ান ডে স্টাইলের টাইগারসুলভ সেন্চুরীও (১০০ বলে ১০৩ রান) বৃথা যায়। যতো যাই হোক, লর্ডসে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয় সেবার।
খেলা শুরুর আগে
দৃষ্টিনন্দন অত্যাধুনিক মিডিয়া সেন্টার
ভিক্টোরিয়া যুগের প্যাভিলিয়ন
লর্ডসে সগর্বে উড়ছে দেশের পতাকা
খেলা চলছে। ঠিক সামনের ফিল্ডিংরত খেলোয়ারটিই আমাদের আশরাফুল। আমাদের আশেপাশে বসা ইংলিশ দর্শকদের ভুয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিল ওর ফিল্ডিং। অনেকেই আমার কাছে খেলোয়াড়ের নাম জানতে চেয়েছিল।
খেলার মধ্যাহ্ন বিরতিতে একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। দর্শকদেরকে সেদিন মাঠে ঢোকার সুযোগ দেয়া হয়। নরম কার্পেটের মতো ঘাসের উপরে শুয়ে-বসে, চিৎ-কাৎ হয়ে বলিউডের নায়িকাদের মতো পোজ দিয়ে অনেকগুলি ছবি তুলেছিলাম। অভাগা মফিজের ছবি দেখিয়ে আপনাদের ছবি দেখার মজা নষ্ট করতে মন চাইলো না। তাই সেগুলো বাদ। বরং এইটা দেখেন!
চলেন, এবার বৃটিশ মিউজিয়ামে যাই। ২৬৭ বছরের পুরানো এই মিউজিয়ামের প্রবেশদ্বার।
মার্বেল পাথরের ''ক্রাউচিং ভেনাস''।
মার্বেল পাথরের ''এ্যাপোলো অফ সাইরেইন''।
গত বছর এই মোয়াই ভদ্রলোককে দেখতে বৃটিশ মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম। ইষ্টার আইল্যান্ডের লোকজন এটা ফেরত নেয়ার জন্য দেন-দরবার করছে। বলছে, আমাদের মাল আমাদেরকে ফিরাইয়া দেও। বৃটিশরা কি আর দেয়! এমন আব্দার রাখতে গেলে তো বৃটিশ মিউজিয়ামই খালি হয়ে যাবে। তারপরেও ভাবলাম, বলা যায় না ফেরত যদি দিয়েই দেয়……..তার আগেই দর্শন করে নেই!
সম্রাট দ্বিতীয় রামসেস।
খৃষ্টপূর্ব ১৩০০ সালে লাইমস্টোনের তৈরী স্বামী-স্ত্রীর মিশরীয় মূর্তি। স্ত্রীর ব্যাপারে আমার কোন ধারনা নাই। তবে স্বামী বেচারা যে বিপাকে আছে সেটা এই মূর্তি দেখলে বোঝা যায়। সেযুগেও স্ত্রীরা যে স্বামীদেরকে বিশ্বাস করতো না, তার প্রমান এই মূর্তি। কিভাবে বুঝলাম? এটা আপনাদের জন্য একটা ধাধা। দেখি, কে বলতে পারে!
মমি এবং তার কাসকেট, অর্থাৎ শব এবং শবাধার। এই কাসকেট আবার একটা কফিনে রাখা হতো। মানুষটা যতো উচ্চশ্রেণীর হতো, কফিনের সংখ্যা ততোটাই বেশী হতো, অর্থাৎ কফিনকে আরেকটা কফিনের ভিতরে রাখা হতো। এভাবে এমনকি একটা মমির জন্য আটটা পর্যন্ত কফিনও পাওয়া গিয়েছে। তবে প্রাচীন মিশরীয়, রোমান আর গ্রীক সভ্যতার সময়ে যেসব কারুকার্যময় কফিন করা হতো, সেগুলোর পোষাকী নাম হলো সারকোফগাস (সূত্রঃ ব্লগার জুন)।
আবার হোরাসের চোখ! কোন এক পিরামিডের ভিতরে পাওয়া এই প্রাচীণ মিশরীয় নৌকার মডেলে দেখেন হোরাসের চোখ আকা।
এটা চাইনিজ সেকশানের একটা ছবি। কারুকার্যময় প্রাচীণ চীনা তৈজসপত্র। সোনালী মূর্তিগুলো কিন্তু সোনার তৈরী।
এবার চলেন, একটু মাদাম তুশো'র মিউজিয়ামে ঘোরাঘুরি করি। ডাইভার্সিটি কাহাকে বলে, এখানে আসলে বোঝা যায়। সাদা, হলুদ, বাদামী, কালো…...সবরকমের বিখ্যাত-কুখ্যাত মানব সন্তানগন এখানে বছরের পর বছর এক ছাদের নীচে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছেন। কোন ঝগড়া-ফ্যাসাদ, গ্যান্জাম কিংবা বর্ণবৈষম্য নাই। কেউ কাউকে একটা গালিও দেয় না। পৃথিবীটা যদি সত্যিকারভাবে এমন হতো, তাহলে কতোই না ভালো হতো!! এনাদের পরিচয় দিয়ে আপনাদের বিরক্তি উৎপাদন করার চাইতে ভালো চুপ থাকা! তবে একটা কথা। খোদা না খাস্তা কোন কারনে যদি এখানে টেরাম্প মূর্তি হয়ে একবার ঢুকতে পারে, তাহলে কিন্তু সবার খবরই আছে!
ছবি তো দেখলেন। এখন আপনাদের জন্য আরেকটা ধাধা আছে। লেডি ডায়ানার কোমরের চিপা দিয়া দেখেন, কয়টা আঙ্গুল দেখা যায় না!! বলতে হবে, এই আঙ্গুলগুলা কার হাতের অংশ। আচ্ছা, একটা কিউ দেই। ওই আঙ্গুলগুলা প্রিন্স চার্লস বা দোদি আল ফায়েদের হাতের অংশ না কিন্তু, কোন এক সহজ-সরল এবং নিরীহ তৃতীয় ব্যক্তির হাত…..হে হে হে!!!
মিউজিয়ামের ভিতরে একটা রাইড আছে। ট্যাক্সি রাইড; লন্ডনের বিখ্যাত 'ব্ল্যাক ক্যাব' এর। নাম হলো ''স্পিরিট অফ লন্ডন''। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বাস্তবধর্মী সচিত্র বর্ণনা রয়েছে এখানে। তবে এখানে ছবি তুলতে যাওয়া বোকামী। ক্যামেরায় চোখ রাখতে গেলে অনেক কিছু মিস করতে হয়। কিন্তু আম-জনতার কল্যানে সব সময়েই কিছু নিবেদিতপ্রান মানুষ পাবেন সবজায়গাতে। এমনই একজনের করা একটা ভিডিও'র লিঙ্ক দিলাম। দেখতে পারেন কেমন সেই রাইড।
মিউজিয়ামে আরেকটা দর্শনীয় জায়গা আছে। ''চেম্বার অফ হররস''। এটা আসলে একটা ওয়াক থ্রু। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্বর আর নৃশংস ঘটনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। আমার তোলা দু'টা ছবি দিলাম। আর অন্যের করা একটা ভিডিও। যার যেটা ভালো লাগে, দেখেন। এখানে হাটার ফাকে ফাকে অন্ধকারে বিভিন্ন চিপায়-চাপায় কিছু পোলাপাইন ভুত সেজে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। আমার কাছে যদিও হাস্যকর মনে হয়েছে বিষয়টা, তবে ইয়াং মেয়েদের চিৎকার শুনলে মজা পাওয়া যায়। এরা আসলে ভয়ে না, লোক দেখানোর জন্য চিৎকার করে বলেই আমার ধারনা।
লন্ডনের ছবি ব্লগ শেষ। আপনাদেরকে একটা কথা জানিয়ে রাখি, লন্ডন কিন্তু আমার পছন্দের শহর না; সেই তুলনায় প্যারিসকে অনেক প্রিয়, অনেক কাছের মনে হয়। ২০১৯ সালে ১৯.০৯ মিলিয়ন ট্যুরিস্ট এসেছে এই শহরে। বিশাল সংখ্যা। এদের অনেকেই নিশ্চয়ই প্যারিসও গিয়েছে, তবে যারা যায় নাই তাদের সবারই একবার হলেও প্যারিস যাওয়া উচিত!!
সবশেষে আবারও…….লং লিভ দ্য কুইন!!!
প্রথম পর্বের মতো এই পর্বের শিরোনামের ছবিটাও আমি তুলি নাই। তারপরেও কে তুলছে জিজ্ঞাসা করলে কিন্তু মাইন্ড করমু!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:১২