somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন আবুল মিয়া!!!!

২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের এই শহরটাতে এক ''দেশী ভদ্রলোক'' আছে। আসল নাম বলছি না, মনে করেন নাম তার আবুল মিয়া। আমার আজকের পোষ্টের প্রধান চরিত্র হওয়ার কারনে তার একটা ইন্ট্রো দেয়া জরুরী বোধ করছি।

খুব অল্প বয়সে সে এ'দেশে এসেছিলো। অনেক কষ্ট করেছে। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নেমে প্রচুর টাকা-পয়সা বানিয়েছে, ফলে লেখাপড়া আগেও যেই কারনে তেমন একটা করতে পারে নাই, পরেও পারে নাই। বছর দুয়েক ধরে ভাবছে, টাকা-পয়সা কামাই যথেষ্ট হয়েছে, এখন বরঞ্চ খানিকটা লেখালেখি এবং সাংস্কৃতিক জগতে মেলামেশা করা দরকার। কে তার মাথায় এই বিষয়টা ঢুকিয়ে সর্বনাশ করলো আল্লাহ মালুম! তবে সেটা জেনে আমার কোন কাজও নাই, কারন আমি এনাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বেশীরভাগ সময়েই তা পারি না। মানুষ হিসাবে নিঃসন্দেহে সে বেশ ভালোমানুষ, কিন্তু তার মধ্যে কেমন যেন একটা গায়ে পড়া ভাব আছে, যেটা আমার পক্ষে সহ্য করা বেশ কঠিন। সমস্যা হলো, কোনও এক অজানা কারনে সে আমাকে বেশ পছন্দ করে এবং যে কোনও অনুষ্ঠান বা সোশ্যাল গ্যাদারিংয়ে আমাকে খুজে বের করে, তারপরে ত্যক্ত করা শুরু করে। দোষ ধরছি না, আসলে সে বোঝে না যে তার কথায় বা কাজে অন্য কেউ ত্যক্ত হচ্ছে; এতোটাই সহজ সরল কিসিমের একজন মানুষ!!!

কিছুদিন আগে এক বাসায় দাওয়াতে গিয়েছি। মাত্রই আল্পস পর্বতমালার পেটের মধ্যে থাকা অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুকে দিন দশেক কাটিয়ে ফিরেছি। বহুদিনের স্বপ্ন-পূরণের উত্তেজনা তখনও কাটে নাই। গৃহকর্তার সাথে সেই উত্তেজনাই ভাগাভাগি করছিলাম। আবুল মিয়া তৎক্ষনাৎ এসে হাজির। বললো, আপনেরা কি করতে যে এতো টাকা-পয়সা খরচা করে পাহাড় দেখতে যান, বুঝি না। আমাদের আশেপাশেই তো কতো পাহাড় আছে!!! কোন মানে হয়?

বললাম ভাই সাহেব, এইখানকার এইগুলা পাহাড় না, টিলা। আমাদের দেশের নদীর তুলনায় এইখানকার নদী যেমন, আল্পস পর্বতমালার তুলনায় এইগুলাও তেমন।

আমার এই কথায় অবশ্য বিশেষ কোন ইতরভেদ হলো না। আবুল মিয়া হে হে হে করে কিছুক্ষণ টেনে টেনে হাসলো। তারপরে বললো, বুজলাম..........কোনোটা একটু বেশী উচা-লাম্বা, কোনোটা কম। কিন্তু জিনিস তো একই। যেই লাউ, সেই কদু।

বললাম, ঠিক আছে। আপনের গবেষণা লাউ আর কদুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন। টিলা-পাহাড়-পর্বতের প্রকারভেদ আপনের বুঝার কাম নাই!!!

তো এই আবুল মিয়া কিভাবে যেন টের পেয়েছে, আমি টুকটাক লেখালেখি করি। এক জুম্মাহ'র নামায শেষ করে বের হচ্ছি, আমাকে পাকড়াও করলো। বললো, ভাইজান আমিও কিছু লেখালেখি শুরু করছি। আমি বললাম, কি লিখেন? সে হাত কচলাতে কচলাতে নববধুর মতো লজ্জারাঙ্গা হয়ে বললো, এই টুকটাক কবিতা গল্প, এইসব আর কি। আপনেরা বিদগ্ধজন। সময় করে আমার রেস্টুরেন্টে একদিন আসেন। আপনারে কিছু শোনাইতে মন চায়!!! শুনে একটু মতামত দিলে আমার একটু উপকার হবে। বললাম, আমি বিদগ্ধজন না, তেমন কোন পদের লেখকও না। তারপরেও আসবো একদিন। তবে কবিতা থেকে আমি শতহস্ত দূরে থাকি, ওই ব্যাপারে মাফ চাই। আপনার লেটেস্ট কোন একটা গল্প শোনায়েন।

আবুল মিয়াকে এই কথা বলে পড়লাম বিপদে। কিছুদিন পরপরই ফোন করে...........ভাইজান, কবে আসতেছেন? যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে একদিন গেলাম, সাথে নিলাম ক্রিসকে। ওকে অবশ্য আগেই ব্রিফ করেছি। জানিয়েছি, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলবো মূলতঃ বাংলায়। কাজেই তোর মূল আকর্ষণ হবে বিনা-পয়সার উদর-পূর্তি। চাইলে যাইতে পারিস। সে সবগুলো দাত বের করে ফেললো। টপাস করে এক ফোটা লালাও ঝড়ালো। বললো.......অবশ্যই যামু। বাংলার সাথে আমার কোন সংঘর্ষ নাই!! তোমার কল্যানে একটু-আধটু বুঝতেও তো পারি!!! পেইড ফুড ভ্লগারদের আপ্যায়নের মতো করে আবুল মিয়া তার রেস্টুরেন্টের মোটামুটি সব আইটেম দিয়ে আমাদের টেবিল ভরে ফেললো। ভরপেট খাওয়া-দাওয়া করে ভাবলাম, যতোই কষ্ট হোক, তার একটা গল্প মনোযোগ দিয়ে না শুনলে বেইমানী হয়ে যায়!!! চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম, শুরু করেন।

গল্প শুরুর আগে আবুল মিয়া কিছু তথ্য দিলো। কিছুদিন আগে সে My Sister's Keeper নামে একটা মুভি দেখেছে যেটার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, এক বোন কর্তৃক আরেক বোনকে কিডনি দান। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে সে গল্পটা লিখেছে। তবে তার গল্পটা নাকি চরম রোমান্টিক!!! তার ইচ্ছা, দেশে এই গল্পের উপর ভিত্তি করে একটা নাটক বানাবে। আমি বললাম, বেশ ভালো আইডিয়া। ট্যাকা এমনিতেই আপনের কাছে তেজপাতা। কিছু উড়াইলে ক্ষতি নাই কোনো!!!

পুরোটা গল্প আপনাদেরকে শুনিয়ে বিরক্ত করতে চাই না। তবে এই চরম রোমান্টিক গল্পের মূল আকর্ষণ শেষের দিকে। শেষটা এমন..........নায়কের হার্ট এ্যটাক হয়েছে। ডাক্তার বলেছে, এই হার্ট আর কোন কামের না। কুল্লে ফিনিস। এদিকে নায়িকা এই অবস্থা কোনক্রমেই মেনে নিতে পারছে না। নায়ক বিহীন তার জেবন অনেকটা ফিল্টার বিহীন বিড়ির মতো। তাই তার কঠিন সিদ্ধান্ত, সে তার হার্ট নায়ককে দান করবে। পরে অপারেশান করে তার হার্ট নায়কের শরীরে বসানো হয়।

এন্ডিং শুনে আমি প্রায় বাক্যহারা হয়ে গেলাম। এই পর্যায়ে কোন রকমে আমি আবুল মিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, এইটা চরম রোমান্টিক হইলো কিভাবে?

আবুল মিয়ার সরল ব্যাখ্যা..........নায়িকা তার হার্ট দান করার মাধ্যমে নায়ককে বাচিয়ে তুললো। তারপরে তাদের মিলন হলো। তারা সুখে-শান্তিতে ঘর-সংসার করতে লাগলো!!!

আমি আৎকে উঠে বললাম, নায়ক মৃত নায়িকার ভুতের সাথে ঘর-সংসার করবে? এইটা ''চরম রোমান্টিক''? কি কন না কন। এইটাতো দেখি ''চরম হরর''!!!!! সামনে হ্যালোইন উৎসব আসতেছে। আপনে নিশ্চয়ই সেই উপলক্ষ্যে এইটা রিলিজ করবেন।

আবুল মিয়া মোটামুটি বিরক্ত হয়ে বললো, কি যে বলেন আর না বলেন!!! নায়িকা মরবে কেন? আজকাল কিডনি, লিভার, চক্ষু সবতেরই ট্রান্সপ্লান্ট হয়। তাইলে হার্ট হইতে অসুবিধা কি? আর ভাবতেছি হুমায়ুন আহমেদ তার অনেক নাটকের ব্যাকগ্রাউন্ডেই রবীন্দ্রনাথের গান বাজাইছে, আমার নাটকেও একটা বাজবে। ''চরম রোমান্টিক'' একটা গান।

গল্প এবং লেখকের অকাট্য যুক্তি শুনে শরীরে একটা শিহরণ জাগলো। বেচারা আসলে জানেই না যে, এই ক্ষেত্রে এখনও দিল্লী হনুজ দূর অস্ত!!! আমি নিশ্চিত, এই ধরনের নাটক দেশের কোন মানুষ কোন কালেই, কখনও দেখে নাই। বললাম, দারুণ হবে। এই নাটক সুপারহিট না হয়েই যায় না। তবে আমার একটা ছোট্ট অনুরোধ আছে। রাখবেন?

আবুল মিয়া তার আসন্ন নাটকের ভাইরালতায় আবেশিত হয়ে ঢুলু ঢুলু নয়নে হয়ে আমার দিকে ঝুকে এসে ফিস ফিস করে বললো, বলেন বলেন.........অবশ্যই রাখবো।

নায়ক-নায়িকার ঘর সংসার দেখানো পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নাই। ব্যাকগ্রাউন্ডে রবীন্দ্রনাথের গান না, নায়ক-নায়িকার অপারেশানের পর পরই দর্শকদেরকে ব্যাকগ্রাউন্ডে ''ইন্নালিল্লাহে ওয়া-ইন্না ইলাইহে রাজেউন'' শুনায়ে নাটক শেষ করে দিয়েন, প্লিজ। আমিও আবুল মিয়ার দিকে ঝুকে ফিস ফিস করে বললাম!!!!


পুনশ্চঃ ভাবছি, এমন একটা প্রতিভার যথাযথ মুল্যায়ন না করলে অবিচার হয়। তাকে আমাদের এই প্ল্যাটফর্মের সন্ধান দিয়ে দেই। সে কবিতা-গল্প এখানে পোষ্ট করে তার প্রতিভাকে বিকশিত করুক। আপনারা কি বলেন?

ছবিসূত্র।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৯
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×