ঢাকা কলেজে পড়ার সময় দেখতাম কলেজের গেটের ওপরে বড় বড় করে লেখা আছে "KNOW THYSELF"। তখন এইসবে পাত্তা দিতামনা, নিজেকে জানার আবার কি আছে? আমাকে আমার চেয়ে ভালো আর কে চেনে? কিন্তু এখন মনেহয় যে আসলেই নিজেকে জানার দরকার আছে। আমি নিজের ব্যাপারে যতটুকু জানি বলে ভাবতাম, আসলে আমি তার চেয়েও কম জানি। যেমন, গ্লাসগো আসার আগে আমি ভাবতাম আমার প্রিয় খাবার হচ্ছে Helvetia'র Chicken broast আর American Burger'র Double Cheese beef burger। কিন্তু না, এখানে এসে বুঝলাম আমার প্রিয় খাবার হচ্ছে ডাল আর আলুভর্তা দিয়ে ভাত! ডাল-ভাত খাবার জন্য আমি মাইনাস পাঁচ ডিগ্রির মধ্যেও বাসে করে আরেকজনের বাসায় যেতে রাজি আছি। অথচ আগে আমার বাসায় ডাল-আলুভর্তা-ভাত মেনুতে থাকলে আমি দুধভাত খেয়ে ফেলতাম। এজন্যই হয়ত কথায় বলে যে ঠ্যালার নাম বাবাজি। ঠ্যালায় পড়েই মনেহয় আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাল রান্না শিখে ফেললাম।
শুধু তাই নয়, নিজের ব্যাপারে এমন অনেক কিছুই আমি আবিষ্কার করছি যা আমি আগে জানতাম না। জানতাম না আমার প্রিয় বাহন হচ্ছে রিকশা, জানতাম না আমি শীতের চেয়ে গরম বেশী পছন্দ করি, জানতাম না আমিও নিজের দেশের কথা ভেবে মন খারাপ করতে পারি। যতক্ষণ দেশে ছিলাম ততক্ষণ আসলে বুঝিনি, যতই লোডশেডিং হোক, যতই গরম পড়ুক, যতই ট্রাফিক জ্যাম লাগুক, নিজের দেশ হচ্ছে নিজের দেশ। আশেপাশের যা কিছু আছে সবই আমার নিজের।
এখানে এসে আমার দৃষ্টিভঙির পরিবর্তন এসেছে, দুই দেশের পার্থক্য আমার চোখে পড়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের যতই গর্ব থাকনা কেন, আমরা কিন্তু একটা জায়গায় গিয়ে থমকে আছি। আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত কিন্তু আমরা জানিনা কিভাবে। এমনকি এই প্যাঁচের মধ্যে আমরা কেন পড়লাম এইটা নিয়েও অনেকেই অনেক রকম হৈচৈ করেন, কিন্তু প্যাঁচ খোলার চেষ্টা কেউ করেনা, হয়ত করলেও কাজ হচ্ছেনা।
বড় কোন উদাহরনে না গিয়ে আমি বরং ছোট কিছু উদাহরন দেই। দেশের রাস্তাঘাটের একটা পরিচিত দৃশ্য হচ্ছে এখানে সেখানে ময়লা, লোকজন এখানে সেখানে 'পিচিক' করে থুথু ফেলছেন নির্বিকার ভঙিতে। আমরা দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যাই। বাংলাদেশ থেকে বাইরের দেশগুলোতে (উন্নত দেশগুলো) গেলে প্রথমেই চোখে পড়ে এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকগুলো। এখানে কেউ রাস্তায় থুথু ফেললে মোটামুটি "খবর আছে"। ধরতে পারলেই ৫০ পাউন্ড জরিমানা। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে জরিমানার না, সচেতনতার। আমরা নিজেরা যদি সচেতন থাকি তাহলে খুব সহজেই এই সমস্যা এড়িয়ে চলা যায়। এখন কথা হচ্ছে, আমাদের জন্য কাজটা একটু কঠিন। কারন, আমরা সবাই একটু 'ঘাড়ত্যাড়া' ধরনের, এটা আমরা জানি, এবং সেই অনুযায়ী কাজও করি। এজন্য যদি আগামীকাল থেকে সরকারীভাবে এমন নিয়মও করা হয় যে কেউ রাস্তাঘাট ময়লা করলে ততক্ষনাৎ ৫০০ টাকা জরিমানা, আমি নিজেও হয়তো ঘাড়ত্যাড়ামি করে বলব "এই সরকার একটু বেশী বাড়াবাড়ি করতেসে, আমার যেখানে ইচ্ছা আমি থুথু ফেলুম, কার বাপের কি? এই নিয়মের বেল নাই"। বলে হয়ত ইচ্ছা করেই এদিক সেদিক একগাদা থুথু ফেলবো, আমরা তো এমনই। এজন্য আমার মনেহয় আমাদের উচিত অন্তত আমরা না পারি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। ছোট থেকেই তাদেরকে এসব শিখিয়ে ফেলা উচিৎ। কিন্তু কে শেখাবে? আমরা নিজেরা হয়ত সবাইকে শেখাতে পারবনা, কিন্তু কেউ না কেউ তো নিশ্চয়ই আছেন যারা পারবেন সবার কাছে এই ছোট বিষয়গুলো ছড়িয়ে দিতে। কিন্তু তারা কি এই ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেবেন? হুমম..... আমি জানি না।
এইমাত্র টের পেলাম যে এইসব নিয়ে আমি আগে কখনো ভাবিনি, এটাই হয়ত আমার পরিবর্তন, তখন আর এখন........
বি: দ্র: মাঝখানে কিছু ক্ষেত্রে লেখার ভাষা আর নিয়মিত কথার ভাষা মিশে গেছে, যেটা আমার ঘাড়ত্যাড়া ভাষা। এই মিশ্রন নিশ্চয়ই দূষণীয় নয়।
~বিদঘুটে
৩০/১০/০৮
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৫:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





