somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্কুলবেলা: প্রথম দিন

০২ রা মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টাইম মেশিনে করে যদি অতীতে ফিরে যাওয়া যেত, আমি ঠিকই চলে যেতাম। অবশ্য H.S.C পরীক্ষার আগেই ভেগে চলে আসতাম, এই পরীক্ষার মত কঠিন কিছু আজ পর্যন্ত দিয়েছি বলে মনেহয় না। যাইহোক আমার স্কুল জীবনটা খুব মজা করে কেটে গেছে, যখন পড়তাম তখন বুঝিনি। স্কুল ছাড়ার পর বুঝেছি। সবারই হয়ত এমন হয়, সময়মত কেউ কিছু বোঝেনা। যখন বোঝে তখন আমার মতই তাদের টাইম মেশিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

আমার প্রথম স্কুলের নাম ছিল সেন্ট প্যাট্রিকস্ গ্রামার স্কুল। মজবাজারের একটা স্কুল, দুটো বিল্ডিং নিয়ে ছিমছাম একটা স্কুল। আমাদের প্রিন্সিপাল ছিলেন আলেকজান্ডার রোজারিও স্যার, যিনি বিটিভিতে মাঝে মাঝে বাইবেল পাঠ করতেন। আর আমি আমার চেনা জানা সবাইকে গর্ব ভরে বলতাম, উনি আমার টিচার। যদিও স্কুলের সবাই উনাকে যমের মত ভয় পেত, আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলামনা, কিন্তু সেকথাতো আর কেউ জানেনা। এই স্কুলের প্রতিটি ক্লাসের একটা করে নাম ছিল। নার্সারীতে আমার সেকশনের নাম ছিল "জুইঁ", ক্লাস ওয়ানে "চড়ুই", ক্লাস টুতে "খরগোশ", ক্লাস থ্রীতে "প্রজাপতি", ক্লাস ফোরে "কুয়াশা", আর ক্লাস ফাইভে ছিলাম "পেঁচা" তে। (এই পেঁচা নিয়ে আবার কাহিনী আছে, আসছি সে কথায়)।

প্রথম যেদিন আমার মা আমাকে স্কুলে পাঠালেন, সেদিনের কথা আমার আজও মনে আছে। আমাকে চরম শীতের মধ্যে সকালে উঠতে হল, বাবার সাথে গেলাম স্কুলে। আমি ভেবেছিলাম এটা হয়ত আজকে গেলেই শেষ, যদিও একটু ভয় ভয় লাগছিল ভেবে যে আমাকে আবার ইনজেকশন দেয়া হবে কিনা। যাইহোক সব ভয় দূর করে গেলাম স্কুলে। আমাকে বসিয়ে বাবা বললেন ভয় না পেতে, কারন মা কিছুক্ষণ পরেই এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আমি মাথা ঝাকিয়ে সায় দিলাম। পাশের ছেলেটাও আমাকে বলল, ভয়ের কিছু নেই, যেন আমি খুব ভয় পাচ্ছি। আমার সমান লম্বা, শ্যামলা করে ছেলেটা, নাম ক্যানি কর্নেলিয়াস মজুমদার। ক্যানিই আমার স্কুল জীবনের প্রথম বন্ধু, যদিও ক্লাস ফাইভের পর তার সাথে আমার আর দেখা হয়নি।

আমার স্কুলের প্রথম দিনটাই শুরু হয়েছে বোকামী করে, আমার টিচার বোর্ডে ক্যাপিটাল লেটারে এ বি সি ডি লিখলেন, মা আমাকে এইসব আগেই শিখিয়েছেন, ধুমধাম দেখে দেখে লিখে ফেললাম। টিচার স্মল লেটারে লেখা জন্য যখন বোর্ড মুছে ফেললেন, আমি ভাবলাম হয়ত উনার ভুল হয়েছে, তাই মুছে ফেলছেন। আমিও তাই দেরী না করে ইরেজার দিয়ে আমার পেন্সিলে লেখা সব লেখা মুছে ফেললাম। যাইহোক, একটু পর টিফিন পিরিয়ডে দেখি একটা ফর্সা মোটা মেয়ে টিফিন খেতে খেতে ভ্যা করে কাদছে, আর টিচার তাকে সান্তনা দিচ্ছে। আমি হেসে ফেলতেই মেয়েটা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে আমার দিকে আধ-খাওয়া কলাটা ছুড়ে মারল। আমি কোনমতে হাচড়ে পাঁচড়ে কলা পাশ কাটিয়ে সেযাত্রা বাঁচলাম। স্কুলের প্রথম দিন আর সাইজে আমার চেয়ে বড় হওয়ায় সেদিন আর মেয়েটাকে কিছু বলা হয়নি।

স্কুল ছুটি শেযে বাড়ী এসে মনেহচ্ছিল, 'মজাই তো স্কুলে', যদিও তখন তো আর জানতাম এমন ভাবে পরবর্তী ১০ বছর আমাকে স্কুলে যেতে হবে। এখন প্রায়ই মনেপড়ে সেইদিনগুলোর কথা, চিন্তা ভাবনাহীন সেই মজার দিনগুলো। টাইম মেশিন থাকলে হয়ত সত্যিই ফিরে যেতাম

(দেশের এমন একটা দুঃসময়ে কেন যেন মন খারাপ করা কিছু আর লিখতে ইচ্ছে করলনা, তাই সুসময়ের এই স্মৃতিচারণ)

~বিদঘুটে
০২/০৩/০৯
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:৪১
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×